কিংবদন্তীর ক্যানভাসে এস. এম. সুলতান - ২
কিংবদন্তীর ক্যানভাসে এস. এম. সুলতান - ৩
শিল্পী এস এম সুলতান - আল মাহমুদ
"শিল্পী এস এম সুলতান আমাদের চারুকলার ইতিহাসে পথিকৃৎ প্রধান শিল্পী। শিল্পচার্য জয়নুল আবেদীনের প্রায় সমসাময়িক এই মৌলিক চারুশিল্পী বহুকাল যাবৎ উপমহাদেশের রাজনৈতিক উত্থান পতন, দেশ বিভাগ ও অন্যান্য মানবিক আলোড়নের মধ্যেও তাঁর নিজস্ব এক ধরনের নিরপেক্ষতা বজায় রেখে চলেছেন। এই উদাসীনতা তাঁর ছবির এক তৃপ্তিকর অভিজ্ঞতার অভিব্যক্তি দান করেছে।
ফর্মের স্থির বিশুদ্ধতা, তাঁর ফিগারসমূহের দুরন্তগতি ও রঙের সুসম নমনীয়তা তাঁকে তাঁর সমসাময়িকদের থেকে সম্পূর্ণ স্বাতন্ত্র্যে বিচ্ছিন্ন রেখেছে।
যাঁরা একাডেমিক পারফেকশনের প্রশ্ন তুলে শিল্পীর পরীক্ষা-নিরীক্ষাকে চ্যালেঞ্জের সামনাসামনি দাঁড় করাতে ভালবাসেন, তাঁরাও সুলতানের ধ্রুপদী রচনার সামনে নিশ্চুপ। তাঁর ছবির অভিব্যক্তি সোজা সুজি দর্শকের মনকে নন্দিত করে তোলে। অবোধ্য বা অপরিচ্ছন্ন একটি তুলির দাগও তিনি ক্যানভাসে জমতে দেন না। তাঁর ছবির প্রধান বিষয় হল কর্মমুখর জনপদ, শস্যের জন্য নির্মিত উর্বরা ভূমি, সুগঠিত নারী ও জলাভূমিতে সচল জীবন প্রবাহ। এই অর্থে তিনি প্রকৃত বাঙালী শিল্পী।
সুলতানের ছবিতে জীবনের যে ব্যাখ্যা রয়েছে তা চিরন্তন। তিনি তাঁর সমকালকে এই চিরন্ততার মধ্যে লিপ্ত রাখতে চান বলেই নিজের জীবনকেও এক উদাসীন বাউলের জীবনের দৃষ্টান্ত করে তুলেছেন। কি আসে যায় বহমান নাগরিক জীবন তাঁর সম্বন্ধে কি প্রশ্ন করে। শহর থেকে বহুদূরে কোনো গ্রামের নিভৃতে কিছু গৃহপালিত প্রাণী নিয়ে তিনি বাস করেন। ছবি আকাঁর সরঞ্জাম যখন যা সংগৃহীত হয় সেই উপাদান নিয়েই আকঁতে বসে যান। একবার তিনি আমাকে বলেছিলেন, তাঁর আঁকার জন্য গোধুলীর আলো ও নির্জনতা মাত্র দরকার।
পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্র দেশের শিল্পী বলেই তাঁর রচনা সমূহের বাস্তবতাও সুন্দর স্বপ্নের মত। তাঁর আঁকা সব নরনারীই বাস্তবের নরনারীর চেয়ে একটু সুন্দর, পেশীবহুল, নিখুঁত এবং কর্মপরায়ণ। ফিগারগুলো বাস্তবের চেয়ে একটু বিস্তৃততর। এই বাহুল্যই সুলতানের প্রতিটি রচনাকে মহিমা দিয়েছে। এই স্বাতন্ত্র্য কিছুতেই উপেক্ষা করা যায় না।"
- ("কিংবদন্তীর ক্যানভাসে এস. এম. সুলতান" বই থেকে সংগ্রহীত)
কিংবদন্তীর ক্যানভাসে এস. এম. সুলতান - শেষ পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১১ সকাল ৭:৪৮