বাংলাদেশে সামাজিক পর্যটনের শুভ সূচনা
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
একটি একক ভ্রমণ দিয়ে শুরু হয়েছে বাংলাদেশে সামাজিক পর্যটনের। আমাদের পর্যটন স্থানগুলোতে রয়েছে দরিদ্রতাসহ নানা সমস্যা। গত কয়েক বছরে পর্যটন স্থানগুলোতে থাকা, খাওয়া ও যোগাযোগ সুবিধার অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে একথা মানতেই হবে। কিন্তু এই উন্নয়নগুলো পর্যটনের সাথে সম্পুরক নীতিতে তৈরী করা হয়নি। সড়ক এর ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও অন্য ক্ষেত্রে মোটেও তা হয়নি। কিছু রাস্তার মোড়ে সেখানকার পরিচায়ক মনুমেন্ট তৈরী করা হয়েছে। যেমন খুলনায় চিংড়ী, রাজশাহীতে আম, সিলেটে চা বাগান। এমনটা হওয়া উচিত প্রতিটি জেলা এবং উপজেলা শহরে। এছাড়া হোটেল স্থাপনায় দেশীয় রুচি ইতিহাস ঐতিহ্য প্রাচীণ স্থাপনার কোনে ছাপ কোথাও নেই। পাশ্চাত্য ভাবধারায় তৈরী বিল্ডিংগুলো কি আমাদের দেশকে পরিচয় করে? নিশ্চয় করে না। পর্যটন সম্পর্কিত দেশীয় স্থাপনাগুলো অন্তত ইতিহাসের পুরনো স্থাপনাগুলোর আদল কিছুটা হলেও রাখা যেতে পারে। আমি জানি না সেভাবে কেউ ভেবেছেন কিনা। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন এর মোটেলগুলোতে হলেও থাকা চাই, কুমিল্লার ময়নামতি, পাহাড়পুর বৌদ্দবিহার এরকম আরো পুরনো স্থাপনার আদল। পুরো স্থাপনা যদি সম্ভব না হয় তাহলে বাইরের আদল কিংবা প্রবেশ পথ কিংবা ছাদে বা প্রবেশ পথে অন্তত একটা রেপ্লিকাতো থাকতে পারে।
যাই হোক গত বছর আমি পায়ে হেঁটে তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ ভ্রমনের মধ্য দিয়ে সামাজিক পর্যটনের সূচনা করি। আমার পায়ে হাঁটা ভ্রমণে আমি বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে এবং পথে পথে গরিব অসহায় মানুষকে সাহায্য করে আমি পুরো সফরকে একটি সামাজিক সফরে রুপান্তর করে বাংলাদেশে সামাজিক পর্যটনের সূচনা করি।
সামাজিক পর্যটন কয়েকটি শাখা রয়েছে
১. কমিউনিটি বেজড ট্যুরিজম: যাতে কমুউনিটির লোকদের সম্পৃক্ত করে ট্যুরিস্টদের সেবা দেয়া হয়।
২. জীবনমুখী ট্যুরিজম: এতে মানুষের জীবেনের নানা দিক ও জীবন যাপন তুলে ধরে মানবিক আবেদন তৈরী করা হয়।
৩. গ্রামীণ ট্যুরিজম: গ্রাম ও গ্রামের মানুষের জীবন দেখার পর্যটনও এক প্রকার সামাজিক পর্যটন।
৪. কৃষিভিত্তিক ট্যুরিজম: কৃষি ও কৃষককে উপজীব্য করে যে পর্যটন চিন্তা করা হয় সেটাই কৃষিভিত্তিক পর্যটন। এখানে একজন কৃষক জড়িত না থেকে কমুউনিটির একদল কৃষকের সম্পৃক্ততা থাকে বিধায় এটাও সামাজিক পর্যটন।
৫. সমাজ কল্যান মূলক পর্যটন: যে পর্যটনে পর্যটকেরা কোনো এলাকায় গিয়ে সে এলাকা দেখার পাশাপাশি সেখানকার মানুষের কল্যানে কোনো কাজ করে তাকে আমরা সমাজকল্যাণ মুলক ট্যুরিজম বা ওয়েলফেয়ার ট্যুরিজম বলতে পারি।
৬. মানবিক ট্যুরিজম: যদিও ওয়েলফেয়ার ট্যুরিজম এক প্রকার মানবিক ট্যুরিজম। তবে যদি ট্যুরিজমে যাওয়ার পর একজন পর্যটক একজন মানুষের দূ:খ দুদর্দশা দেখে তার পাশে দাঁড়ায় তাহলে সেটাকে মানবিক বা মানবিয় পর্যটন বলায় যায়।
৭. দূর্যোগ পর্যটন: দূর্যোগ পর্যটন এক প্রকার সমাজ কল্যাণমূলক কিংবা মানবিক পর্যটন। প্রাকৃতিক দূর্যোগ বা কৃত্রিম কোনো দূঘর্টনায় স্থানীয় মানুষদের জন্য সাহায্য নিয়ে সেখানে যাওয়ার নাম দূর্য়োগ পর্যটন।
সর্বশেষ সামাজিক পর্যটনকে আনুষ্ঠানিক রুপ দিতে পেরে খুব ভালো লাগছে। গত ১৮ ও ১৯ তারিখ ২ দিন ভলেনটিয়ার বাংলাদেশ এর ১৭ জন তরুন এর একটি টিম নিয়ে আমরা যাই প্রবাল দ্বীপ সেন্টমাটিনে সেখানে ২ দিন থেকে আমরা ২টি পরিচ্চন্নতা অভিযান পরিচালনা করি। কারণ ট্যুরিস্টদের রেখে আসা ময়লায় দ্বীপ নোংরা হয়ে আছে। আর ২দিন আমরা ২টি ব্লাড গ্রুপিং কর্মসূচীর মাধ্যমে দ্বীপের প্রায় ৫শ লোককে তাদের রক্তের গ্রুপ জানতে সাহায্য করি। দ্বীপের ২/১ জন লোক ছাড়া বেশীর ভাগ লোক জানে না তাদের রক্তের গ্রুপ কি? এবং এটা ছিলো সেন্টমার্টিন দ্বীপের কয়েকশ বছরের ইতিহাসে প্রথম ব্লাড গ্রুপিং কার্যক্রম। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে সোস্যাল ট্যুরিজম আনুষ্টানিকভাবে যাত্রা শুরু করলো।
বলা বাহুল্য সোস্যাল ট্যুরিজম নামে নতুন হলেও কাজে আসলে নতুন কিছু নয়। যখন কোনো একক ব্যক্তি বা দল কোনো এলাকা ভ্রমণ করে এবং সেটা কোনো ব্যবসায়িক কিংবা ঘোরার উদ্দেশ্যে নয় বরং সেখানকার লোকদের জন্য কোনো কল্যাণমুলক কাজের উদ্দেশ্যে তখন সেটাই সোস্যাল ওয়েলফেয়ার ট্যুরিজম।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৭ রাত ১১:১১