এদেশে বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজের অপরাধ প্রচার করা হয়!######শহরের বিলবোর্ডগুলো অন্যায়ভাবে দখল করে বছরের পর বছর রাজনৈতিক নেতারা তাদের গুনগান প্রচার করছে। এদিকে কোম্পানীগুলো বিজ্ঞাপন সংষ্থাকে বিল পরিশোধ করছেনা। কারণ তাদের এড এর উপরে এখন স্থানীয় নেতাদের ছবি স্থান পাচ্ছে। অবৈধ কিছু বিলবোর্ড রয়েছে। কিন্তু রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণস্থানের বিলবোর্ডগুলো এখন অর্বাচিনদের দখলে। ফলে সেগুলো নবায়ন করছেনা মালিকপক্ষ এতে করে সব বোর্ড অবৈধ হয়ে যাচ্ছে। আর তাতে নেতাদের জন্য আরো সুবিধাই হচ্ছে। মাঝখানে এ শিল্পের ৭০ ভাগ কর্মী বেকার হয়ে গেছে। অনেকে ব্যবসায় গুটিয়ে নিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। এই শিল্পের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেও কোন লাভ হয়নি। এই দেশ হয়তো এভাবেই চলবে। সিটি কর্পোরেশন এর নতুন মেয়র অনেক হম্বিতম্বি করে। ট্রাক শ্রমিক আর হকারদের উদ্দেশ্য নানা নীতিবাক্য বর্ষণ করে। কিন্তু এখানে তিনি বড়ই বোবা। এই হলো নীতির বাস্তব চিত্র। এটা কি এজন্যযে এখন আর জনগনের ভোটে নির্বাচিত হতে হয়না। দলের ক্যাডার রাস্তার পাশে বিলবোর্ড লাগিয়ে আমরা নিজেরাই ঘোষণা করি
আমরা কে কত বড় দখলবাজ, লুটবাজ, জোরবাজ। মানুষকে দেখাই অন্যায় করার কতবেশী ক্ষমতা আমার। তাই তোমরা আমাকে ভয় কর। বিজ্ঞাপন সংস্থার বিলবোর্ডগুলো দখল করে আমরা নিজেদের ব্যক্তির আর দলের বিজ্ঞাপন দিচ্ছি। কমবেশী সব দলের নেতা কর্মীরা এই কাজটা করছে। দলের প্রধান থেকে কর্পোরেশন প্রধান, এমনকি জনতা। সবার সামনে হচ্ছে এই দখলবাজি। দখলবাজ নিজের ছবি ও পরিচয়ও দিয়ে দিয়েছে। অন্যের বিলবোর্ড দখল করে গৌরবের সহিত নিজের পরিচয় প্রকাশ করছি। অন্যায় করার এই গৌরব কেবল আমাদেরকেই মানায়। বাহ্ বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজের অপরাধ প্রচার করা হচ্ছে। সব আমলে এটা হয়। এবং যে সরকারই ক্ষমতাই থাকুক চিত্র হয়তো একইরকমই হতো।
সময় ও এলাকাভেদে বিলবোর্ড শিল্পের ৭০ ভাগ পর্যন্ত বোর্ড, কোথাও ৯০ ভাগ গত কয়েকবছর ধরে এই দখলবাজদের দখলে। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ এর চেষ্টা করেছেন এই সেক্টরের ব্যবসায়ীরা। এখানে হাজার হাজার যুবক বেকার হয়েছেন। বড়ো কোম্পানীগুলো দিনমস হিসেবে করে এখন বিল দেয়। ৩০ ভাগ ব্যবসার জন্য ১০০ ভাগ কর্মচারী পালার কি দরকার। তাই চাকরী হারিয়েছে অনেকে।
সবার চোখের সামনে ঘোষনা করা হচ্ছে। আমি অমুক। আমার পদবী তমুক। আমি সমুক দলের নেতা। দেখো আমার কতো ক্ষমতা। কতোবড় বিলবোর্ড আমি দখল করেছি। এই এলাকায় আসলে আমারই রাজত্ব। দেখো উপরের থেকেই সেটা অনুমোদিত। আর কোনায় দেখ ছবি লাগানো আছে আমি কাদের লোক। সূতরাং আমার সাথে কেউ লাগতে এসো না। আর এই এলাকার ২ নম্বরী ব্যবসাগুলো আমার দখলে থাকবে। নইলে কি আমি প্রকাশ্যে দখল করতে পারি। এসব বিলবোর্ড দেখলে আমার কাছে মনে হয় বিলবোর্ড থাকা ছবির এই ব্যক্তি এটাই বলতে চায়।
ভাবুন। আমার সবাই দেখছি এই ব্যক্তি অন্যায় করছে। সেটা সে বিলবোর্ড লাগিয়ে প্রচারও করছে। দেশের প্রধান, দলের প্রধান, সরকার প্রধান, আইন প্রধান, বিচার প্রধান, নগর প্রধান। সবাই দেখছে এবং মেনে নিচ্ছে এমনি উৎসাহ দিচ্ছে। তারাও এটার অংশ হচ্ছে কারণ তাদের ছবি আছে বিলবোর্ডের কোণায়।######নীতিমাজ মেয়র কিংবা নীতিবাক্যধারী কোনো দলীয় প্রধান কি একবারও তার অনুসারীদের বলেছে? ‘‘ তোমরা অন্যের রুটি রুজির এই জিনিস দখল করো না। অথবা এইটুকুও কি বলেছে যে, কোনো অন্যায়ভাবে দখলকরা বিলবোর্ড কেউ আমার ছবি ব্যবহার করতে পারবেনা। মাঝে মধ্যে অবৈধ বিলবোর্ড অপাসারণ করার নোটিশ দেয়া হয়। কিছু হয়তো অপসারিত হয়। সেটা হয়তো লোক দেখানো নইলে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হতো। তাছাড়া এই অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়না। এবং ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের কোনো সুবিধাও দেয়া হয়না। বরং বড়ো নেতা, মেয়র, কমিশনার তাদের ছবি লাগানোর মাধ্যমে এক ধরনের অনুমোদনও হয়তো তারা পেয়ে যায়।######ভাবতে অবাক লাগে। যাদের আশ্বাসে আমরা শুভদিনের স্বপ্ন দেখছি। যাদের বক্তব্য শুনে বলছি আহ কি মধুর বচন? তারা আসলে তা নয়, যা তারা বলছে। তারা আসলে তাই, যা তারা হতে দিচ্চে। তাহলে পুরো সমাজ ব্যবস্থা দখলদারী ব্যবস্থার উপর প্রতিষ্ঠিত?। তাহলে, নাগরিক অধিকার, মানবাধিকার কিংবা জমি জিরাত দখল হলে হা হুতাশ করে কি লাভ? বরংতো আমার কাছে মনে হয় তাদের জবরদখল করার প্রচুর ক্ষমতা থাকা সত্বেও মানুষের ভিটেমাটি দখল না করে তারা যে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছে এজন্য তাদের প্রশংসা করা উচিত সাধুবাদ দেয়া উচিত।######আমাদের নৈতিকতা ও মানবিকতা যখন এই পর্যায়ে তখন কিসের এত আস্ফালন? কিসের এত নীতিকথা। আমিতো বিজ্ঞাপন লাগিয়ে আমার অপকর্ম প্রচার করছি। যে দেশে এটা স্বাভাবিক যে দখল করলে টপ লেবেল থেকে সমর্থন পাওয়া যায়। অন্যায়কে বিশাল বিজ্ঞাপন লাগিয়ে গর্বের সহিত প্রকাশ করে সব দলের লোকেরা। এটা কোনো একক দলের কথা নয়। যার যেমন ক্ষমতা তার তেমন দখল। দেশ সভ্যতার সব প্যারামিটারে উন্নীত হয়েছে কিনা আমার আশংকা থেকে যাচ্ছে?######তাহলে এটা কি রাজনীতি বা প্রশাসনের বা আ্ইনের সমস্যা? হয়তো সমস্যাটা সে পর্যায়ে হিয়ে চোখে পড়ে। কিন্তু এই সমস্যা ১০০ ভাগ সামজিক সমস্যা। সমাজের###আরো নানা অনিয়ম, অপরাধের ভিড়ে এই অন্যায়টা হয়তো অন্যায় মনে হয়না।######হয়তো ৫০/১০০ বছর পর যদি এদেশের মানুষের নৈতিকতা, দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয়। তখন হয়তো বই পত্রে লেখা থাকবে আজ থেকে এত বছর আগেও এদেশের মানুষ অন্যায় করাকে গৌরবের ও সম্মানের মনে করতো। তাই জেলফেরত আসামী, ২৩ খুনে অভিযুক্ত, প্রকাশ্যে গুলি করে মানুষ খুন করা লোকেরা এবং দখলবাজ লোকেরা তাদের সফল অন্যায়ের পর সেটা বিলবোর্ড লাগিয়ে বলে দিত। সরাসারি না বলে তারা বিভিন্ন অকেশানে জনগনকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাতো। তারা মুলত অন্যদের বিলবোর্ড জোরপূর্বক দখল করেই তাদের নাম ছবি প্রকাশ করতো। এটা দলের হাই কমান্ড থেকে অনুমোদিত হতো। এতে কিছু লোকের ব্যবসায়, কর্মসংস্থান এমনকি রুটি রজির সমস্যা হলেও সেটাকে আমলে নেয়া হতো না। বরং যে যতবড় অন্যায়কারী তার বিলবোর্ড তত বড় হতো। জানি না সত্যি সেদিন আসবে কখনো কিনা।######হয়তো সমাজের সার্বিক অন্যায়ের ফলে এই অন্যায়কে অন্যায় মনে করছেনা অনেক মানুষ। কিন্তু এই অন্যায় বা দখলের প্রভাবতো সমাজের আরো অন্য কিছুর উপর প্রভাব ফেলতে পারে। অন্যরা মনে করতে পারে। এভাবে কারো বাইরের জিনিসপত্র দখল করা দোষ নয়। এভাবে নিজের নাম প্রচারের জন্য অন্যের রুটি রুজির ক্ষতি করা জায়েজ। এভাবে সমাজে আগামী দিনে অন্যায়ের ক্ষেত্র আরো প্রসারিত হবে বলে মনে হয়।######ছবি: দৈনিক পত্রিকা থেকে নেয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৭ রাত ১১:০০