somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নীলাভ লালাখাল

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমার কাছের মানুষ অনেকেই আছেন যারা সিলেটে গিয়েছে। দেখা যায় যে, তারা কিন্তু তেমন একটা ভ্রমণ পিপাসু না হওয়া স্বত্বেও সিলেট ঠিকই দেখে এসেছেন। আমি তাদের কাছে কত কত গল্পই না শুনেছি সিলেটের। তাছাড়া ভ্রমণ ব্লগগুলোতো আছেই। আমি আবার যথারীতি (টাকার অভাবে) ভার্চুয়াল ট্রাভেলার। এই ব্লগ সেই ব্লগ পড়ে পড়ে আমি ভ্রমণের আনন্দ নিই। তাই সিলেটে কোনদিন না গেলেও সিলেটে ভ্রমণের স্পট সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান আছে। তাই মাঝে মাঝে জুনিয়র কেউ সিলেট যাওয়ার কথা বললে আমি জ্ঞানী লোকের মত কিছু জ্ঞান বিতরণ করে থাকি। কেউ যদি বলে জাফলং গিয়েছিলাম, তখন আমি বলি জাফলং আর কি আছে? তুই বিছানাকান্দি গিয়েছিস? বলে না। আমিও ভাব নিয়ে বলি তাইলে সিলেটের আর কি দেখলি?

ভ্রমণ ব্লগ আর বন্ধুদের ফেসবুকের ছবি দেখে দেখে আমার আর সিলেট যাওয়ার ইচ্ছে হয় না। কারণ একটাই, আমার কাছে সিলেট মানেই হল বিশাল এক আফসোসেই জায়গা। আর আফসোসের একটাই কারণ, তা হলো পাহাড়গুলো নিয়ে। আমার আজীবন পাহাড়ের প্রতি দুর্বলতা। পাহাড় দেখলেই আমার ভীষণ আপন আপন মনে হয়। ছোট বেলাই যখন একুশে টিভি আসল তখন দৃষ্টি বলে একটা অনুষ্ঠান হত। যেখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দেখানো হত। আমি রোজ বসে বসে সমান আগ্রহ নিয়ে দৃষ্টি দেখতাম।
সিলেটে সমস্ত পাহাড়ই প্রায় পড়েছে ভারতের ভূ খন্ডে। তাই আমার আফসোসের আর শেষ নেই। পাহাড় কি শুধু দুর থেকেই দেখব? সেখানে যদি যেতে নাই পারি তাহলে আর কি হল? এই সমস্ত কারণে আমি সিলেট যাওয়ার ব্যাপারে বেশী আগ্রহ দেখাই না।

আমার কামলা দেয়া ৫টায় শেষ হয়। সেদিন বৃহস্পতিবার একটু কাজের চাপ থাকায় প্রায় ৭টা বেজে গেল অফিস থেকে বের হতে। যথারীতি ৭:৩০ বাজে তখন বাসায় গিয়ে পৌছলাম। বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে মোবাইলে ফেসবুকটা ওপেন করে বিছানায় গড়াগড়ি দিচ্ছিলাম। হঠাৎ করে বন্ধুর মেসেজ আসল- দোস্ত আমি তো যাচ্ছি। আমি রিপ্লাই দিলাম- কই যাচ্ছিস? ও বলল লালাখাল সিলেট। আমি বললাম ক্যামনে কি? বন্ধু কইল ফেসবুকে একটা গ্রুপের সাথে যাচ্ছি, ১০ টায় ট্রেন। আমি বললাম- হারামী আমারে তো কইলি না। ও কই দোস্ত তুই আবার যাবি কিনা তাই বলা হয়নি। আমি বললাম এখন যাওয়া যাবে কিনা যোগাযোগ করে জানা। ও বলল আমি গোছানো নিয়ে ব্যস্ত আছি, তোকে নাম্বার দিচ্ছি তুই একটু যোগাযোগ কর। আমি প্রথমে ওদের পেইজে গিয়ে ডিটেইলস দেখলাম। তেমন আহামরি কিছু না কিন্তু খুবই অল্প খরচে লালখাল ট্যুর হবে। তাই ভাবলাম দেখি একটা চান্স নিয়ে। ফোন করে এ্যাডমিন এর সাথে কথা হল। তিনি জানালেন ভাই আমাদের আসলে ওভারলোড হয়ে গেছে, আর নতুন কাউকে নেয়ার সুযোগ নেই। আমি বললাম ভাই আমার এক বন্ধু ও আপনাদের সাথে যাচ্ছে, যদি কোনওভাবে ম্যানেজ করা যায় একটু দেখেন। তিনি বললেন- যাওয়ার খুব ইচ্ছা? আমি কই, কি কন ভাই যাওয়ার ইচ্ছা না থাকলে এখন এই ১ ঘন্টা আগে কি মজা নিতে ফোন দিছি? এই কথা শুনে তিনি বললেন- ঠিক আছে চলে আসেন। আমি তো খুশিতে এক লাফে মেঘালয় পাহাড়ে উঠে গেলাম।

১০ মিনিটে রাতের খাওয়া সেরে ছোট্ট একটা ব্যাগে কিছু টুকটুক জিনিসপত্র নিয়ে রাত ৮:৩০ মিনিটে রওনা দিলাম কমলাপুরের উদ্দেশ্যে। কমলাপুর বন্ধুর বাসা। হাতে অল্প কিছু সময় থাকায় বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে তাগাদা দিতে লাগলাম, হারামজাদা তাড়াতাড়ি গোজগাজ কর ট্রেন ছেড়ে দিল। আমার বন্ধু আবার মহা ঢিলা। সে দেখি ব্যাগে শ্যাম্পু, সাবান, টিশার্ট আরও হাবিজাবি নেওয়া শুরু করছে। আমি বললাম- ব্যাটা ১ সেট অতিরিক্ত জামা কাপড় নে আর গামছা নে। শুধু শুধু ব্যাগ ভারী করিস না। যাই হোক ওর খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমরা হন্তদন্ত হয়ে ষ্টেশনে পৌছলাম ৯:৫০ এ। ট্রেন ছাড়ার কথা ১০টায়। ষ্টেশনে গিয়ে কাউকে খুজে পাচ্ছি না। অবশ্য আগে যেহেতু কাউকে দেখি নায়, সেহেতু চেনার কথাও না। মনে মনে ভাবলাম, শালার ট্রেন কি চলে গেল নাকি? ফোন দেয়ার পর দুরে গিয়ে দেখি সবাই বগির ভিতরে যার যার মত অবস্থান নিয়ে নিয়েছে। যাওয়ার পর বলল ট্রেন ছাড়তে দেরী হবে। আমিও দেখলাম ট্রেন অলসের মত দাড়িয়ে আছে। যাওয়ার কোন নাম গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে না। তারপর বুঝলাম এটা আবার লোকাল ট্রেন।

আমার আর বুঝতে বাকী রইল না, কারণ লোকাল ট্রেন সম্পর্কে আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে। সকাল ১০টার গাড়ি বিকালে পৌছায়। আমি এই নিয়ে বন্ধুকে সুযোগ বুঝে একটু জ্ঞান বিতরণ করতে লাগলাম। আমি বললাম চিন্তা করিসনে দোস্ত সকাল ৬টায় যদি নির্দিষ্ট টাইম থাকে তাহলে সেটা নির্ঘাত দুপুরে পৌছাবে। আমার কথা সে কিছুতেই বিশ্বাস করবেনা। আমি বললাম চল ট্রেনের লোকজনের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করি।

ট্রেনের এক টিটির সাথে দেখা হতে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম ট্রেন সিলেটে কখন পৌছবে? সে বলল দুপুর ১২টা বাজবেই। এইসব বিস্তারিত তথ্যাদি নিয়ে আমরা প্লাটফর্মে ঘোরাঘুরি করতে লাগলাম আর গ্রুপের অন্যান্য সদস্যদের পরিচিত হতে লাগলাম।

এই ভাবে ঘুরাঘুরি করে শেষে রাত ১২টায় ট্রেনের চাকা ঘোরা শুরু করল। ট্রেনের মধ্যে যার যার অবস্থান নিয়ে বসে পড়লাম। আমরা দেরি করে আসায় আমরা দুই বন্ধু আর সিটে জায়গা পেলাম না। এই নিয়ে অবশ্য পরে কোন আফসোস বা অভিযোগ ছিল না। কারণ সবাই এত হেল্পফুল ছিল যে, আমরা পরে ছিটে ও বসেছিলাম। এমনকি ঘুমিয়েছিলামও।

ট্রেন চলতে শুরু করার সাথে সাথে আমাদের হৈ হুল্লোড় শুরু হয়ে গেল। সারারাত কত কত গানের সাথে যে গলা মিলালাম ত গুনে শেষ করা যাবে না। সবাই মোটামুটি বাথরুম সিঙ্গার থেকে সেদিন ট্রেনের বগি সিঙ্গারে পরিণত হয়েছিল। কিছু কিছু সদস্য তো সবাই যখন ভোর রাতে এদিক সেদিক হেলাম দিয়ে ঘুমে কাতর হয়ে গিয়েছিল তখনও তাঁদের গান গাওয়ার এ্যানার্জির সামান্যতম পরিবর্তনও লক্ষ্য করা যাচ্ছিল না।

ভোর বেলা বেশ শীত শীত অনুভব হতে লাগল। এই চৈত্র মাসেও সেদিন ভোর বেলা চারিদিকে কুয়াশা দেখলাম। অনেক দিন পর ভোর বেলা সূর্য উদয় দেখলাম। কমলা রঙের সূর্যটা আস্তে আস্তে মনে হল কুয়াশাঘেরা মাঠ ফুড়ে বের হল। লোকাল ট্রেন থামে না এমন কোন ষ্টেশন নেই। আমাদের ট্রেন ও তাই কোন ষ্টেশন বাদ দিচ্ছিল না। এমনকি ফাঁকা মাঠের মধ্যেও অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকছিল। শুধু যে ষ্টেশনে থামছিল তাই না, সেই থামার দৈর্ঘ্য ও ছিল অনেক বেশি। তাই আমরা মাঝে মাঝে ষ্টেশন বা ফাঁকা মাঠে নেমে পড়ছিলাম।



সম্ভবত নোয়াপাড়া নামক ষ্টেশন (আমার স্মৃতি শক্তি খুবই খারাপ) পার হবার পর প্রথম চা বাগান চোখে পড়ল। ট্রেনের জানালা দিয়ে চা বাগানগুলো মনে হচ্ছিল মাঠের মধ্যে সবুজ গালিচা পেতে রাখা হয়েছে। চা বাগান আর ছোট ছোট টিলা দেখেই বুঝেছিলাম শ্রীমঙ্গল আর বেশী দুরে নয়। শ্রীমঙ্গল যত কাছে আসছিল তত চা বাগান আর কমলার বাগান বেশি করে চোখে পড়ছিল।

সকাল প্রায় ১০ টা নাগাদ আমরা শ্রীমঙ্গল ষ্টেশনে পৌছলাম। ট্রেনের লোকগুলো বলছিল আজকে ট্রেন সিলেট পৌছাতে বিকেল হয়ে যাবে। তাই আমাদের গ্রুপের এডমিন সবাইকে বলে দিল আমরা শ্রীমঙ্গলে নেমে যাব। শ্রীমঙ্গলে নেমে আমরা সকালের নাস্তা করে নিলাম। আমাদের বিশাল বহর দেখে হোটেল মালিকের খুশি আর ধরে না। আমাদের প্রায় ৭০ জনের টিমের এক হোটেলে খাবার জুটলেও বসার সংকুলান হল না। তাই বাধ্য হয়ে পাশের অন্য একটি হোটেলে বসতে হল।

আমরা যখন সবাই খাওয়া দাওয়ায় ব্যস্ত তখন অন্যদিকে এডমিনের অন্যান্য বড় ভাইরা গেলেন সিলেট যাওয়ার বাস ঠিক করতে। সিলেট যাওয়ার জন্য দুইটা বাস ঠিক করা হল। আমরা দুই বন্ধু তাড়াতাড়ি বাসের ভিতরে গিয়ে বসলাম। কিছু কিছু অতি উৎসাহি পোলাপাইন তো চৈতের গরম আর কাট ফাটা রোদ্দুরেও বাসের ছাদে উঠে বসলেন। মনে মনে বললাম যাও বাছারা ছাদে যাও, কিছুক্ষণ পর বুঝবা গরম কাহাকে বলে আর রৌদ্র কত প্রকার। আধঘন্টা বাদে যখন বাস কোন এক ফিলিং স্টেশনে তেল নেয়ার জন্য থামল অমনি সব সুড় সুড় করে বাসের ভিতরে চলে আসল।

সিলেটের রাস্তার কথা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। মনে হচ্ছিল পথে তেল ঢেলে বাসটাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। মসৃণ রাস্তা ধরে বাসও চলছিল সমান গতিতে। মাঝে মাঝে কঠিন সব বাক পার হতে হচ্ছিল। বাসের মধ্যে বসে রাস্তার দুদিকের দৃশ্য গিলতে শুরু করলাম।
ভরদুপুরে আমরা সিলেট গিয়ে পৌছালাম। আমাদের যেহেতু আবার যেতে হবে লালাখাল তাই আমরা দুপুরের খাওয়া স্কিপ করলাম। সিলেট বাসস্টান্ডে নেমে লেগুনা ঠিক করে রওনা হলাম লালাখালের উদ্দেশ্যে। সিলেট থেকে লালাখাল প্রায় পঞ্চাশ কিলোমিটারের কাছাকাছি। লালাখালের উদ্দেশ্যে রওনা হবার কিছুক্ষণ পর সবগুলো লেগুনা থামানো হলো আইসক্রিম খাবার জন্য। প্রচণ্ড গরমে আইসক্রিম খেয়ে কিছুটা প্রশান্তি খোজার চেষ্ট করলাম। আইসক্রিমে রং ছিল গাঢ কমলা। আইসক্রিম খেয়ে সবার ঠোঁট আর গালের ভিতরকার অবস্থা পাখির বাচ্চার মত কমলা রঙের হয়ে গেল।

বেশ কিছুদুর যাবার পর দুরে মেঘালয়ের পাহাড় দেখতে পাচ্ছিলাম। সে এক অপূর্ব দৃশ্য। আমাদের মধ্যে কিছু ডেসলর বাহিনী লেগুনায় হেলপারের দাঁড়ানোর জায়গাতে দাড়িয়ে তাদের ফটুক তোলা শুরু করল। আমি ভাই গরীব মানুষ, তাই মোবাইলই সই। আমাদের মোবাইল হচ্ছে বলিউডের অভিনেতা অক্ষয় কুমারের মাইক্রোম্যাক্স মোবাইলের এ্যাডের মত। এক মোবাইল দিয়ে সব কাজ করতে হয়। হোক সেটা ছবি তোলা কিংবা যোগ বিয়োগ করা।

বিকাল ৪:৩০ নাগাদ আমরা লালাখাল পৌঁছলাম। নৌকা ভাড়া করে ১৫ মিনিটের ভ্রমণ করে গেলাম বাংলাদেশের শেষ সীমানায়। নৌকার যাবার পথে অসম্ভব নীল পানি খাল চোখে পড়ল। এত নীল পানি আগে কখনও দেখিনি। মনে হচ্ছিল সুইমিং পুলে নৌকা চলছে। আসলের পানির রং নীল ছিলনা। আমরা সবাই জানি পানির কোন রং হয় না। বোতলে পানি ভরে দেখেছিলাম যে, পানির কোন রং নেই। আসলে নীচে মাটিতে কোন ব্যাপার আছে সেই জন্য পানি এত নীল। নৌকা যেখানে নামাল সেখান মোটা লাল বালি ছিল। নৌকা থেকে আমরা সবাই নেমে পড়লাম পানিতে। ঠান্ডা পানিতে নেমে সারারাত আর সারাদিনের ভ্রমণের ক্লান্তি নিমেষেই ধুয়ে গেল। পানি খুব বেশি গভীর ছিল না। বড় জোর গলা সমান পানি ছিল। আমরা সাতার দিয়ে খাল পার হয়ে ওপারে গেলাম। ওপারে উঠে দেখলাম ফাকা মাঠ আর দুরে পাহাড়ের উপর ছোট ছোট দু’য়েক ঘর বাড়ি দেখা যাচ্ছিল। স্থানীয় এক লোক -কে দেখে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম ও বাড়িঘরঘুলো কোন দেশে পড়েছে। ওরা বলল বাংলাদেশেই পড়েছে, কিন্তু আর কিছুদর পর থেকে ইন্ডিয়ার বর্ডার শুরু। বুঝলাম দুরের বড় বড় পাহাড়গুলো সব ভারতের। ইচ্ছা ছিল ঔসব বাড়িুগুলো কাছ থেকে দেখে আসি, কিন্তু হাতে সময় কম থাকায় আর যাওয়া হল না। কাছেই একটা চা বাগানও দেখেছিলাম।



এই পানির রং কিন্তু সত্যিই এতটাই নীল, একটুও এডিট করা না।

সুন্দর চা বাগান আর অপরূপ পাহাড় দেখে ভিজে জামা কাপড় চেঞ্জ করে আবার নৌকা করে যেখান থেকে নৌকা চড়েছিলাম সেখানে ফিরে এলাম। খেয়া ঘাটে আরও কিছুক্ষণ ফটোসেশন শেষে আর ঘাটের কাছে দোকান থেকে দারুন মিষ্টি তরমুজ খেয়ে আবার লেগুনাতে উঠে বসলাম।





আমাদের ট্যুরের প্লানে শুধু লালখালের কথা উল্লেখ ছিল, কিন্ত পরে জানান হয়েছিল সময় পেলে আমরা জাফলং ও ঘুরে আসব। তাই অগত্যা সেই প্রায় সন্ধার সময় রওনা হলাম জাফলং এর উদ্দেশ্যে। বড় রাস্তায় উঠতে না উঠতেই মাগরিবের আযান দিয়ে দিল। আমি লেগুনার সামনের সীটে বসায় স্থানীয় ড্রাইভারের সাথে সিলেটের ভ্রমণ স্পট নিয়ে কথা বলছিলাম। সে জানাল এই সন্ধায় জাফলং গিয়ে কিছু দেখার নেই। আমিও জানি সন্ধায় অন্ধকারে আর কি দেখব। তারপরও এসেছি যখন অন্ধকারচ্ছন্ন জাফলং ই দেখে যায়। ড্রাইভার আবার বলল সামনে রাস্তা ভয়াবহ খারাপ। কিছুদুর যাওয়ার পর অবশ্য টের পেলাম খারাপ রাস্তা কাহাকে বলে। এই রাস্তা দেখে আমাদের এলাকার একটা রাস্তার কথা মনে পড়ল। সেই রাস্তা এত খারাপ ছিল যে, আমরা বন্ধুরা মিলে রাস্তার নামকরণ করেছিলাম ডেলিভারি রোড। অর্থাৎ কোন গর্ভবতী মহিলা সেই রাস্তা দিয়ে রিক্সা বা গাড়িতে করে গেলে নির্ঘাত রাস্তাতেই বাচ্চা ডেলিভারি হয়ে যাবে।
যেতে যেতে আসলেই বেশ গাঢ় অন্ধকার হয়ে গেল। তাই আমরা জাফলং যাওয়া বাদ দিয়ে তামাবিল কাষ্টম হাউজে নেমে পড়লাম। এডমিন জানাল জাফলং গিয়ে যেহেতু অন্ধকারে কিছু দেখা যাবে না তাই আমরা অন্তত তামাবিল স্থলবন্দর দেখে নিই। সবাই কাষ্টম হাউজের সামনে নেমে বেশ হৈ হুল্লোড় শুরু করল। এই চেঁচামেচি শুনে বিজিবির সদস্যরা চলে আসল আর আমরা যেন আস্তে আস্তে কথা বলি সেই অনুরোধ করল, কেননা রাত হয়ে গিয়েছিল। আমরা অন্ধকারেও অতি সামান্য দুরে বিএসএফ (ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী) এবং ভারতীয় শুল্ক বিভাগের বিল্ডিং দেখতে পাচ্ছিলাম। গেটের কাছে পৌছতেই চোখে পড়ল তামাবিল থেকে বিভিন্ন দুরত্বের একটা সাইনবোর্ড। সেখানে শিলং মাত্র ৮২ কি:মি: দেখে ভিতরে ভিতরে একটা শিহরণ অনুভব করলাম। এবং ভাবলাম একদিন নিশ্চই এই সীমান্ত অতিক্রম করে শিলং এ যাব, চেরাপুঞ্জি যেখানে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়, এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম, প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট গাছের সিকড়ের ব্রীজ দেখতে যাব





মনে মনে অনেক সংকল্প করে আর কিছু উদরপূর্তি করে আমরা সিলেটের উদ্দেশ্যে ফিরতি পথে রওনা দিলাম। সিলেট পৌছাতে প্রায় রাত ১০ টা বেজে গেল। আমরা সিলেটের নামকরা পাঁচ ভাই রেষ্টুরেন্টে রাতের খাবার খেলাম। ভরপেট খাওয়ার পর হাতে কিছু সময় পেলাম, কেননা তখন গ্রুপের এডমিন ভাইয়েরা গিয়েছিল ঢাকার বাস ঠিক করতে। আমি আর আমার বন্ধ মিলে হযরত শাহ-জালাল (রহঃ) এর মাজার দেখতে গেলাম। মাজারে ঢোকার মুখে হরেক রকম বাহারি পণ্যের দোকানপাট দেখতে পেলাম। মাজারের গেটের কাছে পৌছাতেই এক মহিলা হাতে দিয়াশলাই নিয়ে বলল- দশ টাকা দে, নয়ত আগুন ধরিয় দেব :o আমার বন্ধুও কম যায় না, সেও পকেট থেকে দিয়াশলাই বের করে বলল- তুমি আগুন ধরাতে পারো আমরা পারি না। কে কাকে আগুন দেবে, এই নিয়ে কিছুক্ষণ তাদের মধ্যে তর্ক বিতর্ক চলল। মাজারে আমরা অনেক মানুষ আর অনেক অনেক কবুতর দেখলাম। কবুতরগুলো দেখে খুবই ভাল লাগল। প্রায় সবগুলোই জালালী কবুতর ছিল। এক জায়গায় সাইনবোর্ড দেখলাম “দেশী কবুতর ছাড়া নিষেধ” অর্থাৎ যারা মাজারে মানত করতে আসে তাদের উদ্দেশ্যে এই বাণী অমৃত লাগান ছিল।

মাজার দেখে আমরা হেঁটে হেঁটেই জিন্দা বাজার যেখান থেকে বাসে উঠব চলে আসলাম। রাতের সিলেট শহর বেশ ভাল লাগছিল। রাত ১২ টার পর ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস হওয়ায় সিলেট নগরীতে নির্মিত স্মৃতি সৌধ তে ফুল দিতে আসা মানুয়ের ঢল চোখে পড়ল। নানারকম মানুষ দেখে আমরা বাসষ্টান্ডে পৌছলাম। অবশেষে রাতের গাড়িতে আমরা প্রাণের শহর ঢাকাতে ফিরলাম।

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:২১
১৫টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×