পরেরদিন আমরা সবাই যেখানে যাবার কথা সেখানে গেলাম। গেটে যাবার পর জানতে পারলাম আমাদের আইডি কার্ড নিতে হবে। ইনফরমেশন সেন্টারে গিয়ে বসলাম, আইডির ছবি তোলার জন্য। ছবি তোলার পর নিজেকে দেখে তামিল ফিল্মের নায়কের বন্ধু বলেই মনে হল। যেমন, বান্দার গায়ের রং, তেমন তার আউলা ঝাউলা চুল। চুল না হয় একটু বড় হয়েছে, তাই বলে অঙ্গে এমন কালি দেওয়ার কি দরকার? বুঝলাম, আমি তোমাদের মত সাদা চামড়া না, তাই বলে এমন মুশকো কালা তো না।

যাই হোক, ভেতরে ঢুকে আবার গাড়ি নিয়ে চলতে যাবার হারিয়ে যাবার দশা, বিশাল এলাকার মাঝে কয়েক মাইল পর পর অফিস। পরে আবার গেটে ফিরে এসে ম্যাপ নিয়ে জায়গামত পৌঁছালাম।
আমাদের মেন্টর হিসেবে থাকবেন রালু নামের এক মহিলা। নাম শুনে দক্ষিণ আমেরিকান মনে করেছিলাম। দেখলাম, তিনি রোমানিয়ান, বয়স ৫৫ এর উপরে হবে; আর তার ইংরেজির অ্যাকসেন্টও বেশ মজার। শুরু হল নানারকম ওরিয়েন্টেশন, ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি অনলাইনে কিছু কোর্স করে এসেছিলাম, আমার পার্টনারদের কিছু বাকি ছিল।বসে বসে ঝিমালাম সেই সময়টা। আমাকে বলল, কিচেন থেকে ঘুরে আসতে পার। মর্টনের ছেলে তাকে কফি এনে দিতে অনুরোধ করল। কিচেনে গিয়ে দেখি কফির কেটলির পাশে 'দানবাক্স', লেখা প্রতিকাপ ৪৫ সেন্ট। কফি আর সরঞ্জামাদি অফিস থেকে কেনা হয় না, বরং যারা এখানে কাজ করে তারাই এর খরচ বহন করে। ৪৫ পয়সা দেয়া সম্ভব না বলে, ৫০ পয়সা দিয়ে কফি নিয়ে এলাম মর্টনের ছেলের জন্য।
খাবার দাবার ছাড়া কিছুও মনে হয় লিখছি না, আর লেখার মত কিছু পাচ্ছিও না। কি আর করা খাবার দাবারের গল্পই করি।
দুপুরে খাবার জন্য বের হয়ে ওরা একটা চাইনিজ বুঁফে খুঁজে বের করল। এদের চাইনিজ আমাদের দেশের মত না, একটু বেশিই চাইনিজ। দেখলাম দামও বেশি পড়ছে আবার খেতেও পারব না। আমি বের হয়ে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর খুঁজে খেয়ে নিলাম।
পরের দিন: দুপুরে ওরা আরেকটা চাইনিজ খাবার দোকান খুঁজে বের করল। আমি দৌঁড় দিয়ে ম্যাকডোনাল্ডস থেকে ২ টা ডলার বার্গার খেয়ে ফিরে আসলাম। চাইনিজ দোকানে ওদের সন্ধানে ঢুকতেই ওয়েটার ছুটে আসল, আমি ইশারায় বোঝালাম, আমি খাব না, আমার বন্ধুদের কাছে এসেছি। আমি বরফি আকৃতিতে কাটা, গোল গোল পাইপের মত লাল রংয়ের বস্তুটার নাম জিজ্ঞেস করলাম। মর্টনের ছেলে বলল, এটা পিগ ইন্টেস্টাইন (শুকরের নাড়িভুড়ি বা ক্ষুদ্রান্ত) এই বলে সে ঐ বস্তু সসে ডুবিয়ে খাওয়া শুরু করল। আর জানাল যে, এর আসার পর অর্ডার নিয়ে রান্না করে, তাই একটু দেরি হল। আমি পাশে একটা ইন্ডিয়ান গ্রোসারি স্টোরে ঢুকে সময় পার করলাম।
রাতে মর্টনের ছেলে জানাল যে সে পিৎজা খাবে, তাকে পিৎজার দোকানে রেখে আমি আবার ওয়েন্ডিতে গিয়ে বার্গার আর র্যাপ কিনে আনলাম। এই ছেলের বুদ্ধিতে আমি অভিভূত হলাম, যখন দেখলাম সে একটা বিশাল আকৃতির পিৎজা কিনেছে, যার অর্ধেকটা রাতে খেল, বাকিটা রেখে দিল পরের দিন রাতে কাবার জন্য। (আমাদের এখানে ফ্রিজ নেই) আমি বললাম, ২৪ ঘন্টায় পঁচে যাবে না? সে জানাল, সমস্যা নাই। আমি ভাবলাম, বলে কি? আমাকে অবাক করে দিয়ে সে সত্যি সত্যিই পরের রাতে বাকি অংশ খেয়ে নিল এবং বলল সে আর বাইরে যাবে না। আমি বের হয়ে ওয়ালমার্ট থেকে রামেন (টীকা: ১) নুডুলস কিনে নিলাম, পরের দিন দুপুরের জন্য। ফেরার পথে আবার ওয়েন্ডি থেকে ১ ডলারের বার্গার আর ১ ডলারের র্যাপ কিনে ফিরলাম।
পরের দিন দুপুরে ওদের সাথে বের হয়ে আরও ফ্রোজেন রেডি মিল কিনে ঐ অফিসের ফ্রিজে রেখে দিলাম। কাপ নুডুলস রান্না করে খাওয়ার পর নিজেকে বিশাল বিজ্ঞানী বলেই মনে হল

মর্টনেরর ছেলে জানালো সে তার বন্ধুর বাড়ি যাবে, এখানে তার বন্ধু আছে, সে সেখানে এই উইকএন্ড থাকবে। জরিনা বেগম তাকে নামিয়ে দিয়ে আসল। রাতে গাড়ি ফেরত আসার পর আমি ম্যাকে গিয়ে ২টা ডলার বার্গার কিনে ফিরে আসার পথে গাড়িতেই খেয়ে ফেললাম। হয়ত ক্ষুধার কারণে, মনে হল এইরকম খাবার কেন আগে খাই নি এবং এই জিনিস আরো কতকগুলো খাওয়া দরকার

(টীকা: ১: রামেন নিয়ে কয়েকটা কথা না বললে হয় না। এই জিনিসের নাম মারুচ্যান রামেন। সোজা নুডুলস না, ম্যাগির মত প্যাঁচানো। আমেরিকাতেই নাকি তৈরি হয়। এই নুডুলস বহু গ্রাজুয়েট স্টুডেন্টের খাদ্যতালিকায় থাকে। খাবার হিসেবে মোটামুটি, কিন্তু এর দাম খুবই কম। ১ ডলারে ৫ প্যাকেটের মত পাওয়া যায়, আর কাপসহ হলে ৩টা। আমার ইউনিতে একটা বাংলাদেশি ছেলে আছে যে এই রামেন নুডুলস খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য বিখ্যাত। সে দোকানে গেলে প্রায় ৪০ প্যাকেট নুডুলস কিনে আনে

এই মারুচ্যান কম্পানি বছরে ৩.৬ বিলিয়ন প্যাকেট নুডুলস তৈরি করে। এদের একবছরের নুডুলস সোজা করলে সেটা দিয়ে মঙ্গল গ্রহে আসা যাওয়া করা যায়। সূত্র: উইকি )
পুনশ্চ: লেখা ছোট হয় বলে দুটো কমেন্ট পেয়েছিলাম, এবার আজবাজে কথা দিয়ে লেখা বড় করে ফেলেছি

আগের পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০১১ রাত ৮:৫৮