ইসলাম গ্রহণের জন্য কোন রূপ জোরাজুরি বা শক্তি প্রয়োগ একদম নিষিদ্ধ
বলুনঃ সত্য তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত। অতএব, যার ইচ্ছা, বিশ্বাস স্থাপন করুক এবং যার ইচ্ছা অমান্য করুক। আমি জালেমদের জন্যে অগ্নি প্রস্তুত করে রেখেছি, যার বেষ্টনী তাদের কে পরিবেষ্টন করে থাকবে। যদি তারা পানীয় প্রার্থনা করে, তবে পুঁজের ন্যায় পানীয় দেয়া হবে যা তাদের মুখমন্ডল দগ্ধ করবে। কত নিকৃষ্ট পানীয় এবং খুবই মন্দ আশ্রয়। [সুরা কা’হফ - ১৮:২৯]
আর তোমার পরওয়ারদেগার যদি চাইতেন, তবে পৃথিবীর বুকে যারা রয়েছে, তাদের সবাই ঈমান নিয়ে আসতে সমবেতভাবে। তুমি কি মানুষের উপর জবরদস্তী করবে ঈমান আনার জন্য? [সুরা ইউনুস - ১০:৯৯]
অতএব, আপনি উপদেশ দিন, আপনি তো কেবল একজন উপদেশদাতা, আপনি তাদের শাসক নন, কিন্তু যে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও কাফের হয়ে যায়, আল্লাহ তাকে মহা আযাব দেবেন। নিশ্চয় তাদের প্রত্যাবর্তন আমারই নিকট, অতঃপর তাদের হিসাব-নিকাশ আমারই দায়িত্ব। [সুরা গাশিয়াহ - ৮৮:২১-২৬]
অর্থাৎ, সবাই ইসলাম গ্রহণের জন্য কোনরূপ জোর জবরদস্তি করা সম্পূর্ণরূপে কোরআন বিরুদ্ধ ! যার ভালো লাগে সে নিজের ইচ্ছায় বিশ্বাস করলে করবে না করলে নাই। এটার জন্য কোনরূপ জোরাজুরি করা, শক্তি প্রয়োগ করা সরাসরি কোরআন বিরোধী !
এবার দেখা যাক কেউ ইসলাম মেনে নেয়ার পরেও সে যদি এই বিশ্বাস ছেড়ে দেয়, অর্থাৎ মুরতাদ হয় তাহলে তার জন্য কি বলা আছে:
যার উপর জবরদস্তি করা হয় এবং তার অন্তর বিশ্বাসে অটল থাকে সে ব্যতীত যে কেউ বিশ্বাসী হওয়ার পর আল্লাহতে অবিশ্বাসী হয় এবং কুফরীর জন্য মন উম্মুক্ত করে দেয় তাদের উপর আপতিত হবে আল্লাহর গযব এবং তাদের জন্যে রয়েছে শাস্তি। [সুরা নাহল - ১৬:১০৬]
যারা ঈমান আনার পর অস্বীকার করেছে এবং অস্বীকৃতিতে বৃদ্ধি ঘটেছে, কস্মিণকালেও তাদের তওবা কবুল করা হবে না। আর তারা হলো গোমরাহ। [সুরা ইমরান - ৩:৯০]
যারা একবার মুসলমান হয়ে পরে পুনরায় কাফের হয়ে গেছে, আবার মুসলমান হয়েছে এবং আবারো কাফের হয়েছে এবং কুফরীতেই উন্নতি লাভ করেছে, আল্লাহ তাদেরকে না কখনও ক্ষমা করবেন, না পথ দেখাবেন। সেসব মুনাফেককে সুসংবাদ শুনিয়ে দিন যে, তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব। [সুরা নিসা - ৪:১৩৭]
সুতরাং দেখা গেলো কোরআন মতে কেউ মুরতাদ হলে তাকে হত্যা তো বহুদূর, একটা থাপ্পড় ইভেন একটা ধমক দেয়ার বিধানও কোরআনে নাই ! যে ঈমান ত্যাগ করবে তার বিচার আচার আল্লাহ করবে চূড়ান্ত বিচারের দিনে, আমাদেরকে তাদের উপরে কোনই শাস্তি প্রয়োগের অধিকার বা অনুমতি দেয়া হয়নি; রাসূলেরও এরূপ কোন এখতিয়ার ছিলো না। মুরতাদের কোন শাস্তিই নেই কোরআন মোতাবেক।
এবারে আসা যাক রাসূল অবমাননার শাস্তি, শাতিমে রাসূল বা রাসূল অবমাননার শাস্তি হিসেবে প্রচলিতভাবে তাদেরকে মৃত্যুদন্ড বা পুশি চাই এটা আমরা জানি।
মানবরচিত, সংগৃহিত, সংকলিত লাহওয়াল হাদীসসমূহে দেখা যায় কটূক্তিকারীদেরকে কিরকম নির্মমভাবে হত্যার কথা লিখা। যেমন এক মহিলা কবিকে তার দুগ্ধপোষ্য শিশুর সামনে তলোয়ার দিয়ে দুইভাগ করা, কিংবা অন্ধ ব্যক্তিকে রাসূল অবমাননার দায় হত্যা করা ইত্যাদি কাহিনী প্রচলিত হাদীসের মাধ্যমে আমরা জানি।
এবারে আসেন, জানার চেষ্টা করি, কোরআনে কটূক্তি বা আবমাননার কিরূপ শাস্তি রাখা হয়েছে।
প্রসঙ্গত শুরুতেই বলে নিই, আল্লাহকে ক্রমাগত ঈসার পিতা, কিংবা দেবদেবীর সাথে শরীক করে আল্লাহর অবমাননা করা হচ্ছে, কিন্তু আল্লাহ তার নিজের অবমাননার জন্যও দুনিয়াতে কাউকে শাস্তি প্রদানের বিধান বা এখতিয়ার রাখেননি।
অবশ্য ধন-সম্পদে এবং জনসম্পদে তোমাদের পরীক্ষা হবে এবং অবশ্য তোমরা শুনবে পূর্ববর্তী আহলে কিতাবদের কাছে এবং মুশরেকদের কাছে বহু অশোভন উক্তি/কটূক্তি। আর যদি তোমরা ধৈর্য্য ধারণ কর এবং পরহেযগারী অবলম্বন কর, তবে তা হবে একান্ত সৎসাহসের ব্যাপার। [ সুরা ইমরান ৩:১৮৬ ]
অর্থাৎ কটূক্তি করলে ধৈর্য্য ধারণ করাই হলো আল্লাহর বলে দেওয়া ফরমুলা । মোল্লাদের মতো উগ্রতা প্রদর্শন নয় । সহজসরল শান্তির ধর্ম ইসলামে এই মোল্লারা জঙ্গিবাদের অপবাদের মুখোমুখি করেছে।
ইসলামের শান্তিবাদ
গালির বা কটূক্তির বিপরীতে গালি নয় বরং এড়িয়ে যাওয়া
কটূক্তি করলে মারার কোন বিধান নাই । কোরআনের একটা আয়াত পারলে দেখান কটূক্তি করলে শাস্তির কথা বলেছে আল্লাহ ! কেউ কটূক্তি করলে তাকে ভালো ভাষায় বুঝাতে হবে, তাতেও না থামলে তাদের থেকে দূরে যেতে বলা হয়েছে, অর্থাৎ তাদেরকে এড়িয়ে চলা !
"আর তিনি তো কিতাবে তোমাদের প্রতি নাযিল করেছেন যে, যখন তোমরা শুনবে আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করা হচ্ছে এবং সেগুলো নিয়ে উপহাস করা হচ্ছে, তাহলে তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা অন্য কথায় নিবিষ্ট হয়, তা না হলে তোমরাও তাদের মত হয়ে যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ মুনাফিক ও কাফিরদের সকলকেই জাহান্নামে একত্রিত করবেন। [ সুরা নিসা ৪:১৪০ ]"
যতো বড় আল্লাহদ্রোহীই হোক না কেন কোনমতেই খারাপ ভাষা, গালাগালি বা কটূক্তি করা যাবে না, ভালো ও নম্রভাষা ব্যবহার করতে হবে
ফেরাউনের মতো অবাধ্য ও চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শনকারী আল্লাহদ্রোহীর সাথেও রূঢ় ভাষা, কটূক্তি, গালাগালি, মন্দ বাক্য দিয়ে কথা বলতে আল্লাহ তার নবী হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে নিষেধ করেছিলেন।
" তোমরা দু’জন ফির‘আউনের নিকট যাও, কেননা সে তো সীমালংঘন করেছে। তোমরা তার সাথে নম্র ভাষায় কথা বলবে, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে, অথবা ভয় করবে। [সূরা ত্বহা ২০:৪৩-৪৪] "
আর আমরা গালির জোরে, গলার আওয়াজের জোরে নাস্তিকদের বা ইসলামের বিরোধিতা ও কটূক্তিকারীদেরকে পরাস্ত করে ইসলাম কায়েম করি ! দোজাহানের অশেষ নেকি হাসিল করে জান্নাতের চাবিতে শান দিই
বিশ্বাসের পার্থক্যের জন্য অন্য বিশ্বাসী কারোর উপাস্য তুলে গালাগালি করা নিষিদ্ধ কোরআনে
তোমরা তাদেরকে মন্দ বলো না, যাদের তারা আরাধনা করে আল্লাহকে ছেড়ে। তাহলে তারা ধৃষ্টতা করে অজ্ঞতাবশতঃ আল্লাহকে মন্দ বলবে। এমনিভাবে আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে তাদের কাজ কর্ম সুশোভিত করে দিয়েছি। অতঃপর স্বীয় পালনকর্তার কাছে তাদেরকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তখন তিনি তাদেরকে বলে দেবেন যা কিছু তারা করত। [সুরা আন’য়াম - ৬:১০৮]
অমুসলিম হোক আর মুসলিম হোক, সালাম সবাইকে দেওয়া যাবে এবং সালাম দিলে তার উত্তর জবাব দিতে হবে, নাহলে এটলিস্ট সেটাই বলতে হবে। কোনক্রমেই ক্ষতি কামনা করা যাবে না।
‘আর যখন তোমাদের সালাম দেওয়া হবে, তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম সালাম দেবে অথবা জবাবে তাই দেবে।’ (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ৮৬)
কোরআনের ইসলাম আর প্রচলিত হাদীস তাফসীর ফিকাহ কেন্দ্রিক ইসলামের আকাশ পাতাল তফাৎ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০২২ রাত ১০:৩১