রাত ৮:৪৫। নির্ধারিত সময়ের ১৫ মিনিট আগে বাস স্টপে পৌছে গেলাম। বাস ছাড়বে রাত ১০টা, কিন্তু সবাইকে ৯টার মধ্যে আসতে বলা হয়েছে। যেহেতু একটু আগেই পৌছে গেলাম, তাই ভাবলাম রাতের খাওয়াটা সেরে নেয়া যাক। দক্ষিণ কমলাপুরের একটা গরীবে নেওয়াজ টাইপ হোটেল থেকে ৩০ টাকায় ডিম দিয়ে রাতের খাওয়া সেরে নিলাম। খাওয়া শেষ করে শান্তি পরিবহনের কাউন্টারে গেলাম।
কাউকেই চিনতে পারছিনা। অবশ্য চেনার কথাও না। কারণ আমি এই গ্রুপের সাথে আগে কখনও কোন ট্রিপে যায়নি। তারপরও "ক" এর কর্ণধার "খ" ভাই-কে ফেসবুকের মাধ্যমে চিনি। কিন্তু তাঁকে কোথাও দেখছি না। মানুষজন কাউন্টারে আসা শুরু করেছে। বুঝতে পারছি এরা সবাই এই ট্রিপের লোকজন। কাউন্টারে বসা একজন কে জিজ্ঞেস করলাম বেড়াই বাংলাদেশের এ্যাডমিন কোথাই। তিনি পাশেই দাড়ান সাদা ব্লেজার পরিহিত একজন হাস্যজ্জল তরুণকে দেখিয়ে দিল। সালাম দিয়ে নাম বললাম। তিনিও তার নাম বললেন। মজা করার জন্য বললাম যাক তাহলে ঠিক কাউন্টারে এসেছি। তিনি মৃদু হেসে বললেন হ্যা ঠিকমত এসেছেন। তারপর তাঁকে বাসের ছিট প্ল্যান জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন হ্যা প্ল্যান ঠিক করা হয়েছে একটু বসুন সবাই আসলে একবারে ঘোষনা দিব।
এ্যাডমিনের কাছে উপস্থিতি জানান দিয়ে একটু নিশ্চিন্ত হলাম। কাউন্টারে ইতিমধ্যে অনেকেই এসে পড়েছেন। তাই কাউন্টারের ভিতরে আর বসার জন্য কোন ছিট খালি নেই। বাইরে গিয়ে দাড়ালাম। অনেকেই আমার মত বাইরে দাড়িয়ে আছে। পরিচিত হলাম দুয়েকজনের সাথে। তার মধ্যে একজন ছিল খুবই রসিক। তার রসিকতা অবশ্য পরে জানতে পেরেছি। তো যাই হোক আরও কয়েকজনের সাথে পরিচিত হলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে ছিট প্ল্যান ঘোষনা করা হলো। আমার সিট একেবারে সামনে পড়ল। ভালই লাগল। রাত্রিতে ঘুম দেয়া যাবে। ১০টা বাজার আগে আগে বাসে নির্দিষ্ট আসনে বসলাম। পাশের জনের সাথে পরিচয় হলাম। তারপর টুকটাক গল্প।
গাড়ি ঠিক ১০ টায় ছাড়ল। কিছুক্ষণ গল্প করে হেডফোন কানে লাগিয়ে ঘুমের দেশে চলে গেলাম। হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে দেখি বাস দাড়িয়ে আছে। বুঝলাম কুমিল্লা এসে গেছি। হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হলাম। এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করে আবার বাসে এসে উঠে বসলাম। কারণ বাইরে তখন প্রচন্ড শীত। বাইরে ঘোরাঘুরি করার চেয়ে বাসের ভিতরের উষ্ণতায় বসে থাকা শ্রেয় মনে হল। কিছুক্ষণের মধ্যে বাসের চাকা আবার গড়াতে শুরু করল। যথারীতি আবারও ঘুমের দেশে চলে গেলাম কোন এক রাজকন্যাকে খুঁজতে।
এরপর রাত সাড়ে তিনটার দিকে বারইয়া হাট (Not Sure) নামক স্থানে পৌছে গাড়ি থেমে গেল। কারণ বুঝতে না পেরে পাশেরজনের কাছে জিজ্ঞেস করলাম বাস আবার কেন থামল? আবারও কি নাস্তা খাওয়াবে নাকি? তিনি হেসে বললেন, না। আমাদের দ্বিতীয় বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। সেটা একটু পিছনে পড়েছে। বাস যেহেতু দাড়িয়ে আছে সেহেতু বাস থেকে নেমে পড়লাম। দেখলাম নাইট গার্ড আগুন জ্বালিয়ে গা গরম করছে। আমরাও কয়েকজন তাতে যোগ দিলাম। আগুনের কাছে গোল হয়ে দাড়িয়ে গেলাম। কিন্ত সমস্যা হল আমার। আমি যেদিকেই দাড়াই না কেন আগুনের ধোয়া সেদিকে আসে। একজন মজা করে বলল ভাই, আগুনের সাথে আপনার নিশ্চই শত্রুতা আছে। এ নিয়ে সবাই একটু মজা করলাম।
যাহোক পিছনের বাস এসে পড়ায় আবার আমরা বাসে উঠে গেলাম। তথ্যের জন্য একটু বলা প্রয়োজন, এইখানে বাসগুলো এসে পিছনের বাসের জন্য অপেক্ষা করে। কেননা বেশকিছু বাস জড় হলে তারপর পুলিশ বাসগুলো ছাড়ে। সামনে পাহাড়ী রাস্তা খুবই নির্জন হওয়ায় অনেক সময় ডাকাতি হয়। সেজন্যই এই ব্যবস্থা। একজন বলল আরও আড়াই থেকে তিন ঘন্টা লাগবে খাগড়াছড়ি পৌছতে এবং মাত্র ১ কিলোমিটার পর থেকেই পাহাড়ী রাস্তা শুরু হবে।
পাহাড় আমার আজন্ম ভাললাগার বিষয়। মনে মনে পুলকিত বোধ করলাম। যদিও বাইরে অন্ধকার এবং সেই সাথে কুয়াশার জন্য প্রায় বলতে গেলে কিছুই দেখতে পারছিনা। তারপরও সামনে বসার জন্য বাসের হেডলাইটের আলোয় উচু নিচু রাস্তার মারাত্বক সব বাক আর কাছের পাহাড় দেখতে পারছিলাম। পাহাড় দেখার লোভে অনেকক্ষণ জেগে থাকলাম। এভাবে একসময় ঝিম ঝিম ঘুম এসে গেল।
অন্ধকার থাকতে থাকতেই আমরা খাগড়াছড়ি পৌছে গেলাম। পিছনের বাসের জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সবাই আগে থেকে ঠিক করে রাখা হোটেল গাইরিং এ ফ্রেশ হওয়ার জন্য গেলাম। হোটেলটা ছোট হলেও খুবই পছন্দ হলো। ছয় জন একটি ডাবল বেডের রুম বরাদ্দ পেলাম ফ্রেশ হওয়ার জন্য। একজন একজন করে ওয়াশরুমে যাই আর বাকীরা বসে বসে গল্প করতে লাগলাম। একে একে সবাই ফ্রেশ হওয়ার পর ডাক পড়ল বের হওয়ার জন্য। সবাই ব্যাগ প্যাক নিয়েই নেমে পড়লাম। কারণ আমরা এখানের আর ফিরে আসব না। সবাই চান্দের গাড়িতে করে চলে গেলাম খাগড়াছড়ি পৌরসভার সামনে খাবার হোটেল মনটানায় সকালের নাস্তা খেতে। খাওয়া দাওয়া শেষে রওনা হলাম আমাদের প্রথম দ্রষ্টব্য স্থান রিছাং ঝর্ণা দেখতে
২য় পর্বের লিঙ্ক
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৯