somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নব্বুই থেকে শাহবাগ; তারুণ্যের অপচয়

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৮:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নব্বুই-এর গণ-অভ্যুথান ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে হাজার বছরের শৃংখল মুক্তির পর, বাংলাদেশের সেই মাহেন্দ্র অর্জন, যা ছিল তারুণ্যের সাংস্কৃতিক অভ্যুত্থান।

জনগণের শাসন ব্যবস্থাকে জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিল তারুণ্য। নব্বুই-এর গণ-অভ্যুথান ছিল শাসন ব্যবস্থার অচলায়তন ভেঙ্গে হা রে রে রে করে গণতন্ত্রের আলোক উঠোনে বেরিয়ে আসা।
বাংলাদেশ গণতন্ত্রে নেতা তৈরীর পরীক্ষিত পদ্ধতি হচ্ছে ছাত্র-সংসদ নির্বাচন। ছাত্রদের গণতন্ত্র চর্চা ও রাজনীতির হাতে-কলমে শিক্ষার ‘জায়গা’ ছিল ছাত্র সংসদ নির্বাচন।

নব্বুই-এর গণ-অভ্যুত্থানে আমরা একঝাঁক তরুণ নেতা পেয়েছিলাম যারা সাংস্কৃতিক উপাদানগুলোকে ব্যবহার করেছিলেন সামরিক জান্তা এরশাদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ লড়াই-এ। নব্বুইকে ঘিরে সাংস্কৃতিক আন্দোলন তার উতকর্ষে পৌঁছেছিল। এরশাদ পাখির মত গুলি করে মেরেছিলেন ছাত্রনেতা ডা মিলনকে; তার সাংস্কৃতিক রুচি অনুযায়ী। কিন্তু নব্বুই-এর তারুণ্য আস্থা রেখেছিল ঐক্যে ও সাংস্কৃতিক চেতনার আয়ূধে। তারুণ্য মূলতঃ তার রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক চেতনার বারুদে উড়িয়ে দিয়েছিল এরশাদের বাতিল দূর্গকে।
নব্বুই-এর নেতাদের মাঝ থেকে এবং এরপর ধারাবাহিক সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা অনায়াসে পেতে পারতাম আমাদের কাংক্ষিত সম-ভাবনার নেতা ও বন্ধুদের; যারা আজকের বাংলাদেশের প্রাসঙ্গিক কান্ডারী হতে পারতো।

নব্বুই-এর সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য ছিল একটি ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশের ঋজু সূচনাপর্ব।

সেই নব্বুই-এর নেতাদের প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থা এক অর্থে হত্যা করেছে। ডাকসু নির্বাচন বন্ধ করে দিয়ে গ্রাম্য মাতবর কেন্দ্রিক টাকা অলা অনেতাদের বুলবুলি আখড়াই চলছে বাংলাদেশ রাজনীতিতে।
কারণ ঐ যে ধরুন বাতিল মালগুলো যারা রাজনীতির পীর তারা আন্ডালিব পার্থের মত আরো বাতিল পারিবারিক পচা ডিম উপহার দিতে চেয়েছে বাংলাদেশের ভুত-ভুতুম রাজনীতিতে। পীর প্রথা, নিজের অপদার্থ ছেলেটিকে বা ডেসপারেট হাউজ ওয়াইফ মেয়েটিকে নির্বাচনী এলাকায় গদিনশীন করে তবেই মরতে চান এই আত্মকেন্দ্রিক পোড়া মুখগুলো। নিজেদের অবস্থাও সেই অন্তর্জলী যাত্রার বুড়োর মত। মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে শুয়েও ভাবে, আমি ফিরে যেতে পারলে ভালো, নাইলে আন্ডা-মাইয়া রাইখা গ্যালাম।গদি সামলাইশ!

নব্বুই-এর নেতাদের অসহায় রূপান্তর বা জীবন্মৃত অবস্থা দেখে মনে হয়, এ হচ্ছে রাজনৈতিক মেধার অপচয়। নব্বুই-এর নেতাদের ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে আমরা অগ্রজ হিসেবে খুব কাছে থেকে পেয়েছিলাম। আমরা জানি তাদের মানসিক উচ্চতা ও ঔদার্য সম্পর্কে। এই অগ্রজদের সঙ্গে দেখা হলে তারা আমাদের পড়ালেখার খবর নিতেন, নির্বিঘ্নে বিতর্ক বা অন্যান্য সাংস্কৃতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাবার পেছনে প্রণোদনা ছিলেন এরা। মানুষ তো ছোট ছোট দেখা হওয়া, কথা হওয়ার মাঝ দিয়েই একজন মানুষের মনোভঙ্গী বুঝে। আমরা বুঝে গিয়ে ছিলাম এরাই আমাদের নেতা; এদের সঙ্গে আমাদের সমানুভূতি আছে।
সেই নব্বুই-এর নেতাদের আড়াল করে দেয়া হয়েছে পারিবারিক আন্ডাবাচ্চা ও হাইব্রিড ব্যবসায়ী তস্কর দিয়ে। ফলে সুশাসনের দেখা নাই; এর দেখা আর কোনদিনই পাওয়া যাবে না।

বঙ্গবন্ধু হত্যার মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে হত্যা করা হয়; আর নব্বুই-এর নেতাদের অবমূল্যায়ন করে; জাঢ্য-জরদগব-আউটডেটেড বাতিল ঘেউ ঘেউ করা আত্মকেন্দ্রিক বুড়ো-বুড়ীরা বলে দিলেন, ঐ যে, এক ঘরমে দো পীর যাও বাছা শো রাহো।

বিস্মৃতির অতল জলধিগর্ভে হারিয়ে গেলেন আমাদের নব্বুই-এর রেনেসাঁর নায়কেরা। তারপর ডাকসু সহ অন্যান্য নির্বাচন বন্ধ রেখে গণতন্ত্রের বৃক্ষটির শেকড় কেটে দেয়া হলো। জনমানুষের মাঝ থেকে আর নেতা উঠে আসার সুযোগ নাই।

এখন নেতা তৈরী হয় হাসিনা-খালেদার বুটিক হাউজে, এরশাদের ব্যায়ামাগারে। ফেল কড়ি; মাখো তেল; গণতন্ত্রের ‘লাশ’-ভেগাস।

সম্প্রতি শাহবাগ গণজাগরণ, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে শুরু হওয়া ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের জনযাত্রার এক মিলন মোহনা হয়ে উঠেছিল; শাহবাগ তারুণ্যের সাহজিক দেশ চেতনার অভ্যুত্থান দেখে মনে হয়েছিল; এবার আমরা নব্বুই-এর সাংস্কৃতিক বিজয়ের আকাংক্ষার পুনর্জন্ম ঘটতে দেখছি। মানুষ আত্মকেন্দ্রিকতার নাগরিক খোলস ভেঙ্গে বেরিয়ে এসেছিল নবজাগরণের উদ্দীপনায়। শাহবাগের তরুণেরা যখন টিভির টকশো গুলোতে অন্তর্জলী যাত্রা্র রাজনৈতিক নেতা ও তাদের জমিদারি রাজনীতির আন্ডাদের সঙ্গে বিতর্কে উপনীত হয়; শিক্ষা-সাংস্কৃতিক মানের পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। বোঝা যায় বাংলাদেশ তারুণ্য গোলকায়নের আলোক সরণিতে পৌঁছে যেতে পারে অনায়াসে; বাধা হচ্ছে এই বার্ধক্যের অচলায়তন, মাতবরীর গ্রামাবলী।
নব্বুই-এর নেতাদের মত এবার শাহবাগের নেতাদের জন্য ডাকিনীদের সেই একই কোরাস,
এক ঘারমে দো পীর যাও বাছা শো রাহো।

শাহবাগ ভেঙ্গে দেয়ার চেষ্টা চলছে, নানা-রকম নিন্দা আর কুতসার কালিঝুলি মেখে দেয়া হচ্ছে শাহবাগ নেতাদের গায়ে। ছাগল-বানর লেলিয়ে দিয়ে ডাকিনীরা ছিঁড়ে খুঁড়ে ফেলতে চাইছে সম্ভাবনাময় তারুণ্যকে।

এক জীবনে আর কত সম্ভাবনার মৃত্যু দেখবো বাংলাদেশে। বাংলাদেশকে যারা অষ্টম শ্রেণী থেকে টেনেটুনে বিএ পাসের দুর্লঙ্ঘণীয় অচলায়তনে আটকে রেখেছে; তারা অপরাধী। একেবারে কলতলার কাইজ্জার রাজনীতি, পারিবারিক বা দাস-বলয়ের বাইরের সম্ভাবনাময় এর ওর কপালে কলংকের ছ্যাঁকা দিয়ে দেয়া, ঘুরে ফিরে সেই সৈয়দ ওয়ালীউল্লার লালসালু উপন্যাসের মজিদের মত ভন্ডপীরের কারসাজি। পেট্রোডলারের কাছে ধর্ম বেচে দেয়া; আর রাজনৈতিক মেধা হত্যা; এই সবই মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের মৃত্যুবিছানা পর্যন্ত বিগত যৌবনকে সম্ভোগ আর নিজের অপদার্থ পুত্র-কন্যাকে গদিনশীন করে দিয়ে যাবার ছলা-কলা এবং ক্যানিবালিজম।

এই ক্যানিবালেরা নব্বুই-এর নেতাদের খেয়েছে, শাহবাগের নেতাদের খাচ্ছে, এরা চাইলে আমরা আমাদের ব্রেণ মাসালা, হার্ট ঝাল-ফ্রাই, এবং যে আঙ্গুল দিয়ে লিখি তার কুড়মুড়ে কাবাব পাঠিয়ে দিতে চাই এইসব ক্যানিবালের কাছে। এদের যে গোরুড় পাখীর ক্ষিদে; আমরা জানিনা বিধাতা এদের শরীরে হৃদপিন্ড না দিয়ে দুটো পাকস্থলী দিয়ে দিয়েছেন কীনা!
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×