somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রেড পদ্ধতি: মূল্যায়ন, অবমূল্যায়ন, নাকি অতিমূল্যায়ন?

১৫ ই মে, ২০১০ রাত ৮:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক আগে পোস্টটা করেছিলাম| একটু এডিট করে এখন আবার দিলাম |

এবার এস,এস, সি ও সমমানের পরীক্ষায় জি, পি, এ ৫ পেয়েছে ৮২ হাজার ৯৬১ জনে। রেজাল্টে বলা হচ্ছে, সবাই সর্বোচ্চ এবং সমান মেধাবি।

যা হোক, আমি একটি গল্প বলি। ২০০৬ সালের কথা | সেই সময় আমি একটি টিউশনি করেছিলাম কয়েকমাসের জন্য। আমাদের দায়িত্ব ছিল, ছাত্র যাতে বুয়েটে চান্স পায় তার জন্য তাকে সাহায্য করা। তো পড়াতে গেলাম, জানলাম সে এস, এস, সি তে এ+ পাওয়া। আমি ছাত্রের ভালো করার ব্যাপারে আশান্বিত হয়ে উঠলাম। যা হোক, দিন দুয়েক পরেই তাকে যে হোম ওয়ার্ক করতে দেয়া ছিল তা জিজ্ঞেস করতেই সে বলল, সে পড়া করেনি। তার পর তাকে কিছ সাধারণ জিনিশ জিজ্ঞেস করায় সে না পারলে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ক্লোরোফর্মের সংকেত বল। সেটাও সে জানে না, অথচ সে বিজ্ঞান বিভাগ হতে এইচ, এস, সি পরীক্ষা দিয়েছে।
আমার মনে হলো, সে ফেল করার ও যোগ্য না। যারা বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করেছেন তারা বুঝতে পারছেন।
যখন রেজাল্ট বের হল, শুনলাম তিনি জিপিএ ৫ সহকারে পাশ করেছেন এবং সেরাদের সেরা হিসেবে পত্রিকায় প্রকাশিত ছবিতে ভি দেখাচ্ছেন।
এটা ২০০৬ সালের কাহিনী| আজ ২০১০ | অবস্থা আরো খারাপ হয়ে গেছে | গরু গাধারা যখন জিপিএ ৫ পেয়ে নাচানাচি করে তখন খুব খারাপ লাগে; ভাল ছাত্রদের জন্য খারাপ লাগে|

এতোক্ষণ যে চিত্রটি দেখালাম, আমি আশা করি এটা সারাদেশের চিত্র না। তার মানে এই নয় যে, এই ৮২ হাজার ৯৬১ জন ছাত্রদের সবাই সমান মেধাবি। বিশ্বাস করি এর মাঝে অনেক খুব মেধাবি আছে। আবার মাঝারি মানের এবং কিছু সংখ্যক খুবই সাধারণ মানের ছাত্রও আছে। অথচ সবাইকে বলা হচ্ছে সমান মেধাবি ও সর্বোচ্চ মেধাবি। ফলে গ্রেডিং সিস্টেমে যথাযথ মূল্যায়নের বদলে প্রকৃত মেধার অবমুল্যায়নই হচ্ছে।
এতে প্রত্যক্ষভাবে দুধরণের ক্ষতি হচ্ছে।
১। যারা প্রথম সারির মেধাবী বা অসম্ভব মেধাবী তাদেরকে আলাদা না করা যাওয়ার ফলে তারা অবমূল্যায়িত হচ্ছে। দেশ বা জাতি যাদের কাছ থেকে অনেক কিছু পেতে পারত তারা আড়ালেই বা অতলেই থেকে যাচ্ছে। অনেকক্ষেত্রেই তাদের স্থান দখল করে নিচ্ছে সমান রেজাল্টধারি দুর্বল মেধার ছাত্ররা। অনেকেই ভাল কলেজে ভর্তি হতে পারছে না। অবমূল্যায়নের হাতিয়ার এই গ্রেড পদ্ধতিকে সঠিক মূল্যায়ন ধরে কলেজে ছাত্র ভর্তির সময়, দুজন ছাত্রের মধ্যে সঠিক মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত বয়সকে মেধার মাপকাঠি হিসেবে ধরা হচ্ছে। সেলুকাস!
এ বছর শুনলাম মার্কসও দিবে ; ভর্তির জন্য ব্যবহার করা হবে | এটা ভাল কিন্তু প্রবলেম হলো তাহলে তো আর গ্রেডিং সিস্টেম থাকে না | সেটা হয়ে যায় এমন কিছু যার অস্তিত্ব পৃথিবীর কথাও নেই |

২। যারা মাঝারি মানের ছাত্র হয়ে জি,পি, এ ৫ পেয়েছে তাদের মূল সমস্যা হয় পরবর্তি জীবনে যখন তারা হতাশা ছাড়া কিছুই দেখতে পায় না । জি,পি,এ, ৫ পেয়ে তারা স্বভাবতই আশা করে যে, তারা ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, বা ভালো কোথাও পড়বে। বাস্তব মেধার সাথে সার্টিফিকেইটের মেধার মিল না থাকায় অনেকেই ডাবল জি,পি,এ ৫ পাওয়া সত্বেও ইউনিভার্সিটিতে চান্স পায়না।
গ্রেড সিস্টেমের এই যে প্রব্লেম গুলো জানা থাকা সত্বেও এর বিরুদ্ধে কোন কার্যকর পদক্ষেপ আজো নেওয়া হয়নি। কারণ সবাই জি, পি, এ ৫ পাচ্ছে তো সবাই খুশি।

গ্রেড পদ্ধতি কেন?
মার্ক পদ্ধতিতে মেধার প্রকৃত মান যাচাই সম্ভব ছিল না কয়েক টি কারণে। একই খাতা বিভিন্ন শিক্ষক বিভিন্ন রকম মার্কিং করতে পারেন। ফলে ছাত্ররা অবমুল্যায়নের স্বীকার হতে পারে। এ জন্য ১৭৯২ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উইলিয়াম ফারিস ছাত্রদের শেখাটাকে কয়েকটি ক্যাটাগরি বা ধাপে বা স্তরে ভাগ করেন। মুল্যায়নকারি তার জানার গভিরতা অনুযায়ী তাকে কোন একটি ধাপে বা গ্রেডে ফেলবেন। এতে দেখা গেল যে, বিভিন্ন শিক্ষক কর্তৃক বিভিন্ন মার্কিং এর সমস্যা অনেকাংশে গেলো। এবং কিছু মার্কের পার্থক্যের জন্য যে অবমুল্যায়নের ব্যাপার থাকলো না। কারণ তারা একই গ্রেডের ছাত্র।

বাংলাদেশে গ্রেডিং
যতদূর জানি, ১৯৯১ সালে বুয়েটে বাংলাদেশে প্রথমবারের মত গ্রেডিং পদ্ধতি চালু করা হয়। ২০০১ সালে এস,এস, সি, এবুং ২০০৩ সালে এইচ, এস, সি তে চালু করা হয়।
বর্তমানে চালু গ্রেডিং নিম্নরুপঃ
৮০-১০০ এ+ পয়েন্ট ৫
৭০-৭৯ এ পয়েন্ট ৪
৬০-৬৯ এ- পয়েন্ট ৩,৫
৫০-৫৯ বি পয়েন্ট ৩
৪০-৪৯ সি পয়েন্ট ২
৩৩-৪০ ডি পয়েন্ট ১
চতুর্থ বিষয়ে প্রাপ্ত গ্রেড থেকে ২ বিয়োগ করে যোগ করা হয়। গড় নির্ণয়ের সময় চতুর্থ বিষয় বাদ দিয়ে ভাগ দেয়া হয়।
ফলে একজন ছাত্র ৩ তি বিষয়ে এ+ না পেলেও সে সামগ্রিক ভাবে এ+ পাচ্ছে।
চতুর্থ বিষয় বিবেচনা করার বিষয়টাই বিশ্বে বাংলাদেশই প্রথম। পৃথিবীর কোন দেশেই এই অদ্ভূত নিয়ম নেই।
আরেকটি বিষয় হলো যে, বর্তমানে শিক্ষকদেরকে উদারভাবে মার্কিং করতে বলা হয়; বোর্ড গুলো জি, পি, এ ৫ সংখ্যা বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় ক্রমাগত প্রশ্নের মান নিম্নগামি করছে। খুবই বাছা কিছু প্রশ্ন পড়ে এ+ পাওয়া খুবই সহজ হয়ে গেছে।
এখন শিক্ষকরা মার্কিং করেন উত্তর আমেরিকার শিক্ষকদের মত। কিন্তু প্রশ্নপত্রের মান অনেক গুন নিচের। উদার মার্কিং দোষের নয় যদি প্রশ্নের মান যদি উন্নত হয় কিংবা গ্রেডের স্তরগুলোও যদি বেশি হয়।
যেভাবেই হোক, আমাদের মূল উদ্দেশ্য সঠিক মুল্যায়ন করা। যদি ৮০ এর উপরে খুব কম ছাত্রছাত্রী পায়, তাহলে সর্বোচ্চ ধাপ হতে পারে ৮০-১০০। কিন্তু যদি এমন হয় যে, ৮০-১০০ মার্কপ্রাপ্তির সংখ্যা অনেক বেশি এবং এদের মধ্যে কেউ শুধু ৮০ আবার কেউ ৯৭/ ৯৮ ও পাচ্ছে। কখনই এই দুই ক্যাটাগরির ছাত্ররা এক নয়। ৯৭/৯৮ পাওয়া রত্নগুলোকে জাতির স্বার্থেই পৃথক করা উচিত।
মেধার অবমুল্যায়ন বা অতি মুল্যায়নের এই পদ্ধতির জন্য জাতিকে চরমমূল্য দিতে হবে অবশ্যই। জাতি মেধাশুন্যতায় ভুগবে।
এখনই সময় শুধরে নেবার। দুটা উপায়ের একটা গ্রহন করা যেতে পারে|
১। ৮০-১০০ ধাপটিকে দুই বা ততোধিক ধাপে পুনরায় ভাগ করতে হবে।
২। চতুর্থ /ঐচ্ছিক বিষয়ের ধারণাটা তুলে দিয়ে এটিকে একটি নৈর্বচনিক বিষয় (অনেক গুলি হতে একটি বাধ্যতামুলক ভাবে নিতে হবে) হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। মোট গ্রেড পয়েন্টকে ভাগ করতে হবে ঐচ্ছিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে।
অথবা, আন্তর্জাতিক পদ্ধতি অনুসরণ করা|
১| পরীক্ষায় ছাত্রদের প্রাপ্ত মার্কস অনুযায়ী, কত মার্কে কোন জিপিএ হবে তা নির্ধারণ করা | অর্থাৎ, পরীক্ষার খাতা দেখার পড়ে কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে কত মার্কে কোন গ্রেড হবে| কোন বার প্রশ্ন কঠিন হবার কারনে সবাই খুব খারাপ করলে ৬০ থেকে ১০০ তে ও এ+ হতে পারে আবার সহজ হলে ৯৫ থেকে ১০০ তেও এ+ হতে পারে | এটা এনসিওর করতে হবে যে, যাতে এক্সট্রা-অর্ডিনারীরায় কেবল এ+ পেতে পারে যার পার্সেন্টেজ খুব বেশি হবে না |
২| অথবা প্রশ্নকারী টিচার/কমিটি কত মার্কে কোন গ্রেড তা বলে দিতে পারেন | খাতা দেখার সময় শিক্ষককে গ্রেড ঠিক করতে হবে কোন ছাত্র কে কোন গ্রেডে ফেলা যায় ; এখানে ব্যাপারটা যতটা না মার্কিং করা তার চেয়েও অনেক বেশি গ্রেডিং করা |

আসলে এত কিছু বলে কোন লাভ নেই ; কারণ দেশে যারা উচ্চ পর্যায়ে আছেন তারা অনেকেই হয়তো এ জিনিসগুলো জানেন বা বোঝেন, কিন্তু উপলব্ধি করেন না ভাল ছাত্রদের হতাশা; উপলব্ধি করেন না যারা খারাপ ছাত্র হয়েও অনেক ভালো গ্রেড পেয়ে মিথ্যা আত্ব-উপলব্ধির কারণে যখন পদে পদে হোচট খায় | এটা উপলব্ধি করে তারাই যারা এই খামখেয়ালীর ভুক্তভোগী|

অনেকেই এই সমস্যা গুলো বোঝে কিন্তু বুদ্ধিজীবিরা বা সরকার এটা নিয়ে মাথা ঘামায় না কেন ? উত্তর সহজ| সস্তা দরে জিপিএ ৫ পেয়ে সবাই খুসি- সরকার বলে দেশে পড়াশোনা ভাল হচ্ছে; বাবা বলে আমার ছেলে ৫ পেয়েছে - ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হবে ; মা মহল্লার সবাইকে গল্প করতে পারেন আমার ছেলেও ৫ পেয়েছে | সবাই খুশি; খুশি না কেবল আমাদের মতো আতেল কিছু লোক যারা দেশটার দিকে তাকিয়ে ভাল কিছু দেখতে চায় |
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১০ রাত ৯:২০
২০টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×