১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের নদীগুলো লোহিত সাগর হয়েছিল। আমরা যারা ছোট খাট মানুষ মুক্তিযুদ্ধে পরিবারের কাউকে না কাউকে হারিয়েছি তারা এই হত্যার বিচারের দাবী নিয়ে রাজার দেউড়িতে যেতে পারিনি। যতদিন আমাদের দার্শনিক রাজা মুজিব বেঁচে ছিলেন, গণহত্যাকারী মাটিজ অপরাধীদের বিচার চলেছে।
তারপর মুজিবকে হত্যা করে একাত্তরের ঘাতকেরাই ক্ষমতায় চলে আসে। পরে সে পরাগায়ন ঘটে জিয়া-এরশাদ-খালেদা শাসনের রক্তজবায়।
আমাদের তখন ইতিহাস বইয়ে মুখস্ত করতে হচ্ছে ঘাতকের লেখা ন্যারেটিভ। আমরা গুজবের অকূল পাথারে হাবুডুবু খাই। আমরা ধরেই নিয়েছি, আমাদের মা খালারা ভাই হারানোর গল্প বলে চোখ মুছবেন। আমরা রাক্ষসের গল্প শুনে ভয় পেয়ে ঘুমাতে যাবো।
হঠাত শহীদ জননী জাহানারা ইমাম যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়ে বসলেন। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গড়ে উঠতে লাগলো। আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা এই ন্যায় বিচারের দাবীর পথ-যাত্রায় জাহানারা ইমামকে সম্ভব সব সাহায্য করলেন। ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুন,সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির শুরু করলেন সত্যকে ছাই গাদা থেকে খুঁজে ফিনিক্স পাখির মতো উড়িয়ে দেবার কাজ। এরজন্য সবাইকেই ঘাতকের রক্তজবা হাতে বসে থাকা বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া জেল জুলুম করলেন।
কিন্তু জাহানারা ইমামের প্রতিবাদের ভাষা প্রতিরোধের আগুণ হলো। দেশে শিক্ষিতের হার বাড়ায় একটি সচেতন জনগোষ্ঠী তৈরী হলো। তারা নানাদিকে ছড়িয়ে দিলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীর শক্ত বারতা।
আওয়ামী লীগ ২০০৮ এর নির্বাচনী ইশতেহারে তারুণ্যের প্রাণের দাবী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে অঙ্গীকার হিসেবে লিপিবদ্ধ করলো। ভোটে জিতে ট্রাইবুনাল গঠন করলো। চারদশক আগের অপরাধ প্রমাণ সহজ নয়। তবুও কাজটা এগিয়ে চললো।
এই বিচার প্রক্রিয়ায় কোন রায় হয়ে গেলে রাষ্ট্রপক্ষের আপীলের সুযোগ ছিলোনা। সেটা যৌক্তিক নয়। দুইপক্ষেরি সর্বোচ্চ আদালতে আপীলের সুযোগ থাকা জরুরী। কারণ আইনের চোখে সবাই সমান।
যে কাদের মোল্লা ফাঁসির পরে এখন পাকিস্তানের আকাশের চাঁদে প্রায়ই দেখা দিচ্ছেন; তার অপরাধ প্রমাণিত হবার পরেও তার যাবজ্জীবন হলো।
ভেতরের খবর জানিনা; একই মুশতাক সমাজের অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগে কিছু ফিশি চেহারার ফিশারম্যান আছেন; তাদের প্রতি সন্দেহ জাগলো তারুণ্যের; ভেতরে কোন আপোষের কাঁঠাল ভেঙ্গে ভাগাভাগি চলছে কীনা।
ফেব্রুয়ারী ৫, ২০১৩
পথে নামলো তারুণ্য। শাহবাগে ৩০/৪০ জনের ছোট্ট একটি মানববন্ধন দ্রুত প্রমিথিউসের আলোর আগুণ ছড়িয়ে দিলো লাখো মানুষের জীবন মিছিলে। আবার সেই একাত্তরের মুক্তির চিৎকার জয় বাংলা শোনা গেলো সারা পৃথিবী থেকে।
মানুষ জাগলো; ঘন হয়ে এলো। একাত্তরে যারা আত্মীয় হারিয়ে রাজার দেউড়িতে পৌছাতে পারেনি, ফাঁসির দাবী নিয়ে যেতে; তারা সেই একাত্তরের বাংলাদেশের পুনর্জন্ম দেখলো যেন।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ায় রায় দেবার পর উচ্চ আদালতে আপিলের সুযোগ পেল উভয় পক্ষ। কিন্তু বিচার প্রক্রিয়া নিজের গতিতে চলে; বয়সের অজুহাতে যুদ্ধাপরাধীদের ডন গোলাম আজম পেলেন যাবজ্জীবন সাজা।
এই বিচার চলার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর বিচার বন্ধের চাপ এসেছে ওয়াশিংটন, লন্ডন, রিয়াদ, আংকারা, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ইত্যাদি দানবাধিকার রক্ষাকারী নব্য উপনিবেশবাদী নির্বোধদের কাছ থেকে। ওদিকে জামাতের পয়সা খেয়ে টোবি কাডম্যান, ডেভিড বার্গম্যান, সাইয়েদা ওয়ারসি, শর্মিলা বোস ইত্যাদিরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের জন্য গোটা দুনিয়ায় স্ট্রিপটিজ করে বেড়িয়েছে। পাকিস্তান থেকে জামাত টিটিপির ঘাতক বাংলাদেশে পাঠিয়েছে শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে। রাখেন আল্লাহ, মারেন কে? বাংলাদেশে সি আই এ- আই এস আই-মোসাদ প্রক্সি ওয়ার চালিয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচিয়ে নিয়ে যাবার জন্য। এই প্রজন্মের ডিজিএফ আই ব্যর্থ করে দিয়েছে সব কালো চেষ্টা। প্রতিপত্তির প্রক্সি লড়াইটি ঐ ত্রিভুজ এখনো লড়ছে র’ এর সঙ্গে। সেই দিক থেকে আমরা এখনো ভাল নেই।
কিন্তু ভাবতে অবাক লাগে গোটা পৃথিবীর মানুষ এখন শাহবাগ চেনে। আফঘানিস্তান-পাকিস্তানে তালেবান অবরুদ্ধ তরুণও শাহবাগকে ন্যায় বিচার ও মুক্তির প্রতীক হিসেবে দেখে। শাহবাগের এই সত্য সুন্দর ও মঙ্গলের আলোকবর্তিকাকে অনির্বান করতে কয়েকজন আলোর তরুণ শহীদ হয়েছেন। কেউ কেউ গত একটি বছর রুটিন জীবনে ফিরতে পারেনি, কাউকে চাকরী ছেড়ে দিয়ে গণজাগরণের মশাল সারাদেশে বয়ে নিতে বেড়াতে হয়েছে; কাউকে ইতিহাসের ছাইগাদার সত্যের ফিনিক্সটিকে ব্লগে-সামাজিক গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে ৩৬৫টি বিনিদ্র রাত কাটাতে হয়েছে, কারো পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। তাদের প্রতি বাংলাদেশ ঋণী; তারাও বাংলাদেশের কাছে।
অভিবাদন গণজাগরণ, অভিনন্দন লড়াকু তারুণ্য; ন্যায় বিচারের বিপ্লব চিরজীবী হোক।
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু জয়তু বাংলাদেশ
শাহবাগ; আলোকসম্ভবা বাংলাদেশের স্থায়ী ঠিকানা
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !
"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমিত্ব বিসর্জন
আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।
"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন
স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?
স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন