কুরআনের আলোকে পর্দার বা শালীনতার বিধান
সমাজে ইসলামের কথা আসলেই আমাদের মনে ভেসে উঠে নারীরা আপাদমস্তক কালো বোরকায় আবৃত্ত, মুখে কালো কভার দেওয়া, যার নাম হলো নিকাব। মেয়েরা সব গৃহে আবদ্ধ, পুরুষদের সাথে ছাড়া তারা বেরোতেই পারে না। ঘরের মধ্যে স্বামী, সন্তান, মা, বাবা ছাড়া কারো সামনে আসে না, কথাও বলে না। এ যেন পুরো লাইফটাইম কোয়ারেন্টাইন!
আর ছেলেদের পর্দা? ওটা আবার কি জিনিস! ঐ হাঁটু পর্যন্ত ঢাকা থাকলই হলো, বুক এসব তো সতর (লজ্জাস্থানের) অন্তর্ভুক্ত না! আর ছেলেদের তো বেরোতেই হবে। তাদের এসব পর্দা নিয়ে ভাববার সময় কোথায়!
পোস্টটা অহেতুক বড় করতে চাই না, তাই যতোটা সম্ভব আমার আর্গুমেন্টের স্বপক্ষে কনক্রিট রেফারেন্স দিয়ে পোস্টটা শেষ করবো।
শুরুতেই আসা যাক প্রথম প্রসঙ্গে,
মেয়েরা ঘরের বাইরে যেতে পারবে কি না, কিংবা তাদের ঘরে আটকে রাখার দলিল পর্যালোচনা
দাবি করা হয়ে থাকে মেয়েরা ঘরের বাইরে যেতে পারবে না, তাদের ঘরের মধ্যেই থাকতে হবে, খুব বেশী দরকার না হলে কোনোমতেই বাইরে যাওয়া চলবে না, বাইরে গেলেও পুরুষ সাথে থাকতে হবে। একলা বের হওয়া যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে!
এসব আইনের বিপরীতে আবার নাকি কুরআনের দলিলও রয়েছে,
"হে নবী পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তোমরা সংগত কথাবার্তা বলবে। তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে-মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। নামাজ কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর নামাজ আনুগত্য করবে। হে নামাজ পরিবারের সদস্যবর্গ। আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে।"
(সূরা আহযাব, ৩৩:৩২-৩৩)
এই হলো নারীদেরকে ঘরের বাইরে যেতে না দেওয়ার দলিল! তবে এখানে একটা কারচুপি করে থাকে মোল্লাসমাজ আর তাহল তারা এই আয়াতগুলো কখনোই সম্পূর্ণটা তুলে ধরে না জেনারেলি, শুধু তাদের যেটুকু লাগবে সেটুকু খণ্ডিত আকারে তুলে ধরে, যা দেখে আল্লাহর মেসেজ পুরোপুরি ক্লিয়ার হওয়া সম্ভব না!
আমি কিছু বলার আগে পাঠক আপনি তো একটু আগেই সূরা আহযাবের আয়াতগুলো পড়লেন, পড়ে কি বুঝলেন? একবারও কী আপনার মনে হয়েছে এখানে সব মুসলিম নারীকে ঘরের বাইরে যেতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে??
কোনোমতেই না! কেননা এই আয়াতে বলাই হয়েছে يَا نِسَاء النَّبِيِّ (ইয়া নিসায়া আন নাবিয়্যি) হে নবী পত্নীগণ,
অর্থাৎ আল্লাহ সরাসরি নবী সা. এর স্ত্রীদেরকে উদ্দেশ্য করেই এই আয়াত নাজিল করেছেন । এটা আর কোনো মুসলিম মহিলাদের জন্য না । এই আয়াত শুধু নবী সা. এর স্ত্রীদের জন্যই প্রযোজ্য ছিল কেননা তাঁদের বিশেষ প্রটোকলের কারণে। এখনও দেখা যায় দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এবং তাদের পরিবারবর্গের প্রটোকল আলাদা। কিন্তু উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর মতো করে এই আয়াতটি সব মুসলিম মহিলার উপরে জেনারেলাইজ করা হয়েছে!
অথচ এই আয়াতটিতে পরিষ্কার লিখা (ইয়া নিসায়া আন নাবিয়্যি) হে নবী পত্নীগণ, সুতরাং এর টার্গেট অডিয়েন্স একদম ক্লিয়ার। এছাড়াও এর আগের আয়াতগুলোও পড়া যাক,
হে নবী পত্নীগণ! তোমাদের মধ্যে কেউ প্রকাশ্য অশ্লীল কাজ করলে তাকে দ্বিগুণ শাস্তি দেয়া হবে। এটা আল্লাহর জন্য সহজ। [সুরা আহযাব - ৩৩:৩০]
তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অনুগত হবে এবং সৎকর্ম করবে, আমি তাকে দুবার পুরস্কার দেব এবং তার জন্য আমি সম্মানজনক রিযিক প্রস্তুত রেখেছি। [সুরা আহযাব - ৩৩:৩১]
অর্থাৎ নবী পত্নীদের ক্ষেত্রে অপরাধের জন্য ডাবল শাস্তি এবং সৎকর্মের জন্য ডাবল পুরস্কারের ঘোষণা করেছেন আল্লাহ। এই বিধান কি কোন সাধারণ মুসলিম মহিলার উপরে প্রযোজ্য বা আল্লাহ এমন কোন কথা বলেছেন ??? বলেন নাই। তাহলে এই বিধান যে কেবল নবীর স্ত্রীদের জন্যই তা একেবারে ক্রিস্টাল ক্লিয়ার। আল্লাহ কুরআনে ঈমানদারী নারী শব্দটাও প্রয়োগ করেছেন তাদের অ্যাড্রেস করার ক্ষেত্রে। তো আল্লাহ কী এখানে এসে ভুলে গেছেন তাদের মেনশন করতে যে মোল্লাদের এখন নবীর স্ত্রীদের জন্য আরোপিত প্রটোকল হাইজ্যাক করে সমস্ত মহিলাদের উপরে দিতে হলো! এ যেন আল্লাহর উপরে মাতব্বরি!!
কথা হলো, তাহলে কীভাবে মহিলাদেরকে আয়াতের খণ্ডিতাংশ দেখিয়ে গৃহবন্দি করা হয় ??
এরপর এসব অকাট্য রেফারেন্স ও যুক্তিতে না পারাতে আরেকটা কথা বলবে তারা,
এই বিধান রাসূলুল্লাহর স্ত্রীদের জন্য খাস হলেও তা মুসলিম মহিলাদেরও আল্লাহর অধিক প্রিয়ভাজন হতে মেনে চলা আবশ্যক।
খুবই ভালো যুক্তি।
তবে অপেক্ষা করেন একটু,
....আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর ওফাতের পর তাঁর পত্নীগণকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য বৈধ নয়। আল্লাহর কাছে এটা গুরুতর অপরাধ। [সুরা আহযাব - ৩৩:৫৩]
রাসূলুল্লাহর মৃত্যুর পরে উনার স্ত্রীদেরকে বিয়ে করাও নিষিদ্ধ করেছিলেন আল্লাহ। তাহলে ঘরের মধ্যে থাকার আয়াতের মতো এটাও সমগ্র মুসলিম মহিলাদের উপরে জেনারেলাইজ করে বিধবা বিবাহ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে না কেন ??? নারীদেরকে আল্লাহর অধিক প্রিয়ভাজন বানাতে গিয়ে, আল আহযাবের ৩২-৩৩ আয়াতে উল্লিখিত নবীর স্ত্রীদের উপরে আরোপিত বিধানকে সমস্ত মহিলার উপরে গিয়ে করতে পারেন, আয়াতের অপপ্রয়োগ যদি করতে পারেন তবে এবার পারলে ৩৩:৫৩ কে গিয়ে
সুতরাং এটি একদম পরিষ্কার যে, মহিলারা ঘরের বাইরে যেতে পারবে না, গাইরে মাহরাম (যাদের সাথে বিয়ে বৈধ) তাদের সাথে কথাও বলতে পারবেন না এসব আল্লাহর নির্দেশনা নয়। এগুলো ইসলামী হুজুরদের কুরআনের আয়াত নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ও অর্থ বিভ্রাটের ফল!
সুতরাং প্রয়োজনে বাইরে কাজ করা, যাতায়াত করা, যেকোনো মানুষের সাথে সাধারণ কথোপকথন করা মুসলিম মহিলাদের জন্য কুরআন মতে ১০০% বৈধ কাজ।
এবার আসা যাক দ্বিতীয় দাবিটা নিয়ে, মহিলাদের মুখ খোলা রাখা যাবে কিনা, কিংবা নিকাব, হিজাব ও বোরকা পরা আবশ্যকতা প্রসঙ্গে।
দাবি করা হয়ে থাকে, মহিলারা আপাদমস্তক ঢেকে রাখবে নিজেদেরকে, মুখও খোলা রাখা যাবে না, কেউ যদি বলেন যাবে তাহলে তাকে অন্য হুজুরদের রোষানলে পড়তে হবে!
এসব যুক্তির পক্ষে উনারা ব্যবহার করে কুরআনের ২৪ নাম্বার সূরা, সূরা নূরের ৩০-৩১ নং আয়াত,
মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। [সুরা নুর - ২৪:৩০-৩১]
প্রথমেই আপনাদের জানা থাকা উচিত মুখ আরবি হচ্ছে ওয়াজহুন। এটা বললাম এই কারণে যে অনেক সময় আপনারা বাংলা অনুবাদে মুখ শব্দটি দেখতে পাবেন কিন্তু আরবিতে ওয়াজহুন শব্দটি পাবেন না। অর্থাৎ এটা হচ্ছে নিজ মত টিকাতে অনুবাদ জালিয়াতি।
এখানে ৩০ নং আয়াতে ছেলেদের কি করণীয় এবং ৩১ নং আয়াতে মেয়েদের কী করণীয় তা আলোচিত হয়েছে,
যদি আরবিটা খেয়াল করেন তবে দেখবেন
৩০ নং আয়াতে আছে, قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ
এবং ৩১ নং আয়াতেও আছে, وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ
অর্থাৎ হুবহু একই শব্দ একই কথা ছেলেদের জন্যও মেয়েদের জন্যও, যার অর্থ হলো,
"মুমিন পুরুষদেরকে(৩০)/মুমিন নারীদেরকে(৩১)" বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে।
তাহলে মানুষের জন্য কমন নির্দেশনা হলো দৃষ্টি সংযত রাখা ও যৌনাঙ্গ সামলে রাখা। এই দৃষ্টি মানে চর্মচক্ষু ও অন্তর্দৃষ্টি দুটোই।
তবে মেয়েদের জন্য আরো কিছু নির্দেশনা আছে, যা নূরের ৩১ নং আয়াতের বাকি অংশ থেকে দেখে নেওয়া যাক,
وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاء بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاء بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُوْلِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاء وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন কাপড়ের টুকরা তাদের ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদি, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। [সুরা নুর - ২৪:৩১]
এখানে থেকে কোথাও মুখ ঢাকা বা আপাদমস্তক বোরকায় আবৃত্ত করার কোন নির্দেশনা দেখা যাচ্ছে না। এখানে আল্লাহ বলেছেন তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে,
খুবই সিম্পল কথা। সাধারণত প্রকাশমান মুখ, হাত পা, এসব তো ঢেকে রাখলে তাকে চেনারও উপায় থাকে না এবং কাজও করা যায় না সহজে, তাই এসব ঢাকার নির্দেশনা নাই। এছাড়া বুক ঢেকে রাখতে বলা হয়েছে। মেয়েদের বুক ঢেকে রাখা নরমাল শালীনতা। এখানে স্পষ্টত বুক ঢাকার কথা বলা থাকলেও হুজুররা এই আয়াত দিয়ে মাথা, চুল, চেহারা সব ঢেকে দিয়েছে! তো কোথায় পেলো এই জিনিসগুলো? নাই, সবই তাদের মনগড়া, ইচ্ছা!
এরপরে আছে,
তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদি, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে
অর্থাৎ জাঁকজমক সহকারে এসব লোকদের সামনে যেতে কোন বাঁধা নাই, কারণ তারা আপনজন এবং তাদের কাছে সে নিরাপদ। অর্থাৎ অতিরিক্ত সাজসজ্জা জাঁকজমক নিয়ে এই লিস্টের বাইরে যেতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
এরপরে আছে,
তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে।
অর্থাৎ নিতম্ব দুলিয়ে না হাঁটে। কত সহজ একটা কথা!
অর্থাৎ হাঁটার সময় ঝাঁকি মেরে বা ইচ্ছাকৃত ভাবে কোমর দুলিয়ে মেয়েরা যেন চলাচল না করে। এটা একটা কমন ভদ্রতা। সব সমাজেই এটাকে দৃষ্টিকটু ভাবা হয়।
এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয়, এই আয়াতসমূহে বলা নির্দেশনা সমূহ হলো জেনারেল গাইডলাইন বা সাধারণ নির্দেশনা। এসবকে জোরাজুরি করে মানাতেই হবে বা না মানলে শাস্তি দিতে হবে এমন কোন নির্দেশনা কুরআনে আল্লাহ দেননি!
হিজাব পরার বা মাথা ঢাকার আরেকটা দলিল পর্যালোচনা,
হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। [সুরা আহযাব - ৩৩:৫৯]
এখানে মেয়েরা যে চাদরের কিছুটা নিজেদের উপরে টেনে দিবে এটা নূরের ৩১ নাম্বার আয়াতেরই বক্তব্যের যেন পুনরাবৃত্তি! চাদর টেনে দিতে হবে, কোথায় সেই তথ্য সূরা নূরের ৩১ নাম্বার আয়াত থেকে পাওয়া যায় বুকে। বুক ঢেকে রাখতে হবে। এটা জেনারেল সোশ্যাল গাইডলাইন! এই আয়াতে এজন্য কোন পাপ বা পুণ্যের কথাও বলা হয়নি,
অথচ ঠিক এর ঠিক আগের আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,
যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে। [সুরা আহযাব - ৩৩:৫৮]
তাহলে কোনটা পাপকাজ আর কোনটা সোশ্যাল গাইডলাইন তা বুঝতে কি রকেট সায়েন্টিস্ট হওয়া লাগবে?
এবার দেখুন কত সহজ আল্লাহর বিধান, কথিত পর্দার দোহাই দিয়ে যেখানে ঘরের বাইরে যাওয়া নিষেধ করে দিচ্ছে সেখানে কুরআনে কীভাবে সবাইকে আত্নীয়দের বাসায় ঘুরতে যাওয়া ও দাওয়াত খাওয়ার কথা বলা আছে,
অন্ধের জন্যে দোষ নেই, খঞ্জের জন্যে দোষ নেই, রোগীর জন্যে দোষ নেই, এবং তোমাদের নিজেদের জন্যেও দোষ নেই যে, তোমরা আহার করবে তোমাদের গৃহে অথবা তোমাদের পিতাদের গৃহে অথবা তোমাদের মাতাদের গৃহে অথবা তোমাদের ভ্রাতাদের গৃহে অথবা তোমাদের ভগিণীদের গৃহে অথবা তোমাদের পিতৃব্যদের গৃহে অথবা তোমাদের ফুফুদের গৃহে অথবা তোমাদের মামাদের গৃহে অথবা তোমাদের খালাদের গৃহে অথবা সেই গৃহে, যার চাবি আছে তোমাদের হাতে অথবা তোমাদের বন্ধুদের গৃহে। তোমরা একত্রে আহার কর অথবা পৃথকভবে আহার কর, তাতে তোমাদের কোন দোষ নেই। অতঃপর যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ কর, তখন তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। এটা আল্লাহর কাছ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র দোয়া। এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্যে আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ননা করেন, যাতে তোমরা বুঝে নাও। [ সুরা নুর ২৪:৬১ ]
তাহলে কুরআন কতোটা সামাজিক বিধান দেয় আর মোল্লারা কুরআন বাইপাস করে চালাচ্ছে কী সমাজে!
এই গেলো পর্দার বিধান।
এবার নিশ্চয়ই বলবেন, হিজাব নিকাব শব্দগুলো নিয়ে তো কিছুই বললেন না!
ও ভাই, কি আর বলবো, হিজাব নিকাব এগুলো কুরআনে থাকলেও এই শব্দগুলো একটিবারও পর্দার কোন আয়াতে আসেনি। এগুলো হুজুররা হাইজ্যাক করেছে নিজেদের বানোয়াট পর্দার কথিত বিধান তৈরিতে!
তাহলে পুরো পোস্টটির সারমর্ম হলো,
▶মহিলাদের মুখ ঢাকার কথা কুরআনের কোথাও নাই
▶মহিলারা ঘরের বাইরে যেতে পারবে না এমন কথাও কুরআনে বলা নাই
▶মহিলারা দরকারে ঘরের বাইরে যাওয়া, কাজ করা, মানুষের সাথে সাধারণ কথাবার্তা বলতে পারবে।
▶মেয়েদের বুক ঢেকে রাখতে হবে
▶নিকাব হিজাবের অস্তিত্বও পর্দার কোন আয়াতে নাই! এগুলো মোল্লাদের আবিষ্কার
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৪৮