নয় মাস ধরে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা পরাধীনতার শৃঙ্খল হতে মুক্তির পথ শুরু করি। শুরু করি নতুন যুদ্ধের। এই যুদ্ধের জন্য প্রয়োজন স্বাধীনতার যুদ্ধের সমষ্টির চেয়েও আরো অনেক প্রয়োজন বেশি সার্বজনীনতা। এ যুদ্ধের প্রধান হাতিয়ার বিজ্ঞান। বিজ্ঞান বলতে শুধু কিছু তত্ত্ব জ্ঞান নয়; বরং এক পদ্ধতি। এই পদ্ধতি হল অনুসন্ধান। অনুসন্ধান পদ্ধতির পরিপূরক বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গী।
আমাদের দেশের প্রাতিষ্ঠানিক বিজ্ঞান শিক্ষা-ব্যবস্থা এখনো শিশু। উন্নত বিশ্বের উচ্ছিষ্ট ব্যবহার ও তাদের সংকীর্ণ স্বার্থের প্রেক্ষিতে আমরা কিছু প্রযুক্তি বা বিজ্ঞান পেয়েছি। যা একটা ক্ষুদ্র গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ ছিল। মূলত আমাদের দেশের বিজ্ঞান চর্চা শুরু হয় ঊনিশ শতকের কিছু সাহসী ও নিষ্ঠাবান লোকের বিজ্ঞান আলোচনার মাধ্যমে। যদিও তাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ ছিল না। তবুও তাঁরা সাধারণ মানুষের মাঝে বিজ্ঞানের প্রচার শুরুর উদ্যোগ নেন। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে প্রাতিষ্ঠানিক বিজ্ঞান শিক্ষা বিস্তার লাভ করে। কিন্তু দেশ বিভাগের পর শিক্ষার জোরালো দাবি উঠে।
স্বাধীনতার চার দশকেও বিজ্ঞান শিক্ষার তেমন উন্নতি হয় নি। যদিও প্রতিটি শিক্ষা নীতিতে মাতৃভাষায় সার্বজনীন শিক্ষা নিশ্চিত করা হবে বলা হয়। মানব সমাজে অন্যান্য বৈষম্যের মধ্যে প্রধান বৈষম্য শিক্ষা ক্ষেত্রে। কিছু মাত্র মানুষ নানা পর্যায়ে শিক্ষা পাচ্ছে এবং বাকী সবাই বঞ্চিত থাকছে। শিক্ষা নিয়ে বৈষম্যের কথা হলেও তা শুধুমাত্র সুবিধাভোগী শ্রেণীর মধ্যেকার পার্থক্য তুলে ধরা হয়।
পরীক্ষার পাশের হার দেখে শিক্ষার মান নির্ধারণ সম্ভব নয়। শিক্ষার মানের প্রশ্নে বৈজ্ঞানিক পাঠ্যক্রম ও সমাজের বাস্তব অবস্থা সব সময় উপেক্ষা করা হয়। সৃজনশীল নামে পরিবর্তন আনা হলেও কাঠামোগত পরিবর্তন আজো হয় নি।
শিক্ষার মানের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত যেকোন দেশের শিল্পের উন্নতি। ধনিক শ্রেণীর বিকাশের সাথে বিজ্ঞানের উন্মেষ এর অবনিত ঘটেছে। উদাহরণ আমাদের দেশের শিক্ষিত শ্রেণীর মধ্যে, যারা কলম পেনসিল ছাড়া অন্য কোন হাতিয়ারে হাত দেন না। যার ফলে কারিগরি শিক্ষার অভাবে ধ্বংস হচ্ছে বর্তমান শিল্পগুলো।