জীবন - এর কয়েকখন্ড
-------------------------------------------------
যে পাতা সবুজ ছিল,- তবুও হলুদ হতে হয়,-
শীতের হাড়ের হাত আজও তারে যায় নাই ছুঁয়ে-
যে মুখ যুবার ছিল, তবু যার হয়ে যায় ক্ষয়,
হেমন্ত রাতের আগে ঝ'রে যায়,- প'ড়ে যায় নুয়ে;-
পৃথিবীর এই ব্যথা বিহ্বলতা অন্ধকারে ধুয়ে
পূর্ব সাগরের ঢেউয়ে,- জলে জলে, পশ্চিম সাগরে
তোমার বিনুনি খুলে,- হেঁট হয়ে, - পা তোমার থুয়ে,-
তোমার নক্ষত্র জ্বেলে- তোমার জলের স্বরে স্বরে
রয়ে যেতে যদি আকাশের নিচে-নীল পৃথিবীর ’পরে!
************************************
শীত রাত ঢের দূরে,- অস্থি তবু কেঁপে ওঠে শীতে!
শাদা হাতদুটো শাদা হাড় হয়ে মৃত্যুর খবর
একবার মনে আনে,- চোখ বুজে তবু কি ভুলিতে
পারি এই দিনগুলো!- আমাদের রক্তের ভিতর
বরফের মতো শীত, আগুনের মতো তবু জ্বর!
যেই গতি,- সেই শক্তি পৃথিবীর অন্তরে পিঞ্জরে;-
সবুজ ফলায়ে যায় পৃথিবীর বুকের উপর,-
তেমনি স্ফুলিঙ্গ এক আমাদের বুকে কাজ করে!
শস্যের কীটের আগে আমাদের হৃদয়ের শস্য তবু মরে!
*****************************************
অঙ্গারের মতো তেজ কাজ করে অন্তরের তলে,-
যখন আকাঙ্খা এক বাতাসের মতো বয়ে আসে,
এই শক্তি আগুনের মতো তার জিভ তুলে জ্বলে!
ভস্মের মতন তাই হয়ে যায় হৃদয় ফ্যাকাশে!
জীবন ধোঁয়ার মতো,- জীবন ছায়ার মতো ভাসে;
যে অঙ্গার জ্ব'লে জ্বলে নিভে যাবে,- হয়ে যাবে ছাই,-
সাপের মত বিষ লয়ে সেই আগুনের ফাঁসে
জীবন পুড়িয়া যায়;- আমরাও ঝরে পুড়ে যাই!
আকাশে নক্ষত্র হয়ে জ্বলিবার মতো শক্তি-তবু শক্তি চাই!
******************************************
অশান্ত হাওয়ার বুকে তবু আমি বনের মতন
জীবনেরে ছেড়ে দিছি!- পাতা আর পল্লবের মতো
জীবন উঠেছে বেজে শব্দে-স্বরে; যতবার মন
ছিঁড়ে গেছে,-হয়েছে দেহের মতো হৃদয় আহত
যতবার;- উড়ে গেছে শাখা, পাতা পড়ে গেছে যত;-
পৃথিবীর বন হয়ে-ঝড়ের গতির মতো হয়ে,
বিদ্যুতের মতো হয়ে আকাশের মেঘে ইতস্তত;
একবার মৃত্যু লয়ে- একবার জীবনেরে লয়ে
ঘূর্ণির মতন বয়ে যে বাতাস ছেঁড়ে,- তার মতো গেছি বয়ে!
*****************************************
কেউ আর ডাকিবে না,- এইখানে এই নিশ্চয়তা!-
তোমার দু-চোখ কেউ দেখে থাকে যদি এই পৃথিবীতে,
কেউ যদি শুনে থাকে কবে তুমি কী কয়েছ কথা,
তোমার সহিত কেউ থেকে থাকে যদি সেই শীতে,-
সেই পৃথিবীর শীতে,- আসিবে কি তোমারে চিনিতে
এইখানে সে আবার!- উঠানে পাতার ভিড়ে ব’সে,
কিংবা ঘরে- হয়তো দেয়ালে আলো জ্বেলে দিতে দিতে,-
যখন হঠাৎ নিভে যাবে তার হাতের আলো সে,-
অসুস্থ পাতার মতো দুলে তার মন থেকে প’ড়ে যাব খসে!
******************************************
যেমন বৃষ্টির পরে ছেঁড়া ছেঁড়া কালো মেঘ এসে
আবার আকাশ ঢাকে,- মাঠে মাঠে অধীর বাতাস
ফোঁপায় শিশুর মতো,- একবার চাঁদ ওঠে ভেসে,-
দূরে-কাছে দেখা যায় পৃথিবীর ধান ক্ষেত ঘাস,
আবার সন্ধ্যার রঙে ভরে ওঠে সকল আকাশ,-
মড়ার চোখের রঙে সকল পৃথিবী থাকে ভ’রে!-
যে মরে যেতেছে তার হৃদয়ের সব শেষ শ্বাস
সকল আকাশ আর পৃথিবীর থেকে পড়ে ঝ’রে!-
জীবনে চলেছি আমি সে পৃথিবী আকাশের পথ ধ’রে ধ’রে!
******************************************
পৃথিবীর অন্ধকার অধীর বাতাসে গেছে ভরে-
শস্য ফলে গেছে মাঠে,- কেটে নিয়ে চলে গেছে চাষা;
নদীর পারের বন মানুষের মতো শব্দ করে
নির্জন ঢেউয়ের কানে মানুষের মনের পিপাসা,-
মুত্যুর মত তার জীবনের বেদনার ভাষা,-
আবার জানায়ে যায়!-কবরের ভূতের মতন
পৃথিবীর বুকে রোজ লেগে থাকে যে আশা-হতাশা,-
বাতাসে ভাসিতেছিল ঢেউ তুলে সেই আলোড়ন!
মড়ার কবর ছেড়ে পৃথিবীর দিকে তাই ছুটে গেল মন!
*******************************************
জীবন,- আমার চোখে মুখ তুমি দেখেছ তোমার,-
একটি পাতার মতো অন্ধকারে পাতা-ঝরা গাছে;-
একটি বোঁটার মতো যে ফুল ঝরিয়া গেছে তার;-
একাকী তারার মতো, সব তারা আকাশের কাছে
যখন মুছিয়া গেছে,-পৃথিবীতে আলো আসিয়াছে;-
যে ভালোবেসেছে, তার হৃদয়ের ব্যথার মতন;-
কাল যাহা থাকিবে না,- আজই যাহা স্মৃতি হয়ে আছে;-
দিন-রাত্রি-আমাদের পৃথিবীর জীবন তেমন!
সন্ধ্যার মেঘের মতো মুহুর্তের রঙ লয়ে মুহূর্তে নূতন!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১১:১৯