হঠাৎই গতকাল এক পরিচিত ব্লগারের মেইল পেলাম। মেইলের সারমর্ম, বাঁধ ভাঙার আওয়াজ মরতে যাচ্ছে। অলুক্ষণে কথা। ভাবলাম কি না কী! স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে 'বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজে' নতুন কিছু ফিচার সংযোজন করা হয়েছে । আজ পুরো ব্লগ দেখেটেখে মনে হচ্ছে, সেই ফিচারের বিষাক্ত বাতাসে মৃত্যু হয়তো নয়, কিন্তু নিশ্চিতভাবেই আত্মহত্যার দিকে একধাপ এগিয়ে যাওয়ার আয়োজন ব্লগে প্রায় সম্পন্ন।
ব্লগে যে সপ্রাণ এক গতিময়তার দেখা মেলে সবসময়, সেটা হারিয়ে যাচ্ছে প্রথম পৃষ্ঠা খুললেই। ব্লগ যেন থমকে দাঁড়িয়েছে হঠাৎ। সংকলিত পোস্ট ও ক্রমানুসারে পোস্ট দিয়ে সামহোয়্যারইনকে বিভাজন করা হয়েছে স্পষ্টভাবে। আচমকা এক বৈষম্যের দেয়াল উঠে গেছে বাঁধ ভাঙার আওয়াজজুড়ে। এ বিভাজন কিংবা বৈষম্য মেনে নিতে মন সায় দিচ্ছে না কিছুতেই। অটো মডারেশনের আড়ালে একটি স্ক্রিপ্ট ব্লগারের সৃজনশীলতা মাপবে কিংবা কোনো ব্লগারের ভালো-মন্দ ঠিক করবে- এই বালখিল্যতা আমি মানছি না। ব্লগ কর্তৃপক্ষের কয়েকজন মিলে আমার চারিত্রিক সনদ দেবেন- এটাও আমি মানছি না। জানি, সংকলিত পোস্টের তালিকায় আমার পোস্টও থাকতে পারে। কোনো না কোনোদিন থাকবেই নিশ্চিত। কিন্তু তাতে আমি মোটেও স্বস্তি পাবো না।
ব্লগে বিজ্ঞাপন থাকতে পারে। ব্লগ সচল রাখার জন্য কর্তৃপক্ষ আয় করতেই পারে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, তা যেন দৃষ্টিকটু না হয়। নতুন কিছু ফিচারে বাগ আছে। তা নিয়েও অভিযোগ করার কিছু দেখছি না। যে কোনো পরীক্ষামূলক ফিচারেই বাগ থাকতে পারে, সেটিই স্বাভাবিক। সময়মতো বাগগুলো ফিক্স করা হবে- এ আশায় অপেক্ষা করা যেতে পারে। "রিপোর্ট এবিউজ" ও "সাম্প্রতিক মন্তব্য করেছি" অংশটি তো ভালোই লাগছে। যদিও প্রথম পাতার অঙ্গসজ্জা একপলক দেখেই মনে হয়েছে এটি একটি স্লেট, কোনো এক শিশু যেখানে খেলেছে ইচ্ছেমতো। তা নিয়ে কৌতূহল দমন করা গেলেও জানার খুব ইচ্ছে, কর্তৃপক্ষের তালিকায় কোন্ গুণে একজন ব্লগার নিরাপদ এবং কোন্ দোষে একজন সন্দেহভাজন? কোন্ গুণে একজন নিয়াজ মোহাম্মদের কবিতা "সংকলিত", এমনকি এক ধরনের স্টিকিও? আবার একজন রাতিফের কবিতা কিংবা একজন ফরিদের গুগলের মেঘমালা কেন সাধারণের কাতারে? কোন্ বিচারে? পোস্টের সংকলনইবা কে বা কারা করছেন, কিভাবে করছেন? যদি এ নিয়ে কোনো নীতিমালাও হয়, তা হবে কিসের ভিত্তিতে?
সবচেয়ে জরুরি প্রশ্নটি হল, আগামী দিনগুলোতে যা প্রায়ই ঘুরেফিরে আসবে, সামহোয়্যার কি সূক্ষ্মভাবে ব্লগারদের পছন্দ-অপছন্দকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে? ব্লগারের পায়ে বেড়ি পরানো, মুখে তালা লাগানোর চেষ্টা, তার ইচ্ছেমতো বিচরণের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া আজ মহান স্বাধীনতা দিবসেই বড়ো এক দুঃসংবাদ। এ নিয়ে কারো দ্বিধা থাকতে পারে, তবে আমি নিশ্চিত!
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০০৮ রাত ৮:২১