ইদানিং ইসলামের বিরুদ্ধে পোষ্ট দেয়াটা একটা ফ্যাশনে পরিনত হয়েছে।
কেউ কেউ ইস্লামের একটা জিনিস না বুঝলে তা নিয়ে শোরগোল শুরু করে ইসলামকে গালিগালাজ করে পোষ্ট দেয়।
এই প্রসংগে কিছু সহজ কথাঃ
সব মানুষের ব্রেন ক্ষমতা সমান নয়। সবার বুঝার সামর্থ্যও সমান নয়। কিছু কিছু জিনিস অনেকেই বুঝে না। এ ক্ষেত্রে একজন মুসলমানের দ্বায়িত্ব হল, একজন ভাল জানাশোনা লোকের কাছে গিয়ে ভদ্রতা সহকারে প্রশ্ন করা। এমনও হতেই পারে, সে লোকও উত্তর জানে না। সে ক্ষেত্রে আরো বিদ্যান কারো কাছে যাওয়া যেতে পারে। সবার জন্য ইনফরমেশন এক্সেস সমান নাও হতে পারে। তাহলে একজন মুসলমানের মূল দায়িত্ব কি যদি সে উত্তর না পায়, যেহেতু সে ইসলামে বিশ্বাস করে, সেহেতু তাকে এই আস্থা রাখতে হবে যে, কুরানে যা বলা আছে বা সহীহ হাদিসে যা বলা আছে, আমি না বুঝতে পারি, এটা সঠিক।
এখন যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তাদের কাছে সঠিক ইনফরমেশন এক্সেস যেমন বেশি, তেমনি ভুল ইনফরমেশনের এক্সেসও তত বেশি।
যেহেতু ইনফরমেশনের সুযোগ রয়েছে, সেহেতু ভাল আলেমদের সাথে কন্টাঙ্কট করাও তুলনামুলক সহজ।
অনেকেই ব্লগে ইসলাম সম্পর্কিত নানা পোষ্ট দেন। অনেকে জানতে চেয়ে পোষ্ট দেন। আবার অনেকে একটা জিনিস না বুঝে বা ভুল বুঝে সেটা নিয়ে পোষ্ট দেন। ব্লগে জানতে চেয়ে পোষ্ট দেয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ না হলেও জানতে চেয়ে প্রশ্ন করার মধ্যে আমি কোন দোষ দেখি না। কিন্তু নিজে না বুঝে ইসলামকে ছোট করার জন্য পোষ্ট দেয়া কতটা যুক্তিসংগত?
কারনটা বলি, আপনি যদি মুসলমান হন,আপনি জানতে চেয়ে ভদ্রভাবে পোষ্ট দেয়াটা ভাল কিন্তু ইসলামকে নিয়ে ভুল বুঝে কটাক্ষ করে পোষ্ট দেয়ার কি অর্থ? (নিজে না বুঝলে সেটা নিজের দোষ হিসেবে নেওয়াই ভাল যদি মুসলমান হন।)।
আর যদি নাস্তিক হন, তাহলে আপনি নিজের বিশ্বাস নিয়েই থাকুন যে, কেন ঈশ্বর নেই তা নিয়ে চিন্তা করুন। কোন স্পেসিপিক ধর্মের দুর্নাম করতে হবে না। যদি আপনার বিশ্বাস/অবিশ্বাসকে প্রমান করতে চান, আপনি পোষ্ট দিয়ে আপনার বিশ্বাসের সপক্ষে বক্তব্য দিতে পারেন; কিন্তু অন্য ধর্মকে অপমানিত করতে পারেন না। আপনি ধর্মের একজন এক্সপার্ট না হবার সম্ভাবণা অনেক বেশি (নাস্তিকের ধর্মকথা ইসলাম সম্পর্কে অনেক পড়াশোনা করেছেন; কিন্ত যতদুর জানি উনি অন্যান্য ধর্ম সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না)। তারপরও আপনি যদি আপনার বিশ্বাসটাকে ঝালাই করার জন্য ধর্ম সম্পর্কিত পোষ্ট দিতে চান তবে ভদ্রতা সহকারে এভাবে পোষ্ট দেয়া উচিত আমি এই জিনিসটা বুঝি না; কেউ যদি পারেন এই অসংগতিকে ব্যাখ্যা করতে পারেন। অপরের বিশ্বাস বা মতামতকে থোড়াই কেয়ার না করে বরং যুক্তিসংগতভাবে ভদ্রতা সহকারে আপনার বক্তব্য উত্থাপন করুন। এবং কেউ যদি আপনার প্রশ্নের যুক্তিসংগত উত্তর দেয়, তাহলে তা মেনে নিন। তর্ক করার জন্য তর্ক করবেন না। মনে রাখবেন, যুক্তি তর্কের অবতারনা সত্য বের করার জন্য (প্রয়োজনে নিজে হেরে হলেও), তর্কে জেতার জন্য নয়। সত্যকে জানাটাই বড় জেতা।
আর যদি অন্যান্য ধর্মের হন তাহলে বলব, যার যার ধর্ম তার তার কাছে। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি ঠিক না। তারপরও আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে সেটা ভদ্রতা সহকারে করাই ভাল। আপনাদের এটাই বলব, ইসলাম আর দশটি ধর্মের মত না- এটা পুর্নাংগ জীবন বিধান।অন্য ধর্মের ডেফিনিশনে ফেলে ইসলামকে জাজ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। তাই ইসলাম সম্পর্কে কুৎসা রটানোর বা খারাপ কিছু বলার আগে এ সম্পর্কে ভালভাবে জেনে নিন আর সাথে সাথে নিজ ধর্ম সম্পর্কে জেনেও নিন। জানার আগ্রহ থাকলে ভদ্রতা সহকারে জিজ্ঞাসা করুন। (ব্লগে হিন্দুদের দেবদেবিদেরকে কুতসামুলক, বা বর্ণবাদ বিষয়ক বা নারী বিষয়ক বা দেব-দেবির লুচ্চামি বা তাদের ঐতিহাসিক সত্যতাবিষয়ক বা হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে কোন মুসলমান কোন পোষ্ট বলে আমার ৩ বছর ব্লগ জীবনে তেমন চোখে পড়ে নাই- পোষ্ট থাকলেও হয়ত খুবই কম) । তাই কুৎসা রটনা না করে ইসলাম ও নিজ ধর্ম ও অন্যান্য ধর্ম সম্পর্কে জানুন। তারপর প্রশ্ন করুন। (ব্যাপারটা এমন ভাবে ভাবুন, কাউকে শালা বললে সেও একসময় আপনাকে শালা বলতে পারে যদিও ইসলাম যুক্তিসংগত ভাবে ডিফেন্ড করাকেই শিক্ষা দেয়।)
মুসলমান ব্লগারদেরকে বলব, ধর্ম হল কিছু নিদর্শন দেখে বিশ্বাস করার জিনিস। (কোরানে বার বার বিভিন্ন নিদর্শনের কথা বলা হয়েছে।) যখন নিদর্শন দেখে বিশ্বাস চলে আসল, কুরান আল্লাহর বাণী আর হাদিস আল্লাহ প্রেরিত রাসুলের বাণী; তখন কোন ক্ষুদ্র বিষয়ে প্রশ্ন জাগলেও মনে করতে হবে আল্লাহ ও তার রাসুল যা বলছে তাই ঠিক। (সুরা বাকারাতে বলা হয়েছেঃ (2) This is the Scripture whereof there is no doubt, a guidance unto those who ward off (evil). (3) Who believe in the Unseen. এর ভাবার্থ মোটামুটি এমনযে, অদৃশ্যকে যারা বিশ্বাস করে এই কুরান তাদের জন্য। )
তারপরো প্রশ্ন আসবে বা সন্দেহও আসতে পারে মাঝে মাঝে, প্রথমেই মনে করতে এটা আমার বুঝার দুর্বলতা; তারপর প্রশ্ন করুন উত্তর খোজার জন্য ভদ্রতার সাথে। ইনসাল্লাহ আল্লাহ আপনার উত্তর মিলিয়ে দিবেন। তখন ঈমান আরো দৃঢ় হবে। যতদিন যাবে, ইনসাল্লাহ আল্লাহর নিদর্শন-প্রমান একে একে আপনার সামনে আসতেই থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১০ ভোর ৬:৩৫