বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগণের দোরগোড়ায় মানসম্মত প্রাথমিক স্বস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে স্থাপিত কমিউনিটি ক্লিনিক হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তা প্রসূত একটি অগ্রাধিকার প্রাপ্ত কার্যক্রম। আমরা কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) সারা দেশে প্রায় ১৪০০০ স্বাস্থ্য কর্মী কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রকল্পের আওতায় কর্মরত আছি ২০১১ সাল হতে। আমাদের চাকুরী রাজস্বকরণ বিষয়ে পিআইপি অপারেশন প্লান ও ৪র্থ এইচপিএনএসপিতে সিএইচসিপিদের রাজস্বকরণের কথা উল্লেখ আছে। এর আলোকে সিএইচসিপিরা মহামান্য হাইকোর্টে রীট করেছে এবং মহামান্য হাইকোর্ট তাদের দাবীর যৌক্তিকতা বিবেচনা করে রাজস্বকরণের জন্য সরকারকে নির্দেশনা প্রদান করেছে। উক্ত আদালতের রায় ও সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত সিএইচসিপিদের চাকুরী রাজস্বকরণ না করাই বাংলাদেশ সিএইচসিপি এসোশিয়েশন নামে বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় সংগঠন চলতি মাস হতেই চাকুরী রাজস্বকরণের দাবীতে কঠোর আন্দোলনে নামছে ।
বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগণের দোরগোড়ায় মানসম্মত প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে স্থাপিত কমিউনিটি ক্লিনিক হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তা প্রসূত একটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কার্যক্রম।জনমূখী এ কার্যক্রম ১৯৯৬ সালে গৃহীত হয় যার বাস্তবায়ন শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। ১৯৯৮-২০০১ এর মধ্যে ১০০০০ এর অধিক কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ পূর্বক অধিকাংশই(প্রায় আট হাজার) চালু করা হয়। কিন্তু ২০০১ সনে সরকার পরিবর্তনের পর কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় এবং এ অবস্থা ২০০৮ পর্যন্ত চলমান থাকে। পরবর্তীতে দীর্ঘ বিরতির পর ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ৬ বছর (১বছর প্রকল্প মেয়াদ বৃদ্ধিসহ)মেয়াদে আরসিএইচসিবি শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম পুনঃরুজ্জীবিতকরণ কার্যক্রম শুরু হয়।
এটা উল্লেখ করা প্রয়োজন, কমিউনিটি ক্লিনিক পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ (পিপিপি) এর একটি অনন্য উদাহরন। সব কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে উঠেছে জনগণের দান করা জমিতে। সরকার ভবন নির্মাণ, সেবাদানকারী নিয়োগ, ঔষধসহ প্রয়োজনীয় যাবতীয় যন্ত্রপাতি ও উপকরণ সরবরাহ করছে। পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা করছে সরকার এবং জনগণ সম্মিলিতভাবে। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনার জন্য সমাজের প্রতিনিধিত্বশীল অংশ নিয়ে কমিউনিটি গ্রুপ গঠন করা হয়েছে যার সভাপতি হচ্ছেন নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার।
প্রতিটি সিসি’তে একজন করে সিএইচসিপি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে যারা শুক্রবার ও সরকারী ছুটির দিন ব্যতিত সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৯:০০ টা হতে বিকাল ৩:০০ টা পর্যন্ত সেবা দিয়ে থাকেন। স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) নতুন ধরণের কর্মী। সকল সিএইচসিপিকে মৌলিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এই কর্মীরা কম্পিউটার পরিচালনায় দক্ষ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এই কর্মীরাই কেবল প্রতিটি ডিজিটালাইজড কমিউনিটি ক্লিনিক হতে অনলাইনে জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য ও সেবার প্রতিবেদন প্রদান করে থাকে। যা ডিজিটাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বির্নিমাণে প্রভূত ভুমিকা রাখছে।বর্তমানে প্রকল্পের প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা- কর্মচারীসহ নিযুক্ত এই কর্মীদের বছর বছর পদ সংরক্ষণ করে (ক্যারিড ওভার ) সারাদেশে এ সুবিশাল কর্মকান্ড পরিচালনায় সিবিএইচসি অপারেশন প্লানে অন্তর্ভক্ত করা হয়েছে।
প্রত্যেক কর্মীর উন্নতির জন্য জন্য চাকুরীর নিশ্চয়তা গুরুত্বপূর্ণ, ইতিমধ্যে উন্নয়ন খাতের অস্থায়ী চাকরী হওয়ায় বিশাল সংখ্যক প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ও দক্ষকর্মী চাকুরী ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে যেখানে এই কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষ করতে সরকারের বিপুল পরিমান সময় ও অর্থ খরচ হয়েছে অন্যদিকে স্বাস্থ্য বিভাগ একঝাঁক প্রশিক্ষিত তরুণ কর্মী হারাচ্ছে। তাই স্বাস্থ্য সেবায় কমিউনিটি ক্লিনিকে নিযুক্ত প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ কর্মীদের ধরে রাখতে হলে রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্তি আবশ্যক।
নিয়োগের পর হতে অদ্যাবধি এই কার্যক্রমে কর্মরত কর্মীরা উন্নয়ন খাতে সাকুল্য বেতনে চাকুরী করে বিধায় তারা অন্যান্য সরকারী কর্মীর ন্যায় বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, অর্জিত ছুটি ইত্যাদি সুবিধা পায় না।
কমিউনিটি ক্লিনিক হতে বিপুল সংখ্যক গ্রামীণ দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষ বিশেষ করে দরিদ্র মা ও শিশু, কিশোর- কিশোরী ও বয়স্ক মানুষ সেবা পাচ্ছে, যা মানুষের স্বাস্থ্য সেবার মতো মৌলিক অধিকার প্রাপ্তি নিশ্চিত করছে। এই গণমুখী ও দরিদ্র বান্ধব কার্যক্রমটি টেকসই করতে এর রাজস্বকরণ জরুরী।
কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন এবং বাস্তবায়ন বর্তমান সরকারের একটি সাফল্য মন্ডিত প্রসংসশীয় উদ্যোগ, কমিউনিটি ক্লিনিককে কেন্দ্র করে সিএইচসিপি ও তার তত্বাবধানে কমিউনিটি গ্রুপ ও কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রপ সদস্য সহ প্রায় ১০ লক্ষ্য জনবল যার মধ্যে ১৩৫০০ জন সিএইচসিপি, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য সরাসরি এ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ গ্রামীন জনগনের মধ্যে তাদের একটা অবস্থান এবং প্রভাব তৈরী হয়েছ্।
বর্তমানে সমগ্র বাংলাদেশে ১৩৫০০ কমিউনিটি চালু আছে এবং প্রতিমাসে গড়ে ৯৫ লক্ষ হতে ১ কোটি মানুষ এই ক্লিনিকগুলো হতে সেবা গ্রহণ করছেন। হাতের কাছে বিনামূল্যে সেবা পাওয়ায় সেবা গ্রহণকারী এই গ্রামীণ জনগোষ্ঠী শতভাগ সন্তুষ্ঠ। স্বাস্থ্য সেবায় কমিউনিটি ক্লিনিক এখন গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ভরসা স্থল। এই কার্যক্রমটি আজ দেশে বিদেশে নন্দিত। কর্মীদের এই দাবী পুরণ না হলে আন্দোলন কর্মসূচিতে ভেঙে পড়বে পুরো গ্রামীন স্বাস্থ্য সেবা। ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের জনগণ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৪১