সবার আগে দেশ
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
মাঝেমধ্যে হতাশ হয়ে পড়ি, ধর্মবিশ্বাসের জন্য অন্য ধর্মের অথবা নিজ ধর্মের লোকদের গলা কেটে হত্যা করতে হবে? কই, এটা তো আগে কখনো শুনিনি। তাহলে কারা বানাচ্ছে এসব? আপনি বলবেন আমেরিকা আর ইসরায়েলের কাজ। ইসলামের দুশমনরাই এসব সৃষ্টি করেছে। বাহ, সুন্দর কথা। কথা সত্য অথবা হয়তো সত্য। কিন্তু এই বলে কি আমরা পার পেয়ে যাব? মুসলিম হিসেবে বা মানুষ হিসেবে অথবা একজন দেশপ্রেমিক হিসেবে আপনার কি কোনো দায়িত্ব নেই? অন্যের ওপর দোষ চাপাতে চাপাতে মুসলিম সমাজ আজ নিজেদের কর্তব্যের কথা ভুলে গেছে। বৃহত্তর মুসলিম সমাজের ভেতর থেকে যতক্ষণ এসবের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ ও প্রতিকার না হবে ততক্ষণ এর থেকে মুক্তি নেই। তাই আজই ঠিক করুন নিজের করণীয় আর কাজ করুন দেশের জন্য।
এই লেখা যখন শেষ করেছি তখন আমেরিকায় নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হয়েছেন। মুসলিমবিদ্বেষী, বর্ণবাদী, জুয়াড়ি, আরো নানা নেতিবাচক অভিধা রয়েছে তার সাথে। তার পরও তিনি জিতেছেন। কিছু মানুষ হতাশ হয়েছেন। আমেরিকানরাও প্রতিবাদ বিক্ষোভ করছে। সাম্প্রদায়িকতা ও বর্ণবাদ থেকে কোনো দেশ এখনো মুক্ত নয়। মুসলিমদের ওপর হামলা হলে ইরান প্রতিবাদ করে, হিন্দুদের ওপর নির্যাতন হলে ভারত প্রতিবাদ জানায়, বৌদ্ধদের সমস্যা হলে থাইল্যান্ড উদ্বেগ জানায়, এতে কি এটাই প্রমাণিত হয় না যে সাম্প্রদায়িক চিন্তা থেকে গোটা পৃথিবী এখনো বের হতে পারেনি? বরং সাম্প্রদায়িকতা ও বর্ণবাদের নতুন নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতাই একমাত্র সমস্যা তা নয়। সমস্যা আঞ্চলিক সাম্প্রদায়িকতাও। কারণ আঞ্চলিকতার বিবেচনায় নাকি চাকরি আর প্রমোশন হয়। রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িকতা আজ হিংস্র পশুর আকার ধারণ করেছে। কারণ রাজনৈতিক পরিচয়ে ঠিক হয় কার ফাঁসি হবে আর কে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পাবে। আমরা সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী, এই বলে যারা শ্লোাগান দেয় তারা বিশ্বাসভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। তারা যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় নীতি-আদর্শে বিশ্বাস করে সেটাকে মূল ধরে, যাদের বিশ্বাসের সাথে তাদের বিশ্বাসের বৈপরীত্য আছে সে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এসব অসাম্প্রদায়িক লোকদের মিডিয়ার প্রচারণা, সংস্কৃতির আগ্রাসন, বক্তৃতার আক্রমণ এবং রাজনীতির রোষানলস তারা প্রয়োগ করে চলেছে। আর বলছে আমরা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্নে বিভোর। তাই এসবের অবসান চাই। চাই সব ধরনের সাম্প্রদায়িকতামুক্ত, প্রতিহিংসা মুক্ত এক নতুন বাংলাদেশ। যেদেশে শুদ্ধজীবন চর্চায় বেড়ে উঠবে আমাদের আগামী প্রজন্ম।
এগুলো হয়তো হতাশার জায়গা। কিন্তু সমস্যা আছে বলেই কাজ করতে হবে। দেশের কথা বলতে হবে। সবার আগে দেশ। আমার সাথে ধর্ম, রাজনীতি, এলাকা, আদর্শ, পেশা কিংবা চিন্তার মিল নেই বলে তাদের বিরুদ্ধে আমাকে অস্ত্র বা কলম নিয়ে কেন লেগে থাকতে হবে অথবা আলাদা কমিউনিটি গড়ে তুলে কেন আমি আলাদা সম্প্রদায়ের মতো বসবাস করব আর বলব আমি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার। তাই প্রত্যেকে নিজের জায়গা থেকে কাজ করুন। সবার সাথে সবাইকে মিলে সবার জন্য কাজ করুন। যতক্ষণ আমরা এক না হব ততক্ষণ আলাদা আলাদা মতবাদের সাম্প্রদায়িকতা আমাদের কুরে কুরে খাবে। দেশকে ভালোবেসেও আমরা দেশের পক্ষে তখন তাজ করতে পারব না। তখন আমরা প্রতিপক্ষকে দমন করা যায় কীভাবে সে সিদ্ধান্তগুলোই নেব। এটা আমাদের মধ্যে বিভেদ-বিভক্তি সৃষ্টি করবে। আর সে বিভক্তিটাই আসলে সাম্প্রদায়িকতা। আমরা যেন মনে রাখি সবার আগে আমার চিন্তাকে অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়া নয়। সবার আগে দেশ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১:২২