ছোট একটা গল্প বলি।
বড় দুঃখের গল্প।
এক্সিডেন্ট এ মারা গেছে পাশের বাড়ীর ২৯ বছরের জোয়ান ছেলে। আকিব।
কান্নাকাটি চলছে।ঘরভর্তি মানুষ।আত্মীয় স্বজনের ভীড়ে শোকের মাতম।
পাশের বাড়ীতে চলছিলো ময়না,টিয়ার জন্মদিন।
এই একটু ডিসকো গান। রঙ ছোড়াছুড়ি।বেলুন ফাঁটানো।আনন্দের নদী ,সাগর,সমুদ্র,মহাসমুদ্র..এই সব আর কী !
আমরা হইলাম ভেড়া,ছাগল,গরু,মহিষ,গাধা,মুরগি হাসের পাল।
আমরা একবার কান্দন দেকতে আছিলাম।
একবার হিপ হিপ হিপ হুর রে.. ময়না , টিয়ার জন্মদিনের বেলুন ফাঁটানোর শব্দ শুনতে আছিলাম।
দুই বংশই অত্যন্ত পাওয়ার ফুল।আমরাও ফুল ..তয় হুদা ফুল।
আমরা যারা পাবলিক,ভেড়া,ছাগল,গরু,মহিষ,গাধা,মুরগি হাসের পাল-এর সঙ্গে আছি-
তারা অত্যন্ত আদব লেহাজের সঙ্গে তাদের কর্মসূচী পরিলক্ষিত করছিলাম।
তাতে আমাদের কোনো সমস্যাই হচ্ছিলো না।
একদিকে কোরআন খতম চলতেছিলো্।আর একদিকে ডিসকো গানের মহড়া। সব ঠিকঠাক চলতেছিলো।
আমাদের কাছে কোনটাই অসুবিধার লাগতেছিলো না। গান বাজছে টানা। ইচিক দানা..বিচিক দানা.. দানার উপর দানা..ইচিক দানা..
কিন্তু,যাদের ঘরে শোকের মাতম..তারা তো এমনিতেই শোকে পাগল..তার উপর ডিসকো গানের সুর যখন মরা বাড়ীতে বারবার ঢুকে পড়েছিলো ..
এই বংশের একজন সেই বংশে যাইয়া চিতকার করে বললো ..বন্ধ করেন..বন্ধ করেন। আপনেরা কেমন মানুষ ?মানুষ মরছে এক্সিডেন্টে.. আমরা বাঁচি না কাইন্দা.
.আর আপনেগো ফুরায় না তামাশা।
আমরা যারা ভেড়া,ছাগল,গরু,মহিষ,গাধা,মুরগি হাসের পাল,তাদের মাথায় ব্যপারটা এইবার একটু যেনো টোকা খাইলো। তাইতো.. মানুষ মরছে পাশের বাড়ীত। এই ব্যডারা হালা হমদির
পুতেরা মারায় ইচিক দানা বিচিক দানা। বিচিত দিলে ঠিক মতো বুইঝ্যা যাইবো।
এমন সময় সাউন্ড আরো বেড়ে গেল জন্মদিনওলা গো।আমরা যারা ভেড়া,ছাগল , আমরা তো অবাক। বিষয় কি ? বিষয় তেমন কিছু না। আমরা বুঝতে পারি ..আমাদের বোঝানো হয়.. একই দিনে অনেকের জন্ম হইতে পারে, অনেকের মৃত্যু হইতে পারে। এইটা মানুষের হাতে না। আল্রার খেলা। আল্রার ব্যপার। গনতান্ত্রিক এই দেশে একজন -এর মৃত্যুর জন্য সবার জন্মদিবস থেমে যেতে পারে না। যে যার জন্মদিন পালন করবে। কেউ বাঁধা দিলে সেইটা সঠিক না। গনতান্ত্রিক দেশ ।তাইলে গনতন্ত্র বাঁচে না।
আমরা আসলে জন্তু বিশেষ। আমরা মনুষত্ব , মানবিকতা,গনতন্ত্রের বুঝবো টা কি ? এইটা হইলো যারা মস্ত শিক্ষিত.. ধরেন ফাইভের ও উপরে সেভেন ক্লাস,এইট ক্লাস পাশ দিয়া ফেলছে.. তারা বোঝবে।তাদের জন্যেই গনতন্ত্র সোনার বংলায় রক্ষা পাবে। আমরা বোঝতে পারি ইচিক দানা, বিচিক দানা, দানার উপর দানা চলা উচিত। কারন..এইটা গনতন্ত্রের প্রশ্ন। ও আল্লা..এই লোকগুলা এত খারাপ ক্যান ? দানার উপর দানা তারা বন্ধ কইরা গনতন্ত্র হত্যা করবার চায়।
আমরা আশ্বস্থ হই।
কিন্তু তারপরেও প্রশ্ন আসে.. আরে ভাই ..গানটি বন্ধ করেন.. অনুষ্ঠানটা রাত্রে কইরেন। মানবিকতা বইলা তো একটা ব্যপার আছে।
তেড়ে আসে ইচিক দানার দল।
মইরা গেছে কবর দিন।
আমরা করবো জন্মদিন। এইটা মানবিক রীতি তথা মানবিকতা।
এইখানে ভীড় করবেন না।যান ভাই যান তো.. আইজকা না হইলেও পৃথিবীতে ৫ লাখের বেশী লোক জন্ম গ্রহণ করছে। সবার জন্মদিন বন্ধ করতে পারলে আমাদের টাও আমরা করবো না।
অইগুলা বন্ধ করে আসেন।
--এইটা কেমন কথা বলছেন ভাই ? ৫ লাখ লোক তো আমাদের প্রতিবেশী না ।তাদের গানের শব্দে মরা বাড়ীর মানুষের কোরআন খতমেও অসুবিধা হচ্ছে না।
শেষ কথাগুলো চাপা পড়ে গেলো ইচিক দানার ভলিউম আরো বাড়াতে।
আমরা একটি অসভ্য,অশিক্ষিত,ইতর,নোংরা,পঁচা,বাসি,দূর্গন্ধময় সমাজের কয়েকজন লোকাল চামার টাইপের মানুষের গল্প শোনালাম।
এবার চলুন দেখি বাংলাদেশ-এর ১৫ আগষ্ট এর চিত্র।
বাংলাদেশ নামক একটি ৫৬ হাজার বর্গমাইলের একটি দ্বীপ,একটি পতাকা,একটি স্বাধীন জাতি ,রাষ্ট্র পেতে যিনি স্বপ্ন দেখিয়েছেন,নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমান।
তাঁর সরকারের সেই সময়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, যে এখন ইতিহাসের পাতায় নোংরা ডাষ্টবিনের সমান মর্যাদাবান সেই খন্দকার মুশতাক আহমেদ-এর ক্ষমতা লিপ্সার কাছে বিভান্ত কিছু সৈনিক
দ্বারা মর্মান্তিক ভাবে নিহত হলেন ১৫ আগষ্ট। সারা দেশে দিনটি পালিত হয় জাতীয় শোক দিবস হিসেবে।এই সেই মুশতাক..যিনি জাতির পিতার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষমতা গ্রহণ করেই
বলেছিলেন..বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।
সে অনেক আগের কথা। আজকের কথা শুনুন।
পত্রিকা আর টিভি চ্যানেল গুলোতে নির্লজ্জ এক নাটক দেখতে পাই। আমরা দেখি এই দেশের প্রধান বিরোধী দল নেত্রী ফুসফুসি বেগম -এর স্ব ঘোষিত জন্মদিন আজ,এই ১৫ আগষ্ট-তে ই।
ধরে নিলাম- এটি তার সঠিক জন্মদিন। ধরে নিলাম-জাতির পিতার শাহাদাত বরনের শোক দিবস এড়িয়ে নির্মম কোনো রসিকতার খেলায় তারা মত্ত নন।
তাহলে...কতগুলো প্রশ্ন আপনাতেই আসে
১.তারা কি সুকৌশলে বঙ্গবন্ধুর অবদান অ-স্বীকার করবার মাধ্যমে নিজেদের নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে চান ?
২. বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের সঙ্গে তাদের কোনো নেতার কি মানসিক ইন্ধন ছিলো যা থেকে এখনো তারা বেরুতে পারেন নাই ?
৩. অতীতের কোনো ভুল যা..শুধরে ফেলার আর কোনো সুযোগ নাই..তারা কি সেই ভুলেই আজীবন বসবাস করতে চান ?
৪.অপরাধ করা আর অপরাধ করতে থাকা দুটোর কি একই ষ্ট্যাটাস ?
৫.বিরোধী দলের চেয়ারপারসন ফুসফুসি বেগম এমন একজন দায়িত্বশীল প্রতিনিধি হয়ে পুরো জাতির সঙ্গে এই ধরনের অভিনয় -এ অংশ গ্রহণ করতে তাঁর কতোটা ভালো লাগে ?
৬. তিনি কি নিজের আসল জন্মদিনের কেক কাঁটতে না পারার আর নিজের সঙ্গে নিজের শঠতা করার দু:খে বাথরুমে বসে একা একা চিতকার করে কাঁদেন ?
৭. ভুলের, পেশীর,অর্থের রাজনীতি আর কতো দিন ?
৮.বঙ্গবন্ধু কি কোনো দল এর রেজিষ্ট্রি করা সপ্মত্তি না প্রতিটি বাঙালি হৃদয়ে তার আলাদা অবস্থান আছে ?
ফুসফুসি বেগম এর একজন বৃদ্ধ অধ্যাপক আছে।
তিনি জাতিকে নয়া গনতন্ত্র শেখালেন।
তিনি বললেন- একই দিনে অনেকের জন্ম হইতে পারে, অনেকের মৃত্যু হইতে পারে। এইটা মানুষের হাতে না। যে যার জন্মদিন পালন করবে। কেউ বাঁধা দিলে সেইটা সঠিক না।
ফুসফুসি বেগম,আপনি যদি বিলকিস বা সমীরন হইতেন আমাদের কোনো আপত্তি থাকতো না। এতো বড়ো একটি দলের ন্যাতার এই রকম ছ্যাবলামো মানায় না।
মানুষ সুন্দর হয় মনের সৌন্দর্যে। শুধুমাত্র বিউটিশিয়ান বাইট্টা মুখে লাগাইলেই দূর্গন্ধ যাবে না। ব্যপারটা বড়োই দৃষ্টিকটু আর অমানবিক।
আমরা যারা ভেড়া,ছাগল,গরু,মহিষ,গাধা,মুরগি হাসের পাল,ব্যপারটা কিছু কিছু বোঝতে পারতেছি।
আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে - ইচিক দানা বিচিক দানার সাথে এই দায়িত্বশীল বৃহত দলটির আদর্শগত পার্থক্য কোথায় ?
মহামান্যা,রুপে ধন্যা,অপরুপা কন্যা ফুসফুসি বেগম ,আমরা আপনাকে আরো বেলুন আর চকলেট কিনে দেবো্।
আমরা যারা ভেড়া,ছাগল,গরু,মহিষ,গাধা,মুরগি হাসের পাল,তারা ব্যপারটা কিছু কিছু বুঝে ফেলতেছি। আপনি সেটা বোঝতে পারতেছেন তো ?
রচনাকাল ১৫ আগষ্ট,রাত ১১.৫০//২০১০
আবদুল্লাহ-আল-মাসুম
গীতিকার,নির্মাতা,আলোকচিত্রশিল্পী
[email protected]