তিন দিনের একটি উইকেন্ড পাওয়ার পর আর কোন চিন্তা না করে চলে গেলাম ষাট গম্বুজ মসজিদ দেখতে।
দিন টা শুরুতে ভালো ছিল কিন্তু একটু পরে বৃষ্টির দেখা মেলে।যাই হোক শেষ পর্যন্ত ভালোই লেগেছে, তারই বর্ণনা দিতে যাচ্ছি।
প্রথমে যশোর থেকে খুলনা যাই, সকাল সাড়ে ১০ টায় রওনা দেই গড়াই বাসে্ , ভারা মাত্র ৮০ টাকা । এক ঘণ্টায় রাস্তা মাত্র অথচ আড়াই ঘন্টা । একে তো অত্যন্ত বাজে রাস্তায় তার উপরে গড়াইয়ের জায়গায় জায়গায় স্টপেজ। এর চেয়ে এয়ারলাইন্স এর বাস গুলো দিয়ে যাওয়া অনেক ভালো ছিল।
জানিয়ে রাখি, যশোর থেকে সরাসরি খুলনা পর্যন্ত ইউ এস বাংলা, নভো এয়ার এসব airlines বাস প্রোভাইড কোড়ে থাকে। ac bus, কোথাও থামে না এবং সবচেয়ে বড় কথা মাত্র দেড় ঘন্টার ভিতরে খুলনার পৌঁছে যাওয়া যায় । বাস গুলো সাধারনত flight এর সময়ের সাথে মিল রেখে চলাচল করে সকালে দুপুরে এবং সন্ধ্যার দিকে বাস যাতায়াত করে।
খুলনার সোনাডাঙ্গা বাস স্ট্যান্ডে আমরা আসলাম প্রায় দুপুর একটায়। সোনাডাঙ্গা বাস স্ট্যান্ড থেকে বাগেরহাটের উদ্দেশ্যে কিছু ছোট ছোট কোস্টার ছেড়ে যায়। খুব বেশি কমফোর্টেবল না হলেও 1/2 জন মিলে গেলে এর চেয়ে ভাল অপশন নেই আর যদি দল বেধে যেতে চান তবে ৩০০০ টাকার মধ্যে খুলনা থেকে বাগেরহাট বাগেরহাট থেকে খুলনা ac micro পেতে পারেন। এক ঘণ্টা পর ষাট গম্বুজ মসজিদের সামনে পৌঁছালাম। মসজিদটি যাওয়ার পথে রাস্তার বাঁ দিকে, শহরের আগে। আগে থেকে কন্ট্রাক্টর কে বলে রাখলে নামিয়ে দিবে। বাস ভাড়া ছিল মাছ মাত্র ৬০ টাকা। নেমে ২০ টাকা দিয়ে গেট থেকে টিকেট কেটে ঢুকে পড়লাম।
ছুটির দিন বলে অনেক বেশি ভিড় ছিল। ছুটির দিনে না আসাই ভাল। প্রাচীন স্থাপনা দেখার আসল স্বাদ হলো নির্জনতা। মানুষের ভিড়ে ঘুরে কেমন যেন শান্তি পেলাম না।আরো মন খারাপ হয়ে গেল যখন দেখলাম আমার নতুন কেনা action camera চার্জ নেই, তারপর কি আর করা নতুন একটি ডিসিশন নিতে হল।
মসজিদ দেখা বাদ দিয়ে চলে গেলাম লাঞ্চ করতে।মসজিদ থেকে ১০ টাকা ভাড়া দিয়ে মাজার রোডের মোড়ে পর্যটন হোটেল নামে একটি রেস্টুরেন্টে ঢুকে গেলাম, নিজেকে এবং action camera কে রিচার্জ করতে। ভেটকি মাছ দিয়ে ভাত খেলাম; রান্নার স্বাদ এমন আহামরি নয় তবে তবে বিরিয়ানি খেতে মনে হয় ভাল হত। খাওয়ার পর বাজার দেখতে গেলাম মোড় থেকে ডানে ১০০ গজ দূরেই মাজার। মাজার জিয়ারতের পর দিঘী দেখতে গেলাম, মূলত দীঘির কুমির দেখার উদ্দেশ্যে ।হাল্কা ছিল বৃষ্টির কারণে কুমিরের দেখা মেলেনি তবে বোঝা যাচ্ছিলো কুমির ঠিকই আছে । মাজার জিয়ারত শেষে অটো দিয়ে back to mosque । ১০ টাকা করে অটো ভাড়া, রিজার্ভ গেলে ৫০ টাকায় পেতে পারেন।
এবার আমরা রাস্তার অপর পাশে এক গম্বুজ মসজিদ দেখলাম। এর নাম সিঙ্গাইর মসজিদ।
তারপর আবার গেলাম ষাট গম্বুজ মসজিদ দেখতে। আসরের আযান হচ্ছিল, নামাজ পড়ার সময় ঘুরে ঘুরে দেখলাম ভেতরের বিশাল বিশাল খিলান আর কত আগের করার মজবুত ছাদ । ভালো লাগলো এটা ভেবে যে ৬০০ বছর আগের এসব স্থাপনা এখনো দিব্যি দাঁড়িয়ে আছে আর আমরা রানা প্লাজা বানিয়ে কয়েকবছরের মধ্যে এই মাটিতে ডুবিয়ে দিচ্ছে । এ জন্য হয়তো বাংলাদেশের ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃত তিনটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এর লিস্ট এটি একটি । ও আরেকটি কথা বলতে ভুলে গিয়েছি , নামাজের জন্য অযু করতে পারবেন just মেন গেট দিয়ে ঢোকার বাম পাশে অজু করা স্থান থেকে অথবা মসজিদের সামনে পশ্চিম দিকে বড় একটি দিঘি আছে । অজু করতে পারবেন দীঘির পাড়েও। সেখানে সুন্দর কিছু হাট বসানো আছে, ঘাটের পাশে সারাদিন বসে থাকলেও আপনার ক্লান্তি আসবে না।
ঘড়িতে দেখলাম পাঁচটা বেজে যাচ্ছে। ব্যাক করতে হবে। গেটের সামনে থেকে লোকাল বাসে উঠে ৩০ টাকা ভাড়া দিয়ে কাটাখালি নামের একটি জায়গা আছে, সেখানে নামতে পারেন। খুলনা , ঢাকা বা চিটাগাং এর দিকে ছেড়ে যায় অনেক রকমের বাস। আপনি যদি খুলনা আসতে চান তবে আমি সাজেশন দিব রুপসা ব্রিজে নেমে সুন্দর একটি সন্ধ্যা দেখে আসবেন। আরো recommendation হল খুলনা শহর টা খুবই সুন্দর, specially নিউ মার্কেটের পাশে থেকে খেয়ে নিতে পারেন street food গুলো। খুলনা নিয়ে আরেকদিন কথা হবে কাল অফিস আছে। আজ এ পর্যন্তই ধন্যবাদ।
আমার ট্যুরের পুরো ভিডিও টি দেখতে পারেন নিচের লিঙ্ক থেকে।
Visit to Shat Gombuj Mosque/ বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ ভ্রমণ
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:১৫