শিক্ষক মাত্রই বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। সাধারণভাবে শিক্ষকদের বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যায়, একজন শিক্ষার্থীর প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠার পেছনে পিতা-মাতার চেয়ে শিক্ষকদের অবদান কম নয়। যে জাতি যত শিক্ষিত সেই জাতি তত উন্নত। আর শিক্ষকরা জাতির প্রধান চালিকাশক্তি। সত্য ও সুন্দরের পথ হচ্ছে একজন আদর্শ শিক্ষকের সাধন-দর্শন। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র তথা দেশ ও জাতি তার দ্বারা উপকৃত হয়। এজন্য শিক্ষকদের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান দেখানো উচিত। রাসূলুল্লাহ (স) যে ঐশী জ্ঞান লাভ করেছেন, আল্লাহ প্রদত্ত সেই জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি মানবজাতিকে স্রষ্টা, মানুষ ও প্রকৃতির পারস্পরিক সম্পর্কের নীতিমালা শিক্ষা দান করে নিজের পরিচয় তুলে ধরে বলেছেন, ‘শিক্ষক হিসেবে আমি প্রেরিত হয়েছি।’ (তিরমিযী)
মানব সভ্যতা বিকাশের পশ্চাতে রয়েছে শিক্ষক সমাজ। শিক্ষাকে সব উন্নয়নের পূর্বশর্ত হিসেবে ধরলে শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার বিকল্প নেই। তাইতো পবিত্র কোরআনের প্রথম নাজিলকৃত আয়াতে জ্ঞানার্জন তথা বিদ্যাশিক্ষার অধিকারী হতে বলা হয়েছে। এ মর্মে আল্লাহতাআলা ইরশাদ করেন, ‘পড়! তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন একবিন্দু জমাট রক্ত থেকে। পড়! আর তোমার প্রতিপালক পরম সম্মানিত। যিনি কলমের দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা সে জানত না।’ (সূরা আল-আলাক, আয়াত: ১-৫) আল-কোরআনের শিক্ষার আলোকে জ্ঞানার্জনের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স) বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর ওপর বিদ্যা অর্জন করা ফরজ।’ (ইবনে মাজা)
একজন প্রাজ্ঞ, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সত্যিকারভাবে শিক্ষিত আদর্শ শিক্ষক সমাজ বদলে দিতে একটি বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারেন।
আমাদের শিক্ষক সমাজঃ
একজন শিক্ষক যেমনিভাবে একটি জাতিকে উন্নত করতে পারেন ঠিক তেমনিভাবে জাতিকে ধ্বংসও করতে পারেন । আজ আমাদের শিক্ষক সমাজ তাদের প্রাপ্ত সম্মানটুকু ধরে রাখতে পারছেননা । পত্রিকার পাতা খুললে প্রায়-ই দেখি কতিপয় শিক্ষক নামধারী বদমাশের হাতে আমাদের বোনদের শ্লীলতাহানির খবর । যেখানে একজন ছাত্রীকে শিক্ষকের নিরাপত্তা দেয়ার কথা সেখানে এরকম ঘটনা শিক্ষকদের সম্মান ক্ষুন্ন করে । অপরদিকে শিক্ষকদের কোচিং বানিজ্যের কথা না বললেই নয় । সেই কচি কচি ছেলেমেয়েদের তিনি দুর্নীতি শেখাচ্ছেন । কোচিংয়ে পড়লে মার্ক বেশী পাওয়া যায় , এই ধারণা বাচ্চাদের মনে ঢুকিয়ে তাদেরকে স্কুল বিমুখ করে কোচিংমুখী করতে তথাকথিত এই শিক্ষকদের জুড়ি নেই । যখন একই ধরনের উত্তর লেখার পরও নিজের কোচিংয়ের পরিচিত ছাত্রকে বেশী নাম্বার দেন , তখন স্বভাবতই অন্য ছাত্রটি তাকে মন থেকে সম্মান করবেনা । যখন একজন ছাত্রের প্রাপ্য অধিকারটুকু শিক্ষক না দেন , তখন ঐ শিক্ষকের প্রতি ছাত্রটির ঘৃণা-ই জন্মে । ছোট্ট একটা প্রয়োজনে ছাত্রকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাড় করিয়ে রেখে শিক্ষক যখন আয়েশ করেন , তখন মনে হয় এ কোন সমাজে বাস করছি আমরা ?
একজন শিক্ষক যখন তুচ্ছ কারণে ছাত্রের লাইফ হেল করে দেন , তখন সেই ছাত্রটি প্রতিশোধ নেয়ার পথ খুঁজে । যেসকল শিক্ষকরা ছাত্রদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছেন তার উল্টো পিঠে হয়তো রয়েছে করুণ ইতিহাস.........।
আসলে শিক্ষকরা নিজেরা নিজেদের মর্যাদা হারাচ্ছেন । শিক্ষকেরা প্রত্যক্ষভাবে দুর্নীতি , স্বজনপ্রীতি , সম্পদপ্রীতি , অন্যায়-অবিচার , গর্ব-অহংকার ইত্যাদি শেখান না , তবে এগুলোর বীজ বপন করে দেন । সেই ছোটকাল থেকে একজন ছাত্রের মগজে দুর্নীতি , স্বজনপ্রীতি , সম্পদপ্রীতি , অন্যায়-অবিচার , গর্ব-অহংকার ইত্যাদি ঢুকিয়ে দেয়া একজন শিক্ষক যখন তার-ই ছাত্রদের দ্বারা নির্যাতিত হন তখন মনে হয় , উনি যেন উনার কর্মের ফল ভোগ করতেছেন । আজকাল সমাজে শিক্ষকের অভাব নেই , তবে পিতৃতুল্য শিক্ষকের বড়ই অভাব ।
বিঃদ্রঃ সব শিক্ষক সমান নয় ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৬ রাত ৮:৩৮