রক্তদান একটি সহজ ও সাধারণ বিষয় কিন্তু এর গুরুত্ব নিঃসন্দেহে অনেক বেশি। রক্তদানের ফলে রক্তদাতার শারীরিক কোনও ক্ষতি হয় না। রক্তদান নিয়ে আমাদের দেশে সাধারণের মাঝে বেশ কিছু মিথ বা ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত থাকলেও সত্য এটাই যে এটি শারীরিক কোনও ক্ষতি করেনা।
রক্তের লোহিত কণিকার আয়ু ১২০ দিন। অর্থাৎ আপনি রক্ত দিন বা না দিন ১২০ দিন পর লোহিত কণিকা আপনা আপনিই মরে যায়। সেখানে জায়গা করে নেয় নতুন লোহিত কণিকা। রক্তের আর উপাদানগুলোর আয়ুষ্কাল আরও কম। সুস্থ, সবল, নীরোগ একজন মানুষ প্রতি চার মাস অন্তর রক্ত দিতে পারেন।
তবে রক্তদানের ক্ষেত্রে রক্তদাতার কিছু শারীরিক বিষয় লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন:
১)রক্তদাতাকে শারীরিকভাবে সুস্থ হতে হবে।
২)রক্তদাতার বয়স কমপক্ষে ১৭ বছর হতে হবে।
৩)রক্তদাতার ওজন কমপক্ষে ১১০ পাউন্ড হতে হবে।
৪)রক্তদাতার রক্তচাপের দিকে লক্ষ্য রাখা দরকার। খুব বেশি বা খুব কম কোনটিই রক্তদানের ক্ষেত্রে সহায়ক নয়।
৫)কোনও রোগের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক সেবনরত থাকলে সেক্ষেত্রে রক্তদান করা উচিত নয়।
৬)নারীরা মাসিক চলাকালীন বা গর্ভাবস্থায় রক্তদান করতে পারবেন না।
৭)রক্তদানের কাছাকাছি সময়ে কোনও বড় দুর্ঘটনা বা অস্ত্রোপচার হয়ে থাকলে রক্তদান না করা বাঞ্ছনীয়।
এছাড়াও খেয়াল রাখতে হবে যে, এক ব্যাগ রক্তদানের পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়া দরকার। রক্তদানের পর দুই গ্লাস পানি বা জুস খেলে রক্তের জলীয় অংশটুকু পূরণ হয়ে যায়। বাকিটুকুও পূরণ হতে বেশি সময় লাগে না। রক্তদানের পর ওই দিনটাতে খুব বেশি পরিশ্রম করা উচিত নয়। স্বাভাবিক কাজকর্মেও কোনো বাধা নেই।
রক্তদান একটি ব্যথামুক্ত এবং নিরাপদ প্রক্রিয়া:
রক্তদান একটি ব্যথামুক্ত এবং নিরাপদ প্রক্রিয়া। অভিজ্ঞ হাতে রক্তদান করলে এই প্রক্রিয়াতে শুধুমাত্র হাতের শিরায় সুঁই ঢোকানোর সামান্য ব্যথাটুকু ছাড়া আর কোনও ব্যথাই অনুভূত হয়না। প্রত্যেক রক্তদাতার দানকৃত রক্ত সংগ্রহের জন্য সম্পূর্ণ নতুন আনকোরা জীবাণুমুক্ত প্ল্যাস্টিক ব্যাগ ও সুঁই (যা ব্যাগের সঙ্গেই যুক্ত থাকে) ব্যবহৃত হয় যার ফলে প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ, ঝুঁকিমুক্ত এবং কোন ধরণের সংক্রমণের আশঙ্কা নেই।
আমাদের দেশে স্বেচ্ছায় রক্তদানের বিষয়টি এখনও যথেষ্ট না হওয়ার কারণে রোগীকে শরণাপন্ন হতে হয় নিকট আত্মীয় স্বজনের কাছে। সেখান থেকে সম্ভব না হলে তখন ভরসা পেশাদার রক্তদাতা অথবা ব্লাড ব্যাংক। এই দুই ক্ষেত্রেই সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন।
কারণ পেশাদার রক্তদাতারা টাকার বিনিময়ে তাদের রক্ত বিক্রি করে থাকে আর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এই রক্তদাতারা মাদকাসক্ত। এছাড়া এদের রক্তে হেপাটাইটিস, এইচআইভিসহ আরও নানা ধরণের জীবাণুর সংক্রমণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লক্ষণীয়। এছাড়া পেশাদার রক্তদাতারা একবার রক্তদানের পর পরবর্তী রক্তদানের ক্ষেত্রে উপযোগী সময়ের পূর্বেই রক্ত দিয়ে থাকে যার ফলে তাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রায় ও ঘাটতি দেখা যায়। ব্লাড ব্যাংক এর ক্ষেত্রে সঠিকভাবে খোঁজখবর নিয়ে নির্ভরযোগ্য ব্লাড ব্যাংক বেছে নিন।
আমাদের দেশে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচীর সর্বপ্রথম সূত্রপাত করেছিল মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের দ্বারা পরিচালিত স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান সন্ধানী।শুরুতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে একটি মাত্র ইউনিট নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও ধীরে ধীরে সম্প্রসারিত হয় সন্ধানী। গড়ে ওঠে দেশের সকল সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ অনেক বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালগুলোতেও।সন্ধানী ছাড়াও আরও মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থীদ্বারা পরিচালিত কিছু একি ধরণের স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান আছে এগুলো হল মেডিসিন ক্লাব ও রেড ক্রিসেন্ট ইয়ুথ। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঁধন এবং কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য। সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম ফেইসবুকেও দেখা যায় এই ধরণের উদ্যোগ যেগুলোতে তরুণসমাজের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ সত্যিকার অর্থেই আশার কথা। কিছু ভার্চুয়াল ব্লাড ব্যাংক রয়েছে যেমন আই ব্লাড নেটওয়ার্ক (I-blood network), সেইফ (SAFE), ডোনার জোন (Donor zone), http://www.BloodBd.org সহ আর কিছু নির্ভরযোগ্য ভার্চুয়াল ব্লাড ব্যাংক ও প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহ করে থাকে।
স্বেচ্ছায় রক্তদান নিঃসন্দেহে একটি অত্যন্ত মহৎ পদক্ষেপ। আমাদের দেশে স্বেচ্ছায় রক্তদান এখনও সন্তোষজনক অবস্থানে নেই। এই মহতী পদক্ষেপ পরিপূর্ণতা পাক সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাঝে। নিয়মিত রক্তদানে এগিয়ে আসুন।বিশ্বব্যাপী যে সকল মহৎ রক্তদাতারা তাঁদের রক্তদানের মাধ্যমে এই কথাটিকে সার্থকতা দিয়ে আসছেন তাঁদের প্রতি রইল শুভকামনা, কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা।
সংগৃহীত
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১২ সকাল ৮:৪২