একদিন সন্ধায় হঠাৎ বেলার ফোন
আকাশ,
আমার পিরিয়ড হচ্ছে না।
আরে এত চিন্তা করছ কেন? আজ হচ্ছেনা কাল হবে, নয়ত পরশু হবে, নয়ত টরশু হবে।
তুমি বুজতেছ না?
কি বুজতেছি না?
তুমি কি সত্যিই ভুলে গেছ?
না ভুলিনি! তোমার বার্থডে ২৬ আগষ্ট, জানি আমি।
আকাশ এটা মোটেও মজা করার সময় না। গত মাসে আমরা একসাথে তোমাদের বাড়িতে একটা নির্জন দুপুরে অন্তরঙ্গ মুহূর্ত কাটিয়েছিলাম। তারপর অনেকদিন হয়ে গিয়েছে। আমার পিরিয়ডের ডেট চলে গেছে। এখনও পিরিয়ড হয়নি।
আকাশের সব মনে পড়ে গেল। তার জীবনের শ্রেষ্ঠতম একটা সময় সে কাটিয়েছিল সেদিন। কিন্তু সাথে সাথে তার কপালে একটা গভীর চিন্তার ভাজ পড়ে গেল। বেলার পিরিয়ড হচ্ছে না। মানে তার প্রেগনেন্ট হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। তারপর আবার বেলা এখন ঢাকায় আর সে রয়েছে দেশের বাড়িতে।
আকাশ আর বেলা। দুজনই অনার্সের ছাত্র ছাত্রি। একজন ফাইনাল ইয়ারে অন্যজন ফার্ষ্ট ইয়ারে। তাদের রিলেশনের বয়স দুবছর হল। বেলা-কে নিয়ে সখের ঘর বাধতে হবে। তাই অনার্স শেষ করার আগেই একটা ছোটখাট চাকরীতে ঢুকে পড়েছে আকাশ। সেই সুবাদে সে থাকে পাশের জেলাতে। আর বেলা জগন্নাথে অনার্সে ভর্তি হয়েছে কিছুমাস আগে।
অফিস থেকে ফিরতে আজ আকাশের একটু দেরী হয়েছে। অফিসের বড় সাহেব-কে কম্পিউটার শেখাচ্ছিল। অফিস থেকে ফিরতে তাকে রেল ষ্টেশন পার হতে হয়। সন্ধায় মেস বাড়িতে ফেরার সময় যখন ষ্টেশনের প্লাটফর্ম দিয়ে হাঠছিল তখন বেলার ফোন।
বিচলিত অবস্থায় আকাশ হাটছিল আর বেলার কথাগুলো শুনছিল। সে নিজেই অথই সাগরে পড়েছে বেলার কথা শোনার পর। কিন্তু তারপরও সে বেলা-কে যতরকম ভাবে হোক আশ্বস্ত করছে।
তুমি কি প্রেগন্যান্সি টেষ্ট করেছে?
না। কিভাবে করব? আমি দোকানে গিয়ে ঐসব চাইতে পারব না। দোকানদার কি ভাববে বুঝতে পার?
তাহলে এত দুশ্চিন্তা করছ কেন? নিশ্চয়ই অন্য কোন সমস্যা।
না, অন্য সমস্যা না, আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমি প্রেগনেন্ট হয়ে গেছি।
আকাশ বেলার প্রতিটা নিশ্বাস চেনে। মোবাইলের এ প্রান্তে থেকেও সে ঠিক বুঝতে পারছে বেলার চোখ ছলছল করছে।
তুমি কোন চিন্তা করো না। আমি কালই রওনা হচ্ছি ঢাকার উদ্দেশ্যে। সব ঠিক হয়ে যাবে।
যদি আমি সত্যিই প্রেগন্যান্ট হয়ে যাই, সবাই কি ভাববে বলত?
কিছুই ভাববে না। সবাই তো জানে তোমার সাথে আমার রিলেশন। আর আমি তো হারিয়ে যাচ্ছি না। তোমাকেও মাতা মেরী হতে বলছি না।
রিলেশন তো কি হয়েছে। রিলেশন হলেই কি প্রেগন্যান্ট হতে হবে? এখন আমি তোমার আমার বাসার সবাইকে কিভাবে মুখ দেখাব?
কিচ্ছু হবে না। তুমি কোন চিন্তা করো না। সব আমি দেখব। বাসার লোকজনের যদি বেশী ভয় পাও, তাহলে আমরা কালই বিয়ে করে ফেলব। তুমি নিশ্চিন্তে থাক আমি আগে ঢাকা আসি তারপর দেখা যাবে।
আকাশের বোনের বাসা ঢাকাতে। আপার বিয়ের পর থেকেই সে আপা-দুলাভাইয়ের সাথে প্রায়ই থেকেছে ঢাকায়। চাকরী পাওয়ার পর থেকে আর এখন আগের মত অনেকদিন করে থাকা হয় না তার। তবে বেলার সাথে দেখা করার জন্য সে প্রায়ই আপার বাসাই হানা দেয়।
বেলার সাথে আকাশের ফ্যামিলির সবার খুব ভাব। মেয়েটাকে আকাশের বাসার সবাই খুব পছন্দ করে। আকাশের বাবা প্রথম প্রথম বেলাকে দেখে নাম কুচকাত। কিন্তু পরে ওর আলাপ ব্যবহারে সব ঠিক হয়ে গেছে। তাই বেলা ভার্সিটি বন্ধ হলে আকাশের সাথে প্রায়ই তাদের বাড়িতে আসে। যে কোন উৎসব পার্বণে আকাশ বেলা-কে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসে।
শুক্রবার খুব সকালে আকাশ কমলাপুর রেলষ্টেশনে পৌছাল। ষ্টেশন থেকে আপার বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে সে ছুটল বেলার উদ্দেশ্যে। আকাশ এখন ঢাকায় এলেই তার আপা বুঝতে পারে সে বেলার সাথে দেখা করতে এসেছে। তাই সকালে বাসায় এসেই যখন আবার কিছু না বলে বেরিয়ে গেল তখন সে বুঝল কোথায় যাচ্ছে।
বেলার হোস্টেলের সামনে গিয়ে আকাশ বেলার ফোনে কল দিল। একবারেই ফোন রিসিভ করল বেলা। তাকে রেডি হয়ে নিচে আসতে বলে পাশের চা-এর দোকানে চা খেতে লাগল।
আকাশ দুর থেকে দেখল বেলা-কে আসতে। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। কি অপূর্বই না লাগছে তাকে দেখতে। একসময় বেলার চোখে চোখ পড়ল। একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল-
কেমন আছ?
হাসিটা উধাও করে একটু অভিমানের সুরে বেলা বলল-
তুমি যেমন রেখেছো।
কাছে আসতেই আকাশ দেখল বেলার চোখে মুখে এক অজানা শঙ্কার ছাপ রয়েছে। আকাশ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার আপার বাসায় নিয়ে গিয়ে সে গোপনে বেলার প্রেগন্যান্সি টেস্ট করবে। ঢাকা আসার আগে সে ইন্টারনেট-এ অনেক ঘাটাঘাটি করেছে এইসব নিয়ে। তারপর আবার তার কয়েকজন বড় ভাইয়ের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছে। কিভাবে কি করতে হবে। কিভাবে প্রেগন্যান্সি টেষ্ট করতে হয়।
আপার বাসায় যাবার পথে বেলাকে এই নিয়ে সে ব্রিফ করতে লাগল। কি কি করতে হবে কিভাবে করতে হবে। আর যাতে সে দুশ্চিন্তা না করে তার জন্য মজার মজার কথা বলে তার মন ভাল রাখার চেষ্টা করল।
শুক্রবারের সকাল হওয়ায় বিআরটিসির এসি বাসে তেমন ভীড় ছিল না, তাই তারা স্বাচ্ছন্দে হাসি ঠাট্টা করতে লাগল। আকাশ মনে মনে বেলার চেয়েও বেশি চিন্তিত। কারণ সত্যিই বেলা যদি প্রেগন্যান্ট হয়ে পড়ে তাহলে সেই তো মুল অপরাধী। কারণ বেলার বাসার লোকজন বলবে তাদের মেয়েকে আকাশই ফুসলিয়ে ফুসলিয়ে এই কাজ করেছে। তাছাড়াও তার নিজের বাড়ির লোকের কাছেও তার ইমেজের একটা ব্যাপার তো আছেই।
আকাশের বাড়ির মধ্যে বেলার ব্যাপারে তার বড় বোন সবচেয়ে বেশি পজিটিভ। তাই আকাশ একবার চিন্তা করল সে তার বড় বোন-কে কিছু বলবে কিনা। পরে সিন্ধান্ত নিল না থাক, আগে টেষ্টের ফলাফল আসুক তারপর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা।
বেলা টেষ্ট কিট হাতে নিয়ে আকাশের কাছে আসল। আকাশ কিটটা হাতে নিয়ে দেখল নেগেটিভ। অর্থাৎ বেলা প্রেগন্যান্ট না। কিন্তু মুখটা গম্ভির করে রাখল। বেলা জিজ্ঞেস করল-
কি হল? রেজাল্ট কি?
আকাশ নিশ্চুপ। শুধু বেলার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল। সে দেখতে লাগল বেলার ফর্সা মূখটা কাল হয়ে আসছে। এক সময় ফিক করে হেসে দিয়ে বলল-
তুমি প্রেগন্যান্ট না। এবার খুশি তো?
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:০৬