শাহপরীর দ্বীপে স্বাগতম
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
এখানে আপনাকে স্বাগতম জানাতে অপেক্ষা করছে লবণক্ষেতের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া চিকন নদীর সামুদ্রিক স্রোত। আপনাকে স্বাগত জানাতে বসে আছে সারি সারি সাদা গাঙচিল। আপনাকে স্বাগত জানাতে অপেক্ষায় আছে জেলেপাড়ার ছোট ছোট শিশু কিশোরের দল। আপনার অপেক্ষায় দিন গুনছে জোয়ারের সময় পানিতে আধাআধি ডুবে যাওয়া গাছগুলো। আপনার অপেক্ষায় আছে লাজুক লাল টুক টুক কাঁকড়াগুলো যেগুলো আপনার আগমনের শব্দ টের পেলেই লুকিয়ে যাবে গোলার চরের বালিতে।
তাহলে শাহপরীর দ্বীপ আসতে পারেন নিশ্চয়। আসতে পারেন টেকনাফ ভ্রমনের সাথে আরেকটু বাড়তি ভ্রমণ যোগ করে। যেতে পারেন সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাওয়া বা আসার পথে। সেক্ষেত্রে সেন্টমার্টিনে যাওয়ার জন্য আপনাকে জাহাজের বদলে বোট নিতে হবে আর শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত যেতে হবে সিএনজি ও নৌকায়।
ভাবছেন এত কষ্ট করে গিয়ে কি দেখবেন? এখানে আছে তিনটি সমুদ্র সৈকত। এখান থেকে সূর্যোদয় সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায় অনায়াসেই। এখানকার গোলারচরে বালুকাময় নির্জন সৈকতে যখন পূর্নিমার চাঁদের আলো পড়বে তখন সে দৃশ্য আপনার চোখে লেগে থাকবে। ঘোর লাগা এক অনূভুতি থেকে মন বলে উঠবে ‘‘ এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে কেন চলে যেতে হবে একদিন’’। হঠাৎ মনে হবে পৃথিবী অনেক সুন্দর আর জীবন অনেক মূল্যবান। এই অনূভূতিটা পাওয়ার জন্য অন্তত একবার শাহপরীর দ্বীপ বেড়াতে আসুন।
এখানে এলজিইডির একটি বাংলো আছে দোতলা চাইলে এখানে রাতযাপন করতে পারবেন। এর সামনে একটি রেস্টুরেন্ট আছে। এখানে সামুদ্রিক মাছ দিয়ে ভোজ দিতে পারবেন। সমুদ্রের জেলেদের কাছ থেকে তাজা মাছ। সমুদ্রের মাছ নিশ্চয় তড়পড় লাফাচ্ছে এ অবস্থায় কিনে খাওয়ার সুযোগ হয়নি। মিলে যেতে পারে সে সুযোগ। এখানে জেলেরা নৌকা ভেড়ায় জেটিতে তাদের কাছ থেকে কিনে নিতে পারবেন তাজামাছ।
কিভাবে যাবেন? কক্সবাজার থেকে টেকনাফ সরাসরি বাসে যেতে পারেন ভাড়া নেবে ১৪০ টাকা। টেকনাফ থেকে বোট কিংবা সিএনজিতে ভাড়া নেবে মাত্র ১০০ টাকা। আর যদি সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে আসেন তাহলে ১৫০০ থেকে ২০০০ হাজার টাকা নেবে স্প্রিড বোট। তবে ভীড়ের সময় এই ভাড়া আরো বেশী হয়। অফ সিজনে আরো কমও হতে পারে।
শাহপরীর দ্বীপ দিয়ে ইয়াবা পাচার হয় এবং রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে তাই এখানে বিজিবি কড়া পাহারায় থাকে। আগেই তাদেরকে জানিয়ে রাখলে কোনো ঝামেলায় পড়ার সম্ভাবনা থাকেনা। যারা একটু ভয় পান তারা নভেম্বর থেকে মার্চ এর মধ্যে যাবেন। আর যারা এডভেঞ্চার প্রিয় তারা এপ্রিল থেকে আগষ্ট এর মধ্যে যাবেন।
এখান থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত জায়গাকে বলে বাংলা চ্যানেল। ইংলিশ চ্যানেলের মতো খরস্রোতা নাহলে সামুদ্রিক এই চ্যানেল পার হওয়া বেশ চ্যালেঞ্জিং। সৌখিন সাতারু ও এডভেঞ্চার প্রিয় অনেকেই এটি পাড়ি দিয়েছেন।
আমি ২০১৬ সালের ১২ ফ্রেব্রুয়ারী থেকে ২৮ মার্চ পায়ে হেঁটে তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ ভ্রমণ করি। আমার ইভেন্ট এর নাম ছিলো ‘‘দেশদেখা’’ আমার স্লোগান ছিলো ‘‘দেখবো বাংলাদেশ গড়বো বাংলাদেশ’’। আমার পার্টনার ছিলো বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন আর স্পন্সর ছিলো ট্যুর ডট কম ডট বিডি নামের একটি কোম্পানী।
পায়ে হেঁটে দেশভ্রমণ নিয়ে আমার বই ‘‘দেখব বাংলাদেশ গড়ব বাংলাদেশ প্রকাশিত হয়েছে ২০১৭ সালের বই মেলায়। ১৯২ পৃষ্ঠার বিদেশী অফসেট পেপারে ছাপা ৯৬টি ছবি ও ৫০ হাজার শব্দের গাথুনিতে পুরো ভ্রমণের বিস্তারিত পাবেন। বইতে। অনলাইন থেকেও বইটি কেনা যায়। আমি এখানে কোনো কর্মাশিয়াল লিংক দিতে চাইনা। গুগল থেকে - দেখব বাংলাদেশ গড়ব বাংলাদেশ- লিখে সার্চ দিলে পেয়ে যাবেন। যেসব অনলাইন শপে বিক্রি হচ্ছে সেগুলোর লিংক। ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৪:১১