যিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু তিনি আবার ন্যায় বিচারক ও কঠিন শাস্তিদাতা!?
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
ইদানিং কিছু নাস্তিক প্রশ্ন তুলেছেন। ইসলামের এই বিশ্বাস নিয়ে। আল্লাহ যদি ক্ষমাশীল হবেন তাহলে বিচার করবেন কিভাবে? আর যদি দয়ালু হন তাহলে ন্যায় বিচারক কিভাবে হবেন? কিংবা যদি কঠিন শাস্তি দাতা হন তাহলে দয়ার সাগরে কিভাবে হলেন? বিষয়টা আসলে কি সে আলোচনায় যাওয়ার আগে। আমরা বিচারক, দয়া, দয়ালু, ন্যায় বিচারক, কঠিন শাস্তিদাতা বিষয়গুলো একটু জেনে নিই তাহলে আলোচনা সহজ হতে পারে।
১. দয়ালু:
দয়ালু শব্দের অর্থ যিনি দয়াবান, দয়া দেখান বা যার দয়া আছে। এই দয়া গরীব দুখীর প্রতি হতে পারে। সাধারণ মানুষের প্রতি হতে পারে। জীবের প্রতি হতে পারে। অপরাধীর প্রতি হতে পারে কি? হতে পারেইতো। কিন্তু সেটা কি রকম একজন খুন করলো আর আপনি তাকে মাপ করে দিলেন এটা আবার কি ধরনের দয়া? কেন দয়া নয়। অনেক খুনিকেতো দয়া দেখানো হয়। হাঁ কিন্তু সেটা কি ভালো?
বিষয়টা দয়া কিনা এটা নির্ভর করছে এর প্রভাব এবং উদ্দ্যেশের উপর। একজন লোকের সাথে প্রেসিডেন্ট এর ভালো সম্পর্ক তাই সে মাফ পেলো। এটা দয়া হলেও ন্যায় সঙ্গত নয়। একজন বিচারক মোটা টাকা খেয়ে একজনকে বাঁচিয়ে দিলে এটা নিশ্চয় দয়া নয়। একজন বিবাদী দেখলেন যে, তার আত্মীয়র যে খুনি সে পেশাদার খুনি নয়। রাগের মাথায় ভুলে মাথায় বাড়ি দেয়ার কারণে ঘটনাটা ঘটেছে। সে তার ভুল বুঝতে পেরেছে। সে কিছু ক্ষতি পূরণ দেবে অন্যদিকে। তার তিনটা কচি কচি বাচ্চা রয়েছে। ৬ জনের পরিবারে সে একমাত্র রোজগেরে ব্যক্তি। তার ফাঁসি বা জেল হলে পরিবার পথে বসবে। এই কথা বিবেচনা করে তার ফাসি রেয়াত কররে অন্য শাস্তি দিতে বলল। অথবা শাস্তি কমিয়ে দিল। এখানে বিচার এবং ক্ষমা দুটোই হলো। এটা সত্যিযে আমাদের বিদ্যমান বিচার ব্যবস্থায় সব সময় সঠিক সিদ্বান্ত হয়তো নিতে পারে না। কিন্তু এর অর্থ এই নয়যে, আজ থেকে বিচার ও ক্ষমা একসাতে চলতে পারবেনা হয়তো বিচার চলবে নয়তো ক্ষমা।
অথবা একজন খুনি আত্মরক্ষার জন্য খুন করেছে। বা কোনো নারী ধর্ষণ থেকে বাঁচার জন্য খুন করেছে। সেখানে অন্য বিকল্প থাকা সত্বেও সে আসামী ওই পথ বেঁচে নিয়েছে। ওই মুহুর্তে অতো ভাবার সময় ছিলো না। এই বিবেচনায় আদালত তার শাস্তি কমিয়ে দিয়েছে। তাকে দয়া করেছে। এটাও দয়া নাকি ন্যায় বিচার? হয়তো দুটোই।
দুই : বিচার
প্রথম কথা হলো বিচার মানে কিন্তু শাস্তি নয়। বিচার মানে হচ্ছে একটা লোককে জবাবদিহি করা। বিচারের মাধ্যমে একটা লোকের শাস্তিও হতে পারে, ফাঁসিও হতে পারে, তিনি বেকসুর খালাসও পেতে পারেন। বিচারের মাধ্যমে তৃতীয় কোনো ব্যক্তির অপরাধ বের হতে পারে। কখনো কখনো বিচারে স্বাক্ষী কিংবা বিবাদীও ফেঁসে যেতে পারেন। বিচার হলো অপরাধী সনাক্তকরণ ও শাস্তি দেয়া কিংবা নিরপরাধীকে মুক্ত করা কিংবা সত্য মিথ্যা জানার একটা প্রক্রিয়া মাত্র। যদিও সংশ্লিষ্টদের ভুলের কারণে বা সদিচ্ছার অভাবে কখনো কখনো তা সঠিক ভাবে হয়না। সেটা ভিন্ন ইস্যু।
তাহলে দাঁড়ালো বিচারের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির যেমন শাস্তি হতে পারে তেমনি তিনি মাফও পেতে পারেন, মুক্তিও পেতে পারেন। আবার সার্বিক বিবেচনায় তার মানসিক অবস্থা (আমরা জানি মানসিক বিকারগ্রস্থের জন্য অনেক শাস্তি প্রযোজ্য নয়, গর্ভবতী মা, দুগ্ধদায়ী মা, শিশুর জননীর জন্য অনেক সময় শাস্তি প্রযোজ্য নয়) পরিবেশ, যুক্তি ইত্যাদি বিবেচনায় শাস্তি এক রকম হয়না। বিচারিক প্রকিয়ার মাধ্যমে কোনো দেশে বাদী কতৃক, কোনো দেশে আদালত কতৃক, কোনো দেশে রাস্ট্রপতি কতৃক ক্ষমা করে দেয়া হয়। তাহলে আইনের অনুশীলন অনুযায়ী বিচার এবং মুক্তি পারস্পরিক সাংঘর্ষিক কি? বিষয় হলো এইযে বিচারের মাধ্যমে ক্ষমা বা মুক্তি হলে সেটা কি আইনসিদ্ধ, যথার্থ, মানবিক কিংবা পরবর্তী কোনো সমস্যার সৃষ্টি করবে? নাকি সমস্যার সমাধান করবে? এর উত্তর যদি ইতিবাচক হয় মানুষ বলে সঠিক বিচার, নেতিবাচক হলে বলে ভুল বিচার। তাহলে এখানেও বিচারের সাথে ক্ষমার সম্পর্ক আছে।
তিন: ক্ষমাশীল
দয়া সব ক্ষেত্রে চলে। আমি পথের পথিককেও দয়া করতে পারি। ক্ষমা সবক্ষেত্রে চলে না। ক্ষমা চলে কেবল অপরাধীর ক্ষেত্রে। আমাদের সমাজে বিভিন্ন অপরাধের জন্য বিভিন্ন শাস্তি দেয়া হয়। আদালতেও তাই। সব ধর্মেও তাই বলা আছে। আবার দেশভেদে অপরাধের শাস্তি ভিন্ন ভিন্ন হয়। এমন আছে, এক যা পাপ- অন্য দেশে পূন্য।
তথাপি আমরা যদি শুধু সেইসব অপরাধকে বিবেচনায় আনি যেগুলো দেশ ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর। সেগুলোর সাধারণত মারাত্মক শাস্তি নির্ধারিত থাকে। তারপরও কখনো শাস্তি কমানো হয়। সেটা বিবাদীর দেশের জন্য অবদান বিবেচনা করেও হয়। আমরা জানি ইউরোপ আমেরিকায় আমরা দেখি সেলিব্রেটিদের জন্য জেল জরিমানার বদলে কখনো শাস্তি হিসেবে জনসেবা করার কাজ করতে বলা হয়। এটা কি ক্ষমা। কেউ বলবেন ক্ষমাইতো। জনবেসা করাতো সহজ কাজ। একটা বিষয় পরিষ্কার হলো ক্ষমা শুধু নেতিবাচক না ইতিবাচক কারণেও হতে পারে। আপনি অবশ্যই আপনার ক্ষতিকারিকে ক্ষমা করতে পারেন ভবিষ্যতে সে যদি ভালো কিছু করে। সে যদি ক্ষতিপূরণ দেয়, অথবা তাকে ক্ষমা করলে যদি শান্তি ফিরে আসে। অথবা তাকে ক্ষমা করলে যদি সে ভুল বুঝতে পারে অথবা তাকে ক্ষমা করলে যদি আরো ১০ জন মানুষ উপকৃত হয়। এর মানে বিচার বা শাস্তি থেকে ক্ষমা করার মাধ্যমেও আপনি সমাজের উপকার করতে পারেন বা ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। যদিও সব সময় ক্ষমার বিনিময় তেমনটা নাও হতে পারে। অবশ্যই সব সময় এবং সব অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রযোজ্য নয়।
জীবনের বিনিময়ে যদি তিনমন ধান হয় আপনি বলবেন এটা অন্যায়। জীবনের বিনিময়ে যদি সমজাতীয় জিনিস হয় তাহলেইতো বলা হবে ন্যায্য। আর জীবনের বিনিময়ে জীবন ছাড়া আর কি হতে পারে? তাই এটা ন্যায্য করার জন্য পরিমান উভয় দিকে সমান রাখা হলো। তাই বলে কি প্রতিবার জীবনের বিনিময়ে জীবন করে পৃথিবীকে শুধু মানুষ মারার নিয়ম চালু হতে পারে না। আবার সব সময় ক্ষমা দিয়ে খুনিকে এই মেসেজ দেয়া যায়না যে, খুন করা কোনো বড় অপরাধ নয়। কিন্তু সমাজে শান্তি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য ক্ষমার সুযোগ রাখা হলো। তাহলে বিচারের সাথে ক্ষমার সুযোগ রাখা ন্যায় বিচার। নাকি চোখের বিনিময়ে চোখ তুলে তুলে জাতিসুদ্ধ অন্ধ হয়ে যাওয়ার নাম ন্যায়বিচার?
চার: শাস্তি
আমাদের দেশে বেশীর ভাগ মনে করেন শাস্তি মানে প্রতিশোধ। এজন্য কথায় কথায় বিচার চাই, ফাঁসি চাই, শোধ চাই এসব বলা হয়। সকলের অবগতির জন্য বলে রাখি। শাস্তি মানে প্রতিশোধ নয়। পৃথিবীতে মানুষের জন্ম প্রতিশোধ নেয়ার জন্য হয়নি। হয়তোবা আমরা সিনেমায় দেখে শিখেছি ‘‘ তুই আমার বাবাকে খুন করেছিস, আমি তোকে হত্যা করবো শয়তান’’ তারপর পুলিশ এসে বলে আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না।’’ মানে প্রতিশোধের দায়িত্ব আইন বিভাগ নিয়েছে। আবারো বলছি শাস্তি মানে প্রতিশোধ নয়।
শাস্তি কখনো ক্ষতিপূরণ। কারণ বাসচাপা পড়ে মানুষ মারা গেলে ক্ষতিপূরণ দিলে হয়। ফাঁসি হয়না। কারণ ধরে নেয়া হয় ড্রাইভার ইচ্ছা করে হত্যা করেনি। মূলত শাস্তি হলো দৃষ্টান্ত। শাস্তি কথাটার আগে আদালতে এবং আইনের ভাষায় একটা কথা বলা হয়। ‘‘দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক’’, বা ‘‘দৃষ্টান্তমূলক ‘‘সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করা হলো’’। এবং এর ব্যাখ্যাও দেয়া হয়ছে, আর কোনো ব্যক্তি যেন এই ধরনের অপরাধ করার সাহস না পায়। আইন এবং বিচার ব্যবস্থা প্রতিশোধের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সমাজে শান্তি কল্যাণ ও নিরাপত্তার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই বিচারের মাধ্যমে সেভাবে শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। যেখানে শাস্তি প্রতিশোধের জন্য নয় সেটা সমাজের কল্যানের জন্য। তাই বাস্তবেও অনেক বিষয় বিবেচনা করে কিছু কিছু অপরাধ ও অপারাধীর ক্ষেত্রে অপরাধ প্রমাণ কিংবা স্বীকৃত হওয়ার পরও তার শাস্তি লঘু করা হয়। এখন যৌক্তিক কারণে, আইনগত পন্থায়, সমাজের বা কোনো পরিবারের কল্যানে কিছু মানুষের ভালোর জন্য ক্ষমা করাকে মানুষ যখন ইতিবাচকভাবে দেখে। সেটার জন্য সেই যথার্থ শাস্তি যেটা দিলে মনে হতো কর্ম অনুযায়ী ফল পেয়েছে সেটা কমিয়ে ক্ষমা প্রদর্শণ করা হলে সেখানে কি বিচার ও ক্ষমা একসাথে হতে পারে না?
এখন প্রশ্ন হলো আল্লাহর বেশীরভাগ শাস্তি তো পরকালে তখন এসব দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কি মূল্য আছে? আল্লাহর কিছু শাস্তি ইহকালেও আছে। এখানে আবার প্রথম কথায় আসি আল্লাহ যেহেতু ক্ষমাশীল ও ন্যায়বিচারক সেহেতু আল্লাহর ক্ষমা এবং শাস্তি এমনভাবে সাজানো তাতে তিনি চাইলে ক্ষমা করার পরও ন্যায়বিচার করতে পারেন। আবার বিচার করার পরও ক্ষমা করতে পারেন। বিষয়টা খুলে বলা যাক। একজন লোক পাপ বা অপরাধ করেছে এখন আল্লাহ যদি ক্ষমাশীল না হয়ে শুধু বিচারক হন তাহলে ওই লোককে তাৎক্ষতিক সাজা দিতে হবে এতে করে তার হয়তো অনুশোচনা কিংবা ভালো কাজ করার সুযোগ থাকবেনা। তাহলে বিচারের জন্য সমাজ হয়তো ভালো কিছু থেকে বঞ্চিত হতো।
আবার কাউকে শুধু ক্ষমার পর ক্ষমা করা হলো। সে সারাজীবনে শুধরাতে পারলো না। এভাবে তার জীবন অতিবাহিত হলো। তাহলেতো ন্যায়বিচার হবে না। এজন্য তাকে পরকালে হলেও জবাব দিতে হবে। এখন কাকে কখন কি কাজের জন্য আল্লাহ নগদে বা বাকিতে শাস্তি দেবেন বা ক্ষমা করবেন সেটাতো আল্লাহর এখতিয়ার। এখন আল্লাহর বিচারের জন্য সবসময় জন্য বসে থাকার কথাও আল্লাহ বলেন নি। আল্লাহ মানুষকে তাদের ব্যবস্থার মধ্যে অপরাধীকে তাদের বিবেচনায় শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা দিয়েছেন। এমনকি আল্লাহ নিজেও কোরআনের মাধ্যমে শাস্তির বিধান দিয়েছেন। সেখানেও শাস্তি নির্ধারণের পাশাপাশি ক্ষমা করে দেয়ার কথা বলেছেন। কোথায় কঠোর হতে হবে সেটাও বলেছেন। তাহলে আল্লাহ তাআলার ন্যায়বিচারক ও ক্ষমাশীল হতে বাঁধা কোথায়? বিশেষ করে তিনি যখন ন্যায় বিচার করতে বলেছেন এবং অবস্থায় বিবেচনায় ক্ষমাও করতে বলেছেন।
এখন এইযে মানুষকে মানুষের বিচার করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। সেটা শারিরিকভাবেও দেয়া হয়েছে। বিধানিক ভাবেও দেয়া হয়েছে। হুকুম আহকামের মাধ্যমেও দেয়া হয়েছে। এই লেখাতে বলেছি। আমরা আমাদের বিচার ব্যবস্থায় শাস্তি বা মওকুফি দেয়ার সময় কখনো কখনো সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি। কাউকে বিনাদোষে শাস্তি দিয়ে বসি আবার কাউকে দোষ করেও মওকুফি দিয়ে থাকি। আর এজন্যই পরকালের বিচার ব্যবস্থা আছে। পৃথিবীতে আমাদের ভুলটা সেখানে দেনাপাওনার মাধ্যমে ক্ষতি পুষিয়ে দেয়া হবে। কেউ মাফ পাবে কেউ সাজা ভোগ করবে। সেখানেও আল্লাহ শর্তসাপেক্ষে কাউকে কাউকে মাপ করে দেবেন, যিনি ক্ষমা করে দেবেন তিনি কি ক্ষমাশীল নয়? আর সেদিনও আল্লাহ কাউকে কাউকে ক্ষমার অযোগ্য ঘোষণা করবেন এবং শাস্তি দেবেন। তাহলে তিনি তখন ন্যায় বিচারক ও কঠিন শাস্তিদাতাই বটে।
আরেকটা কথা বলে শেষ করবো। ভাব সম্প্রসারণ করতে গিয়ে বইতে পড়েছি, যে বিচারিক আসামীর ব্যথায় ব্যথিত হন তিনি প্রকৃত বিচারক। যিনি আসামীর প্রতি ক্ষব্ধ বা প্রতিশোধ প্রবণ হন তিনি প্রকৃতি বিচারক নন। আবার বলছি বিচার মানে সাজা নয়। আর সাজা মানে প্রতিশোধ নয়। এই সাধারণ শব্দগুলো যারা না বুঝবে, এই প্রাথমিক জ্ঞানটা যার নেই সে বিভ্রান্ত হতেই পারে। আমি সাধারণ মানবিক জ্ঞান দিয়ে বলতে চেয়েছি। ধর্মের বানী দিয়ে নয়। প্রকৃত ন্যায় বিচার হচ্ছে সে বিচার যেখানে চূড়ান্ত ফায়সালা দেয়ার আগে যৌক্তিক কারণ থাকলে মানবিক বিবেচনা থাকবে। ক্ষমার সুযোগ আছে কিনা সে বিবেচনা করে বিচারের রায় হবে। যেখানে ক্ষমার কোনো স্থান নাই। সে বিচার ন্যায় বিচার নাই। সেটা হয়তো প্রতিশোধ নয়তো অমানবিকতা। আর প্রকৃত ক্ষমা হচ্ছে সেটা যেটা সীমা থাকবে হিতাহিত বোধ থাকবে। যে ক্ষমায় কোনো বাছ বিচার নেই। সেটাতো ক্ষমা নয়। সেটা অপরাধের জন্য একধরনের উসকানী।
এই লেখা কোনো সওয়াবের নিয়তে লিখিনি। আমার শিক্ষা, জ্ঞান ও দেখার জগৎ থেকে লেখা। উপলব্দি ও অনুভূতি থেকে লেখা। যদি পৃথিবীতে বিবেচনাহীন বিচার আর শর্তহীন ক্ষমাই বর্তমান হয় যা এই লেখার বিপরীত। তাহলে আমার ধারণাগুলো বিনাবাক্যে স্বীকৃত হবে না। আর যদি ব্যবস্থাটা আসলেই এমন (হয়তোবা সব সময় পুরো পারফেক্ট হয়না) যে, মানবিক মূল্যবোধ বজায় রেখেই বিচার, আর বিচারিক বিবেচনা বজায় রেখেই ক্ষমা, তাহলে প্রতিটি লাইন জীবনের মত সত্য। না আমি সবজান্তা নই, সব বুঝতাও নই। কোনো নাস্তিক বা আস্তিকের আমার সাথে একমত হওয়া জরুরী নয়। শুধু বিষয়গুলোর বাস্তবতা অনুধাবন করাই প্রত্যাশা করি। কারণ বাংলাদেশের বালখিল্য নাস্তিকরা যুক্তি তর্কে, জ্ঞান-ধারণায় বা বাস্তবতার কোনোটারই ধার ধারে না। তাদের এসাইনমেন্ট হলো এদেশের ইসলাম ও মুসলিমদের আক্রমণ করতেই হবে। সে তার নিছক ধারণা দিয়ে সব কিছুকে বিচার করছে আর প্রশ্ন তুলছে অথচ তার ধারণা ভুল, অপরিপক্ক, অসুম্পূর্ণ ও গোঁড়া।
আর এসব কারণে যেসব পরিবার তাদের সন্তানকে শুধু নামাজ রোজা শিক্ষা দিয়েছেন কিন্তু ইসলামের মৌলিক ধারণাগুলো শিক্ষা দেন নাই সেসব পরিবার থেকে একদিকে বের হচ্ছে জঙ্গি অন্যদিকে নাস্তিক। নাস্তিক এবং জঙ্গিবাদী - ইসলাম সম্পর্কে উভয়ের দৃষ্টিভঙ্গি এক। একপক্ষ মানে আরেক পক্ষ মানে না। পার্থক্য শুধু এ্টুকুই।
যে ব্যক্তি আগেই ধরে নিয়েছে সে যা ভাবছে তাই সঠিক তারতো বিগড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ১০০ তে ১০০। সকলের অবগতির জন্য বলছি মানুষের বিভিন্ন রকম মানসিক রোগ আছে। যেমন কেউ ভাবলো সে যা বুঝে সব ভুল সব বোগাস। সে কিছুই জানে না। সে কোনো কাজের নয়। এটা এক ধরনের মানসিক রোগ। আবার বলছে, সে যা বোঝে সেটাই ঠিক। তার কথার জবাব কেউ দিতে পারবেনা। তার যুক্তি কেউ খন্ডালে সে সেটা মেনে নেয়না। এটাও একটা মানসিক রোগ। আপনি যে উদ্ধত নাস্তিককে এমন দেখছেন, হতে পারে সে কোনো মানসিক রোগী। তাকে রুক্ষভাবে না দেখে আপনার চারপাশে অন্য মানসিক রোগী গুলোকে যেভাবে দেখেন তাকেও সেভাবে দেখুন। তার সাথে নরম ভাষায় কথা বলুন। তার কথা শুনুন তাকে বুঝতে চেষ্টা করুন। খুব বেশী উচ্ছৃংখল ও নোংরা মনের হলে বা আপনার পক্ষে তাকে মেনে নেয়ার মত না হলে তাকে এড়িয়ে চলুন।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:০৬