"সুলতানের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে মনে হয়, নিজ দেশ ও জাতি নিয়ে এক হিমালয়সম গর্ব, সাধারণ মানুষকে নিয়ে তাঁর দুর্নিবার অহংকার, ভালবাসা, মমত্ববোধ, পাশাপাশি সমাজের অন্যায়ের প্রতি প্রচন্ড প্রতিবাদ, ক্ষোভ, আন্দোলন তাঁর তুলির পরশে বিশাল বিশাল ক্যানভাসে জীবন্ত রুপায়িত হয়েছে। বিষয়বস্তুতে গ্রামবাংলার খেটে খাওয়া মানুষ, শ্রমিক, কৃষাণ, এদেশের কাদাজলের সাথে যাদের আত্মিক সম্পর্ক, যাদের রুটি-রুজির উৎপত্তি স্থল সেই মাঠ, প্রান্তর, সবুজ ধানক্ষেত, যেখানে জমি কর্ষণরত চাষী, রাখালেরা বাঁশীর সুরে মগ্ন, জেলে মাছ ধরায় ব্যস্ত, গৃহস্থালীর কাজে রত পল্লীবালা, মাছকোটা, ধানভোনায় ব্যস্ত সুখী পরিবারের চিত্র। কুঁড়েঘর, উঠোন, খড়ের পালা, কলাগাছের সারি, অলস দুপুরে গৃহিনীরা গল্পে রত। গোধূলী বেলায় দূরে কোথাও মেঠোপথে ধূলো উড়িয়ে পল্লী-বধূর নায়ওর যাওয়ার দৃশ্য। সারি সারি তাল, নারকেল গাছ, বনজঙ্গল, নদীতে পালতোলা নৌকা, মাঝির ভাটিয়ালী সুর, জাল দিয়ে মাছ ধরা, গুনটানায় ব্যস্ত মাল্লা, নদীর ঘাটে কলসীতে জল আনতে গ্রাম্য বধূর সলাজ চাহনী। বাংলার সোনালী আঁশ প্রক্রিয়াকরণরত কৃষক, কাপড় ধোয়া, শাপলা তোলা, পোলো দিয়ে মাছ ধরার দৃশ্য আরও কতকি। পাশাপাশি আবার আছে প্রচন্ড প্রতিবাদী পেশীবহুল সব মানুষ সড়কী, বল্লম, ঢাল, রামদা নিয়ে চরদখল, সম্পদ রক্ষায় শত্রুর মোকাবেলা, দেশরক্ষায় যুদ্ধে অংশগ্রহণের দৃশ্য।
বাংলার গ্রামীন জীবনকে তাঁর ছবির বিষয়বস্তু করার মূলে রয়েছে এই জীবনের প্রতি তাঁর প্রচন্ড আকর্ষণ, সাধারণ মানুষের প্রতি তাঁর সীমাহীন ভালবাসা।
রং-তুলি সেখানেই সক্রিয়, প্রাণবন্ত, যেখানে চাষা লাঙ্গল গরু নিয়ে জমতে যাচ্ছে, শক্ত হাতে হাল বইছে, কাস্তে হাতে ধান কাটছে, জাল দিয়ে মাছ ধরছে, মাঝি পাল তুলে ভাটিয়ালী গাইছে, পল্লীবধূ ধান ভানছে, শাপলা তুলছে, এইসব কিছুই তাঁর ছবির উপকরণ। তাঁর ছবিতে কোন কৃত্রিমতার ছাপ নেই, নেই কোন বিদেশী উপকরণ। এমনকি একাত্তরের যুদ্ধের ছবিতেও কোন বিদেশি বন্ধুক, রাওইফেল, মেশিনগানের ছবি স্থান পায়নি। সেখানেও কৃষক শ্রমিকের হাতে বল্লম, শড়কি, রামদা, ঢাল দিয়েই তিনি সংগ্রামের ছবি এঁকেছেন। "
- ("কিংবদন্তীর ক্যানভাসে এস. এম. সুলতান" বই থেকে সংগ্রহীত)
এস. এম. সুলতানের উপর দুইজন সহব্লগারের দুটি তথ্যসমৃদ্ধ পোষ্ট -
Click This Link
Click This Link
কিংবদন্তীর ক্যানভাসে এস. এম. সুলতান - ৩
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১১ সকাল ৭:৪৮