ডাঃ তোফায়েল আহমেদ। সিপিবি ময়মনসিংহ এর একজন্য সদস্য (যে লোকটি পেশায় ডাঃ হওয়ার পরেও তার আচরণিক সরলতার বা সহজতার কারণে হয়ত আমাদের অনেকের নিকট ই যথাযথ মূল্যায়ন পেয়ে উঠেনি আজ অবধি,অবশ্য সম্পর্ক উথ্থান পতনের বিষয়;আমি আজ তার কাব্যগ্রন্থ “ ভগবান পড়বে ফাঁসি” ( ২০১৪ এর বইমেলায় প্রকাশের পরও তোফায়েল ভাইয়ের নিজেকে আড়াল করে রাখার বা লাজুক,নম্র স্বভাবের প্রবণতার কারণে কিংবা আমার সাথে সময়ের সঠিক সংযোগ না হওয়ার কারণে আমার হাতে আগে পৌছোয় নি) পড়লাম। এককথায় বলব- অদ্ভুত তার লেখনি শক্তি। কী বর্ণীল সমন্বয়,কত প্রাচুর্য এ ভরপুর তার শব্দ ভান্ডার,কতটা তেজী-বেগবান,দীপ্ত ভাবনা ভিতরে ঘুমরে মড়লে পড়ে কলমের লেখনিতে বেরিয়ে আসে -
“যে পা-চাটা কুকুরেরা মুদ্রার বিনিময়ে বিকিয়ে দেয় স্বাধীনতা
তাদের কাছ থেকে দেশপ্রেমিক সার্টফিকেট নেব তেমন অকবি আমি নই;
সাহসী জনতার কবি যদি হই দেশদ্রোহী সেজেই রাজপথে নামবো।”
এই মানুষটি আমাদের থেকে কতটা গুরুত্ব দাবী রাখতে পারে এই গ্রন্থটি পড়ার পড় অনুধাবন করতে পারলাম। এই মানুষটির ভিতর প্রেম,সংগ্রামের এক অদ্ভুত সহাবস্থান। যা বইটি না পড়লে আমি টেরই পেতাম না। তিনি লিখেছেন-
“মানচিত্র বদলেছে অনেক,কই অভাগা জলতো সরলো না;
এখনো সে বয়ে বেড়ায় দারুণ দুঃখ,প্লাবিত করে প্রিয় স্বদেশ।”
এই পোস্টটি যারা পড়বেন তাদের বলব অবশ্যই তোফায়েল ভাইয়ের “ভগবান পড়বে ফাঁসি” বইখানা টাকা দিয়ে কিনে সংগ্রহ করে উনাকে আরও লেখার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করবেন। ‘পোস্টার,স্লোগান এবং ইত্যাদি’ কবিতায় তিনি লিখেছেন -
“ আমি কখনও শ্লোগানে উচ্চকিত হইনি,
যদি শ্লোগান দিতে বলা হতো শ্লোগান ধরতাম-ভালবাসি,ভালবাসি।
এমনকি দেয়ালে কোন প্রতিবাদী ছবি আঁকতে বললেও এঁকে দিতাম
আলিঙগনে আবদ্ধ যুগল মানব-মানবী। শুধুই ভালোবাসা-ভালোবাসি,ভালোবাসা-বাসি।”
আরেকটি কবিতা ‘বাংলা-আমার ভালোবাসা’ লিখেছেন-
‘আর যখন তুমি বসে আছো আমার পাশে তখন আমি সম্মোহিত এক যুবক
কী ভীষণ বোবা অথচ পৃথিবীর বেশ কয়েকটি ভাষাই আমার জানা;এমনকি
মাতৃভাষায় ও উচ্চারণ করিনি আমার প্রিয়তম সেই বাক্যখানি-
‘আমি তোমাকে ভালবাসি’।
না জানি ভালোবাসা তার শুচিতা হারায় তাই শৈল্পিক শুদ্ধতায় ভালোবাসাকে
বুকের ভেতর রেখে,অনুচ্চারিত মন্ত্রে;
তোমারই ধ্যানে মৌন ধ্যানী।’
ভালোবাসার কি দুর্দান্ত বহিঃপ্রকাশ,কি অদ্ভুত মানবীয় নিরলোভ প্রতিজ্ঞা। কত বহুর্মূখী-বর্ণীল ভালোবাসার কথাটাই না তিনি লাইন গুলো দিয়ে ছুঁয়ে গেলেন।
তার ‘চাই দংশন’ কবিতায় তিনি লিখেছেন -
‘খুনির কাছে ভালোমানুষ বলে পরিচিত হতে চায় না কবি’
পরক্ষণেই বলছেন-
‘খুনির কাছে রক্তপিপাসু ঘাতক বলেই পরিচিত হতে চাই। ‘মুক্তিযোদ্ধা হত্যার বিচার চাই’
বলে চিৎকার করে লাভ নেই কোনই।’
‘চাই দংশন ’ কবিতায় তিনি বলছেন মানুষের মুক্তির পথের লড়াকু সৈনিকদের কথা এভাবে -
‘সরল রেখায় নয় কিংবা বৃত্তাকার ঘূর্ণনেও নয়-বুকে ভর দিয়ে;
শিল্পের সর্পীল গতিতে,অক্ষরে অক্ষরে হাঁটে মণিধারী সন্তান।’
আমি পুলকিত হই,আমি শিউরে উঠি লাইনগুলো পড়তে গিয়ে। এতদিন এমন একটি মূল্যবান সোনা আমার ঘরের পাশে ছাই চাপা হয়ে পড়ে রইল টেরই পেলাম না, আমি কতটা দুর্ভাগ্যবান। সময়কে ধরতে পারাটা কবি সাহিত্যিকদের একটা চরম সার্থকতা আবার এমনভাবে ধরা যেন সকল সময়েই তার অবয়ব থাকে উজ্জল থেকে উজ্জলতর। আবেদন হতে থাকে ক্রমঃশ গাঢ়তর। তোফায়েল ভাই সেক্ষেত্রে সার্থক হয়েছেন বলে আমি মনে করি। মানুষ একদিন তোফায়েল ভাইয়ের কবিতা গুরুত্ব নিয়ে পড়বে,তার থেকে শক্তি আহরিত করবে এই জানি। শুভ কামনা- ডাঃ তোফায়েল আহমেদ। আপনার লেখনি আমাদের শক্তি যোগাবে মানব মুক্তির সংগ্রামে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:০৬