স্বামী বিবেকানন্দ মানব অস্তিত্বের ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে চিদাত্মা এবং আত্মার কথা বলেছেন এবং এ-দুটিকে তুলনা করেছেন সাগর এবং তার উত্তোলিত ঢেউয়ের সাথে। সাগর আর তার ঢেউ যদিও দুটি আলাদা অস্তিত্ব, তবুও ঢেউ যখন সাগরের সাথে মিশে গিয়ে একাকার হয়ে উঠে তখন তাকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়, মানুষ একবার পঞ্চত্ব প্রাপ্ত হলে যেমন তাকে আর একক অস্তিত্বের আওতার মধ্যে ফেলা যায় না। বিবেকানন্দ চিদাত্মাকে ঈশ্বর এবং মানব চেতনাকে আত্মা হিসেবে অভিহিত করেছেন। তার বক্তব্যের সারমর্মটা অনেকটা এরকম, মানুষ যখন বেঁচে থাকে তখন সে আত্মা এবং যখন সে মারা যায় তখন আত্মার সকল বৈশিষ্ট্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চিদাত্মার সাথে একীভূত হয়; ঢেউ যেমন তার সকল নিজস্ব ধর্ম মুছে ফেলে সাগরের সাথে মিশে নিজেও সাগরে রুপান্তর লাভ করে।
যাহোক, ঈশ্বর শব্দটির প্রতি যাদের বিমনা ভাব আছে তাদের জন্য বলছিঃ মহৎ চিন্তাশীল ব্যাক্তিদের মধ্যে যারা তাদের বক্তব্যে বা লেখায় ঈশ্বর শব্দটির উল্লেখ করেছেন তারা কেউই ঈশ্বর বলতে তথাকথিত ধর্মীয় বা মানুষধরনের ব্যাক্তিগত ঈশ্বর(যে ঈশ্বর মানুষের মতই প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধ পরায়ণ এবং অহর্নিশ অন্যের প্রশংসা পাওয়ার প্রত্যাশায় থাকে) বোঝাননি। উদাহরণ স্বরূপ এখানে আলবার্ট আইনস্টাইনের ঈশ্বর বিষয়ক বক্তব্য উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি মনে করতেন, প্রকৃতিতে একটা ব্লুপ্রিন্ট আছে যার বৈশিষ্টগুলোকে কখনও পরিবর্তন করা যায় না, কিছুটা মাত্রায় আবিষ্কার করা যায় ও সেই সকল বৈশিষ্ট্যের কথা জেনে নিয়ে তাকে নিজেদের কাজে লাগানো যায় মাত্র এবং সেই ব্লুপ্রিন্টের ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য অনুসারেই মহাবিশ্ব পরিচালিত হচ্ছে। তিনি প্রকৃতির এই ব্লুপ্রিন্টটাকেই ঈশ্বর হিসেবে অভিহিত করতেন। এই ধারনা থেকেই হয়ত, বিজ্ঞানী আইনস্টাইন তার বিশেষ ও সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব আবিষ্কারের পর থেকেই সারাজীবন ধরে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন বিজ্ঞানের একটি সমন্বিত তত্ত্ব (unified theory) উদ্ভাবন করার জন্য। প্রথম দিকে কোয়ান্টাম মেকানিকসের (Quantum Mechanics) উপর বিশেষ অবদান রাখলেও এবং তার এই অবদানের জন্য নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হলেও পরবর্তীতে এই তত্ত্বকে এড়িয়ে যাওয়ার মানসিকতার কারনে বিজ্ঞানের একটি সমন্বিত তত্ত্ব আবিষ্কারের ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছেন। যাহোক, তিনি যেহেতু মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন প্রকৃতি বা বিজ্ঞানের সমস্ত কিছুকেই একটি সমন্বিত তত্ত্ব (unified theory) দ্বারা ব্যাখ্যা করা সম্ভব তাই তিনি হয়ত আমাদের পুরো মানবজাতির জন্য একটি বিশ্ব সরকার ব্যাবস্থার কথা ভেবেছেন এবং সেজন্য বেশ প্রচারণাও চালিয়েছেন। তিনি নিশ্চয়ই এমন একটি বিশ্ব রাষ্ট্রের কথা ভেবেছিলেন, যেখানে কোন আলাদা শ্রেণী, জাতি, বর্ণ, সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীগত বৈষম্য থাকবেনা।
আইনস্টাইনের প্রকৃতির ব্লুপ্রিন্টের কথা বাদ দিলেও এই বিষয়ে আর তেমন কোন সংশয় নেই যে মহাবিশ্বের আমাদের অঞ্চলটি সার্বিকভাবে পদার্থ বিদ্যার সুনির্দিষ্ট আইনসমূহ (laws of physics) দ্বারা পরিচালিত। সেক্ষেত্রে, মহাবিশ্বের আমাদের অঞ্চলের তুলনায় বালুকনার চেয়েও ক্ষুদ্র মানবজাতি হয়ে কেন সমস্ত আলাদা আলাদা রাষ্ট্র ব্যাবস্থাকে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত ঘোষণা করে একটি মাত্র সাম্যের সমাজের অন্তর্ভূক্ত হতে পারব না। কেন আমাদের দরকার হবে আলাদা জাতি, সম্প্রদায়, শ্রেণী এবং বৈষম্যমূলক রাষ্ট্র ও সমাজের? কেন আমাদের দরকার পড়বে একে অপরকে শোষণ করার, নিজেদের মধ্যে বৈষম্যের বিশালাকার দেয়াল তৈরী করার? অনেকে বলতে পারেন; শোষণ তো প্রকৃতিতেও আছে, প্রকৃতিজগতের ফুড চেইন বা খাদ্য শৃঙ্খলে এক প্রজাতির প্রাণী আরেক প্রজাতির প্রাণীকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে জীবন ধারণ করে। আমরা সকল মানুষ যেহেতু একই প্রজাতির অন্তর্ভূক্ত তাই আমাদের মধ্যকার একে অপরের উপর চালিত শোষণ প্রক্রিয়া প্রকৃতির অনুমোদন প্রাপ্ত নয়। যদিও প্রাণীজগতে এমনও কিছু বিরল উদাহরণ দেখা যায়। প্রচন্ড ক্ষুধার তাড়নায় কোন কোন প্রাণী তাদের শাবককে খেয়ে ফেলে। অনেকে হয়ত প্রকৃতির এই ব্যাপারটাকে সামনে এনে মানব সমাজের ভেতরে থাকা শোষণ প্রক্রিয়াকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করতে পারেন। এক্ষেত্রে আমার বক্তব্য হচ্ছে, প্রকৃতির মধ্যে শোষণ থাকলেই যে মানবজাতির মধ্যেও শোষণ থাকতে হবে তার কোন যৌক্তিকতা নেই। কারন আমরা ধীরে ধীরে শ্রম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অচেতন প্রকৃতির উপর জয় লাভ করে চিন্তাশীল, মহৎ মানব প্রকৃতি গড়ে তুলেছি। অথচ সেই মানবপ্রজাতির মধ্যেই অহরহ দেখা যাচ্ছেঃ ক্ষুধার তাড়নায় নয় বরঞ্চ পুলিশি ক্ষমতা দখল, সম্পদের লোভ এবং বিলাসবহুল জীবনের তাগিদে- হত্যা, শোষণ, নিপীড়ন, নির্যাতন, লুণ্ঠন, জবরদখল ইত্যাদির পারাকাষ্ঠা। তাহলে কিভাবে বলা যায় এই অচেতন প্রকৃতির চেয়ে আমাদের সচেতন মানব প্রকৃতি মহৎ? মানব প্রজাতির আবির্ভাবকালে তাদের মধ্যে কোন ধরনের শোষণের অস্তিত্ব ছিল না। সভ্যতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার রাস্তাতেই শোষণ ব্যাপারটি মানুষের সাথে অবিচ্ছেদ্য ভাবে জড়িয়ে গেল। এখন প্রশ্ন হল, যে সভ্যতা মানুষের উপর মানুষের শোষণকে সমর্থন করে তা সত্যিকারের সভ্যতা হতে পারে কিনা যখন এই শোষণ প্রক্রিয়া পুরো মহাবিশ্বে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত আমাদের একমাত্র বসবাসযোগ্য গ্রহটিকে ধ্বংশের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলছে। আমাদের উচিত সচেতন প্রয়াসের মাধ্যমে সকল ধরণের শোষণ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করার মধ্যদিয়ে সত্যিকারের মানব প্রকৃতি ও সভ্যমানুষ হিসেবে নিজেদের জয়ধ্বজা উপরে তুলে ধরা এবং এই গ্রহে দীর্ঘকাল টিকে থাকার সম্ভাবনা নিশ্চিত করে তোলা।
অন্যকোন গ্রহে, সৌরমন্ডলে, গ্যালাক্সীতে বা মহাবিশ্বের সম্পূর্ণ ভিন্ন অঞ্চলে কোথাও মানুষের বসবাস উপযোগী জায়গা খুঁজে পাওয়ার পূর্বেই হঠাৎ সংগঠিত হওয়া ভয়ানক কোন প্রাকৃতিক বা মানুষেরই তৈরী করা কোন মহাবিপর্যয়ে পৃথিবী নামক গ্রহে মানুষ নামক সৃষ্টিশীল প্রাণীর সম্পূর্ণরূপে ধ্বংশ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাকে নাকচ করে দেওয়া যায় না। যদি এই পৃথিবীর সম্পূর্ণ মানব জাতি ধ্বংশ হয়ে যায় তাহলে পরবর্তীতে আবার নতুন করে মানুষ নামক সৃষ্টিশীল প্রাণীর জন্ম নেওয়ার সম্ভাব্যতা খুবই কম। কারন এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি বা এই পৃথিবীর প্রাণীজগতের অস্তিত্ব অথবা মানুষ হিসেবে আমাদের বিবর্তন সম্পূর্ণরূপেই আকস্মিক ঘটনা পরিক্রমা মাত্র এবং এগুলোর কোনকিছুই সচেতন মস্তিষ্কের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে তৈরী হয় নি। অসংখ্য ব্যপারের মধ্যে খুবই ক্ষুদ্র একটা ব্যাপার যদি এখন যেমন আছে সেরকম না হয়ে সামন্য একটু ভিন্ন রকম হত(উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়ঃ যদি ইলেকট্রন, নিউট্রন, প্রোটন- এদের যেকোন একটির আকার বা ভর সামান্য ভিন্ন হত) তাহলে এই মহাবিশ্বই তৈরী হত না; এই ছায়াপথ, এই সৌরমন্ডল, এই পৃথিবী এবং সেখানে প্রাণের সৃষ্টি এবং সেই প্রাণ বিবর্তিত হয়ে সৃষ্টিশীল মানুষের জন্ম তো অনেক দূরের ব্যাপার।
অদূর ভবিষ্যতে মহাবৈশ্বিক কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটবে কিনা, সেই ব্যাপারে পদার্থবিজ্ঞানী বা জ্যোতির্বিদরাই কেবল ভবিষ্যৎবাণী করতে পারেন। তবে পৃথিবীর মেরু অঞ্চলগুলোতে বরফ গলে যাচ্ছে কিনা- এই ব্যাপারে সম্পূর্ণ অজ্ঞ থেকেও এবং পরিবেশ বিজ্ঞান সমন্ধে কোন রকমের জ্ঞান ধারণ না করেও শুধু মাত্র জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিজেদের শরীরে অনুধাবন করে খুব সহজেই বুঝতে পারা যায়, মানুষকে কোন ধরনের আগামবার্তা না জানিয়েই হয়ত মানুষের তৈরী করা ভয়ানক বিপর্যয় অতর্কিতে আঘাত হেনে আমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংশ করে ফেলবে। সুতরাং আমরা মানুষরা যে আমাদের নিজেদেরই তৈরী করা মহাবিপর্যয়ের দিকে ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাচ্ছি, সেই ব্যাপারে এখনই সচেতন হয়ে বিশ্বের সকলের সম্মিলিত পদক্ষেপ গৃহীত না হলে এই মহাবিশ্বে মানুষ নামক সৃষ্টিশীল প্রাণীর টিকে থাকার সম্ভাবনা খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই নস্যাৎ হয়ে যাবে। এই মানব তৈরী বিপর্যয়কে ঠেকাতে হলে প্রথমে এর পেছনের মূল কারনটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। আমার কাছে মনে হয়, এই মূল কারনটা হচ্ছে মানুষ কর্তৃক মানুষকে শোষণ করার প্রবণতা। এই শোষণকে বহাল রাখতে গিয়েই মানুষ গড়ে তুলেছে রাষ্ট্র, জাতি, সম্প্রদায় এবং শ্রেণী। এই রাষ্ট্র, জাতি, সম্প্রদায় এবং শ্রেণীকে টিকিয়ে রাখার এবং এক রাষ্ট্র ও জাতি কর্তৃক অপরদের উপর ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ চাপিয়ে দেবার নিমিত্তেই মানুষের দরকার পড়ছে সমরাস্ত্রের। সমগ্র পৃথিবীতে প্রতিবছর সমরাস্ত্র তৈরীর উপর যে পরিমাণ বাজেট নির্ধারিত হচ্ছে তা দেখে অবলীলায় কল্পনা করা যায়, মানুষ নিজেদেরকে হত্যার পরিকল্পনায় কি ভয়ানক ভাবে মেতে উঠেছে। সমরাস্ত্র তৈরী করতে গিয়ে মানুষ গড়ে তুলছে শত শত কলকারখানা, সেখান থেকে নিঃসৃত হচ্ছে পরিবেশে বিপর্যয় তৈরীকারী নানা ধরনের ক্ষতিকর গ্যাস ও বর্জ্য পদার্থ।
মানুষ কর্তৃক মানুষকে শোষণ করার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলশ্রুতিতে পুঁজিকে আরো বেশী মাত্রায় ব্যাক্তিগত ও একীভূত করতে গিয়ে পুরো বিশ্বব্যাপী শুরু হয়েছে বাজার দখলের লড়াই। এই লড়াইয়ে জিতে যাওয়ার সংকল্পে প্রয়োজনের চেয়েও অনেক বেশী পরিমাণ পণ্য তৈরীর দরকার পড়ছে। শুধু তাই নয়, একটু ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখা যায়, পুঁজিবাদীরা বাজার দখল করার পরিকল্পনায় এমন সব পণ্য তৈরী করছে, মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপনে যেগুলোর কোন ধরনের উপযোগীতাই নেই। অধিকাংশে নারী-শরীরের যৌন আবেদনময়ীতার উপর ভর করে(যেহেতু আমাদের সমাজে পুরুষরাই এখনও অর্থনীতির প্রধান নিয়ন্ত্রক) তৈরী হওয়া বাহারী বিজ্ঞাপনের কল্যাণে তারা এই সমস্ত পণ্যের কৃত্রিম উপযোগীতা তৈরী করে বাজারে ছেড়ে দিচ্ছে। বিজ্ঞাপনের মোহে অন্ধ হয়ে জনসাধারণ সেই অপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলো, আসলেই তার জীবন-যাপনের জন্য অতীব জরুরী- এমন কল্পনা করে নিয়ে, দেদারসে কিনে ব্যাবহার করছে। অথচ একবারও ভেবে দেখছে না, সেই অপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলো তাদের স্বাস্থ্যের জন্য যেমন ক্ষতিকর ঠিক তেমনিভাবে পরিবেশকেও সমান ভাবে দূষিত করে তুলছে। এসব পণ্যের কথা ভাবতে গিয়ে সবচেয়ে বেশী করে মনে পড়ে “একবার ব্যাবহার (one time use)” ধরনের পণ্যসামগ্রীর কথা। শহর এলাকার আবর্জনা স্থলগুলোর দিকে একবার তাকালেই বুঝতে পারা যায়, সেই অপচনশীল ও পুনঃ উৎপাদন(recycling) অনুপযোগী পণ্যগুলো কি বিশালভাবে স্তুপীকৃত হয়ে আছে। যাহোক, মানুষের পক্ষে অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় পণ্যসম্ভার তৈরী করতে গিয়েও গড়ে উঠছে অসংখ্য বিশাল বিশাল কলকারখানা। সমরাস্ত্র তৈরীর কারখানাগুলোর মতই এই ধরনের অপ্রয়োজনীয় পণ্য তৈরী করার কারখানাগুলো পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় তৈরীকারী গ্যাস এবং বর্জ্য পদার্থ নির্গমন করছে।
পুঁজিবাদীদের মধ্যকার শোষণ প্রবনতার কারনেই আমরা সূর্যের কাছ থেকে পাওয়া ফ্রী এনার্জি (free energy) ব্যাবহার করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। কারন ফ্রী এনার্জির ব্যাবহারে তেল, গ্যাস এবং কয়লা উৎপাদন কোম্পানীগুলোর ব্যাবসা একদম বন্ধ হয়ে যাবে, মানুষকে শোষণের দ্বার রুদ্ধ হয়ে উঠার সম্ভাবনা তৈরী হতে পারে। তেল, গ্যাস এবং কয়লা উত্তোলন করতে গিয়ে কত খনি শ্রমিক মাটির নীচে চাপা পড়ল, কত শ্রমিক বিষাক্ত পরিবেশে কাজ করতে গিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ও নানা ধরণের মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মারা গেল, কত শ্রমিক সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্বকে বরণ করে নিল, শস্য ফলানোর উপযোগী কত উর্বর ভূমি, মানুষের কত আবাসভূমি দেবে গেল- এগুলোর কোন সঠিক পরিসংখ্যান আমাদের জানা নেই। কলকারখানাগুলোতে এই খনিজ তেল, গ্যাস ও কয়লা ব্যাবহারের কারনেই আমাদের বায়ুমন্ডলে অত্যাধিক পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস যুক্ত হচ্ছে। বায়ুমন্ডলের এই অতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড ওজোন স্তর ফুটো করার মধ্যদিয়ে সূর্যের অতিবেগুনীসহ আরো নানা ধরনের জীবের টিকে থাকার পক্ষে ভয়ানক ক্ষতিকর রশ্মি নির্গমনের সুযোগ করে দিচ্ছে। কার্বন-ডাই-অক্সাইড সূর্যের তাপ ধরে রাখে বিধায় বায়ুমন্ডলে অতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের কারনে বৈশ্বিক ঊষ্ণতা বেড়ে যাচ্ছে, ফলশ্রুতিতে মেরু অঞ্চলের বরফ গলতে শুরু করেছে এবং এর ফলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকায় আমাদের দেশের মত সমুদ্র উপকুলবর্তী জায়গাগুলো অদূর ভবিষ্যতের যেকোন একসময় সমুদ্রের নীচে তলিয়ে যাবে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বর্তমান হারে বাড়তে থাকলে একসময় ফুলে-ফলে-সবুজে ভরা স্বর্গের মত নীল রঙের এই পৃথিবী নামক গ্রহটি নরকে পরিণত হবে। ধারনা করা হয়, আমাদের পার্শ্ববর্তী গ্রহ শুক্রে একসময় আমাদের পৃথিবীর মতই জলীয় জলবায়ু ছিল যা প্রাণের জন্ম হওয়ার, বেড়ে উঠার এবং বসবাসের উপযোগী। অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে শুক্রের বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ প্রচন্ড রকম বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার বায়ুমন্ডল সূর্যের তাপের জন্য একমুখী দরজায় রূপান্তরিত হল। সেখানে সূর্যের তাপ শুধু প্রবেশ করতে পারে, বের হওয়ার কোন রাস্তা নাই। যার ফলে এখন সেখানকার তাপমাত্রা সূর্যের সবচেয়ে নিকটবর্তী গ্রহ বুধের চেয়েও অনেক বেশী। আমাদের বায়ুমন্ডলে বর্তমানের অনুপাতে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমান বাড়তে থাকলে পৃথিবী নামক গ্রহটির স্বল্প সময়ের মধ্যেই শুক্রের পরিণতি বরণ করে নেওয়ার সম্ভাবনা প্রকট।
অথচ ফ্রী এনার্জি ব্যাবহারে আমাদের বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে উঠে না, পরিবেশের অন্য কোন ধরনের ক্ষতি সাধিত হয় না এবং বড় ধরনের কোন আয়াস ছাড়াই আমরা তা নিজেদের কাজে লাগাতে পারি। ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার কিছু প্রযুক্তিবিদ স্বপ্রনোদিত হয়ে ফ্রি এনার্জিকে মানব কল্যাণে কাজে লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন তবে তেল, গ্যাস ও কয়লা উত্তোলন কোম্পানীগুলো নিজদের ব্যাবসা টিকিয়ে রাখার হীন স্বার্থে তাদের দমন করে ফেলেছে। পুঁজির দৌরাত্ম্যে বিশ্বের তাবৎ প্রযুক্তিকে এই সমস্ত পুঁজিবাদীরা এমন ভাবে কব্জা করে ফেলেছে, যাতে করে কেউ ফ্রী এনার্জিকে মানব কল্যাণে কাজে লাগানোর কোন ধরণের সুযোগ না পায়। হিসেব করে দেখা যায়, এক দিনে সূর্যের কাছ থেকে যে পরিমাণ ফ্রী এনার্জি সংগ্রহ করা সম্ভব তা দিয়ে বেশ কয়েক বছর এই সময়কার পুরো মানব জাতির প্রয়োজন খুব ভালোভাবেই মিটে যায়।
খনিজ তেল, গ্যাস এবং কয়লার ভাণ্ডার কমতে থাকার কারনে পুঁজিবাদীরা এখন ঝুঁকছে ইউরেনিয়াম চালিত পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দিকে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো তেল, গ্যাস ও কয়লা চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র বা কলকারখানার তুলনায় অনেক বেশী ক্ষতিকর গ্যাস তো নিঃসরণ করেই, বর্জ্য পদার্থ নির্গমনের হারও এত বেশী যে কোথাও কারখানা স্থাপনের পূর্বে এই বিশাল পরিমাণ বর্জ্য পদার্থ নির্গমন করার জায়গা খুঁজে বের করতে হয়। এই পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঠান্ডা রাখতে প্রচুর পরিমাণ পানির প্রয়োজন পড়ে, যার ফলে শীতল পানির একটা বিশাল ভাণ্ডার নিকটবর্তী স্থানে পেতে এই পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় স্থাপন করা হয়। ফলশ্রুতিতে, এই পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে ভয়ানক বন্যা এবং সুনামী সংগঠিত হওয়ার ঝুঁকিকে সাথে নিয়েই তৈরী করতে হয়। ওয়ার্ল্ড এনার্জি কাউন্সিল (WEC) দেখায় যে, পরিবেশের প্রতি পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের হুমকির মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে; এটা ভূমিকম্প, সাইক্লোন, হ্যারিকেন, টাইফুন, বন্যা, উচ্চ তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাতের মাত্রা কমিয়ে আনা, ভয়ানক খরা ইত্যাদির ঝুঁকি বৃদ্ধি করে প্রচন্ড রকমভাবে। সমুদ্রের পানি জারক হওয়ার কারনে পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিশুদ্ধ খাবার পানীয়ের ঘাটতির কারন হয়ে উঠে। সময় প্রবাহে এভাবেই বিশুদ্ধ খাবার পানীয়ের ঘাটতি আমাদের জন্য ভয়ানক সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। এই পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র যত ভালোভাবেই পরিকল্পিত বা তৈরী করা বা পরিচালিত হোক না কেন দুর্ঘটনা কবলিত হওয়ার সম্ভাবনা কোনমতেই রোধ করা যায় না। এগুলোতে একবার দুর্ঘটনা ঘটলে তার পার্শ্ববর্তী বিশাল অঞ্চলের সকল প্রাণী ও গাছগাছালিকে পুরোপুরি ধ্বংশ করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
আরেকটি ব্যাপার হল, সমাজের ভেতরে থাকা শোষণ প্রক্রিয়ার কারনে পৃথিবীর সামান্য কিছু মানুষের হাতে এসে জমা হচ্ছে অঢেল সম্পদ, যা তাদের প্রয়োজনের তুলনায় বহুগুন বেশী। পুঁজির দাপটে তারা সামাজিক এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার কর্তৃত্ব হাতে নিয়ে এমন ধরনের নৈতিকতা গড়ে তুলেছে যাতে মনে করা হয়, যাদের সম্পদ বেশী তারাই সামাজিক ভাবে প্রতিপত্তিশালী এবং সন্মান পাওয়ার অধিকারী। ফলে তাদের যেমন ক্ষুন্নিবৃত্তি মেটানোর তাগিদে কোন ধরনের কাজ করার দরকার পড়েনা এবং নিজেদেরকে সামাজিকভাবে প্রতিপত্তিশালী ও সন্মানীত মনে করার কারনে সমাজকে অগ্রসর করা ও মানবিকতাকে উন্নত করার ক্ষেত্রে নিজেদের ভূমিকাকে বাড়িয়ে তোলবার প্রয়োজনে মস্তিষ্ক পরিচালনা ও সৃষ্টিশীল হওয়ার তাগিদ থেকেও তারা সম্পূর্ণ রুপে বিচ্ছিন্ন। ফলে তাদের মস্তিষ্ক দীর্ঘদিন ধরে অক্রিয় থাকার কারনে জীবনী শক্তি লোপ পায়। তারা যেহেতু প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশী সম্পদের অধিকারী এবং অক্রিয় মস্তিষ্ক(গ্রামাঞ্চলে একটি প্রবাদ আছেঃ অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। এই প্রবাদটি অঢেল সম্পদের মালিকদের ক্ষেত্রে খুব ভালোভাবেই খাটে।) দ্বারা পরিচালিত, ফলে তারা ঝুঁকে পড়ছে ভয়ানক রকম বিলাসবহুল জীবন যাপন এবং সম্পদের অপচয়ের দিকে। তারা যে কি পরিমাণ সম্পদ অপচয় করে তা চারতারা, পাঁচতারা মার্কা কোন হোটেলের আবর্জনা রাখার জায়গার দিকে এক নজর তাকালেই খুব সহজেই অনুধাবন করা যায়।
ওদিকে শোষিতরা শোষকদের কাছে তাদের শারীরিক শ্রম বিক্রির টাকায় মানবেতর জীবন-যাপনে বেঁচে থাকার অধিকারটুকু কেবল পায়। শ্রমজীবির সংখ্যা অনেক বেশী হওয়ার ফলে পুঁজিপতিরা তাদেরকে পাওয়ার অভাব বোধ না করার কারনে তাদের কাজের পরিবেশে জীবনের সামান্য নিরাপত্তা আছে কিনা তা নিয়ে পুঁজিপতিরা ন্যুনতম পর্যায়েও ভাবিত হয় না। ফলে যখন তখন ভবন ধ্বসের নীচে চাঁপা পড়ে, কারখানায় লাগা অগ্নিকুন্ডে পুড়ে মারা যাওয়া তাদের একরকম নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কলকারখানার কাজের পরিবেশের এমন নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতি জেনেও শ্রমজীবীরা জঠর জ্বালায় পিপড়ার সারের মত নিজেদের আত্মহুতির দিকে এগিয়ে যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে অনেকে আবার শ্রম বিক্রি করে ক্ষুন্নিবৃত্তি করার অধিকার টুকুও পায় না, যেমনঃ আফ্রিকা মহাদেশের দরিদ্র অঞ্চলগুলোতে মানুষজন অনাহারে, সঠিক চিকিৎসার অভাবে, দুর্ভিক্ষে, মহামারীতে হাজারে হাজারে মৃত্যুবরণ করে। শুধুমাত্র আফ্রিকার দরিদ্র অঞ্চলগুলোতেই নয় উন্নয়নশীল ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর কোন কোন অঞ্চলেও এরকমটি অহরহ ঘটে থাকে। যেমনঃ আমাদের দেশের উত্তরাঞ্চলে প্রায় প্রতিবছর মঙ্গার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এমনকি তারা শীতের প্রকোপ থেকেও রেহাই পায় না। আমাদের পার্শ্ববর্তী মধ্য আয়ের দেশ ভারতের কোন কোন অঞ্চলের অবস্থা আমাদের দেশের উত্তরাঞ্চলের চেয়েও খারাপ। বর্তমান বিশ্বে আফ্রিকান কিছু কিছু অঞ্চল বাদে হয়ত বড় ধরনের কোন দুর্ভিক্ষ হয় না, তবে উন্নয়নশীল দেশে অধিকাংশ মানুষ তাদের শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবে নানা ধরনের রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে অল্প বয়সে মৃত্যুবরণ করে বা অকাল বার্ধক্যের শিকার হয়ে যৌবনের প্রারম্ভেই জীবনী শক্তির পুরোটা নিঃশেষ করে ফেলে।
এখন দেখা যাক, উন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলোর অবস্থা কেমন? ইউরোপের চেইন শপগুলোতে ঢুকলেই চোখে পড়ে, একচতুর্থাংশ জায়গা জুড়ে সাজানো আছে মানুষের পোষা প্রাণী কুকুর-বিড়ালের খাদ্য। অথচ -২৯ ডিগ্রী তাপমাত্রা চলাকালীন সময়েও রাস্তার পাশে খোলা আকাশের নীচে শারিরিকভাবে অক্ষম বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, যুদ্ধাহত সৈনিক মাথার টুপি সামনে ফেলে বসে আছে যাতে করে পথচারীরা দয়াপরবশ হয়ে কিছু খুচরো পয়সা ফেলে রেখে যায়। অনেকে অবার ভিক্ষুকের সামাজিক অমর্যাদা নিজের কাঁধে বহন করতে অনিচ্ছুক বিঁধায় অনেকটা হাস্যকর ভাবে সম্পূর্ণরূপে ব্যাবহার অনুপযোগী পুরাতন আমলের ঘড়িটা, এমনকি কখনও কখনও নিজের পায়ের স্যন্ডেল জোড়া, আরো নানাবিধ অচল জিনিস পত্র বিক্রির আশায় বসে থাকে। রাতের আঁধার ঘনিয়ে আসার সাথে সাথেই রাস্তার পাশে এই ভয়ানক ঠান্ডার মধ্যে তরুণী মেয়েরা তাদের শরীর বিক্রির আশায় দাঁড়িয়ে যায় অর্ধনগ্ন দেহে, যেহেতু বিক্রি কারার জন্য বাজারে তোলা বস্তু খদ্দেরদের কাছে প্রদর্শন জরুরী, যত শীতই পড়ুক না কেন। যে তীব্র মাত্রার শীতের মধ্যে তারা অর্ধনগ্ন হয়ে রাস্তায় দাঁড়ায় বাংলাদেশে বসবাসকারী মানুষের পক্ষে হয়ত সেই শীতের মাত্রা কল্পনা করাও অসম্ভব।
উপরের আলোচনায় কি এটাই প্রতীয়মান হয়না, শোষিতের আলাদা কোন দেশ নেই, আলাদা কোন ধর্ম নেই, আলাদা কোন জাতি নেই, আলাদা কোন সম্প্রদায় নেই; পৃথিবীর জনসংখ্যার অধিকাংশ শোষিতের আছে একটাই শ্রেণীঃ শোষিত শ্রেণী। এই শোষিত শ্রমজীবিদের অনেকেই যেহেতু সাক্ষরজ্ঞানহীন হয় এবং তাদের দিনরাতের অধিকাংশ সময় শারীরিক শ্রমদান প্রক্রিয়ায় কেটে যায়, সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার জন্য পর্যাপ্ত ঘুমের অবসর যেখানে তারা পায় না এবং তাদের যেহেতু ভ্যাপসা গন্ধে ভরা দমবন্ধ করা পরিবেশের মধ্যে বসবাস করতে হয় সুতরাং তারা মানবিক বৃত্তি বিকাশ লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।
আরকটি শ্রেণী হচ্ছে মধ্যবিত্ত শ্রেণী, যারা নিজেদের ভরণপোষণ করে শোষকদের কাছে শোষণ করার কলাকৌশল বিক্রি, শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহৃত হয়ে পাওয়া উপার্জনের মধ্যদিয়ে। শোষণ ভিত্তিক সমাজের নৈতিকতায় তারাও বিশ্বাস করে একমাত্র সম্পদশালী হওয়ার মধ্যদিয়ে সামাজিক প্রতিপত্তি লাভ সম্ভব। যার ফলে তাদের মধ্যে সমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এবং মানুষের মানবিকতা, চিন্তা করার ক্ষমতা ও সৃষ্টিশীলতাকে অগ্রগামী করার সম্ভাবনা থাকলেও সেই দিকে তারা সচারচর ধাবিত হয় না। যার ফলে সার্বিকভাবে মানব প্রজাতির অধিকাংশ সদস্যের সৃষ্টিশীল প্রবণতা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হচ্ছে।
এখনও কিছু মানুষ অক্টোপাসের মত জড়িয়ে ধরে থাকা বর্তমান সমাজের পুঁজিবাদী নৈতিকতার নিদারুণ কবল থেকে অনেক কষ্টে নিজেকে বাঁচিয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞান, চিন্তা, দর্শন এবং শিল্প-সাহিত্য চর্চা করার মাধ্যমে মানুষের মানসিক বৃত্তিগুলোকে বিকশিত করার এবং সৃষ্টিশীল প্রবণতা বজায় রাখার সুযোগ করে দিচ্ছে। জনসাধারণের মধ্যে সেই সুযোগ গ্রহণ করার মানসিকতা না থাকার ফলে চিন্তা, দর্শন, শিল্প-সাহিত্যের সাথে সাধারণ মানষের নূনতম সংযোগও তৈরা হচ্ছে না। বিজ্ঞানের ফসলকে তারা খুব সাবলীলভাবেই ব্যাবহার করছে, যদিও বিজ্ঞান বিষয়ক বর্তমান এমনকি কয়েক শতক পূর্বকালীন চিন্তার সাথেও তাদের ন্যুনতম কোন যোগাযোগ নেই। যার ফলে দেখা যাচ্ছে, চিন্তা বা সৃষ্টিশীলতা ব্যপারটি গুটিকতক মানুষের একমাত্র এখতিয়ারে পরিণত হয়েছে আর ওদিকে অন্যান্যরা যেন ধীরে ধীরে মানবেতর পর্যায়ে নেমে যাচ্ছে। সমগ্র মানব প্রজাতিকে এই ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় থেকে রোধ করতে হলেও, প্রথমে আমাদের সমাজ থেকে শোষণ করার ও বৈষম্য দেখানোর প্রবণতা নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে হবে এবং এমন একটা সমাজের বিনির্মাণ করতে হবে যেখানে সকল মানুষ জ্ঞান-বিজ্ঞান, চিন্তা, দর্শন, শিল্প-সাহিত্য চর্চা করার সুযোগ পায় এবং নিজেদের সৃষ্টিশীলতা এবং চিন্তা করার ক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠে এবং মানুষ নামক রাস্তা ধরে আরো অনেক দূর হেঁটে যেতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯