বিচিত্র এক গাছের নাম কলস ফুল গাছ।এই গাছটির অনেক বিশেষত্ব রয়েছে যার মাঝে একটি হল এর পাতা বা ডাল কেউ যদি ছিড়ে ফেলে তাহলে সেখান থেকে রক্ত বের হয়।
গাছটির অবস্থান নড়াইল জেলা শহর থেকে ৭-৮ কিলোমিটার দুরে নিধিখোলা গ্রামে (বীরশ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মদ শেখের গ্রামের বাড়ি মহিষখোলার পাশের গ্রাম)। শোনা যায় পাশের পাইকমারি গ্রামের ইন্তাজ মজুমদার একজন কবিরাজ ছিলেন।তিনি একবার জিন বশে আনার সাধনা শুরু করেন এবং একসময় এমন একজায়গায় চলে যান যেখানে কোন মানুষের চিহ্ন নেই।চারপাশে ঘন জঙ্গল এবং সেখানের বাসিন্দারা সবাই জীন-পরী।সেখানে তিনি বন্দি জীবন যাপন করতে থাকেন এবং ফিরে আসার আপ্রাণ চেষ্টা করেন।একদিন এক পরীকে তিনি অনেক অনুরোধ করলেন তার ফেরার ব্যাবস্থা করার জন্য এবং পরী রাজী হল।তাকে গাছের একটা ডালে উঠে চোখ বন্ধ করে থাকতে বললো পরী।কিছুক্ষণ পরে তিনি চোখ খুলে দেখেন তিনি নিজের এলাকায় চলে এসেছেন এবং তিনি যে ডালটিতে উঠে বসেছিলেন সেটি মাটিতে পুতে রাখা।পরবর্তীতে এই গাছটিই প্রকাণ্ড আকার ধারণ করে এবং কলস ফুল গাছ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।উপরের কথাগুলো রূপকথার গল্প মনে হলেও এগুলো এড়ানোর কোন উপায় নেই কারণ ঐ এলাকার সবাই এটা বিশ্বাস করে এবং এর পেছনে অনেক যুক্তিও আছে।
কলস ফুল গাছের ফুলের রঙ কালচে লাল , অনেকটা রক্তের মত । এই ফুলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো এর মধু।একেকটা ফুলে প্রচুর পরিমাণ মধু থাকে।২০০৩ বা ২০০৪এর দিকে এই মধু একবার খাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিলো আমার।এই মধুর জন্যই মূলত গাছের কদর ছিল।কিশোর,তরুণ,যুবকেরা এই মধু খাওয়ার জন্য ভিড় জমাতো।কিন্তু ভয়ংকর ব্যাপারগুলো ঘটতো গাছের সাথে বেয়াদবি করলে। একবার এক যুবক (এনায়েত ফকির) গাছের ডালে বসে প্রশ্রাব করে এবং পরদিন সকালে প্রচণ্ড পেট ব্যাথার কারণে মারা যায়।এরকম অনেক ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে কলস ফুল গাছকে কেন্দ্র করে।গরু বা ছাগলে এর পাতা ছিড়ে ফেললে ছেড়া জায়গা থেকে রক্ত লাল কষ বের হতো।
অন্যান্য গাছের মত বড় না হয়ে এই গাছ ধীরে ধীরে ছোট হচ্ছে বা মাটিতে পুতে যাচ্ছে।আগে এই গাছে উঠতে অনেক বড় মই ব্যবহৃত হতো কিন্তু সময়ের সাথে সাথে পুরো গাছটিই মাটিতে হারিয়ে গেছে।এর একটি ডাল কেবল মাত্র অবশিষ্ট আছে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১৬ দুপুর ২:৫৩