হিমুর একটি নোকিয়া ১১০০ মডেলের ফোন আছে;
প্রায়ই ফোনটা অফ থাকে। মাঝে মাঝে যখন রুপার
সাথে কথা বলার নিতান্ত প্রয়োজন পড়ে,তখন
ফোনটা অন করে। কথা বলা তো প্রায়ই হয়ে ওঠেনা;
ফোন অফ থাকে বলে রুপা কিছু মেসেজ দিয়ে রাখে
হিমুকে। হিমু মাঝে মাঝে ফোন অন করে সেই
মেসেজ গুলো দেখে।
.
রুপা জোর করে হিমুকে একটি সিম সহ এই ফোনটা
উপহার দিয়ে ছিল; কিন্তু প্রায়ই অনাদরে অফ হয়ে
ফোনটা পড়ে থাকে।কয়েক দিন আগে রুপা গ্রিনমুন
দেখতে পেয়েছিল কিনা সেটা জানার জন্য গত কাল
সকালে হিমু ফোন অন করে।
.
হিমুর কিন্তু যেকোনো বিষয়ে বিরক্তি কম হয়; কিন্তু
একটি জিনিস এই মানুষটাকে বিরক্ত করে ফেলেছে-
সিম কোম্পানির বায়োমেট্রিক রেজিট্রেশন
মেসেজ। গত দুইমাস ধরে খুব জ্বালাচ্ছে এই একই
মেসেজ- ৩০শে এপ্রিল সিম বন্ধ হয়ে যাবে। রুপার
সাথে আর কথা বলা হলোনা; ফোনটা অফ করে হিমু
বের হয়ে গেলো 'ডাক ও টেলিযোগাযোগ'
মন্ত্রণালয়ের দিকে।
.
এই গরমে হিমু ক্লান্ত হয়ে গেছে; আজ আর এতো পথ
হেঁটে যেতে ইচ্ছে করছে না- একজন 'পা ভ্যান'
ওয়ালাকে ডেকে নিলো হিমু।
কিছুদূর গিয়ে হিমু খেয়াল করলো ভ্যান ওয়ালা দরদর
করে ঘামছে,ভ্যান আর চলতে চাইছে না।
.
হিমু:- আপনি একটা কাজ করতে পারেন,ভ্যানের
নিচে একটি রিমোট সিস্টেম বক্স ফিট করতে
পারেন,যখন অনেক কষ্ট হবে তখন বক্সে গান
বাজিয়ে দেবেন, গান শুনতে শুনতে এতো কষ্ট বুঝতে
পারেবেন না।
কথা শুনে বুড়ো বয়সী ভ্যান ওয়ালা রাগের দৃষ্টিতে
পিছনে ফিরে হিমুর দিকে একবার চাইলেন- মুখে
কথা নেই।
হিমু বুঝতে পারলো তার কথায় লোকটা রেগে
আছেন।
.
হিমু:- তাইলে একটা পজিটিভ ধারণা করেন,বিভিন্ন
গাড়ীর যে হর্ন বাজছে প্যাঁপু প্যাঁপু করে; এটাকে
মনে করেন গানের বাজনা। ধুমধাম গান বাজছে
কিন্তু! বেশ মজার।
ভ্যান ওয়ালা কিছুই না বলে আর একবার বিরক্তি
নিয়ে হিমুর দিকে চাইলেন,তখন তারা মন্ত্রণালয়ের
সামনে পৌঁছে গেছেন।
.
দারওয়ান হিমুকে ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছে না; যেই সেই
লোককে তো আর এখানে ঢুকতে দেওয়া যায়না!
ভিতরে হিমুর পিরিচিত একজন কর্মকর্তা
ছিলেন,তিনি হিমুকে দেখতে পেয়ে ডেকে নিলেন।
.
পরিচিত লোকটির সাহায্য নিয়ে হিমু সরাসরি
প্রধান কর্মকর্তার কাছে চলে গেলেন।
.
হিমু:- আচ্ছা আপনারা কিন্তু সন্ত্রাস হয়ে গেছেন!
কর্মকর্তা:- কিভাবে!
হিমু:- এইযে মানুষকে সিম বন্ধ করে দেবেন বলে
হুমকি দিচ্ছেন! এটাও কিন্তু একপ্রকার হুমকি- কেউ
কেউ হার্ট ফেল করতে পারে! তাছাড়া সিম
কোম্পানি গুলোর উপর এটা নিয়ে জবরদোস্তি
করছেন। একটি মানুষের স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছেন
কেন!
কর্মকর্তা:- দেখেন,এই সিম দিয়ে কিন্তু বিভিন্ন
অপকর্ম করছে মানুষ, সেটা সহজেই শনাক্ত করার জন্য
এই ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার।
হিমু:- আমি জানতাম ন্যাশনাল আইডি কার্ড সব
চেয়ে বড় প্রমাণ ছিল; সেটা দিয়ে সবাই একবার
রেজিট্রেশন করেছে,তাহলে আবার কেন
রেজিট্রেশন! আইডি কার্ড কি সরকার বাজেয়াপ্ত
ঘোষনা দিয়েছে নাকি!
কর্মকর্তা:- না, করেনি। তবে এটি বেশি প্রমাণ বহন
করবে।
হিমু:- এটা কিন্তু হয়রানি করছেন মানুষকে। একটি
মানুষের প্রমান কিন্তু আইডি কার্ড বহন করতে পারে।
আচ্ছা- কেউ আমার সিমটি চুরি করে সেই সিম
দিয়ে আপনাকে খুন করার হুমকি দিল,তবে তার জন্যও
তো আমাকে জেলে দেবেন, এইতো!
তারপর আপনাকে খুন করা হলো,আমি ওদিকে কিন্তু
জেলে! কি হলো এটা!
আপনাকে আসল খুনি ধরার কৌশল বলে দেই- সবার
জুতা-জামা,দাঁড়ি, গোঁফ সব কিছুই রেজিট্রেশন
করতে বলেন; কেউ ভুলে এসব নমুনা রেখে গেলে ধরা
সহজ হবে। আর একটা জিনিস,,,সিম কোম্পানির মতো
যাবতীয় অস্ত্র কোম্পানি আর কামারদের নির্দেশ
দেন,তারাও যেন এই পন্থা অবলম্বন করে, তাতে
আরো সহজ হতে পারে।
কর্মকর্তা:- দেখুন,আপনার কথা গুলো ফাইজলামির,
ছুরি কিভাবে রেজিট্রেশন হবে! আর এটি সরকারি
রুল; এর বাইরে আমার কিছুই বলার নেই। তাছাড়া
অন্যের আইডি কার্ডের নম্বর দিয়ে অনেকেই
রেজিট্রেশন করেছেন,যা আইডি কার্ডের মালিক
জানে না, তাই বিকল্প এই পদ্ধতি।
হিমু:- তাহলে আইডি কার্ড দিয়ে একবার
রেজিট্রেশন করার পরে আবার রেজিট্রেশন
করাচ্ছেন জবরদোস্তি করে,এটা কি ফাইজলামির
নয়!
আচ্ছা,আমার পরিচিত একজনের ফিঙ্গারের কোন
প্রিন্ট আসেনা; তার আঙ্গুলে রেখা নেই,তাই তার
পায়ের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়েছে,,,মজার কিন্তু!
এখন যদি আপনার হাত-পা সবই কাটা থাকতো! মনে
করেন ট্রেনে এক্সিডেন্ট করেছিলেন,তাহলে কি
হবে! আপনি কি ফোন ব্যবহার করবেন না? নাকি
আপনিও অন্যের আইডি কার্ডের নম্বরের মতো
অন্যের ফিঙ্গারপ্রিণ্ট ব্যবহার করবেন! আর আপনি
অন্যের ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করে সিম চালাতেন
ভালো কথা! কিন্তু আপনিও যদি একজনকে খুন
করেন,তবে আপনার জন্য তিনি জেল খাটবেন,,,মজার
কিন্তু!
আর আপনারা কেন শুধু সিম সিম করে পাগল করে
দিচ্ছেন! সারাদেশের মানুষ শান্তিতে নেট
চালাতে পারেনা,আমার রুমমেট বলেছে,নেট এতো
পরিমান স্লো যে একটা অপশানে ক্লিক করে রেখে
গিয়ে টয়লেটের কাজ সেরে এসেও দেখে যে এখনো
শুধু পাকাচ্ছে,লেখা ওঠে'কানেক্টিং'! তাছাড়া
ডাক বিভাগের বক্স আছে এখন! সেখানের লোকেরা
কি করে! দ্রুততার জন্য মানুষ অতিরিক্ত টাকা খরচ
করে কেন কুরিয়ারের সহায়তা নেবে! এসব দিকে কী
ভাবেন আপনারা? আর একটা কাজ কিন্তু করা যায়;
অনেকের বিয়ে থাকার পরেও অবিবাহিত হিসেবে
চুরি করে আবার বিয়ে করে,বিয়ের সময়
ফিঙ্গারপ্রিণ্ট নিলে শনাক্ত করা যায় কিন্তু! দারুন
না?
কর্মকর্তা:- আপনি তো খুব ঘেঁচড়া লোক! আপনার
সাথে কথা নেই, শুধু সরকারি রুলসের বাইরে আমি
যেতে পারবো না।
কর্মকতা তখন ধমক দিয়ে সেই লোকটিকে
ডাকলেন,যে হিমুকে ডেকে ভিতরে নিয়ে
এসেছিলেন, বললেন,"এই সমস্ত পাগল লোক কোথার
থেকে ধরে নিয়ে আসেন? নিয়ে যান,আর কোন দিন
এইসব লোক নিয়ে আসবেন না।"
হিমু চলে আসার সময় আর একবার প্রধান
কর্মকর্তাকে বলল,"আমার কথা গুলো আর একবার
ভাববেন কিন্তু! আর হ্যাঁ, আমার রুমমেট তার
প্রেমিকার সাথেও একটু শান্তি মতো কথা বলতে
পারেনা; কল রেট অনেক,আর সে মেগাবাইটের দাম
নিয়েও অসন্তুষ্ট থাকে; এটা নিয়ে কিছু করতে
বলবেন,আর প্রয়োজন পড়লে আবার আসবো।"
'
হিমু ভক্ত বা হুমায়ুন স্যার ভক্তরা কেউ নেতিবাচক
দিক দেখবেন না প্লিজ,,,
'
লেখা:- হিমাদ্রি হাবীব
'
'
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৬ দুপুর ২:৩৮