somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসুন সঙ্গীত তথা সংস্কৃতি বিকৃতিকে না বলি ।।

২৭ শে এপ্রিল, ২০১০ বিকাল ৩:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি খুব ভালো সঙ্গীতবোদ্ধা নই।তবে এটুকু জানি যে একটি জাতির সংস্কৃতির অনেকটা অংশ জুড়ে থাকে তার সঙ্গীত।একটি জাতির সংস্কৃতির অমূল্য সম্পদ তার সঙ্গীত সম্ভার।

আমি ইতিহাসবেত্তা নই তাই দিন মাস বছরের হিসেব কষে বলতে পারব না যে বাঙ্গালী জাতিসত্বার পদচারনা কত হাজার বছরের।তবে সে অঙ্কটা যত কম বা যত বেশীই হোক না কেন, এ জাতির সঙ্গীত ভান্ডারে রয়েছে অজস্র অমূল্য নীধি। যার অনেকাংশ জুড়ে রয়েছে নজরুলগীতি, রবীন্দ্রসঙ্গীত,লোকগীতি এবং পল্লিগীতি।

গত কয়েক বছর যাবৎ আমাদের সঙ্গীতাঙ্গনে এক নতুন বিপ্লবের সূচনা হয়েছে। যাকে বিপ্লবীরা পরিচিত করছেন 'fusion' বা কোন কোন ক্ষেত্রে 'remake' বা 'remix' বলে।এ বিপ্লবের মূল লক্ষ্য রাতারাতি জনপ্রিয়তা কামানোর সাথে সাথে বিপুল পরিমান কাঁচা পয়সা ঘরে তোলা। এবং আশ্চর্যের বিষয় যে বিকৃত সঙ্গীতের এই ঘরানা আজকালকার নতুন প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় থেকে জনপ্রিয়তর হয়ে উঠছে এবং ফলশ্রুতিতে আরো অনেক নতুন নতুন বিপ্লবী'র জন্মের ইন্ধন জোগাচ্ছে। এই শ্রেনী কিছু পরিচিত-অপরিচিত লোকগীতি ও পল্লিগীতি'র বিকৃতির পর আজকাল আবার নজরুলগীতি ও রবীন্দ্রসঙ্গীতের জাতোদ্ধারে মননিবেশ করেছেন।

অনেকেই এই বিপ্লবকে দেখছেন পুরনো সংস্কৃতিকে নতুন আঙ্গিকে নব প্রজন্মের কাছে পরিচিত করার মাধ্যম হিসেবে।তবে দুঃখের সাথে বলতে হয় যে এ ধরণের বেশীরভাগ রিমেক বা রিমিক্সে মূল গানের সূর বা ভাব তথা শিল্পমান সংরক্ষিত হয় না। এমনকি কারো জীবনের অমূল্য ধন এই শিল্পকর্মকে বিকৃত করার পূর্বে সেই শিল্পস্রস্টার অনুমতি পর্যন্ত নেয়া হয় না। আর এ্যালবামের লভ্যাংশের কথা নাহয় বাদই দিলাম। এমনকি অনেকের জীবদ্দশাতেই তার অনুমতি ব্যাতিত একটি শ্রেনী তার শিল্পকর্মকে পরিণত করছে শিল্পবর্জ্যে।যে শিল্প তিনি সৃষ্টি করেছিলেন কালের পাতায় নিজের স্বাক্ষর স্বরুপ,তা-ই একটি শ্রেণীর অর্থলোলুপ বিকৃতির কারনে পর্যবসিত হচ্ছে শিল্পবর্জ্যে যা একটি প্রজন্ম হয়তো কিছুদিন শুনবে এবং তারপর ছুড়ে ফেলবে আস্তাকুড়ে। কখনো কখনো আবার কেউ কেউ এই বিকৃতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে চাইলেও তাদের ক্ষীণস্বর ঐ শ্রেনীর প্রভাবের স্ফীত দেয়াল ভেদ করে খুব কমই জনকর্ণে পৌছতে পেরেছে। তার উপরে আবার রয়েছে শাসকশ্রেনীর উদাসীনতা, যথোপযুক্ত আইনের অভাব এবং যেটুকু আইন আছে তার সুষ্ঠ প্রয়োগের অভাব।তাহলে কি এভাবেই আমরা আমাদের সঙ্গীত তথা সংস্কৃতিকে নির্বিকারচিত্তে বিকৃত হতে দেখব?আমাদের পরবর্তি প্রজন্মকে দিয়ে যাব একটি বিকৃত সংস্কৃতি?

লেখা পড়ে অনেকেই আমাকে প্রাচীনপন্থী,সংস্কার পরিপন্থী, প্রগতিবিরোধী এসব ভাবতে পারেন। কিন্তু না, আমি সেই জরাগ্রস্থ বুড়ো নই যে প্রগতীর দ্বারে আগল টানে, যে প্রাচীন পদচিহ্ন আকড়ে ধরে পরে থাকে মরনপণ,যার অন্তরাত্মা কেপে ওঠে নতুনের আগমনী বার্তায়।আমি প্রগতী বা পরিবর্তন বিরোধী নই,তবে আমি তথাকথিত প্রগতীর স্রোতে সকল পুরাতনকে ভেসে যেতে দিতেও নারাজ, আমি বিকৃতি বিরোধী। পুরনো পল্লিগীতি,লোকগীতি,নজরুল বা রবীন্দ্রসঙ্গীত এর সাথে আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের ব্যাবহার অবশ্যই গ্রহণযোগ্য তবে এ ক্ষেত্রে যেটা অবশ্য পালনীয় সেটা হল প্রকৃত গানের মূল সুর ও ভাবের অখন্ডায়ন। এবং এ পরিবর্তন অবশ্যই হতে হবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ও অনুমোদনক্রমে।

কিছু স্বল্পজ্ঞানী সঙ্গীত-পাপী তাদের সামাজিক অবস্থান ও অর্থের জোড়ে মিছে জনপ্রিয়তার লোভে বিকৃত করছে আমাদের সংস্কৃতিকে, কলুষিত করছে আমাদের সঙ্গীত সম্ভারকে।আসুন আমরা যে যার অবস্থান হতে এদেরকে রুখে দাড়াই। রক্ষা করি আমাদের সংস্কৃতিকে বিকৃতির হাত থেকে।এ সংস্কৃতি আমার, আমি যদি এর রক্ষাকল্পে এগিয়ে না আসি আর কেউ আসবে না। এখনই সময় এদের সকল অপচেষ্টা রুখে দাড়াবার। আসুন রুখে দাড়াই সংস্কৃতির উপর এই মেধাহীন অর্থলোলুপ আগ্রাসন।

নিচে বিকৃত মস্তিস্ক প্রসূত 'Rock with rabindranath' নামক একটি এ্যালবামের একটি গানের ভিডিও দেয়া হল। তার নিচে আছে অর্ণবের নতুন আঙ্গিকে গাওয়া দু'টি রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভিডিও। আপনিই সিদ্ধান্ত নিন কোনটাকে গ্রহন করা উচিত আর কোনটাকে বর্জন করা উচিত।







আমি ইহা কি হেরিলাম? :O তিশ্‌মা আফা'র কন্ঠে এত সুন্দর রবীন্দ্রসঙ্গীত?!! কেউ এই ভিডিওটার ব্যাপারে কিছু জানলে আওয়াজ দিয়েন।ব্যাকগ্রাউন্ড ভয়েস কি অন্য কারো? আমার তো বিশ্বাস হইতে চায় না !!!

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১০ বিকাল ৩:৪৯
৩টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×