পায়ে হেঁটে দেশভ্রমণ: টুকরো স্মৃতিগুলো (এক)
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
দেখবো বাংলাদেশ গড়বো বাংলাদেশ স্লোগান নিয়ে একটানা ৪৬ দিনে হেঁটে এসেছে ১১৭৬ কিলোমিটার। ১২ ফ্রেব্রুয়ারী থেকে ২৮ মার্চ তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ ভ্রমনের খন্ড খন্ড স্মৃতি নিয়ে এই ধারাবাহিক লিখনি।
পুরনো মন্দির
১৮ ফ্রেব্রুয়ারী রামসাগরের উত্তর পাড়ে একটি পুরনো মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ পেলাম। কিন্তু দিক নির্দেশনা কিংবা কিতাবাদিতে এর কোনো বিবরণ পাইনি মনে হলো যেন এটা আমিই প্রথম আবিষ্কার করলাম। অথচ এর নির্মাণশৈলী নির্মাণ কাঠামো, মন্দিরগাত্রে শিলা, অলংকার, নকশা সকল বিবেচনায় একে একটি দেখার বা বুঝার এক কথায় প্রতœতাত্বিক স্থান বলে মনে হলো। অন্তত ছবি দেখেও তাই মনে হবে বৈকি?
যাই হোক নতুন মন্দির। ভ্রমণকারীদের জন্য সেখানে ঘোরা, বসা, পিকনিক বাস রাখা, ঘুরে বেড়ানোর জন্য ভ্যান, ছায়ানিবিড় সব ব্যবস্থাই রয়েছে। কিন্তু তবুও কোথায় যেন একটা কিছু ঘাপলা আছে মনে হলো এখানে সেখানে পড়ে আছে মাদক সেবনের প্রমাণ, পানিতে পড়ে ভাসছে ফেন্সির বোতল। বাহ বাহ কি চমৎকার দেখা গেলো। ঘুরে বেড়ানো স্থানীয় দূরন্ত কিশোরদের ভবিষ্যত নিয়ে বুকের মধ্যে ধক করে একটা ধাক্কা দিয়ে গেলো। এই পরিবেশে বেড়ে ওঠা কিশোররা কি বহন করবে মাদক সেবনের দায়িত্ব অথবা মাদক ব্যবসায়ের ভার। যদি তাই করে তাহলে তারই দায় কার? আমার? আপনার? দেশের? সরকারের? সমাজের? সবার?
খেলার সাথী
ওদেরকে কোনোভাবেই এড়িয়ে যেতে পারি না। পথে পথে সব জায়গায় ওরা আমার খেলার সাথি আর সুখ দু:খেরর সাথীও হয়েছিলো। গ্রামের দূরন্ত শিশুর দল আমার স্ট্রলার গাড়ী দেখেই আমার কাছে ছুটে আসে। বিকেল বেলায় পথে পথে নানা খেলায় মেতে থাকে গ্রামের শিশুকিশোররা যদিও আজকাল কোচিং সেন্টার শিশুদের এই সময়টাকে হাইজ্যাক করে নিয়ে গেছে। কিন্তু তবুও সবারটা হয়তো নিতে পারেনি কারণ শুধু সময় দিলেতো হবে না, এজন্য টাকাও দিতে হয়। সব পিতামাতা হয়তো পয়সা দিয়ে কোচিং কিনতে পারেন নি। গ্রামে ফুটবল, ক্রিকেট, হাডুডু, ব্যাডমিন্টন, দাড়িয়াবান্ধা, সাতার সহ নানা খেলাই খেলতে দেখেছি।
আরো ছবি: দেখার জন্য ফেসবুকে আমার পেইজে ভিজিট করুন। অথবা গুগল থেকেও দেখদে পারেন।
লিংক: https://www.facebook.com/jshovon/
কিন্তু আজ ২৫ ফ্রেব্রুয়ারী যাদের সামনে আছি এরা হলো রাইসমিলে শ্রমিকদের সন্তান। অতি অল্প বেতনের এক ধরনের মানবেতর জীবন যাপন করেই এদের জীবন ধারণ। তাদের সন্তানরা কোথায় পাবে খেলার সরঞ্জাম আর কোথায় পাবে খেলার মাঠ। একটি রিক্সার টায়ার তাদের অনেক সাধনার, আনন্দেরও বটে। জীবনের অনেক আনন্দ হারিয়ে হয়তো এতটুকু আনন্দ তাদের অনেক দামে কেনা। এটা যদিও সে অর্থে প্রত্যন্ত গ্রাম নয়। মহাসড়কের পাশে ধানের চাতাল এখানে কিছুটা শিল্পাঞ্চল ভাব আছে। ওরা বিকেল বেলায় ধানের চাতালেই খেলছে পরম আনন্দে। আমি ছবি তোলা ছাড়া আর কি করতে পারি। আর দেখতে পারি ছবি তোলার জন্য ওদের পরষ্পরের প্রতিযোগিতা।
নয়াবাদ মসজিদ।
দিনাজপুরে কান্তজীর মন্দিরের পাশে যে মসজিদটি রয়েছে। সেটিও প্রায় সমসাময়িককালের এই মসজিদটি প্রাদপ্রদীপের আলো থেকে বঞ্ছিত। আমার মনে হয় এটাকে আরো প্রমোট করা উচিত এবং এর উন্নয়নে কিছু কাজ করা দরকার। নয়াবাদ মসজিদ। মজার ব্যাপার হচ্ছে যে শিল্পীরা কান্তজিউ মন্দির তৈরী করেছে তারাই তৈরী করেছে এই মসজিদ। কান্তজিও মন্দিরের সংস্কার করা হয়েছে কয়েকদফা, আশপাশে সৌন্দর্যবৃদ্ধি করা হচ্ছে। পুরনো একটি স্থাপনার জন্য নতুনে সৌন্দর্যেরে চেয়ে পুরনো ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ তাই সেটাও খেয়াল রাখা উচিত। ১৭ ফ্রেব্রুয়ারী।
ভাব
যেখানে দুপুরের খাবার খেলাম। জায়গাটার নাম শাপলাপুর কোথাও শামলাপুর লেখা আছে। একটি হোটেল চিংড়ি মাছ দিয়ে খেলাম বেশ সুস্বাদু রান্না মনে হলো। জনসাতেক লোকের একদল তরুন হেঁটে যাচ্ছিল হাতে সবার লাঠি। মনে হয় ট্র্যাকিং করছে টেকনাফ টু কক্সবাজার। কথা বলতে চাইলাম কেউ পাত্তা দিলো না। বলছি ২৭ মার্চ এর কথা।
এ ধরনের কোনো কিছু করতে গেলে সম্ভবত নিজের মধ্যে একটা ভাব এসে যায়। জিনিসটা ভালোভাবে খেয়াল করলাম। বগুড়ায় এক লোককে দেখলাম। লাল পোষাক পরিহিত সাইকেলে চড়ে যাচ্ছে। তাতে লেখা ছিলো সাইকেলে চড়ে দেশভ্রমণ, আলাপ করতে চাইলাম। একবার আড়চোখে দেখে নিজের পথে চলল। ঢাকায় এক বয়স্ক লোককে পেলাম তার সাইকেলে লেখা রয়েছে। সাইকেলে চড়ে হজ্জগমন করতে চাই। তারসাথে কথা বলতে চাইলাম তিনিও দাম দিলেন না। আমার স্ট্রলার দেখে তারা প্রথমে ভাবে আমি ফেরীওয়ালা কোনো কিছু বিক্রি করছি। আরে ভাই ফেরীওয়ালা কি মানুষ না। ফেরীওয়ালা মনে করেও কি কথা বলা যায়না।
কই আমিতো এই ভাবটা নিইনাই। বরং মানুষের সাথে কথা বলতে বলতে আমার জার্নিটা বেশ কয়েকদিন বেশী হয়েগিয়েছিলো। নচিকেতার গানের মতো করে তাই বলি ‘‘আমি এক ফেরীওয়ালা ভাই। স্বপ্ন ফেরী করে বেড়াই।’’
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৪