ছোট থেকেই একটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খায়। এখন আরো তীব্রভাবে । ঈদ কেন বাংলাদেশ ভারত পাকিস্তানে আলাদা তারিখে হয় !!!
জাপান থেকে সূর্যোদয়ের হিসেব করে পূর্বের দেশগুলোতে(যেমন ইন্দোনেশিয়া) আগে দিনরাত হয় এবং আগে চাঁদ দেখার কথা পরে যাবে পশ্চিমে (যেমন মধ্যপ্রাচ্য) ! কিন্তু দেখা যাচ্ছে ঈদ এলেই দেখি পূর্বের দেশ ইন্দোনেশিয়া মালয়েশিয়া ফিলিপাইন এসব দেশে ঈদ আবার পশ্চিমের মধ্যপ্রাচ্যেও ঈদ ! মাঝখানে বাংলাদেশে চাঁদ না উঠেই চলে গেছে সামনে !!!
মানে পূর্বেও চাঁদ দেখলো, পশ্চিমেও দেখলো মাঝে বাংলাদেশ খালি ! এমন কি আমেরিকা যেটা কিনা আরো অনেক পশ্চিমে তারও ঈদ হয় একই দিনে !
মানে গোটা বিশ্বে বাংলাদেশ ভারত পাকিস্তান আর দুই একটা দেশ ছাড়া সবাই একই তারিখে রোজা ও ঈদদ্বয় পালন করে !
কুরবানী হজ্জের একটা অনুষঙ্গ । মুজদালিফায় হজের কাজের একটি অংশ হলো কুরবানী। এখন কুরবানী সারা বিশ্বে হচ্ছে হাজিদের তারিখে মিলিয়ে আর আমাদের এদিকে একদিন পরে ! বিষয়টা বড্ড গোলমালের লাগলো !
ইসলামি দেশগুলোর সংস্থা ওআইসি এইসব নিয়ে বসেছিলো ১৯৮৪ তে । একই তারিখে ঈদ ও রোজা শুরুর ব্যাপারে । পরে ওই মিটিংয়ে বাংলাদেশ ভারত ও পাকিস্তানের হুজুররা পরে জানাবে বলে মিটিং ত্যাগ করে বের হয়ে আসে । এই এতো বছর হলো সেই সিদ্ধান্ত জানানোর খবর নাই ।
একটা যুক্তি থাকতে পারে এমন যে, মক্কার সাথে মিলিয়ে যদি রোজা বা ঈদ করার কথা বলা হয় তাহলে সৌদির সময়ের সাথে মিলিয়ে নামাজ পড়া যায় না কেন !
উত্তরটা এমন যে, বাংলাদেশের কক্সবাজার আর পঞ্চগড়ের ইফতারের সেহরির এবং নামাজের সময় তো একই না ! কক্সবাজারের লোকদের আগে হয় পঞ্চগড়ের বাসিন্দাদের থেকে । এমনিভাবে ভারতের আসামের অধিবাসীদের নামাজের টাইম তো কাশ্মীরীদের আগে ! এখন কি এজন্য কক্সবাজার বা পঞ্চগড়ের লোকদের একই সময়ে সেহরি ইফতার করতে হবে ? বা কাশ্মীরী আর অসমীয়রা কি একই সময়ে রোজা ভাঙবে ? সেটা না হলে কি আলাদাভাবে তারা ঈদের তারিখ ঠিক করবে ? মানে কক্সবাজারে আগে ঈদ পরে পঞ্চগড়ে ঈদ হবে !
আসলে নামাজ বা সাহরী ইফতারি (মানে সময়) এটা সূর্যের সাথে হিসেব আর দিনের হিসেব চাঁদে !
অবশেষে এই ১৩ টি প্রশ্নের উত্তর চাই !
১। দেশের সীমানা কতটুকু হবে তার ইসলামী দলীল পেশ করবেন?
.
২। নিজ নিজ দেশের চাঁদ অনুযায়ী রোজাও ঈদ পালন করতে হবে এর স্বপক্ষে দলীল পেশ করবেন।
৩। দেশী হুজুর ও তাদের অনুসারীদের বক্তব্য অনুযায়ী "সারাবিশ্বের সাথে একই সময়ে আমরা ইফতার,সেহরী ও নামাজ আদায় করি না"। এইজন্য আপনারা সারা বিশ্বের সাথে একই বারে/দিনে ঈদ পালন করতে চান না। তাহলে আপনাদের নিকট প্রশ্ন, ঢাকার মানুষের সাথে চট্টগ্রামের মানুষ একই সময়ে ইফতার, সেহরী ও নামাজ আদায় করে না। তবে কেন রোজা ও ঈদ একই বারে/দিনে পালন করেন?
.
৪। সূর্যের সময়ের হিসেবে উল্লেখিত দুই শহর অর্থ্যাৎ ঢাকা ও চট্টগ্রাম এর সময়ের পার্থক্য বজায় রেখে যদি একই বারে/দিনে রোজা ও ঈদ পালন করা যায়। তবে কেন সারা বিশ্বের সাথে সূর্যের সময়ের পার্থক্য বজায় রেখে একই দিনে/বারে রোজা ও ঈদ পালন করতে পারেন না?
.
৫।চট্টগ্রামে বা পঞ্চগড়ে বা সিলেটে বা সাতক্ষীরায় চাঁদ দেখা গেলে এবং ঢাকায় চাঁদ না দেখা গেলে, ঢাকায় চাঁদ না দেখেও ঐসব এলাকার চাঁদ দেখার সংবাদ শুনে ঐসব এলাকার সাথে একই
বারে রোযা বা ঈদ করছেন, তাহলে পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে নতুন চাঁদ দেখা গেলে এবং ঢাকায় চাঁদ না দেখা গেলে, অন্য দেশের চাঁদ দেখার সংবাদ শুনে ঢাকায় একই বারে রোযা বা ঈদ কেন করতে পারছেন না???
.
৬।যদি বলেন, ঢাকার সাথে প্রথম চাঁদ দেখা ঐ দেশের দূরত্ব (উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক মধ্যপ্রাচ্যের দূরত্ব), ঢাকার সাথে চট্টগাম বা পঞ্চগড় বা সিলেট বা সাতক্ষীরার দূরত্বের চেয়ে বেশি, তাহলে দূরত্ব কতদূর হলে রোজা বা ঈদ একই দিনে/বারে করা যাবে, তা দলিল সহ স্পষ্ট করে বলবেন কি??
.
৭।যদি বলেন, ঢাকার সাথে মধ্যপ্রাচ্যের সময়ের পার্থক্য, ঢাকার সাথে চট্টগাম বা পঞ্চগড বা সিলেট বা সাতক্ষীরার সময়ের পার্থক্যের চেয়ে বেশি, তাহলে সময়ের পার্থক্য কতদূর হলে রোজা বা ঈদ একই দিনে/বারে করা যাবে, তা দলিল সহ স্পষ্ট করে বলবেন কি??
.
৮। কেন মুসলিম বিশ্বে একই বারে/রাতে শবে কদর পালিত হয়না? শবে কদরের রাত কি একটা নাকি দুইটা? ৩০ পারা কুরআন একত্রে যে রাতে নাযিল হয়েছিল সেটাই কদরের রাত। ৩০ পারা কুরআন কি মধ্যপ্রাচ্যে এক রাতে আর বাংলাদেশে তার পরের রাতে অর্থাৎ দুই রাতে নাযিল হয়েছে?
.
৯। রাসূল স. এর বরাতে প্রচলিত হাদীসে বলা আছে, কিয়ামত ১০ ই মুহাররম শুক্রবারে হবে। বাংলাদেশের সরকারী গণনা অনুযায়ী, মধ্যপ্রাচ্যে যদি শুক্রবারে ১০ ই মুহাররম হয় তবে বাংলাদেশে সেদিন ৯ ই মুহাররম শুক্রবার। আবার যদি বাংলাদেশে শুক্রবারে ১০ ই মুহাররম হয় তবে মধ্যপ্রাচ্যে সেদিন ১১ ই মুহাররম শুক্রবার। কিয়ামত মধ্যপ্রাচ্যের ১০ ই মুহাররম শুক্রবারে হলে বাংলাদেশে সেদিন ৯ ই মুহাররম থাকার কারনে কিয়ামত হবেনা। আর বাংলাদেশের ১০ ই মুহাররম শুক্রবারে কিয়ামত হলে মধ্যপ্রাচ্যে ১১ ই মুহাররম থাকার কারনে কিয়ামত হবেনা। তাহলে কিয়ামত কোন দেশের ১০ ই মুহাররম শুক্রবার অনুযায়ী হবে? বাংলাদেশে কিয়ামত কি মধ্যপ্রাচ্যের একদিন পরে হবে আর আমরা কি তা টিভিতে দেখব?
.
১০।বাংলাদেশে মধ্যপ্রাচ্যের একদিন পরে রোজা ঈদ করলে এই অবস্থা হয়: বাংলাদেশ থেকে কেউ রোযা শুরু করে রমযান মাসের যে কোন দিন মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে সেখানে ঈদ করলে তার রোযা ২৮ বা ২৯ টি হয়, আবার মধ্যপ্রাচ্য থেকে কেউ রোযা শুরু করে রমযান মাসের যে কোন দিন বাংলাদেশে এসে এখানে ঈদ করলে তার রোযা ৩০ বা ৩১ টি হয়। অথচ ২৮ বা ৩১ রোজার বিধান ইসলামে নাই। প্রচলিত হাদীস বলা হয়েছে আরবী মাস ২৯-এর কম হবেনা এবং ৩০-এর বেশী হবেনা। এক্ষেত্রে সমাধান কি?? দলিল সহ জানতে চাই।
.
১১। অনেকেই বলেন নামাজের ওয়াক্ত মধ্যপ্রাচ্যে ও বাংলাদেশে এক নয় তাহলে শবে কদর এক বারে/রাতে হবে কিভাবে। তাদের উদ্দেশ্যে, নামাজের ওয়াক্ত এবং সেহরি ইফতার হয় সূর্য অনুযায়ী কিন্তু যে কোন আরবী মাস শুরু হয় চাঁদ অনুযায়ী। সূর্য ও চাঁদের হিসাব আলাদা। নামাজের ওয়াক্ত এবং সেহরি ইফতার কি চাঁদ অনুযায়ী হয়? আরবী মাস কি সূর্য অনুযায়ী হয়?
.
১২। সময়ের পার্থক্য বজায় রেখে যদি সারা পৃথিবীতে জুম্মা একই দিনে/বারে (শুক্রবার)পড়া যায় তবে সময়ের পার্থক্য বজায় রেখে সারা পৃথিবীতে ঈদের নামাজ কেন একই দিনে/বারে পড়া যাবে না?
.
১৩। আরাফার দিন হচ্ছে সেটাই যেদিন হাজীগন আরাফার মাঠে থাকেন। তার পরদিন হাজীগন আরাফার মাঠে থাকেন না। তাহলে যেদিন হাজীগন আরাফার মাঠে থাকেন না সেদিন আরাফার দিন কিভাবে হয় ?
.
১৪।যদিও ঈদের দিন রোযা রাখা হারাম তবুও অনেক জায়গাতেই এমন বর্ডার/ দেশের সীমারেখা (মানুষের তৈরী, আল্লাহর দেয়া নয়) আছে, যার একপাশে রোযা এবং অন্যপাশে ঈদ হচ্ছে একই দিনে, নিজ দেশের আকাশসীমায় আলাদা চাঁদ দেখার কারনে, তাহলে সেই বর্ডার এর মানুষ কি রোজা করবে নাকি ঈদ করবে?? ব্রিটিশের দেয়া বর্ডার অনুযায়ী কেন মুসলিমরা রোযা ঈদ করবে??
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৫৫