মানুষ এবং ধর্ম। মহাবিশ্বের যাবতীয় বিষয়গুলোর মধ্যে এই দুইটি বিষয় নিয়ে বা এদের মধ্যে আজ অবধি যতখানি বাদানুবাদ হয়েছে তা অন্য কোন বিষয় নিয়ে এদের কাছে পিঠেও হয়েছে কি-না তা সন্দেহাতীত। বা ভষ্যিতেও কী হবে তা সহজেই অনুমেয়।
মানুষ হচ্ছে জীব জগতের কেবল একটি জীব মাত্র আর ধর্ম বিষয়টা তাত্বীক মতাদর্শগত কতগুলো আচারের বিষয়। প্রথমেই যদি ‘ধর্ম’ শব্দটির উৎপত্তির সন্ধান করতে যাই তাহলে দেখতে পাই এর উদ্ভব ‘রিলিজন’ নামক ইংরেজী শব্দ থেকে। কিন্তু ‘রিলিজন’ এর প্রকৃত বাংলা শব্দ ‘ধর্ম’ নয়। বড়জোড় ‘ধর্মতন্ত্র’ হতে পারে। কারণ ধর্মের প্রকৃত অর্থ বলতে যা বুঝায় তা ঐ বস্তুর মধ্যকার বৈশিষ্ঠ। যেমন- আগুনের ধর্ম অগ্নিত্ম, জলের ধর্ম জলত্ম,পশুর ধর্ম পশুত্ম ইত্যাদি। তেমনি ভাবে মানুষের ধর্ম মনুষত্ব,আর এই মনুষত্ব বলতে মূলত- সহিষ্ঞুতা,ক্ষমা,ইন্দ্রিয়দমন,চুরি না করা,সংযম,শুভবুদ্ধি,জ্ঞান,সত্য, ক্রধহীনতা ইত্যাদি। আর ধর্মতন্ত্রের কাজ হচ্ছে এই বিষয়গুলোকে প্রতিষ্ঠা করা,আর সে লক্ষেই বিভিন্ন ধর্ম তন্ত্রের উদ্ভব। পৃথিবীর সকল ধর্মতন্ত্রই যাত্রা শুরু করেছিল মানুষের সার্বজনীন নৈতিকতা তথা মানবীয় গুনাবলীগুলোর কথা বলেই।
‘দর্শন’ ও ‘আচার’ এই দুটো উপাদানই বিভিন্ন ধর্মতন্ত্রের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে এবং তার ফলশ্রুতিতে ‘ধর্মতন্ত্র’ যে ‘ধর্ম’কে প্রতিষ্ঠা করার নিমিত্তে উদ্ভুত সেই ‘ধর্মতন্ত্র’ই মানুষের প্রকৃত ‘ধর্ম’কে হত্যা করে গলা টিপে এবং ‘ধর্মতন্ত্র’র নিচে চাপাপড়া এই সত্যিকারের ‘ধর্ম’ কে উদ্বার করার মধ্যেই নিহিত মানুষের প্রকৃত কল্যান।
অন্যান্য প্রাণীর মতো মানুষ ও কতগুলো সহজাত প্রবৃত্তি তথা- আহার, নিদ্রা, মৈথুন ইত্যাদি নিয়েই জন্মায়। কিন্তু অন্য প্রাণীর সাথে মানুষের পার্থক্য হচ্ছে সে সহজাত প্রবৃত্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হয়ে,সহজাত প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রন করে। অর্থ্যাৎ পশু যেমন জন্মসূত্রেই পশুত্ব অর্জন করে,মানুষ কেবল জন্মসূত্রেই সেইরুপ মনুষত্ব অর্জন করতে পারে না। পরবর্তীতে, সেটি (সহিষ্ঞুতা,ক্ষমা,ইন্দ্রিয়দমন,চুরি না করা,সংযম,শুভবুদ্ধি,জ্ঞান,সত্য, ক্রধহীনতা ইত্যাদি) তাকে অর্জন করে নিতে হয়। আর তা অর্জনেই প্রকৃত ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হয়।