somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সামরিক আদালতে জিয়া হত্যার বিচার সেই ১৩ ফাঁসিও চ্যালেঞ্জের মুখে

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মূল লেখা এখানে

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডে কোর্ট মার্শালে অনুষ্ঠিত বিচারও এবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে। জিয়া হত্যায় দায়ের করা 'চট্টগ্রাম সেনা বিদ্রোহ মামলা'য় যাঁদের ফাঁসি হয়েছিল, তাঁদের স্বজনদের পক্ষ থেকে এই বিচার-প্রক্রিয়া রিভিউ করার জন্য আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের কারণে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সামরিক ট্রাইব্যুনালে ফাঁসি হওয়া কর্নেল তাহেরের বিচার ৩৪ বছর পর আদালতে চ্যালেঞ্জ হওয়ার প্রেক্ষাপটে জিয়া হত্যার বিচারে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোও এবার আদালতে যাওয়ার এই প্রস্তুতি নিচ্ছে।



জিয়া হত্যাকাণ্ডে কোর্ট মার্শালের গোপন বিচারে অবিশ্বাস্য দ্রুততায় ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা সামরিক কর্মকর্তাকে। ১৯৮১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রথম প্রহরে দেশের বিভিন্ন কারাগারে ১২ জন, দুই বছর পরে আরেকজন মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তাঁদের পরিবারের সদস্যরা মনে করেন, তাঁরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ-উত্তর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধা এবং পাকিস্তান প্রত্যাগতদের মধ্যে ওই সময়ে যে দ্বন্দ্ব ছিল, তার পরিণতিতেই জিয়া হত্যার বিচারের নামে ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা সেনাকে ফাঁসি দেওয়া হয়। ওই কোর্ট মার্শাল নিয়ে সে সময়ই প্রহসনের অভিযোগ ওঠে। রাজপথেও কর্মসূচি পালিত হয়। অভিযোগ ছিল, জিয়া হত্যার মূল নায়ক ও সহযোগীদের রক্ষার জন্যই বিশেষ সামরিক আদালতে বিচারের ব্যবস্থা হয়। বিচারের নামে দেওয়া 'মিথ্যা' কলঙ্ক থেকে মুক্তি এবং হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারের জন্যই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এই মামলার রিভিউ চায়।
কোর্ট মার্শালের বিচার-প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত মেজর জেনারেল (অব.) আজিজুর রহমান বীর উত্তম, মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আইন উদ্দিন বীর প্রতীক, মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীকও মনে করেন, জিয়া হত্যার বিচারে দণ্ডিতরা ন্যায়বিচার পাননি। নিরপরাধ কর্মকর্তাকেও বিচারের নামে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। আদালতে এই মামলা রিভিউয়ের সুযোগ রয়েছে বলে আইনজীবীরা মত দিয়েছেন।
ফাঁসি হওয়াদের একজন মেজর কাজী মমিনুল হক। জিয়াউর রহমান হত্যার সময় চট্টগ্রামের ঘাঘরা রাঙামাটিতে ২৮ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। মমিনুল হকের ছোট ভাই কাজী মোজাম্মেল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আদালতে তাহের হত্যার বিচার চ্যালেঞ্জ হওয়ায় আমরা অনুপ্রাণিত হয়েছি। আমরা দেখতে পাচ্ছি, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ দেশে তৈরি হচ্ছে। বিচারের নামে সেদিন যে অন্যায় করা হয়েছে, আমরা মনে করি তার বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া উচিত।' তিনি দৃপ্তকণ্ঠে বলেন, 'আর কেউ না গেলেও আমি যাব আদালতে। আমি আদালতে যাওয়ার অর্থনৈতিক প্রস্তুতি নিচ্ছি।' তিনি আরো বলেন, 'আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ অফিসার ছিলেন। আমিও মুক্তিযুদ্ধ করেছি। মুক্তিযোদ্ধারা দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। আমরা জানি, আমাদের ভাই নিরপরাধ। আমরা ভাইকে আর ফিরে পাব না। কিন্তু মানুষ জানুক, আসলে কী ঘটেছিল। তাঁদের হৃত গৌরবটা ফিরে আসুক।'
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের সময় কর্নেল এম এ রশিদ বীর প্রতীক কাপ্তাইয়ে ৬৫ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কোর্ট মার্শালের বিচারে তাঁরও ফাঁসি হয়। কর্নেল রশিদের ছেলে ইকবাল রশিদ রানা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'জিয়া হত্যার বিচারের সময় যে ক্যামেরা ট্রায়াল হয়েছে, তা ছিল বিচারের নামে প্রহসন। সেই হত্যাকাণ্ডের রাতে আমার বাবা রাঙামাটিতে ছিলেন। তার পরও তাঁকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা অফিসার হওয়ার কারণেই তাঁকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।'
রানা বলেন, ব্রিগেডিয়ার মহসীনকেও ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। অথচ তিনি ওই রাতে চোখ ওঠার কারণে সিএমএইচে ভর্তি ছিলেন। তিনি বলেন, তৎকালীন সেনাপ্রধানসহ সেনাবাহিনীর সিনিয়র অফিসাররা ছিলেন পাকিস্তান প্রত্যাগত। মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের প্রতি তাঁদের আক্রোশ ছিল। বেছে বেছে মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদেরই হত্যা করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে যাঁর যত বড় অবদান ছিল, তাঁকে তত বড় শাস্তি দেওয়া হয়েছে। অথচ পাকিস্তান প্রত্যাগত একজন অফিসারেরও সাজা হয়নি, চাকরিও যায়নি।
ইকবাল রশিদ রানা বলেন, 'ফাঁসি হওয়া কর্মকর্তাদের অন্য পরিবারগুলোর সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। এই বিচারের রায় রিভিউ করার জন্য আমরা আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গেও আমাদের আলাপ হয়েছে। তাঁরা অপেক্ষা করতে বলেছেন।'
ফাঁসির শিকার হওয়া মেজর এ জেড গিয়াস উদ্দিন আহম্মেদের মেয়ে মাহিন আহম্মেদ সুমী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ন্যায়বিচার পাওয়ার লক্ষ্যে আদালতে যাওয়ার জন্য আমরা মরিয়া হয়ে আছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাবা জাতির জনক হত্যার বিচার পেলেন; আমাদের আরজি, তিনি এখন আমাদের জন্য কিছু করবেন।'
কোর্ট মার্শালের বিচার রিভিউ আবেদনের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার সুযোগ প্রসঙ্গে খ্যাতিমান আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলামের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, তাঁদের ভাবনাটি সঠিক।
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে মারা যান রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমান। এ ঘটনার বিচারের জন্য গঠন করা হয় কোর্ট মার্শাল। ৩১ জনকে অভিযুক্ত করে 'চট্টগ্রাম সেনা বিদ্রোহ মামলা' নামে চট্টগ্রাম কারাগারের অভ্যন্তরে মাত্র ১৮ দিন চলে কোর্ট মার্শাল। কোর্ট মার্শালের প্রধান ছিলেন পাকিস্তান প্রত্যাগত মেজর জেনারেল আবদুর রহমান। তিনি পরে ফ্রান্সে রাষ্ট্রদূত থাকাবস্থায় মারা যান। রায়ে ১২ জনকে ফাঁসি ও ১০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। (আরেকজনের বিচার ও রায় হয় পরে)।
কোর্ট মার্শালের এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করা হলেও তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। পরে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট শুনানি শেষে ২২ সেপ্টেম্বর আপিল খারিজ করেন। ওই দিনই দিবাগত রাত অর্থাৎ ১৯৮১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রথম প্রহরে দেশের বিভিন্ন কারাগারে কার্যকর করা হয় ১২ জনের ফাঁসি। যাঁদের ফাঁসি হয়, তাঁরা হলেন ব্রিগেডিয়ার মহসীন উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, কর্নেল নওয়াজেশ উদ্দিন, কর্নেল আবদুর রশিদ বীর প্রতীক, লে. কর্নেল আবু ইউসুফ মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বীর বিক্রম, লে. কর্নেল দেলাওয়ার হোসেন বীর প্রতীক, মেজর গিয়াস উদ্দিন আহম্মেদ, মেজর রওশন ইয়াজদানী ভূঁইয়া বীর প্রতীক, মেজর কাজী মমিনুল হক, মেজর মুজিবুর রহমান, ক্যাপ্টেন আবদুস সাত্তার, ক্যাপ্টেন জামিল হক ও লে. রফিকুল হাসান খান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় লে. কর্নেল ফজলে হোসেনের ফাঁসি দুই বছর পর ১৯৮৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর কার্যকর করা হয়।
সামরিক আদালতের এই বিচারের পরে সাধারণ আদালতে জিয়া হত্যার আর বিচার হয়নি। বিচারের জন্য বাদীপক্ষ, পরিবার কিংবা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আগ্রহ না দেখানোর কারণে তদন্ত কর্মকর্তা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন (ফাইনাল রিপোর্ট) দাখিল করেন, যা ২০০১ সালের ২৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে গৃহীত হয়। ১৯৮১ সালের ১ জুন সিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনারের দায়ের করা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামির সংখ্যা ছিল ১০ জন। কোর্ট মার্শালে যাঁদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে মাত্র চারজন ছিলেন এই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।
কোর্ট মার্শালের বিচারের বিষয়টি জনসমক্ষে আলোচনায় আসে গবেষক আনোয়ার কবিরের অনুসন্ধানের মাধ্যমে। তাঁর মতে, চট্টগ্রাম সেনাবিদ্রোহ মামলা নামে কোর্ট মার্শাল করাই হয়েছিল জিয়া হত্যার নেপথ্যের নায়ক ও সহযোগীদের আড়াল করা এবং সেনাবাহিনীকে মুক্তিযোদ্ধাশূন্য করার উদ্দেশ্যে।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এই গোপন বিচারের জন্য তৎকালীন সেনাপ্রধান এইচ এম এরশাদকে দায়ী করে। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তদের লেখা কারাগারের চিঠিতেও এর ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
চট্টগ্রাম সেনাবিদ্রোহ মামলার জন্য গঠিত কোর্ট মার্শালের কোর্ট অব ইনকোয়ারির তিন সদস্যের কমিটির অন্যতম মেজর জেনারেল (অব.) আজিজুর রহমান বীরউত্তম এক সাক্ষাৎকারে জানান, বিচার শুরু হওয়ার আগেই আসল চক্রান্তকারী এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারীদের মূল সদস্য যাঁরা ছিলেন, তাঁদের সবাই তিন দিনের মাথায় বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে নিহত হন। তিনি বলেন, 'আমরা তদন্ত আদালতে ঘটনা উদঘাটন করতে পেরেছি, কিন্তু এ ব্যাপারে যথেষ্ট কার্যকর ব্যবস্থা বা যারা দায়ী ছিল তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা কিন্তু আমরা জানতে পারিনি।' তিনি বলেন, 'যে ত্বরিত ব্যবস্থার মাধ্যমে পুরো বিচারকার্যটি সমাধা করা হয় এবং প্রথমদিকে জেনারেল মঞ্জুরকে হত্যা করা হয়, তাতে মনে হয়, পুরো জিনিসটিকে আড়াল করার একটি চেষ্টা ছিল। পুরো ঘটনাটির রহস্য উদঘাটনের জন্য আবার নতুন করে বিচার, বিবেচনা এবং পর্যালোচনা করার প্রয়োজন আছে। যারা দণ্ডিত হয়েছেন, তাঁদের সন্তানরা যে কলঙ্ক বয়ে বেড়াচ্ছেন, তা কি সত্যি তাঁদের প্রাপ্য? এসবের জন্য আমি মনে করি, এই পুরো জিনিসটিই আবার নতুনভাবে তদন্ত হওয়ার প্রয়োজন আছে।'
কালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে গতকাল বুধবার জেনারেল আজিজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রকাশিত এই সাক্ষাৎকারের বাইরে আর কিছু বলতে রাজি হননি।
সেনা আইনে প্রত্যেককে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও ৩১ জনের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল মাত্র তিনজন সেনাকর্মকর্তা। এই তিন সদস্যের টিমের দুইজন ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আইন উদ্দিন বীর প্রতীক ও মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক। তাঁরা জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের বক্তব্য নিতে গিয়ে তাঁরা হৃদয়বিদারক দৃশ্যের মুখোমুখি হয়েছিলেন। বন্দিদের ওপর যে অত্যাচার করা হয়েছিল তা বর্ণনা করার মতো নয়। প্রত্যেকেরই গায়ের চামড়া প্রায় উঠিয়ে ফেলা হয়েছিল, নখ উপড়ানো ছিল এবং তাঁদের হাতে-পায়ে বেড়ি বাঁধা ছিল। নির্যাতন করে অভিযুক্তদের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়। অভিযোগ প্রমাণের আগেই তাঁদেরকে ফাঁসির আসামিদের জন্য তৈরি কনডেম সেলে রাখা হয়। কেঁৗসুলি হিসেবে তাঁদেরও স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হয়নি। তাঁরা যখন বন্দিদের সাক্ষাৎকার নিতেন, তখন ডিজিএফআইয়ের লোকেরা উপস্থিত থাকত। তাঁদের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে আনোয়ার কবির নির্মিত 'সশস্ত্র বাহিনীতে গণহত্যা : ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১' প্রামাণ্যচিত্রে।
সেখানে মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, 'আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, সেনাবাহিনীর আইন মোতাবেক তাঁরা ন্যায়বিচার পাবেন। কিন্তু আমরা এখন বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, সবাই ন্যায়বিচার পাননি।' তিনি বলেন, 'আমি দাবি করছি, আরেকবার কোর্ট মার্শাল করুন। এটি রিভিউ করুন।'
কালের কণ্ঠকে মেজর জেনারেল (অব.) ইবরাহিম বলেন, 'এত বছর পরে হলেও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তাদের সুনাম পুনরুদ্ধারের জন্য আইনের আশ্রয় নেওয়া উচিত বলে মনে করি।'
মোহাম্মদ আইন উদ্দিন বীরপ্রতীক প্রামাণ্যচিত্রে বলেন, অভিযোগ প্রমাণের জন্য সাক্ষী হিসেবে যাদের আনা হয়েছিল তাদের মধ্যে যে কয়েকজন মিথ্যা সাক্ষ্য দিচ্ছে, তা তাঁরা জেরার মাধ্যমেই প্রমাণ করতে পেরেছিলেন। তিনি বলেন, 'এত তড়িঘড়ি করে এত বড় একটি কোর্ট মার্শাল করা হয়েছে! এতজন অফিসারের একসঙ্গে কোর্ট মার্শাল বিশ্বের ইতিহাসে নেই।'
বর্তমান সরকারের আমলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো বিচার পাবে কি না সে নিয়ে তিনি অবশ্য সংশয় প্রকাশ করেন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, সেই বিচারের কলকাঠি যিনি নাড়িয়েছিলেন, তিনি তো এখন মহাজোট সরকারে রয়েছেন। তবে তিনি বলেন, 'কোর্ট মার্শালের রায় রিভিউয়ের সুযোগ না থাকলেও একটা সুযোগ আছে, তা হচ্ছে রাষ্ট্রপতি এ ব্যাপারে কিছু করতে পারেন। তিনি ওই রায়ের সাজা মওকুফ করে দিয়ে তাঁদের মরণোত্তর ক্ষমা করে দিতে পারেন। রাষ্ট্রপতির এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে মনে করি। এ ব্যাপারে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা মুক্তিযোদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিতে পারে।'
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তদের ন্যায়বিচারের স্বার্থে এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়ার জন্য হাইকোর্টে যে রিট হয়েছিল, তার আইনজীবী হিসেবে ছিলেন ড. কামাল হোসেন, ড. এম জহির, অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক (প্রয়াত), অ্যাডভোকেট আমিনুল হক প্রমুখ। আপিল আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর ওই রাতেই রিভিউয়ের আবেদন নিয়ে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি কামাল উদ্দিন হোসেনের বাসায় গিয়েছিলেন আইনজীবীরা। ড. কামাল হোসেনের প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, প্রধান বিচারপতি তাঁদের বসিয়ে রেখে দোতলায় যান। কারো সঙ্গে ফোনে কথা বলে এসে তাঁদের আবেদন রক্ষা করা সম্ভব নয় বলে জানান। ড. কামাল মনে করেন, আজ পর্যন্ত এই মামলার সঠিক মূল্যায়ন হয়নি। ইতিহাসের এই মামলা পুনর্বিবেচিত হওয়া উচিত (সূত্র : ফাঁসির মঞ্চে তেরোজন, লেখক আনোয়ার কবির)।
১৯৭৬ সালে সামরিক ট্রাইব্যুনালে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহেরের ফাঁসির বিচার চ্যালেঞ্জ করে ২৩ আগস্ট হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছেন তাহেরের পরিবারের সদস্যরা। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ওই বিচার ও ফাঁসি কেন অবৈধ হবে না_তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন এবং তাহেরের গোপন বিচারের নথি তলব করেছেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:২৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×