জেলা শহর থেকে মা-বাবাকে ছেড়ে পেটের দায়ে রাজধানী শহরে থাকতে হয় খাঁ সাহেবকে। চাকুরী করে একটা নামী দামী সরকারি অফিসে। ছোটবেলা থেকে একটু-আধটু বই পড়ার অভ্যাস আছে। আধুনিক যুগে মোবাইল ফোন কিনার পরে তার অনেক বই মোবাইলে পড়া হয়। যখন থেকে ইন্টারনেট সহজ হলো তখন থেকেই ইন্টারনেটে নানারকম লেখা পড়া হয় খাঁ সাহেবের। তসলিমা নাসরিনের লেখা পড়া হয়।
সাধারণ পড়ার পাশাপাশি একদিন সে দাড়িপাল্লা ধমাধম নামে এক ব্লগারের ধর্ম বিষয়ক লেখা পড়ে। এই লেখাগুলো সে খুব গোপনে পড়ত। তারপর সে মুক্তমনা ব্লগ পড়া শুরু করল। এভাবে ধর্ম নিয়ে পড়াশুনার মাঝে সে বিপুল আগ্রহ অনুভব করল। তারপর ধীরে ধীরে আরজ আলী মাতুব্বর, আলী দস্তি থেকে অভিজিৎ রায় এর লেখা পড়ল। এসব পড়ার পর সে মুসলমানের গন্ডি থেকে বের হয়ে আসে।
নিজেকে সে এখন একজন অজ্ঞেয়বাদী হিসেবে ভাবে। ধর্ম নিয়ে সে পরিবারের লোকজনের সাথে বিভিন্ন তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। বাড়ির লোকজন তার নিধার্মিকতার কথা টের পায়। এবং এ কারণে বাড়িতে তার মাতা-পিতা ভাই-বোন চরম মনোকষ্টে ভুগতে থাকে। খাঁ সাহেব তারপরও বিভিন্ন সময়ে ধর্ম নিয়ে তার বাড়ির লোকজনের সাথে তর্ক করতে থাকে। কিন্তু তার বাড়ির লোক তার নিধার্মিকতার কথা অনেকটা মেনে নেয়। তারপরও তারা প্রতিদিনই নতুন উদ্যোমে তাকে ধর্মে ফেরানোর চেষ্ঠা করতে থাকে। কিন্তু কোন কাজ হয় না।
এর মধ্যে একদিন খাঁ সাহেবের বিয়ে হয়। তার শশুর বাড়ির লোক বিরাট ধার্মিক ধরণের। নামাজ পড়া নিয়ে ভীষণ জোরাজুরি করতে থাকে। কিন্তু খাঁ সাহেব তার মা-বাবা আর ভাই-বোন ছাড়া কাউকেই তার নিধার্মিকতার কথা বলেনি ততদিনে। বিয়ের পর সে বউয়ের
সাথে ধর্ম নিয়ে তর্ক-বিতর্ক শুরু করে যেমনটা সে তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে করত। একদিন তার স্ত্রীও নিধার্মিকতার কথা বুজতে পারে। এবং সেও খুব মনোকষ্টে ভুগতে থাকে। যারা খাঁ সাহেবের নিধার্মিকতার কথা জানে তাদের চাপ একরমক আর যারা না জানে তাদের কাছ থেকে অন্য ধরণের যন্ত্রনা পেতে থাকে নামাজ পড়া নিয়ে।
আজকের দিনের বাংলাদেশ এক চরম ধার্মিকতার দেশে পরিণত হয়েছে। খাঁ সাহেবের মনে হতে থাকে, বাংলাদেশের মানুষ ধার্মিকতার দিক দিয়ে বিশ্বের তাবৎ ধার্মিক রাষ্ট্রকে পিছনে ফেলেছে। এই দেশে শরীয়া আইন এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। বাংলাদেশের মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে চরম ধার্মিকতা পৌছে গেছে।
খাঁ সাহেব যে অফিসে চাকুরী করে, সেখানে তার বস এবং তার ওপরের বস সকলেই চরম নামাজী এবং ধার্মিক। তারা অফিসে শুধুমাত্র লিখিতভাবে অর্ডার করা বাকি রেখেছে যে, নামাজ পড়া বাধ্যতামুলক। সরকারি যদি ইসলামী প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করত তাহলে ঠিক অফিসের বস’রা নামাজ না পড়ায় তার ওপর শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নিত। অফিসে ১০০ শতাংশ নামাজী বানানোর লক্ষ্যে তারা বেনামাজীর লিস্ট বানানো শুরু করে। লিস্ট অনুযায়ী ব্যক্তিদের ডেকে নিয়ে ঘণ্টা ব্যাপী বিভিন্ন ছবক শেখানো হয়। এবং চাকুরী বাঁচানোর সুবাদে অফিসের সমস্ত বেনামাজী আজকে নামাজী হয়ে গেছে।
কিন্তু খাঁ সাহেবের একটু একরোখা টাইপের মানুষ। তাই সে কারও কথাই গ্রাহ্য করছে না। বড় বড় স্যাররা তাকে কখনও সরাসরি কথনও কারও মাধ্যমে নামাজে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। বর্তমানে বিষয়টি জোর করা পর্যায়ে চলে গেছে। পারলে পুলিশ দিয়ে মেরে ধরে নামাজ পড়ায়।
এখন পাঠকের কাছে প্রশ্ন, খাঁ সাহেব এখন কি করবে? সেকি বলে দিবে যে, সে একজন এগনস্টিক? সে পৃথিবীর কোন ধর্মকেই বিশ্বাস করে না? তাই তাকে নামাজ পড়তে জোর করার কিছু নেই। নাকি এটা বললে সে কোনদিন সহকর্মীদের কাছ থেকে রাস্তা ঘাটে কোপ খেতে পারে?
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:২৬