somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈদ মোবারক/ঝাপসা হয়ে যাওয়া স্মৃতি/ঝাপসা হতে থাকা স্বপ্ন

২০ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ রাত ৯:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঝাপসা হয়ে যাওয়া স্মৃতি:
চোখ বুজলেই দিগন্ত স্পর্শ করে স্মৃতির দুয়ার । রাতটাকে পেতে ইচ্ছে ঠিক করছে ১৫ বছর আগের মত করে , যেখানে ছোট্ট মেহরাব মনে মনে লড়ছে নিজের সাথে । কখনো আনন্দে বিহ্বল , কখনো বা ভীত , সকালের অপেক্ষা , নির্ঘুম দীর্ঘ রাত , বাবা মায়ের চোখ এড়িয়ে ঘুমের অভিনয় , ছোট্ট ডিজিটাল হাতঘড়ির লাইট চেপে বারবার দেখে নেয়া সময় ,জানালা দিয়ে বারবার অন্ধকারে খাসি দু'টো খুজে ফেরা , ঘুমাতে যাবার আগে আব্দার ....."আম্মু আমাকে ফজরে ডেকে দিও" ।

ইরানের বন্ধুদেরকে খুব মিস করছি ,ঈদ পার্বণে যাদের কাছে আমার অসীম সম্মান ।ঈদের ঘনিয়ে আসার সাথে নাসের , ইদ্রিস ,জাহরা, সামিরের সামনে হঠাত করে বুক চিতিয়ে চলতে ইচ্ছা করে , পরক্ষণেই হয়তো নিজেকে সম্বরণ করি।

ইরানের যে এলাকায় আমরা ছিলাম , সেটা সুন্নী প্রধান, তবে মাজহাব ভিন্ন । আমরা হানাফী হলেও ওরা শাফেয়ী । শাফেয়ী মাজহাবে ক্বুরবানীর আদেশটা অনেকাংশে শিথিল , ওদের তুলনায় যেমন শিথিল আমাদের যাকাত আদায়ের নিয়ম ।ছোট্ট 'শারভিনাহ ' শহরে ক্বুরবানী হয় কেবল দু'টো , আমরা , আর আমাদের দেখাদেখি আমাদের এক প্রতিবেশী । এ নিয়ে আমার গর্বের সীমা নেই , বন্ধু মহলে আমাকে ঘিরে অনেক বিস্ময় , নিজেকে মনে হয় এক দিগ্বিজয়ী বীর । এমন অনুভূতি হওয়ার সাথে সাথে নিজেকে সম্বরণ করি ,আম্মুর কথা স্মরণ করি ......"লোক দেখানো বা মাংস খাওয়ার নিয়তে ক্বুরবানী করলে , বা ক্বুরবানীর পশু নিয়ে গর্ব করলে সৃষ্টিকর্তা নারাজ হবেন " । মনে মনে আল্লাহকে ডেকে বলি ......"আল্লাহ শুধু তোমারই জন্য" ।

ঈদের নামাজের শেষে আমাদের বাসার পেছনদিকে ছায়াঢাকা জায়গাটায় আমার সব বন্ধুদের ভীড় । পাশাপাশি বাধা আমাদের দু'টো আর নাসেরদের দু'টো খাসি । নাসের হঠাত বলে উঠে ........."আমাদের খাসি দু'টো অনেক বেশি মোটাতাজা "। আমার বিশ্বাস হয় না , দিব্যি দেখতে পাই আমাদের খাসি দু'টো অনেক বেশি সবল ,স্বাস্থ্যবান , এক দু'বার প্রতিবাদ করি । বন্ধুরাও দু'ভাগ হয়ে যায় , কেউ আমার , আবার কেউ নাসেরের পক্ষ নেয় । হঠাত করেই মনে পড়ে যায় আব্বুর কথা"এমন প্রতিযোগিতা করলে তো ত্যাগের মহিমা কলুষিত হয়ে উঠবে" । ক্ষান্ত দেই আমি ........"নাসের তুমি ঠিকই , তোমাদের দুটোই বড় " ।নাসের অবাক হয়, আমার চোখের দিকে তাকিয়ে নাসের হয়তো কিছু বুঝে নেয় , তারপর বলে .........."আমাদেরটাও খুব বেশি বড় না ,মোটামুটি একই রকম " ।

ক্বুরবানী শেষে নাসেররা সব বিলিয়ে দেয় , শাফেয়ী মাজহাবে এক বেলা খাওয়ার মাংস রেখে বাকিটা বিলিয়ে দিতে হয় । আমাদের সবটুকু বিলিয়ে দেয়া হয়না , বিলিয়ে দেবার মত এত গরীব লোক যে আছে তাও না । অর্ধেক বা এক-তৃতীয়াংশ নিজের জন্য রেখে দেয়া হয় । আমার কিন্তু ভালো লাগে , আম্মুকে বলতে ইচ্ছা করে , "খাসির পায়াটা কবে রান্না করবে ?" কিন্তু বলি না , নিজের উপর লজ্জিত হই ,বাবা মায়ের শেখানো কথাগুলো মনে পড়ে........। "মাংস খাওয়ার উদ্দেশ্যই যদি হলো , তাহলে ত্যাগের মহিমা কোথায় ?" । আম্মুকে গিয়ে বলি , "আম্মু নাসেরদেরকে পায়াটা দিয়ে দিলে হয়না ?"

নাসের কোথায় আছো তুমি ? তোমারও কি আমাকে মনে পড়ে ?
আমি কিন্তু অনেক বদলে গেছি , ৭ বছর বয়েসে যেমন করে ক্বুরবানীকে উপলব্ধি করতাম , তার কিছুই এখন করা হয় না ।তোমরা একই রকম থেকো , আার মত বদলে যেও না। ভালো থেকো নাসের , ভালো থেকো জাহরা !!

ঈদ মোবারক ।

ঝাপসা হতে থাকা স্বপ্ন:
গতকাল আমাদের কেনা হয়ে গেলেও ,আজ সন্ধ্যায় আরেকবার গরুর হাটে গিয়েছিলাম এক আংকেলের সাথে । গরুর দাম সন্ধ্যার পর তলানীতে এসে ঠেকেছে । আংকেলের কেনা শেষ হয়ে যাওয়ার পর একজন বুড়ো বিক্রেতা এসে হাত চেপে ধরলেন ....."স্যার , দশ হাজার ট্যাহায় দেই , তবুও নিয়ে যান ।ঢাহায়(ঢাকায়) ৩ ডা হাড(হাট) এবার কম , দুইডা দিন হাডে গরু নামাতে পারিনি। তিনদিন না ঘুমায়া,না নায়া , রাস্তায় গরু নিয়ে সারারাত পাহারা দিসি। সারাডা বছর গরুডা পালছি , নিজে না খেয়ে খাওয়াইসি , শুধু ঈদে ছেলেমেয়ের একটু হাসি দেখার জন্যি ।সব গাড়িও বন্ধ আজ, যদি বিক্রি না হয় , ফেরতও নিতি পারবো না স্যার । ঘরে আমার ছাওয়াল বেডি অপেক্ষা করে আছে, ৩ টা গরুর একডাও বেচতি পারিনি ,বাইত(বাড়িতে) কিভাবি যাবো স্যার ?" ....এই বলে কেঁদে ফেললেন ।

বিক্রেতাদের এমন অসহায় চেহারা আমার অচেনা , এমন করে দাম ছেড়ে দেয়াটাও অপরিচিত ঘটনা । এমন অসহায় অবস্থায় অপেক্ষার প্রহর গুনছেন অসংখ্য গরু বিক্রেতা । দশ হাজার টাকার এই গরুটিই গতকাল বিক্রি হয়েছে ১৬/১৮ হাজারে , তবুও কোন ক্রেতা মিলছে না ।ঈদের সকাল যত কাছে আসছে , অসহায় মানুষগুলোর সারা বছরের স্বপ্ন ক্রমশ ঝাপসা হয়ে আসছে .......
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ রাত ১:৪৮
৩৩টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×