somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারত ভ্রমণের এলেবেলে স্মৃতি- ১

০৯ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বি: দ: এটি একটি ছবি বিহীন পোষ্ট। বর্ণনা অনুযায়ী কল্পনায় ছবি দেখুন। ভাল রেজুলেশনের ছবি পাবেন ;)

বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, সিলেট ইত্যাদি জায়গা ভ্রমণ শেষে মনে হল এবার একটু আশে পাশের দেশে নজর দেয়া যাক। মনে মনে ঠিক করে ফেললাম ২০১৬ ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে ভারতে একটা ট্যুর দেয়ার। পাসপোর্ট অনেক আগেই করা ছিল। ভিসার টোকেন ধরতে বন্ধুকে দায়িত্ব দিয়ে দিলাম।

১ সপ্তাহের মধ্যে ভিসার ডেট পেয়ে গেলাম। সমস্ত কাগজপত্র জোগাড় করে ভিসা অফিসে গেলাম। আমার সময় দেয়া ছিল সকাল ১১টায় উত্তরা আইভিএসি সেন্টারে। আরাম করে ঘুমিয়ে ধীরে সুস্থে ১০:৩০ এ ভিসা সেন্টার এ পৌছলাম।

পৌছে শুনি ভিসা সেন্টার থেকে পাঠানো এসএমএস ছাড়া অর্থাৎ যার ফরওয়ার্ডিং এসএমএস দেখাচ্ছে তাদের কে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। এই শুনে তো মেজাজ গেল চরম খারাপ হয়ে। চেহারায় একটা দাদাগীরি ভাব নিয়ে সিকিউরিটিদেরকে শুনিয়ে শুনিয়ে আশে পাশের লোকজনদের বলতে লাগলাম- ঢুকতে দেবে না মানে ফাইজলামি? অফিস থেকে কি প্রতিদিন ছুটি দেবে?

ফরওয়ার্ডিং এসএমএস হোক আর যাই হোক ফর্ম ঠিক থাকলে ঢুকতে দিতেই হবে। তোমরা দুর্নীতি করে টোকেন এর নামে হাজার হাজার টাকা কামাই করে নিয়ে যাচ্ছ আবার অর্জিনাল এসএমএস? ঢুকতে না দিলে বিল্ডিং ভেঙ্গে চুরে দেব (ও আল্লাহ কয় কি, সে আবার হাল্ক হইল কবে?)।

আমার দিকে সিকিউরিটি একবার তাচ্ছিল্যের সাথে তাকাল তবে কানে কিছু নিল বলে মনে হল না। পরে যার কাছ থেকে ইটোকেন করিয়েছিলাম তাকে কল দিয়ে তার মোবাইল নিয়ে এসে তারপর আমাকে ঢুকতে দিয়েছিল। গেটের বাইরে অনেকেই ছিল যাদের কাছে সরাসরি এসএমএস ছিল না।

আমার চিল্লাপাল্লা শুনে কি না জানি না ভিসা সেন্টারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা এসে যাদের সরাসরি এসএমএস ছিল না তাদের বলল অপেক্ষা করতে তারা উপরে বিষয়টি জানিয়েছে পরে জানাবে তাদের কি করা হবে। আমার ভিতরে ঢুকে পাসপোর্ট জমা দিয়ে আসতে প্রায় ১:১৫ ঘন্টা লেগেছিল। তারপর এসে দেখি যাদের সরাসরি এসএমএস ছিল না তখনও তারা দাড়িয়ে ছিল।

১ সপ্তাহ পরে নির্দিষ্ট ডেটে পাসপোর্ট আনতে গেলাম। দেখলাম ৬ মাসের ভিসা দিয়েছে। দেখে তো হেব্বি মজা পেলাম। কিন্তু সেই মজা বেশীক্ষণ স্থায়ী হল না, যখন দেখলাম এ্কই সাথে জমা দেয়া অন্য একজনের ১ বছরের ভিসা দিয়েছে। তখন থ্রি ইডিয়টস সিনেমার কথা মনে পড়ল। বন্ধু ফেল করলে দুঃখ লাগে আবার বন্ধু যদি ফার্ষ্ট হয় তাহলে আরও বেশি দুঃখ লাগে। সবই হিউম্যানস বিহেবিয়ার।

এরপর শুরু হল বিভিন্ন তথ্য খোজাখুজি। ইন্টারনেটে ভারত ভ্রমণের তথ্যের অভাব ছিল না অবশ্য। প্রথমে ভেবেছিলাম শুধু কোলকাতা যাব। পরে ভাবলাম কোলকাতায় তো সবাই বাংলাতেই কথা বলে, তো ওখানে গেলে মনে হবে বাংলাদেশেই রয়েছি। তাই ভাবলাম যদি সুযোগ হয় দিল্লি, আগ্রা একটা ট্যুর দিয়ে আসব।

বরাবরের মতই এই ভ্রমণেও কাউকেই সঙ্গি পেলাম না। প্রথমে অবশ্য এক বন্ধুর যাওয়ার কথা ছিল, কিন্ত পরে তার সাথে টাইমিং এ মিলেনি। সে যাবে ঈদের পরে। কিন্তু। ঈদের পরে আমার বেশিদিন ছুটি নেই, তাই আমাকে ঈদের আগেই যেতে হবে। কিছুদিন পর অবশ্য এক বড় ভাইয়ের সন্ধান পেয়েছিলাম। সে প্রথমে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও পরে আর যায়নি। তো কি আর করা একা একাই চললাম।

সকাল ১০টায় বেনাপোল পৌছলাম। পরিচিত এক ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করেছিলাম, সে বলেছিল সেই বর্ডার ক্রস করার ব্যবস্থা করে দেবে। অবশ্য আমি নিজেই পারতাম। কিন্তু প্রথমবার যাচ্ছি বলে কিছুই জানতাম না নিয়ম কানুন। তারপর আবার ডলার ইন্ডোর্স করা হয়নি। তাই ভাই সই।

আমি যেদিন কোলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হই সেদিন বর্ডারে বেশ ভিড় ছিল। পরিচিত ভাই আমাকে তার পরিচিত দালালের মাধ্যমে টাকা ভাঙ্গিয়ে দিয়েছিল আর পাসপোর্টে সিল এনে দিয়েছিল। যাহোক পাসপোর্টে সিল পাওয়ার পর আমি বাংলাদেশের সীমানা ক্রস করে ভারতে ঢোকার মুখে বিশাল এক লাইনে দাড়ালাম। যদিও লাইনে বেশি দেরি হয়নি। আমার শুধু কাধে ঝোলান একটা ব্যাগ ছাড়া তেমন কিছুই ছিল না। তাই চেকিং কি জিনিস কিছুই বুঝলাম না। শুধু জিজ্ঞেস করেছিল ব্যাগ কি একটাই? আর সাথে রুপি, ডলার বা টাকা আছে কি না? আমাকে আগেই শিখিয়ে দিয়েছিল দালাল যে বলবেন টাকা পয়সা কিছুই নেই, আমি যাচ্ছি মামা বাড়ি। ওপারে আমার মামা দাড়িয়ে আছে, ওনার কাছ থেকে রুপি নেব।

লাইনে দাঁড়ানোর সময় এক ভাইয়ের সাথে পরিচয় হয়েছিল। সে আর আমি একই সাথে বর্ডার পার হয়েছিলাম। কাস্টমস এর গেট পার হয়ে এপারে এসে আগে রুপি নিয়ে নিলাম। তারপর ২৫ রুপির অটো ভাড়ায় বনগাঁ রেল স্টেশনে গেলাম। দমদমের টিকিট কাটলাম ১৫ রুপিতে। যেহেতু ডালহৌসিতে ফেয়ারলি প্লেস যাব তাই দমদমের টিকিট। প্রায় দুঘন্টার বেশী লাগল দমদম পৌছাতে।

ট্রেন থেকে নামার সময় পাশে এক লোক দাড়ান ছিল, তার কাছে জিজ্ঞেস করছিলাম প্লাটফরম কোনদিকে পড়বে? তিনি বলে দিলেন। বলার মিনিট দুয়েক পর লোকটা হঠাৎ করে দাড়ান অবস্থায় পড়ে যেতে লাগলেন। ট্রেন ভিড়ে ঠাসা ছিল বলে মেঝেতে পড়েননি। পড়লেন পাশের এক তরুণীর গায়ের উপর। পাশে তার বন্ধুটি বলল কিছুক্ষন আগে রক্ত দিয়ে এসেছেন। তখন সবাই বুঝল মাথা ঘোরার কারণ।

যাহোক ট্রেন থেকে নেমে মাটির নিচের রাস্তা দিয়ে মেট্রো স্টেশনে গেলাম। গিয়ে দেখলাম কাউন্টারের সামনে বিরাট লম্বা লাইন। কিছু সামনে দেখি সেই রকম সুন্দরী এক মেয়ে। দেখেই তো চোখ আটকে গেল। আমার উচ্চতা ৫ ফিট সাড়ে আট ইঞ্চি। সুন্দরী আমার থেকেও প্রায় আধা ইঞ্চি লম্বা। সাদা টি শার্ট কালো জিনস আর ঠোঁটে লাল লিপস্টিক (আর কি চাই?)। আস্তে আস্তে গিয়ে ঠিক তার পিছনেই দাড়ালাম টিকিট কাটার জন্য।

লাইন ছিল বেশ লম্বা কিন্তু এগোচ্ছিল তাড়াতাড়িই। আর পেছন থেকে ঠেলা দিচ্ছিল। খুব কষ্ট করে সুন্দরীর সাথে ধাক্কা খাওয়া এড়াচ্ছিলাম। তারপরও একসময় হঠাৎ জোরে এক ধাক্কা খাওয়ার পরও তার পিঠের উপর গিয়ে ধাক্কা খেলাম। বললাম সরি। আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল ইটস ওকে। আমি তো ভেবেই নিয়েছিলাম চড়, থাপ্পড় না দিলেও ঠিক দুকথা শুনিয়ে দেবে। তারপরও লোকজন এত ঠেলাঠেলি করছিল যে আমার আর তার মাঝের দুরত্ব ই্ঞ্চি থেকে গড়িয়ে মিলিমিটারে পৌছেছিল। আমার নিঃশ্বাস তার ঘাড়ে পড়ছিল।

যা হোক কিছুদুর এগোনোর পর ঠেলাঠেলি বন্ধ হল। নিরবতা ভাঙতে ন্যাকামো করে জিজ্ঞেস করলাম-
আচ্ছা ফেয়ারলি প্লেস যাব কি করে বলতে পারেন?
সুন্দরী বলল- কোথায়?
আবার বললাম- ফেয়ারলি প্লেস?

আমি কিন্তু জানতাম কিভাবে যাব তারপরও ঔ যে সুন্দরীর সাথে একটু বাক্য বিনিময়ের চেষ্টা। সুন্দরী আবার বলল- আপনি কি ময়দানের ঔদিক যাওয়ার কথা বলছিলেন? আমি বললাম না। এবার তাকে একটু হিন্টস দিলাম- ঔ যে যেখানে ফরেনার কোটায় ট্রেনের টিকিট কাটা যায়। সুন্দরী বলল- দুঃখিত চিনতে পারছিনা। কি আর করা না চিনলে, কথা আর এগোল না। না চিনলে এগোবে কি করে? চিনলে না সুন্দর করে পথ বাতলে দিতেন, আর আমি হা করে গিলতুম।

মিনিট খানেক পরে আমি অন্য দিকে তাকিয়েছিলাম মনে হল কেউ যেন ডাকছে। ও মা দেখি সেই সুন্দরী। বললেন আপনি এই আঙ্কেলকে জিজ্ঞেস করতে পারেন কোথায় যাবেন, উনি বলতে পারবেন। আমি তাই আঙ্কেলকেই জিজ্ঞেল করলাম। আঙ্কেল বললেন- তুমি সেন্ট্রাল নেমে যেও, সেখান থেকে কাছে হবে। মনে মনে বললাম- জ্বি না আমি সব খোজ খবর নিয়ে এসেছি, সেন্ট্রাল নামলে হপে না, আমাকে বিবাদিবাগ নামতে হবে, সেখান থেকেই কাছে হপে। কিছুক্ষণ পর কাউন্টার এর কাছে পৌছলাম। যেহেতু সুন্দরী আমার সামনে ছিল তাই সে প্রথমে টিকিট কাটল তারপর আমি।

আমি তো জীবনে মেট্রোতে উঠিনি তাই বুঝছিলাম না কি করে এই টোকেনের সদ্ব্যবহার করতে হবে। তাই অগত্যা সুন্দরীকে ফলো করলাম। দেখলাম প্লাষ্টিকের টোকেন টা এক জায়গায় টাচ করার সাথে সাথে স্টেশনে যাবার পথের বাধা সরে গেল। তার দেখাদেখি আমি টোকেনটা টাচ করলাম কিন্তু বিধি বাম। কিছুতেই দরজা খুলল না। পরের জনের দেখাদেখি পাশেরটা টাচ করলাম তাও হলনা।

সবগুলোতেই টাচ করলাম। কিছুতেই কিছু হলনা। পরে সিকিউরিটি বলল আবার একটু কাউন্টারে নিয়ে যান পাল্টে দেবে। সমস্যার কথা বলে কাউন্টার থেকে পাল্টে নিলাম। তাও হল না। শেষে সিকিউরিটি গোপন একটা বোতাম চিপে গেট খুলে দিলেন।

মেট্রোতে চেপে বিবাদিবাগ এসে স্টেশনের বাইরে বের হয়ে দেখি বৃষ্টি। কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকলাম। বৃষ্টি একটু কম হতেই এদিক সেদিক অনেক ঘুরাঘুরি করলাম। বিভিন্নজনকে জিজ্ঞেস করলাম ঠিকানা। যন্ত্রণা হল আশেপাশে মোবাইলের দোকানও খুজে পাচ্ছিলাম না। যতক্ষণ ঘুরেছিলাম বাংলাদেশ হলে চব্বিশটা মোবাইলের দোকান পাওয়া যেত। ভেবেছিলাম একটা ছিম কিনে ইন্টারনেট চালু করে ম্যাপ দেখে দেখে হাটব।

অবশেষে অনেক ঘুরে ঘুরে প্রায় চারটের সময় ফেয়ারলি প্লেসে ফরেনার কোটায় টিকিট কাটার জায়গা খুজে পেলাম। ভিতরে ঢুকে দেখলাম অনেক লোক। বেশিরভাগ বাংলাদেশী। দু একজন সাদা চামড়ার বিদেশীও ছিলেন। কাউন্টার থেকে ফরম চেয়ে নিলাম। ফরম নেয়ার সময় বলল- আমরা ফরম দিচ্ছি কিন্তু ৫টা বেজে গেলে আমাদের সিস্টেম অটোমেটিক বন্দ হয়ে যায়, তাই আপনার সিরিয়াল নাও আসতে পারে।

ফরম নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছি। সবার ফরম পূরণ করা দেখছি। পাশে এক মহিলার ফরম পূরণ করা শেষ হতেই তার কাছ থেকে কলমটা চেয়ে নিলাম। উনি জিজ্ঞেস করলেন কোথাই যেতে চাই? আমি বললাম দিল্লি। উনি বললেন উনারাও দিল্লি যাবেন। আমি বললাম ভালোই। তিনি জিজ্ঞেস করলেন তাদের সাথে আমার নামও লিস্টে এ্যাড করবেন কিনা? আমি বললাম আপনারাও দিল্লি যাবেন? উনি বললেন হ্যাঁ, প্রথমে দিল্লি, তারপর আজমীর। বললাম ঠিক আছে এ্যাড করে দিন।

উনি আরও বললেন এখানে উনার পরিচিত এক লোক চাকরী করেন। তিনি নিশ্চই ভাল টিকিট ম্যানেজ করে দিবেন। ভাবলাম ভালোইতো। তারপরও আমার হাতে থাকা ফরম আমি নিজে নিজে পূরণ করলাম। নিচে দেখলাম রিটার্ন টিকিটের ও অপশন আছে তাই সেটাও ফিলআপ করলাম।

পরে অবশ্য ঔ মহিলা সিদ্ধান্ত চেঞ্জ করেছিলেন। তিনি বললেন না, আমরা সরাসরি আজমীর যাব। আমি বললাম ঠিক আছে আপনার পরিচিত লোকলে বলে আমার দিল্লি যাবার একটা ভাল টিকিটের ব্যবস্থা করে দিন। উনি রাজী হলেন। একসময় আমার সিরিয়াল আসল। খুজে খুজে ওনারা বলল হাওড়া-রাজধানীর টিকিট নেই তবে শিয়ালদাহ-রাজধানীর সিট হবে বিকেল ৪:৫৫ মিনিটে। বললাম ঠিকআছে দিন। পরে রিটার্ন টিকিটও করলাম।

আমি থ্রি টায়ার এসির টিকিট কেটেছিলাম। ভাড়া ২১৯৫ রুপি নিয়েছিল। দিল্লি কোলকাতা আসা যাওযায় টিকিট কাটতেই ৪২০০ রুপি বের হয়ে গেল। বিকাল প্রায় পাঁচটা বাজে। বাইরে বের হয়েই খাবার খুজতে শুরু করলাম। অল্প কিছূ খেয়ে নিয়ে ঘোরাঘুরি শুরু করলাম। উদ্দেশ্য নিউ মার্কেট যাবো। এদিক ওদিক হাটতে হাটতে দেখলাম যেখান থেকে শুরু করেছিলাম আবার সেই রাস্তায় এসে পড়েছি।

কারো কাছে কিছু জিজ্ঞেস করার আগে আমি সাধারণত তাঁর চেহারা দেখে বোঝার চেষ্টা করি মানুষটা কেমন হতে পারে। বেছে বেছে এক লোককে জিজ্ঞেস করলাম নিউ মার্কেট কিভাবে যাব। বলল আমার সাথে আসুন আমিও যাব। ভুরু কুচকে ভাবলাম মতলব কিছু নয়তো? তারপর ভাবলাম দেখি কোথায় নিয়ে যাই। বেশ খানিক হাটার পরে একটা রাস্তায় আসলাম। বলল এখান থেকে নিউ মার্কেটের বাস পাওয়া যাবে। দেখলাম অনেকেই দাড়িয়ে আছে তাই চিন্তামুক্ত হলাম। তারপর একটা বাস আসতেই লাফ দিয়ে উঠে পড়লাম।

ছয় রুপীর ভাড়ায় মেও রোডে নামলাম। তখনও লোকটা সাথে সাথে ছিল। মাঠ কি পার্ক ছিল জানিনা ছোট শর্টকার্ট রাস্তা দিয়ে নিয়ে এলেন নিউ মার্কেট। মারকুইস স্ট্রীট যাওয়ার রাস্তা দেখিয়ে দিয়ে ভদ্রলোক বিদায় নিলেন।

প্রায় সন্ধা হব হব মুহুর্তে নিউ মার্কেট খুব জমজমাট ছিল। মারকুইস স্ট্রীটের কাছে মোবাইলের সিম কেনার একটা দোকান দেখলাম। সেখানে গিয়ে দু’শ টাকায় ভোডাফোনের সিম কিনলাম কাগজপত্র ছাড়া এবং চালু সিম। সিম মোবাইলে ভরে দোকানে কিছুক্ষণ বসে থাকলাম। কারণ বাইরে জোরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আধাঘন্টা বসার পর বৃষ্টি কিছুটা কমলে হোটেল খোজা শুরু করলাম। সস্তার একটা হোটেল ঠিক করলাম। পাঁচশ রুপি পার ডে। মান একদমই ভাল ছিল না। তার পর ও নিলাম বাধ্য হয়ে কারণ তখন রাত প্রায় আটটার বেশি বেজে গেছে। হোটেল ঠিক করে জামাকাপড় পাল্টে নিউ মার্কেট ঘূরতে গেলাম।

পুরো নিউমার্কেট প্রচুর হাটলাম। হালকা বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতেই হাটলাম। বিভিন্ন দোকানে ঘুরে ঘুরে জিনিসপত্র দেখতে লাগলাম। কিছূই কিনলাম না। কারণ আমার প্ল্যান ছিল ফিরে যাওয়ার দিন কিছু কেনাকাটা করব। মানুষজন দেখতে ভালই লাগছিল। অনেক বিদেশীও ছিল। বৃষ্টির মধ্যেও মানুষের অভাব ছিল না। হাটতে হাটতে একসময় দেখি কোমর ব্যাথা হয়ে গেল।

রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে হোটেল পানে রওনা হলাম। রাত তখন এগারটা। হোটেলের কাছাকাছি আসতেই এক লোক পিছু নিল। বলল দাদা ম্যাসেজ লাগবে নাকি? আমি বললাম লাগবে না। লোকটা কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করতেই থাকল। আরও লোভনীয় অফার দিল। বলল- দাদা সুন্দরী মেয়ে আছে, খুব সুন্দর ম্যাসেজ করে দেবে। আমি বললাম দরকার নেই। প্রায় দশ মিনিট ধরে আমার পিছু পিছু আসল আর এ কথা সে কথা আসলে কুকথা শোনাতে লাগল। পরে দেখল আমি পাত্তা দিচ্ছি না বলে বিদেয় হল।

রাতে বিছানায় গিয়ে যখন শুই তখন বুঝলাম আসলে পা দুটো কত ক্লান্ত। ব্যাথায় টন টন করছিল। টিভি দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম মনে নেই। (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:০৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×