আমি ভীষণ ক্যামেরা শাই। এমনিতেও শাই। ক্যামেরায় ছবি তুলতে গেলেই অস্বস্তি লাগে, সংকোচ হয়। তারপর আবার ক্যামেরা ফেস অতি জঘন্য (বাস্তবেও জঘন্য)। ছবি তোলার পর অনেক ছবি আছে যা আমি দেখিই না। হয়ত অনেকদিন পর দেখি। কারণ তখন কিছুটা সহ্য করতে পারি। কিন্তু সাথে সাথে সেই ছবিটাকে সহ্য করা আমার পক্ষে একটু কঠিন
অনার্স পড়ার সময় থেকেই আমার চুল পড়া শুরু হয়। মোটামুটি সেকেন্ড ইয়ার পার না হতেই মাথার অনেকখানি খালি হয়ে যায়। তখন থেকেই মানুষের অনেক প্রশংসা শুনে আসছি। এখন মাথায় চুল বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই। আর মানুষের প্রশংসা শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আগে টাক অনেক লুকানোর চেষ্টা করতাম। এখন একদমই করি না। কারও সাথে প্রথম দেখা হলে আগে লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে যেত। এখনও মাথা নিচু করি, তবে লজ্যায় না টাক যেন পুরোটা দেখতে পায় সে জন্য।
বাড়ির লোকজন রাতদিন আমার মাথা খায় এই জন্য যে, আমি কেন একটা ক্যাপ পরতে পারি না? আমি সোজাসুজি বলে দিয়েছি- ক্যাপ পরায় আমার আপত্তি নেই, কিন্তু সেটা যদি হয় টাক ঢাকতে তাহলে আমি স্যরি। কারণ ক্যাপ পরি আর উইগ পরি, দিন শেষে আমার মাথাতো টাকই। এটা ছাড়া কোনভাবেই আমাকে স্বীকার করা যাবে না।
আমাদের সমাজ দিনদিন পুরুষতান্ত্রিক থেকে নারীতান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে কিনা বুজতেছি না। আগে (এখনও হয়) কোন একটা মেয়ে যদি বিয়ে না করত বা বিয়ে না হত তাহলে, পাড়া পড়শী তো আছেই বাড়ির লোকের ভালবাসায় ঘরে টেকা দায় ছিল (বা আছে)। আমার বয়স ২৯ বছর ০২ মাস। এখন আমার অবস্থাও সেরকম। কারও সাথে প্রথম দেখা হলে যেটা জিজ্ঞেস করে সেটা হল বিয়ে করেছি কিনা। তারপরের কথা হল বিয়ে কেন করছি না?
মাস্টার্স শেষ করেছি তাও দু আড়াই বছর হল। চাকরী করছি তারও কিছু আগে থেকে। আহামরি কিছুই না, কোনরকম খেয়ে খরচে চলে যায়। মাস্টার্স পড়ার পর থেকেই বাবা মা আর বোনেরা মিলে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। কোথাও কোন মেয়ে দেখলেই আমাকে ছবি পাঠাই। আমিও কোনও না কোন কারণ দেখিয়ে বলি মেয়ে পছন্দ হয়নি। এরকম বহুবার হয়েছে। তাতেও তাদের উদ্যম একদম কমেনি। প্রত্যেকবারই তারা নতুন উদ্যমে মেয়ে দেখেছে।
আমি দুয়েকবার বিভিন্নরকম চাপে পড়ে রাজি হয়েছিলাম কিন্তু বিধিবাম। মাথায় চুল নেই এমন ছেলের সাথে কোন বাবা-মা তাদের মেয়ে বিয়ে দিতে পারে একটা যেন অলৌকিক একটা ব্যাপার। যে কয়েকবার রাজি হয়েছি সে কয়বারই তেনারা মাথায় চুল নেই বলে অমত করেছে। অবশ্য আমাদের সমাজের মানুষ অত খারাপ না। আমাকে কখনও সরাসরি বলেনি যে, ছেলের মাথায় চুল নেই, টাক তাই আমরা রাজি নই। তারা খুব সুন্দরভাবে যেই অজুহাত (এইটা নাকি মানুষের তিন নম্বর হাত) দেখিয়েছে তা হল ছেলের চাকরী-বাকরি ভাল না (সত্যিই তেমন ভাল না)।
সেদিন একজন বলল তোর একটা বায়োডাটা পাঠাস আর একটা সুন্দর ছবি। আমি বললাম আমার ফেসবুক দেখিয়ে দিস। সে বলল তোর প্রোফাইলের কোন ছবি জাতের না। আমি বললাম আমার কোন জাতের ছবি নেই।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৩