গ্রামীন জন জীবনের একটি আস্থার নাম কমিউনিটি ক্লিনিক । রোগ শোক পরামর্শ যে কোন প্রয়োজনে সর্বসাধারণ মানুষ এখন চলে আসেন কমিউনিটি ক্লিনিক এ । এটা বাংলাদেশের মত একটি ছোট্ট স্বল্প উন্নত দেশের জন্য বিরাট সাফাল্য । যেখানে সংযুক্ত আছে বর্তমান ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা তথ্য ভান্ডার । আছে একজন প্রশিক্ষিত সেবাদান কারী কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে বর্তমান বাংলাদেশ স্বাস্থ্যখ্যাতে যে সাফল্য ও সুনাম এবং আন্তজার্তিক সম্মান অর্জন করেছে তার মুল কারিগর এই তৃণমূলের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)বৃন্দ।
কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) সারা দেশের প্রায় ১৪০০০ কর্মী তাদের চাকুরী রাজস্বকরণের দাবী নিয়ে এখন আদালতের শরানাপন্ন হয়েছেন, এই মর্মে ফেসবুক সহ কর্মীদের মারফত জানা যাচ্ছে । কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) বৃন্দ আন্দোলন, আবেদন করে, মন্ত্রী এমপি এবং স্বাস্থ্য বিভাগের উর্দ্ধতন বরাবর । কিন্তু বরাবর হতাশ হয়েছেন এবং কেউ এটাকে রাজস্বকরণের কোন ব্যবস্থা না করাই সর্বশেষ এখন মহামান্য আদালতের শরানাপন্ন হয়েছেন এই কর্মীরা । যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে দেশের স্বাস্থ্য তথ্য ভান্ডার এখন ডিজিটালাইজড বাংলাদেশ পাচ্ছেন আন্তাজার্তিক সম্মান বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সেবায় ।
২০০৯ সালে আওয়ামলীগ সরকার ক্ষমতাই এসে এই ক্লিনিক গুলো আবার নতুন করে চালু করেন । ২০১১ সালে দেশের মেধাবী একঝাক তরুণ তরুণীকে নিয়োগ প্রদান করেন তৃণমূল মানুষের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ।সৃষ্টি হয় একটি বিরাট কর্মসংস্থানের । এই তরুণ প্রজম্ম দেশমাতৃকার সেবাই নিজেকে নিয়োজিত করতে পেরে সৌভাগ্য মনে করে কাজ শুরু করেন গণমানুষের সেবাই । নিজ নিজ এলাকাই নিজ গ্রামে চাকুরী পাওয়াই সকলে কমিউনিটি ক্লিনিকে নিজের প্রতিষ্ঠান মনে করে সাজিয়ে তুলেছেন । আর এখান হতে নিজ পরিবার সমাজ প্রতিবেশীর সেবা নিজ হাতে করতে পারছেন। এই কাজটি আরো সুন্দর ও গতিশীল করার জন্য সরকারের প্রতিটি নির্দেশ দক্ষতার সহিত সম্পন্ন করে এখন কমিউনিটি ক্লিনিকে করেছে বিশ্বের রোল মডেল ।
এই কর্মীরা নিয়োগ পেয়েছিলেন চুক্তিভিত্তিক কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পে কিন্তু তাদের কাজের দক্ষতা ও কাজের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য বিভাগ হতে জানানো হয় তাদের চাকুরী রাজস্বখ্যাতে স্থানন্তরের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার এই মর্মে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৯ তারিখে দেশের সকল সিভিল সার্জন বরাবর একটি চিঠি ইস্যু করে ডাঃ মোঃ শাহ নেওয়াজ, পরিচালক (প্রশাসন), মহাপরিচালকের পক্ষে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর , মহাখালী ঢাকা।
এই চিঠি প্রাপ্তির পর হতে কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মী, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)। আরো উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে কাজে মনোনিবেশ করেন এবং সিসির উত্তর উত্তর উন্নতি হতে থাকে । চাকুরীর একটি নিশ্চয়তা হওয়ার আশাই তারা এই গণমানুষের সেবা করার একটি মহৎ পেশাকে বুকে আগলে নিলেন । বড় অফিসার হওয়ার স্বপ্ন আর দেখলেন না অনেকে । এর মধ্যে আবার চাকুরী পেয়েছেন এই দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের প্রায় ৪৫০০ ছেলে মেয়ে ।তারা তাদের পূর্ব পুরুষের মত নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে দেশকে সুখী সমৃদ্ধ করতে স্বাস্থ্য সেবাকে আকড়ে ধরে আছেন।
এভাবে কাজের অগ্রগতি দেখে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প সহ স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত রাজস্বকরণের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ চিঠি আসতে থাকে কর্মীদের বরাবর এবং তারাও আশায় কাজের প্রতি যত্নবান হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন স্বাস্থ্যখাতের সবোর্চ্চ পর্যায় । কিন্তু বিনিময়ে তাদের সে আশা পূর্ণ হয়নি গত ৫ বছরে । হয়নি কোন আর্থিক উন্নতিও ।
সাম্প্রতিক সময়ে আন্তজার্তিক সংস্থা বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে জানানো হয় ।
নবজাতক ও শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যু, প্রজনন হার নিয়ন্ত্রণে সাম্প্রতিক সময়ে ১০টি সূচকে সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়েছে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক।
সংস্থাটির সাম্প্রতিক এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৭ সালে প্রতি হাজারে ৬৫ শিশু মারা যেত ৫ বছর বয়সের মধ্যে। ২০১৪ সালে এ সংখ্যা নেমে এসেছে প্রতি হাজারে ৪৬ জনে। এ হিসেবে শিশুমৃত্যুর হার কমেছে ২৯ শতাংশ। ১৯৯০ সালে দেশে নারীপ্রতি শিশুর জন্মদানের সংখ্যা ছিল গড়ে ৩ দশমিক ৩। সম্প্রতি নারীপ্রতি শিশুর জন্মদানের এ সংখ্যা নেমে এসেছে ২ দশমিক ৩-এ। ২০০৯ সালে ৪৩ শতাংশ শিশু শুধু মায়ের বুকের দুধ পান করত। ২০১৪ সালে এ হার উঠেছে ৫৫ শতাংশে। একই সময় জন্মের আগেই দক্ষ স্বাস্থ্য কর্মীর সেবা পাওয়া শিশুর সংখ্যা ৫৩ শতাংশ থেকে উঠেছে ৬৪ শতাংশে। প্রয়োজনের তুলনায় কম ওজনের শিশুর সংখ্যা ৪১ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৩৩ শতাংশে।
বর্তমানে দেশের প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিক এখন মিনি হসপিটালের ন্যায় গড়ে তুলেছে এই তরুণ প্রজম্ম তাদের কাজের দক্ষতার মাধ্যমে । এখন ক্লিনিকে নিয়মিত নরমাল ডেলিভারী সহ বিভিন্ন প্রাথমিক রোগের সেবা ও পরামর্শ প্রদান করা হয় । প্রতিটি ক্লিনিকের এখন একটি স্থানীয় তহবিল আছে ক্লিনিক পরিচালনার জন্য স্থানীয় খরচ মেটানোর জন্য সরকারের সাথে সমন্বয় করে। সেটার জন্য এই কর্মীদের ছুটতে হয় বিভিন্ন মানুষের কাছে তহবিল গঠনের জন্য । এই ক্লিনিকের এক বিশাল কর্মযজ্ঞ একজন মাত্র কর্মী নিজে সব করে থাকেন । তারপর ও সরকার তাদের চাকুরীর নিশ্চয়তা দেননি এখন ও । একই বেতনে কাজ করে চলেছেন দীর্ঘ সময়।
কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)গণ প্রতিদিন সকাল ৯.০০ টা হতে ৩.০০ টা পর্যন্ত একটানা গণ মানুষের সেবা করেন। এটা কিভাবে সম্ভব ? এই অসম্ভব কাজটি করে যাচ্ছেন প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)গণ । এরা মানব না দানব ? এই মানব সন্তানেরা কিভাবে এই দানবীয় কাজটি করে যাচ্ছেন? এটা উপলদ্ধি করার মত কেহ নাই ? তাই সর্বশেষ মহামান্য আদালতের শরানপন্ন হলেন এই স্বাস্থ্যকর্মীরা ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:০৭