(শাস্ত্রীয় ধর্ম গুলো সম্পর্ক এ আমার ব্যাক্তিগত অবস্থান হচ্ছে আমি মানব কল্যানকর প্রগতির পক্ষের যাবতীয় উপাদান গুলো ধর্ম থেকে গ্রহণ করতে পিছপা হই না।)
১৮২৩ সালে আমেরিকার শিকাগোতে ‘বিশ্বধর্ম মহাসম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয় আর এর আয়োজক ছিলেন ক্যাথলিক ক্ষ্রিস্টধর্মীয়রা তাদের উদ্দেশ্য ছিল উক্ত সম্মেলনে সকল ধর্মর প্রতিনিধিরাই উপস্থিত থাকবে আর তখন সেখানে সকলে নিজ নিজ ধর্মর বৈশিষ্ঠকে তুলে ধরবেন এবং ক্যাথলিক ক্ষ্রিস্টধর্মই একমাত্র সত্য বলে প্রমানিত হবে। কিন্তু তাদের এ মনোবাসনায় ছাই ছুড়ে দিলেন ভারত থেকে আগত এক নবীন সন্যাসী- ‘স্বামী বিবেকানন্দ’।
স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন শ্রী রামকৃষ্ঞের শিষ্য,আর একাডেমিক শিক্ষা বিবর্জীত স্বভাব সুলভ কবি (রামকৃষ্ঞ) এই মানুষটি বাংলার লোকসমাজে স্বতঃপ্রবাহমান ধর্মবোধের ঐতিহ্য ধারণ করতেন তার হৃদয়ে। তার ধর্ম চেতনা ছিল সম্প্রদায়ের গন্ডীহীন। স্বামী বিবেকানন্দ ছিল রামকৃষ্ঞের আদর্শ এ পুষ্ট একজন প্রকৃষ্ট শিষ্য।
বিবেকানন্দ ঐ সম্মেলনটিতে উপস্থিত হয়ে (যদিও বা তিনি হিন্দু ধর্মর একজন প্রতিনিধি ছিলেন) কোনও বিশেষ ধর্মমতের শ্রেষ্ঠত্ব লাভের বিষয়টি বাতিল করে দিলেন,কি এক চমৎকার ভাবে তিনি বললেন- “সাধুচরিত্র,পবিত্রতা,দয়াদাক্ষিন্য জগতের কোন একটি ধর্মমন্ডলীর নিজস্ব সম্পত্তি নয়। প্রত্যেক ধর্ম পদ্ধতির মধ্যেই অতি উন্নত চরিত্রের নরনারী জন্মগ্রহণ করেছেন”।
ঐ সম্মেলনের শেষ দিনে তিনি বলেছিলেন - “কেউ যদি এরুপ স্বপ্ন দেখেন যে অন্যান্য ধর্ম লোপ পাবে এবং কেবল তার ধর্মই টিকে থাকবে,তবে তিনি সত্যিই করুণার পাত্র ; তার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। তাকে আমি স্পষ্টভাবে বলে দিচ্ছি তার মতো ব্যাক্তির বাঁধা সত্বেও শিঘ্রই সকল ধর্মর পতাকার উপর লিখিত হবে : বিবাদ নয়,সহায়তা চাই ; ধ্বংস নয়, পরস্পরের মিলন চাই ; মতবিরোধ নয়,চাই মিলন ও শান্তি।”
এই মানুষটির ভিতরে একটি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি ভঙ্গি সবসময় বিরাজমান ছিল যা দিয়ে তিনি সমাজকে ব্যাখ্যা করতেন,তিনি স্পষ্ট দেখতে পেয়েছিলেন যে সমাজ থেকে শোষনের মূল উৎপাটন না করতে পারলে মানুষ প্রকৃত মানবিক বোধে উদ্দিপ্ত হতে পারবে না। এজন্য ‘সমাজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠাকে তিনি অপরিহার্য মনে করতেন। এই বিশাল উপমহাদেশের আধ্যাত্মবাদী সন্যাসী হিসাবে স্বামী বিবেকান্দই প্রথম স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছিলেন যে - “আমি একজন সমাজতন্ত্রী”।
তিনি সমাজের শ্রেণীর রুপটিকে বর্ণরুপে ব্যাখ্যা করেছিলেন এইভাবে যে - “সমাজের চারটি শ্রেণী বিদ্যমান - ব্রাক্ষণ,ক্ষত্রিয়,বৈশ্য,শ্রুদ্র। প্রভূত প্রথম দুটির পালা শেষ হয়েছে এখন চলছে বৈশ্যের শাসন এরপর আসবে শুদ্রের শাসন বা প্রলেতারিয় শাসনের যুগ। অর্থ্যাৎ প্রতিষ্ঠিত হবে সমাজতন্ত্র।”
আর এই শুদ্রযুগ প্রথম কোথায় আসবে সেসম্প ের্কও তিনি আগাম বলে দিয়েছিলেন - “নবযুগের সূচনা হবে যে অভ্যুথ্থানের মধ্য দিয়ে তা ঘটবে চীন অথবা রাশিয়ায়,আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি না কোথায় তবে এ দুয়ের মধ্যে একটিতে হবেই’।
আর তার এ ভবিষ্যতবাণী কতটুকু সত্যি হয়েছিল তা আজ ইতিহাসের পাতায় ই প্রমাণ মেলে।
কেবলই মনে হয় আহা ! এমন ধর্মগুরু হলে,মানুষ তাকে অনুসরন করলে জানলে পেত মহাসত্যের সন্ধান,পেত চিরকাঙিখত মুক্তির সুমিষ্ট স্বাদ।