সম্প্রতি তিব্বতের ডোকলাম সীমান্ত অঞ্চলে ভারতীয় সেনাদের অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করার বিষয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ভারতে নিযুক্ত চীনা দূতাবাস চীন সরকারের অবস্থান তুলে ধরেছে।
গত ২ আগস্ট, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় 'ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী চীন-ভারত সীমান্তের সিকিম অংশ অবৈধভাবে অতিক্রম করা সংক্রান্ত প্রকৃত ঘটনা ও চীনের অবস্থান' প্রকাশ করে। গত ১৮ জুন থেকে ডোকলামের ঘটনা ঘটে। এরপর চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রথমবার লিখিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সঠিক ঘটনা এবং এতে চীনের অবস্থান পরিষ্কার করে।
৩ আগস্ট, চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য ডোকলাম ঘটনায় চীন সরকার সংযম বজায় রেখেছে। কিন্তু সংযমেরও একটি সীমা আছে। ধীরে ধীরে চীন সরকারের অবস্থান পরিবর্তিত হবে, ভারতকে এমন অবাস্তব প্রত্যাশা না করার আহ্বান জানান চীনের মুখপাত্র।
একই দিন, ভারতে চীনা দূতাবাসের মিনিস্টার লিউ চিন সুং দেশটির গণমাধ্যমে চীনের অবস্থান বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন। তিনি ভারতকে বিনাশর্তে সীমান্ত থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান। সঙ্গে সঙ্গে চীন সরকার ও জনগণের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ড রক্ষার সদিচ্ছাকে অবমূল্যায়ন না করার তাগিদ দেন।
ডোকলাম ঘটনার পর চীন কূটনৈতিকভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। কিন্তু এখনো ৪০ জনের বেশি ভারতীয় সেনা সীমান্তে রয়েছে। এ ঘটনা কিভাবে সমাধান করা যায়, তা চীনের অবস্থান থেকে কিছুটা বোঝা যায়।
প্রথমত, ডোকলাম ঘটনার প্রকৃত কারণ, ভারতীয় সেনাদের অবৈধভাবে চীনের ভূখণ্ডে প্রবেশ করা। এ ঘটনার জন্য দায়ী ভারত।
এ ঘটনার পর থেকে ভারত ভিত্তিহীনভাবে 'ডোকলাম ভুটানের অংশ' বা 'বিতর্কিত ডোকলাম অঞ্চলে চীনের রাস্তা নির্মাণের' অজুহাতে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। চীন ঐতিহাসিক চুক্তি ও কূটনৈতিক দলিলের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে যে, চীন-ভারত সীমান্তের সিকিম অংশ পূর্ব নির্ধারিত। চীন-ভারত-ভুটানের সীমান্ত পয়েন্ট গিপমোচি পাহাড়ে অবস্থিত। ডোকলাম নিঃসন্দেহে চীনের অংশ।
ভারতীয় সেনাদের সীমান্ত পার হওয়ার ঘটনা খুব গুরুতর, তা অমিমাংসিত সীমান্ত অঞ্চল অতিক্রমের চেয়ে ভিন্ন।
দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক আইন ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে।
ভারত যে অজুহাতে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করেছে তা আন্তর্জাতিক আইন ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মৌলিক নীতি লঙ্ঘন করেছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, ভুটান একটি স্বাধীন দেশ, তার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। চীন ও ভুটানের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে আলোচনা সুষ্ঠুভাবে চলছিলো এবং ব্যাপক মতৈক্য হয়েছে। ভারতের হস্তক্ষেপের কারণে এ আলোচনার আনুষ্ঠানিক দলিল এখনো স্বাক্ষর হয়নি এবং দু'দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক এখনো প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি।
তৃতীয়ত, এবারের সংকট সমাধান হবে কি-না, তা ভারতের ওপর নির্ভর করছে।
এ সংকট সমাধানের একমাত্র উপায় হলো ভারতীয় সেনাদের বিনাশর্তে সরে যাওয়া। চীন দু'দেশের সম্পর্ক ও জনগণের কল্যাণ বিবেচনায় দু'দেশের সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রত্যাশা করে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, চীন নিজের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ড রক্ষা করতে পারে না! চীন আশা করে, সীমান্ত অঞ্চলের সমস্যা না বাড়ানোর সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে ভারত।
এম বি ফয়েজ।
সৌজন্যেঃ চীনা রেডিও ইন্টারনেশন্যাল।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:২২