somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কলিদা - [মিনি রহস্য] (প্রথম অংশ)

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১০:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চত্তির মাসের ঠাটা পড়া ঠা ঠা রোদ্দুরে কলি'দা সারাগাত্রে গৌরীশংকর ঘানীর খাটি সরিষার তৈল মাখিয়া দিব্যি সূর্যস্নান করিতেছেন। কোন এক কালে তাহার পিতৃদেব বলিয়াছিলেন 'বাবা কল্লোল গোপাল নারায়নচন্দ্র সপ্তাহে অন্তত দু'দিন স্নানের প্রাক্কালে সূর্যস্নান করিবে,উহাতে বিপুল পরিমান ভিটামিন-ডি মিলিবে'। পিতার আদেশ বলিয়া কথা, তাহা কি আর এহেন জন্মে উপেক্ষণীয়? তাইতো কলি'দা চৈত্রের দাবদাহে তৈলাক্ত-বদনে অবগাহন করিয়া ভিটামিন-ডি এর সংস্থাপন করিতেছেন তথাপি পুড়িয়া লাল-বেগুনী হইতেছেন। এমতাবস্থায় যখন সূয্যিকিরণ কলিদা'র গাত্রচর্ম ভেদ করিয়া তাহার অনুগামী চর্বি ভান্ডারে তারল্য সৃষ্টির উপক্রম করিতেছে তখন কোথা হইতে এক পেঁচোমুখো উদিত হইয়া কলিদা'র ধ্যানে ব্যাঘাত ঘটাইল। রোগা ঢিঙঢিঙে গড়ন লোকটির, চোখ দুইটি যেন যখন-তখন কোটর হইতে বিচ্যূত হইয়া মাটিতে গড়াগড়ি খাইবে, তবে মুখাবয়ব সম্পর্কে এক কথায় বলিতে গেলে 'কোন কালে যদি পেঁচা নামক নৈশ-পক্ষীটি'র বিলুপ্তি ঘটে তবে একে নিয়ে চিড়িয়াঘড়ে পুড়িয়া দিলেই লোকে দিব্যি পেঁচার স্বরুপ উদ্‌ঘাটন করিতে পারিবে'।
লোকটি কলিদা'র নিকটবর্তী হইয়া কিছুটা সম্মুখে ঝুকিয়া মৃদু স্বরে শুধাইল 'তা দাদা ধ্যান করচেন্‌ বুজি?'
অকস্মাৎ চক্ষু উন্মোচন করিয়া একরাশ বিরক্তি সহকারে কলি'দা হাকিলেন 'দেখ দি নি ঝক্‌মারী! তা বলি এ মহামারীর দেশে কোম্পানী কি লোকের ধ্যানের উপরেও ট্যাকশো বসালে? না কি এ তল্লাটে লোকের সূয্যিস্নানে সূয্যিকিরণ সব ফুরিয়ে যাচ্চে বলে সিল-গালা এঁটে সূয্যিস্নান নিষিদ্ধ করলে?'
-না না দাদা! তা হবে কেন? আমার আপনাকে একটু জরুরী দরকার ছিল বলেই কিনা আপনার ধ্যানে ব্যাঘাত ঘটালুম। আমায় ক্ষমা করবেন তবে ব্যাপারটা গুরুতর কিনা তাই...
তোমার কি মনে হচ্চে? আমি এখানে বসে আঁখের গুড়ের বাতাসা ভাঁজচি? আমার ধ্যান গুরুত্বপূর্ণ নয়??
-না গো দাদা! তা ভাবতে যাব কেন? তবে শুনেছিলুম আপনি নাকি শখের গোয়েন্দা, আপনার সুনাম শুনেই আপনার কাচে কিঞ্চিৎ সাহায্য লাভের আশায় এসেছিলুম।
গোয়েন্দা,সুনাম,সাহায্য এই তিনটে শব্দেই কলিদা'র অক্ষিকোটরে জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ড দপ্‌ করিয়া নিভিয়া তদ্‌স্থলে নীলনদ বহিতে লাগিল। মৃদু হাসিয়া শুধাইলেন 'আরে!! দেখ দি নি কি কেলেঙ্কারী! সেটা আগে বলবে না? অকারনেই কিনা তোমার উপর চড়াও হলেম। তা আমার সুনাম কিরুপ শুনলে?'
-জ্বি! আপনার সুনাম তো বহুই শুনেছি।আপনি নাকি গোয়েন্দা হিসেবে খাসা,ষন্ডা-গুন্ডাদের যম্‌।তাইতো দাদা আপনার কাচে ছুটে এলুম, আপনিই পারবেন আমায় সাহায্য করতে।
গর্বে কলিদা'র বুক যেন জলে ডুবন্ত বালির বস্তার ন্যায় ভারী হইয়া উঠিল,চোখ অশ্রুসজল হইয়া উঠিল।তিনি উভয়-নেত্র বিস্ফারিত করিয়া এলাকার সে সকল চ্যাংড়া ছেলে-পুলে গুলোকে খুজিতে লাগিলেন যারা কিনা এতদিন তাহার গোয়েন্দাগিরি লইয়া কেবল মস্করা করিয়াছে।আজ তাহাদের কাউকে পাইলে কান ও মগজে গজাল ঠুকিয়া কলিদা আপন গুণকীর্তন শেধিয়ে দিতেন। কিন্তু কি আর করা চারিপাশে অনেক খুজিয়াও কাক-পক্ষীটিরও সন্ধান না মিলায় অগত্যা পেঁচোমুখোর সমস্যার বিস্তারনে মনোনিবেশ করিলেন 'তা হে! বল শুনি কি তোমার সমস্যা,তবে তার আগে নিজের শুভনামটি বল দেখি'
-'জ্বি বাবু, আমি হলেম গিয়ে হরিপদ ঐ যে ও পাঁড়ায় যে নবনীতা সান্যাল থাকেন, ওনার ভৃত্য '
'নবনীতা সান্যাল মানে ঐ বিধবা হাড়কিপটে বুড়িটা? সে তো শুনেছিলুম তার ঐ জঞ্জালের ঢিবিতে একাই থাকে,এক লুচি খেয়েই নাকি তার হপ্তা কাটে, এমনকি পূজোর সময় তার খোয়ারে শ'খানেক পট্‌কা ফাটিয়েও নাকি ফুটো সিঁকি বের করা যায় না। গত পূজোয় তো ওপাঁড়ার ছেলে-পুলেরা তারে নিয়ে রীতিমত গানই গেয়ে ফেললে...কি যেন ছিল??...দাঁড়াও দাঁড়াও এইতো মনে পড়ছে...
"সান্যালদের বুড়ি
হাড়কিপ্‌টে থুর-থুরি
এক পা তার শশ্মানে আরেক পা যমের বাড়ি
কিন্তু কি যে ল্যাঠা,বুড়ি যে বড্ড ঠ্যাটা
মরতে পড়েছে তবুও কার্পন্য আহামরী!!
এক লুচিতে হপ্তা কাটায়,পয়সা জমায় পানের বাঁটায়
পূজোতে না এক সিকি দেয়,জলও রাখে তুলে মাঁচায়
আঁখের গূড়ের সিন্নি রাঁধতে দেয় যে চোষা গ্যান্ডারী
সান্যালদের বুড়ি
মরতে পড়েছে তবুও তার কার্পন্য আহামরী!!......"

অতিব কষ্টে কলিদাকে তাহার বুড়ি-কীর্তন হইতে রহিত করিয়া হরিপদ কাতর নয়নে শুধাইলে 'না গো বাবু,লোকে মোদের মা'কে যতটা খারাপ বলে আসলে উনি ততটা খারাপ নন। কি করবে বলুন যুবতী বয়সেই তিনটে সন্তান রেখে স্বামীটা পটল তুললে, একটু কঠোর আর হিসেবী না হলে কি আর সমাজের শিয়াল-শকুনদের হাত থেকে স্বামীর বিষয়-আশয় আর নিজেকে রক্ষা করতে পারতে?'
-তাও কথা বটে,তা বলচো যে বুড়ি সম্পক্কে যা যা শোনা যায় তা খুব একটা সত্য নয়? এ ব্যাপারে তো তাহলে এক প্রস্থ তদন্ত করেই ফেলতে হয়,আমার মত সিদ্ধহস্ত গোয়েন্দার উপস্থিতিতে লোকে গাঁয়ে পুটিমাছকে চন্ডিদাস বলে রটিয়ে দেবে সেটা কি আর কশ্চিনকালেও সহ্য করা যায়?
সব যে ডাহা মিথ্যে তাও নয় দাদা,মা একটু কিপ্‌টে আছেন বৈ কি আর বয়স তো কম হলে না তাই ইদানিং একটু খিটমিটেও হয়েচেন। কিন্তু বিশ্বাস করুন মায়ের আমার দয়ার কায়া সেথায় এক রত্তি বিদ্বেষের ছিটেফোটাও নেই।
-হুমম্‌, তাই বল নইলে আমিও বলি লোকে এই কল্লোল মুখোজ্জীর মুখের উপর পুথি আওড়ে যাবে আর সে টেরটিও পাবে না সে কি কভু হয়! তা তোমার সমস্যাটা কি? বল শুনি। সমস্যার ইতিবৃত্ত শুনে তবেই সিদ্ধান্ত নেব যে তদন্তের মাঠে নামব কি নামব না। আমার তো আর কোম্পানীর ঐ হাফপ্যান্ট পড়া বাবুদের মত অত ফেলনা সময় নেই যে দু-সিকির গাজনের পিছুই সন্ন্যাসী হয়ে গয়া গিয়ে গঙ্গা নাব। সমস্যা যদি গুরুগম্ভীর হয় যা কিনা আমার ন্যায় চটুল লোক ব্যাতীত সমাধা করা যাবে না, তবেই কেবল আমি আমার মহামূল্য সময় এবং জ্ঞান সেথা সম্প্রদান করব, কি আর করা আমার ন্যায় লোকতো এ তল্লাটে আর দু'টি নেই তাই অগত্যা হনুমান হয়ে ঢেকি গিলতে হবে।
জ্বি দাদা,সবই আপনার দয়া।হয়েচে কি দাদা গত রাত্তিরের ঘটনা, ঐ যে যখন বর্ষাটা শুরু হলে তখন বর্ষার পানির তোড়ে বাড়ির পশ্চিম দিকের গোয়ালের দেয়ালটা ধসে গেলে। তো আমরা সবাই ওদিকটায় ছুটে গেলাম, মা ঠাকুরুনও গেলেন কিছুক্ষন পর। তখন বাড়ির অন্দরে ছিল শুধু 'মিনি'। সবকিছু তদারকীর পর মা তার ঘরে ফিরে গেলেন আর আমরা দেয়াল তোলার কাজে লাগলুম। কিন্তু কিয়দ সময় পরে মায়ের আহাজারী শুনে আমরা সবাই ছুটে অন্দরে গেলুম। গিয়ে শুনি মিনিকে নাকি কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্চে না। কি আচানক ব্যাপার বলুন তো! ঘরের ভিতর হতে এভাবে একটা আস্ত প্রাণী গায়েব হয়ে যাবে?সে থেকে আমরা চারজন সকাল অবধি বাড়ি এবং তার চারপাশে তন্নতন্ন করে খুজেচি কিন্তু মিনির কোন হদিস পাইনি।তাইতো মায়ের কান্না আর সহ্য করতে না পেরে আপনার কাচে ছুটে এলুম। এখন আপনিই পারেন এ রহস্যের একটা সুরাহা করতে।
-হুমম্‌ ঘটনা বড়ই তালগোলে মনে হচ্চে।তা 'মিনি' টা যেন কে?
'আজ্ঞে বাবু মিনি হল গিয়ে মায়ের দু'চোখের মণি।এ শেষ বয়সে ওকে আঁকড়েই তো মা বেঁচে আছেন,দিব্যি করে বলচি বাবু যদি দু'দিনের মধ্যে মিনিকে খুজে পাওয়া না যায় তবে মা বাঁচবে না,বাঁচবে না।'বলেই হরি আপন অক্ষি-গঙ্গার উপচে পড়া জল তাহার কোমরে গ্রন্থিত গামছায় মুছিতে লাগিল।
-তাহলে তুমি বলতে চাইচ যে মিনি হল তোমার মা ঠাকুরুন মানে নবনীতা দেবীর যক্ষ্যের লাঠি,ষষ্ঠির ধন,অন্ধের হাতের বাটি?
কলিদার বিচিত্র সব প্রবচনের এরুপ গুরুচন্ডালী ব্যাবহারে হরি কিছুটা ভড়কাইয়াই গেল বুঝি,কি উত্তর করিবে বুঝিতে না পারিয়া মুন্ডু চুলকাইতে লাগিল এবং কিয়দ কালক্ষেপণের পর তাহার অধরযুগল ফুটিয়া কেবল বাহির হইল 'আজ্ঞে বাবু'।
-ঘটনাতো বড়ই গুরুগম্ভীর দেখচি,এ কুম্ভির আমারই নালা কেটে উদ্‌ঘাটন করতে হবে বোধ করচি।ঠিক আচে হরি,আমি তোমার মায়ের সমস্যা সুরাহার নিমিত্তে কাল হতেই পেন্টুলুন পড়ে নেমে যাব।তুমি এখন আসতে পার, আমি ওবেলায় একবার তোমাদের ওদিকে যাব।

**দ্বীতিয় খন্ডে সমাপ্য
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×