আমি বাপের বাধ্য ছেলে না। তিনি আমাকে ডানে বললে আমি যথেষ্ট যুক্তি প্রমাণ দিয়ে বাম দিকে চলতাম। সে হিসেবে আমি “এই ছেলের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না” টাইপের একটা ছেলে ছিলাম। তো একরাতে ঘরে মেহমান আসলো। রাতের বেলা তাই আব্বাকে আমার রুমে এসে ঘুমাইতে হইলো। রাত বারোটার দিকে কারেন্ট গেলোগা। তখন ছিল গ্রীষ্মকাল। সেই গরম। গরমে সারা শরীর ঘেমে বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা। আব্বাকেও দেখলাম খালি এই পাশ ওই পাশ করতাছেন। হঠাৎ মাথায় আসলো, আজকে একটু ভালো ছেলে হই। যতক্ষণ কারেন্ট আসবে না ততক্ষণ আব্বারে হাতপাখা দিয়া বাতাস করমু। যেই ভাবা সেই কাজ। আব্বারে বাতাস করতে শুরু করলাম। আব্বা ভদ্রতাবশত কইলেন, “লাগবো না।” আমি বাতাস করতে থাকলাম। আব্বা চুপচাপ শুইয়া আছেন। বুঝা যাইতাছে আব্বা আরাম পাইতাছেন। কিছুক্ষণ পরেই আব্বার নিঃশ্বাস ভারি হইতে থাকলো। আব্বার নাক ডাকার শব্দ শুনতে পাওয়া যাইতেছিল। আব্বার আরামটা আমিও পাইতেছিলাম। পাখা ঘুরাইতে ভালো লাগতেছিল। সিদ্ধান্ত নিলাম, যতক্ষণ কারেন্ট না আসে, পাখা ঘুরামু। আব্বার নাক ডাকার শব্দটা ভালোই লাগতেছিল। এইভাবে এক ঘণ্টা গেল। আব্বার নড়াচড়া নাই। এক ঘণ্টা পর আব্বা ডান কাত থেকে বাম কাতে ঘুরলেন। ঘুরার সময় ঘুম ঘুম কণ্ঠে একটু কইরা কইলেন, “আর লাগবে না, ঘুমায়া যা।” আমি বাতাস করতেই থাকলাম। আমার আসলেই আব্বাকে আরামে ঘুমাইতে দেখে মজা লাগতেছিল। কারেন্ট আসলো রাত সাড়ে তিনটায়। এর মধ্যে আব্বা আরো একবার বলছিলেন, লাগবে না। সাড়ে তিনটায় আমি ঘুমাইতে গেলাম। মনের মধ্যে একটা পরিতৃপ্তি। আজ অনেক পিতৃসেবা হইলো।
সকাল সাতটায় আবার কারেন্ট গেলো। আমি তখন গভীর ঘুমে। গরমে ঘুম একটু ভাঙছিলো মনে হয়। কিন্তু সাথে সাথেই ঘুমায়া পড়লাম। যথারীতি নয়টার পর ঘুম থেকে উঠলাম। আব্বা তখন বাজারে। দাঁত মাজতেছিলাম বেসিনের সামনে। হঠাৎ ছোটবোন একটা ঝাড়ি দিয়া কইলো, “ভালোই তো ঘুম দিলি। সকাল থেকে কারেন্ট নাই, গরমে আমরা কেউ ঘুমাইতে পারি নাই। তুই কেমন পোলা, সকাল সাতটা থেকে আব্বা তোরে বাতাস করছে আর তুই হা কইরা ঘুমাইছস।”
রাত্রে আব্বারে বাতাস কইরা নিজের সাথে নিজে যে ভাবটা নিছিলাম, আব্বা সেইটা একটা বেলাও রাখতে দেন নাই। আহা আব্বা।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৩:১৬