আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেল টা খুবই এডভেঞ্চার প্রিয়, ট্রাভেলারের দল। আমরা সময় সুযোগ পেলেই ব্যাগ গুছিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে পড়ি। ইউনিভার্সিটি লাইফের চার বছরে আমরা অসংখ্য জায়গায় উরাধুরা ঘুরাঘুরি করেছি। ভার্সিটি শেষ। সবাই কমবেশি জব লাইফের ব্যাস্ততায় পদার্পন করেছি। এর মধ্যে একদিনের আড্ডায় ঠিক করলাম যে সামনের তিনদিনের সরকারি ছুটি তে একটা ট্যুর দিয়েই ফেলব। ভাবছিলাম যে কোথায় যাওয়া যায় এই ছোট ছুটি তে। অনেক যাচাই বাছাইয়ের পর সিলেট ঠিক করা হল। এর আগে অবশ্য সিলেট গিয়েছি, তবে সেটা ছিল এডভেঞ্চারাস ট্যুর, রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট এ। এবার একটু আয়েশি ট্যুর ই চাচ্ছিল সবাই। সিলেট শহরের ভেতরের বা অল্প দূরত্বের জায়গা গুলো তে এবার ঘুরব ঠিক করলাম। ট্রেনে যাওয়াই ঠিক হল। ভাগ্য ভাল, পারাবাত এক্সপ্রেস এর বুধবার রাতের ফার্স্ট ক্লাস বার্থ এর বুকিং হয়ে গেল! ব্যাস এবার শুধু ব্যাগ ট্যাগ গুছিয়ে আমাদের ৬ জনের বেড়িয়ে পড়া!
নির্দিষ্ট দিনে, রাতের ট্রেনে চড়ে বসলাম। অসাধারণ সে অভিজ্ঞতা। জম্পেশ আড্ডা চলেছিল পুরোটা সময়। পরে অবশ্য একটা সময়ে আমি ঘুমিয়ে ও পড়েছিলাম। মোটামুটি ৭ ঘন্টার মত লেগেছিল। সকাল বেলা পৌঁছে গেলাম।ট্রেন স্টেশন থেকে অল্প ভাড়ায় সিএনজি অটোরিক্সা সবসময় পাওয়া যায়৷ তাতে চড়েই চলে গেলাম হোটেল হলি সাইডে। ছিমছাম, গোছানো।দেখে বেশ ভাল লাগল। দুদিনের জন্য তিনটা রুম ভাড়া করব, ইমতিয়াজের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড কার্ডে পেমেন্টের বদৌলতে তিনটা রুম রেটের উপর ১৫% ছাড় পেয়ে গেলাম। স্টেশনে নাশতা কেরেছিলাম। এবার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নিলাম। লাঞ্চের পর বের হবার প্ল্যান ছিল। লাঞ্চের জন্য হোটেলের রেস্টুরেন্টে গেলাম। তাদের স্পেশাল আইটেম ‘চিংড়ি মালাইকারি’ সহযোগে বাংলা খাবার দাবার নিলাম। অসাধারণ স্বাদ। খাবার দাবারের উপরও বাড়তি পাওনা ৫% ছাড়।
এরপর ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে চলে গেলাম ঘুরতে। সিএনজি নিয়ে মালনী চড়া চা বাগান আর লাক্কাতুরা চা বাগানে।খুবই সুন্দর জায়গা, চারিদিকে শুধুই সবুজ! চোখ জুড়িয়ে যবার মত। এর পরের গন্তব্য ছিল পর্যটন পার্ক।পাহাড়ের উপর থেকে এখানে পুরো সিলেট শহরটাই দেখা যায়।
রাতের খাবার টা সেরেছিলাম বিখ্যাত পাঁচভাই হোটেলে। হরেক রকম ভর্তা আর কবুতর ভুনা দিয়ে। এখানে খাবারের জন্য মানুষ লাইন দিয়ে থাকে, তারপর ও তাদের আতিথেয়তায় কোন কমতি নেই। ভাত আর ডাল আপনি পাবেন ফ্রি!
পরদিন বাসে গেলাম জাফলং ভোরে বের হওয়া তে অনেকটাই সময় পেয়েছিলাম। বর্ষায় জাফলং এর রুপ লাবণ্য যেন ভিন্ন মাত্রায় ফুটে উঠে। আমরা ট্রলার নিয়ে ভিতরের দিকে গিয়েছিলাম।স্বচ্ছ সুন্দর পানি, নিচে পাথরের রাজ্য! এদিকে আছে ভারত-বাংলাদের বর্ডার। এখানে আরও আছে চা বাগান ,খাসিয়া পুঞ্জি ও খাসিয়া রাজ বাড়ি ,পিয়াইন নদীর তীরে স্তরে স্তরে বিছানো পাথরের স্তূপ।সীমান্তের ওপারে ইনডিয়ান পাহাড় টিলা, ডাউকি পাহাড়ের জলপ্রপাত, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রীজ, পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ হিমেল পানি,পাহাড় আর অরণ্যের মেলবন্ধন ,সব মিলিয়ে আমরা মোটামুটি মোহাবিশিষ্ট!পানিতে গোসলের ইচ্ছে দমাতে পারিনি আমরা কেউই। সাথে শুকনো কাপড় ছিল। বদলে নিয়ে আবারো যাত্রা, তামাবিল গিয়ে দেখলাম বাংলাদেশ-ভারত বর্ডার যেখানে "বাংলাদেশ ০ কি: মি:" লেখা মাইলফলক আছে। এখানে বেশ কিছু মজার ছবি তুললাম, একই সাথে দুই দেশের মাটিতে দুই পা দিয়ে ছবি তোলা আরকি! এরপর জৈন্তাপুর ঘুরে গৌর গোবিন্দের প্রাসাদ দেখে আবার শহরের দিকে গেলাম। প্রচন্ড ক্ষুধার্থ ছিলাম! উন্দাল হোটেলে বেশ মজার বিরিয়ানি, নান আর ইন্ডিয়ান কারি দিয়ে পেটপূজা হয়ে গেল।
এরপর আবারও হোটেল রুমে ফিরে রেস্ট করলাম। সন্ধ্যায় বের হয়ে কিছু টুকটাক শপিং করলাম। রাতেই আবার রওনা দিতে হবে, পরদিন আবার সেই ব্যস্ত জীবনে প্রবেশ যে করতেই হবে!