আমার জন্ম নাকি মধ্যরাতে ।
চাচাদের মধ্যে কেউ পড়াশুনা জানত না । আব্বু অনেক কষ্টে নিজ চেষ্টায় পড়াশুনা শিখেন এবং একটা সরকারী চাকরীও একটা জুটিয়ে ফেলেন । মেজো হওয়া সত্ত্বেও একান্নবর্তী পরিবারে সবকিছু নাকি আব্বুর কথা মতই চলত ।
তখন অবশ্য আমার নানাদের হুলস্থুল অবস্থা । প্রথম নাতী আমি ।
সুতরাং ছোটবেলা থেকে চাচা এবং নানাদের পরিবার থেকে এত এত আদর যত্ন পেয়েছি যে আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না । চাচাদের সেসময় অবস্থা ভাল না হলেও আদর যত্নের কোন কমতি মনে পরে নাই । আর নানাদের বাড়িতে গেলে সে এক ইলাহি কান্ড । ইয়া বড় বড় ফল গাছ থেকে শুরু করে গাভীর দুধ কি যে ছিল না তাই মনে নাই ।
চাচা কিংবা নানাদের বাড়িতে যখনই বলেছি ঐটা নিবো কিংবা ঐটা আমার তখনই সেটা আমার হয়ে গেছে কেউ ভাগ বসানো তো দুরে থাক নাও বলে নাই । এসব কারনে জেদ জিনিসটা নিজের মধ্যে বাসা বেধেছিল ।
সারাদিন সবার কোলে কোলেই থাকতাম যে মাঝে মাঝে আম্মু রাত ছাড়া কোলে নেওয়ার সুযোগ পেত না । আমার এক চাচা তার কাঁধে নিয়েও হাল চাষ করছিলেন নাকি ।
গ্রামে থাকা চলবে না পড়াশুনা হবে না গালিগালাজ শিখবো এসব ভেবে পরিবারকে নিয়ে আব্বুর শহরের দিকে ছুটে চলা । শহরে আসার পর অনেকে কোলে নিতে চেয়েছে, আদর করতেও চেয়েছে তখন আর কারও কোলে উঠা হয়নি । নেওয়া হয়নি কারো আদরও ।
তখন থেকেই একা একা থাকার অভ্যাস একা একা চলার অভ্যাস । এজন্য মানুষের সাথে মিশতেও পারি না ঠিকমত ।
এমনকি গুনে গুনে বলতো পারবো আবার বন্ধু সংখ্যা এই কয়জন ।
তবে যে কারও ছোট ছোট কথাতেই উচ্চস্বরে হাসতে ইচ্ছে করে, কাউকে খুব আপন করি নিতে ইচ্ছে করে, কাউকে বুকে জড়িতে ইচ্ছে করে, কাউকে খুব ভালবাসতে ইচ্ছে করে । কিন্তু কেন জানি হয়ে উঠে না । মাঝে মাঝে খুব এলোমেলো লাগে, মাঝে মাঝে রাতের আকাশের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে, একা একা আনমনে হাটতে ইচ্ছে করে, কারও হাত ধরতে ইচ্ছে করে তার দিকে সারারাত তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে ।
হয়ে উঠে না হয়তো কখনই ইচ্ছাগুলো পুরনও হবে না । দিনশেষে মনে হয় নাহ নিঃসঙ্গতাই আমার সবচেয়ে আপনজন ।