সম্প্রতি আয়নাবাজি নামে একটা সিনেমা রিলিজ দেওয়া হয়েছে। পরিচালক বিজ্ঞাপন নির্মাতা অমিতাভ রেজা। আরো একবছর আগে থেকেই এর প্রচারণা শুরু হয়েছে। যাই হোক, পরিচালক যেহেতু বিজ্ঞাপন নির্মাতা, সেহেতু তার মার্কেটিং সেন্স ভালো হবে সেটাই স্বাভাবিক। তিনি এক্ষেত্রে সফল। মিডিয়ায় যারা কাজ করেন, প্রায় সবাইকে দিয়ে সিনেমার প্রচারণা চালাইছেন। ফেসবুকে পেইজ খুলে, সিক্রেট গ্রুপ থেকে, ওপেন গ্রুপ থেকে সিন্ডিকেট প্রচারণা চালাইছেন। মজার বিষয় হচ্ছে, রিলিজের আগেই নিজেরা নিজেরা রেটিং দিয়ে রেটিং বানাইয়া ফেলছে ৯.৯/১০, হলিউডের সিনেমারও এরকম রেটিং হয় না। আমায় হাসতে মনে হচ্ছে। ৩৫ এর পর নারীর রূপযৌবন, শীতকালে শাদা ভাত আর ফারুকী গ্রুপের সিনেমা, তিনটা একই রকম। ৩৫ এর পর নারীরা নানাভাবে নিজেদের ঘষামাজা করে, সুন্দর সুন্দর শাড়ী পরে, পার্লারে গিয়ে সেজেগুজে নিজেদের রুপসী করে তুলতে চান। কিন্তু পার্লার থেকে বাসায় আসতে আসতেই শেষ। যেই সেই, আগের মতোই। শীতকালে গরম গরম খাওয়ার জন্যে ডেকচি চুলার উপর রেখেই প্লেটে ভাত নেওয়া হয়। কিন্তু প্লেটে ভাত নিতে নিতেই ঠান্ডা হয়ে যায়। তারপর লবণ মরিচ তরকারি দিয়ে মেখে কোনোরকমে গিলতে হয়, তবু গরম ভাতের স্বাদ আর পাওয়া যায় না। ফারুকিরা যেদিন থেকে সিনেমা বানানোর প্লান করেন, যেদিন স্ক্রিপ্ট লেখা শুরু হয় সেদিন থেকেই প্রথম আলোতে নিউজ হয়, নানাভাবে পজিটিভ রিপোর্ট করে, ভার্সিটি ভার্সিটি ঘুরাঘুরি করে রিভিউ লিখে বিজ্ঞাপন হয়। কিন্তু এত আয়োজনের পর যা রিলিজ দেওয়া হয়, সেটা সেই পুরোনো অখাদ্য! সিনেমার মুল থিমটা নেওয়া হইছে কোরিয়ান মুভি TUMBLEWEED(2012) (কোরিয়ান নাম CHANGSOO) থেকে। সেই সিনেমাতে নায়ক টাকার বিনিময়ে অন্যের সাজা প্রক্সি দিয়ে জেল খেটে জীবিকা নির্বাহ করে। এইটাতেও সেইম।
...যাই হোক, আগে সরাসরি কপি হতো, এখন কপি না হয়ে থিম নেওয়া হয়, এটা অবশ্য উন্নতি!
তারপর ঢাকা শহরের অলিগলি দেখাইয়া আধাঘন্টা কাটাইয়া দিছেন।
.কথা সেটা না, আমি রিভিউ লিখতে বসি নি। আমার পয়েন্ট অন্য জায়গায়। "ডোন্ট মাইন্ড ফ্যামিলি"র সদস্যরা এই অংশ এভয়েড করে যেতে পারেন।
ফারুকী গ্রুপের সমস্যা হলো, এরা সিনেমা বানানোর আগেই নিজেদের আইডিয়োলোজি প্রচার করতে চায়। এই সিনেমাও ব্যাতিক্রম না। সিনেমাটার এক পর্যায়ে একটা কিসিং সিন দেখানো হইছে। এইটা না দিলেও চলতো। কিন্তু ওই যে বললাম আইডোলোজি! এরা চায়, একটা নির্লজ্জ তথাকথিত "মুক্তমনা" প্রজন্ম তৈরী হোক!
.ভুলে গেলে চলবে না, এই সিনেমাগুলা কিন্তু হলে দেখানো হয় না, দেখানো হয় অডিটরিয়াম ভাড়া করে। আর এমনভাবে প্রচারণা চালানো হয়, যাতে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ফ্যামিলিরা দেখতে যায়। বাপ মা মেয়ে মিলে সিনেমাটা দেখতে যাবে, এই সিনের সময় তারা কী করবে! এভাবেই সৃষ্টি হয় নির্লজ্জ প্রজাতি। ঢাকার সেই ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রীর মতো, যারা প্রকাশ্যে দিন দুপুরে কুকুর বিড়ালের কাজ করেছিলো।
.ইদানীং দেশে "হাজার বছর" "শতাব্দী " শব্দগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
...এমন একটা সিনেমাকেও বাঙাল আবেগিরা "হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সিনেমা" ঘোষণা করছে। আর যারা এই সিনেমার কোনো দিকের সমালোচনা করবে, তাদের বাঙালি ধর্মের শত্রু ঘোষণা করা হচ্ছে!
প্রাউড টু বি, "বাঙালি ধর্মের মুরতাদ"!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৭