আসল কথায় আসার আগে বলে নিই, আমি মোটেই খেলাধুলার বিরোধী নই। নিজে খেলাধুলা খুব একটা না পারলেও, খেলা দেখতে পছন্দ করি। বিশেষ করে তা যদি বাংলাদেশ দলের ক্রিকেট খেলা হয়, পাগলের মত দেখি। তবে তা কখনও আমার কাজকে ব্যাহত করেছে, তা আমার শত্রুও বোধ হয় বলবে না।
আজকে পত্রিকার পাতায় একটা খবর অনেকেরই আশা করি নজরে এসেছে। পরীক্ষাজটের আশঙ্কা। পরে একজন সতেচন ব্লগার এটা সামুতেও এনেছেন ।
পরীক্ষাজটের কবলে পড়তে যাচ্ছে ২০১১ সাল। বিশ্বকাপ ক্রিকেট উপলক্ষে এসএসসি পরীক্ষা আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পিছিয়ে এপ্রিলে নেওয়া হলে বছর জুড়ে সৃষ্টি হবে পরীক্ষাজট। কারণ, এসএসসি পেছালে এইচএসসি পরীক্ষাও পিছিয়ে এপ্রিলের বদলে জুনের পরে চলে যাবে। সে ক্ষেত্রে ফল প্রকাশ করে ২০১১ সালে উচ্চশিক্ষায় ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। এর পরে আরও অংশ আছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনেকেই পরীক্ষা পেছানোর সঙ্গে একমত নন। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।
খবরে যেমনটা লেখা হয়েছে, আপনাদের অনেকের মত আমিও বিশেষ শংকিত বোধ করেছি।
প্রথমেই মনে যে প্রশ্নটা আসে তা হল, পড়াশোনা কি খেলাধুলার (সত্যি বলতে গেলে খেলা দেখার) ফাঁকে ফাঁকে করার মত কিছু?
আগে আমাদের পাঠ্য বইতে শ্রদ্ধেয় লুৎফর রহমানের নিব্ন্ধ সব সময়ই থাকত। আমার বয়সী অনেকেই সেই কথাগুলো ভুলে যান নি। কোনও দেশকে ধংস করতে হলে, সেই দেশের লাইব্রেরীগুলো পুড়িয়ে দিতে হবে, আর সেই দেশের মনীষীদের হত্যা করতে হবে।
এই চরম সত্যটি পাকিস্তানীদের জানা ছিল, তাই তারা যখন দেখল স্বাধীনতা যুদ্ধে তাদের পরাজয় আর এড়াতে পারবে না, ১৪ই ডিসেম্বর ১৯৭১ এ তারা আমাদের বুদ্ধিজীবিদের বেছে বেছে হত্যা করল। আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হল। আমরা দরিদ্র হয়ে গেলাম।
কিন্তু আমরা এখন কি করছি?
আমরা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে কি বার্তা পাঠাচ্ছি? আমরা কি তাদের বলার চেষ্টা করছি শিক্ষার গুরুত্ব সবার উপরে নয়?
কদিন আগে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমস চলাকালে চীনে পরীক্ষা-ক্লাস বন্ধ থাকেনি। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ভেন্যু থাকলেও কলকাতায় পাবলিক পরীক্ষা পেছানো হচ্ছে না। তবে আমরা বোধ হয় আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতেই পারি। আমরা অন্যদেশে ফুটবল বিশ্বকাপের সময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে স্থান পেয়েছি। এই বিশ্বকাপে আমরা কবে স্থান পাব সে উত্তর কি আমরা দিতে পারব?
দেশের যদি আমরা সত্যিকারের উন্নতি চাই তবে প্রথম যে বিষয়ে আপোসহীন মনোভাব নিতে হবে তা হলো শিক্ষার মান।
আমি এখনও আশাবাদী এত বড় ভুল আমরা করব না।
আমি সকলকে অনুরোধ জানাব, নীতি নির্ধারক কারও সাথে যদি আপনার যোগাযোগ থাকে, তাঁর সাথে যোগাযোগ করুন, বুঝিয়ে বলুন, শিক্ষা এমন একটি জিনিস যার বিষয়ে কোনও ছাড় দেবার সুযোগ আমাদের নেই। আর যদি দেশের উন্নতি না হলেও চলে, তবে নিজেদের পায়ে কুড়াল আমরা মারতেই পারি।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১০:০৬