আমি খুব ভালো সঙ্গীতবোদ্ধা নই।তবে এটুকু জানি যে একটি জাতির সংস্কৃতির অনেকটা অংশ জুড়ে থাকে তার সঙ্গীত।একটি জাতির সংস্কৃতির অমূল্য সম্পদ তার সঙ্গীত সম্ভার।
আমি ইতিহাসবেত্তা নই তাই দিন মাস বছরের হিসেব কষে বলতে পারব না যে বাঙ্গালী জাতিসত্বার পদচারনা কত হাজার বছরের।তবে সে অঙ্কটা যত কম বা যত বেশীই হোক না কেন, এ জাতির সঙ্গীত ভান্ডারে রয়েছে অজস্র অমূল্য নীধি। যার অনেকাংশ জুড়ে রয়েছে নজরুলগীতি, রবীন্দ্রসঙ্গীত,লোকগীতি এবং পল্লিগীতি।
গত কয়েক বছর যাবৎ আমাদের সঙ্গীতাঙ্গনে এক নতুন বিপ্লবের সূচনা হয়েছে। যাকে বিপ্লবীরা পরিচিত করছেন 'fusion' বা কোন কোন ক্ষেত্রে 'remake' বা 'remix' বলে।এ বিপ্লবের মূল লক্ষ্য রাতারাতি জনপ্রিয়তা কামানোর সাথে সাথে বিপুল পরিমান কাঁচা পয়সা ঘরে তোলা। এবং আশ্চর্যের বিষয় যে বিকৃত সঙ্গীতের এই ঘরানা আজকালকার নতুন প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় থেকে জনপ্রিয়তর হয়ে উঠছে এবং ফলশ্রুতিতে আরো অনেক নতুন নতুন বিপ্লবী'র জন্মের ইন্ধন জোগাচ্ছে। এই শ্রেনী কিছু পরিচিত-অপরিচিত লোকগীতি ও পল্লিগীতি'র বিকৃতির পর আজকাল আবার নজরুলগীতি ও রবীন্দ্রসঙ্গীতের জাতোদ্ধারে মননিবেশ করেছেন।
অনেকেই এই বিপ্লবকে দেখছেন পুরনো সংস্কৃতিকে নতুন আঙ্গিকে নব প্রজন্মের কাছে পরিচিত করার মাধ্যম হিসেবে।তবে দুঃখের সাথে বলতে হয় যে এ ধরণের বেশীরভাগ রিমেক বা রিমিক্সে মূল গানের সূর বা ভাব তথা শিল্পমান সংরক্ষিত হয় না। এমনকি কারো জীবনের অমূল্য ধন এই শিল্পকর্মকে বিকৃত করার পূর্বে সেই শিল্পস্রস্টার অনুমতি পর্যন্ত নেয়া হয় না। আর এ্যালবামের লভ্যাংশের কথা নাহয় বাদই দিলাম। এমনকি অনেকের জীবদ্দশাতেই তার অনুমতি ব্যাতিত একটি শ্রেনী তার শিল্পকর্মকে পরিণত করছে শিল্পবর্জ্যে।যে শিল্প তিনি সৃষ্টি করেছিলেন কালের পাতায় নিজের স্বাক্ষর স্বরুপ,তা-ই একটি শ্রেণীর অর্থলোলুপ বিকৃতির কারনে পর্যবসিত হচ্ছে শিল্পবর্জ্যে যা একটি প্রজন্ম হয়তো কিছুদিন শুনবে এবং তারপর ছুড়ে ফেলবে আস্তাকুড়ে। কখনো কখনো আবার কেউ কেউ এই বিকৃতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে চাইলেও তাদের ক্ষীণস্বর ঐ শ্রেনীর প্রভাবের স্ফীত দেয়াল ভেদ করে খুব কমই জনকর্ণে পৌছতে পেরেছে। তার উপরে আবার রয়েছে শাসকশ্রেনীর উদাসীনতা, যথোপযুক্ত আইনের অভাব এবং যেটুকু আইন আছে তার সুষ্ঠ প্রয়োগের অভাব।তাহলে কি এভাবেই আমরা আমাদের সঙ্গীত তথা সংস্কৃতিকে নির্বিকারচিত্তে বিকৃত হতে দেখব?আমাদের পরবর্তি প্রজন্মকে দিয়ে যাব একটি বিকৃত সংস্কৃতি?
লেখা পড়ে অনেকেই আমাকে প্রাচীনপন্থী,সংস্কার পরিপন্থী, প্রগতিবিরোধী এসব ভাবতে পারেন। কিন্তু না, আমি সেই জরাগ্রস্থ বুড়ো নই যে প্রগতীর দ্বারে আগল টানে, যে প্রাচীন পদচিহ্ন আকড়ে ধরে পরে থাকে মরনপণ,যার অন্তরাত্মা কেপে ওঠে নতুনের আগমনী বার্তায়।আমি প্রগতী বা পরিবর্তন বিরোধী নই,তবে আমি তথাকথিত প্রগতীর স্রোতে সকল পুরাতনকে ভেসে যেতে দিতেও নারাজ, আমি বিকৃতি বিরোধী। পুরনো পল্লিগীতি,লোকগীতি,নজরুল বা রবীন্দ্রসঙ্গীত এর সাথে আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের ব্যাবহার অবশ্যই গ্রহণযোগ্য তবে এ ক্ষেত্রে যেটা অবশ্য পালনীয় সেটা হল প্রকৃত গানের মূল সুর ও ভাবের অখন্ডায়ন। এবং এ পরিবর্তন অবশ্যই হতে হবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ও অনুমোদনক্রমে।
কিছু স্বল্পজ্ঞানী সঙ্গীত-পাপী তাদের সামাজিক অবস্থান ও অর্থের জোড়ে মিছে জনপ্রিয়তার লোভে বিকৃত করছে আমাদের সংস্কৃতিকে, কলুষিত করছে আমাদের সঙ্গীত সম্ভারকে।আসুন আমরা যে যার অবস্থান হতে এদেরকে রুখে দাড়াই। রক্ষা করি আমাদের সংস্কৃতিকে বিকৃতির হাত থেকে।এ সংস্কৃতি আমার, আমি যদি এর রক্ষাকল্পে এগিয়ে না আসি আর কেউ আসবে না। এখনই সময় এদের সকল অপচেষ্টা রুখে দাড়াবার। আসুন রুখে দাড়াই সংস্কৃতির উপর এই মেধাহীন অর্থলোলুপ আগ্রাসন।
নিচে বিকৃত মস্তিস্ক প্রসূত 'Rock with rabindranath' নামক একটি এ্যালবামের একটি গানের ভিডিও দেয়া হল। তার নিচে আছে অর্ণবের নতুন আঙ্গিকে গাওয়া দু'টি রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভিডিও। আপনিই সিদ্ধান্ত নিন কোনটাকে গ্রহন করা উচিত আর কোনটাকে বর্জন করা উচিত।
আমি ইহা কি হেরিলাম? :O তিশ্মা আফা'র কন্ঠে এত সুন্দর রবীন্দ্রসঙ্গীত?!! কেউ এই ভিডিওটার ব্যাপারে কিছু জানলে আওয়াজ দিয়েন।ব্যাকগ্রাউন্ড ভয়েস কি অন্য কারো? আমার তো বিশ্বাস হইতে চায় না !!!
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১০ বিকাল ৩:৪৯