somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টুকরো টুকরো ভালবাসা - ৭

০৯ ই আগস্ট, ২০০৮ বিকাল ৩:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টুকরো - ৬, টুকরো - ৫, টুকরো - ৪ , টুকরো - ৩, টুকরো - ২, টুকরো - ১

'আর দুটো দিন থাকলে হতো না?' - ছেলেটির চোখে আকুতি।
'কিভাবে বলো? বিদেশী তিনজন ছাড়া হোস্টেলে কেউ থাকবে না, ক্যান্টিনও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বাসায়ও জানে ছুটি।' মেয়েটি বলে।

বোঝে ছেলেটি। কিন্তু তার খুব মন খারাপ হয়। পুরো দশ দিনের বন্ধ। অন্যান্য ক্যাম্পাসে অবশ্য এর চেয়েও বেশী দিনের ছুটি। কিন্তু দশ দিনই ছেলেটির কাছে দশ বছরের মতো মনে হয়। রিক্সা ডেকে দুজন উঠে বসে। বাস স্ট্যান্ডে যাচ্ছে দুজন। মেয়েটি বাড়ি যাবে, সাভার। ছেলেটি তাকে বাসে তুলে দিয়ে আসবে। ছেলেটিকে সেখান থেকে টিউশনীতে যেতে হবে, আজ না গেলে আবার ঈদের আগে টাকাটা পাওয়া যাবে না।
'তুমি আসতে পারবা না এর মধ্যে দু-তিনদিন?' অনর্থক প্রশ্ন, তবুও জিজ্ঞেস করে ছেলেটি।
'তোমার কি মাথা খারাপ? ঢাকায় আসবো কি কাজের কথা বলে?'
'বলবা ঈদের শপিং আছে।'
'আমার ঈদের শপিং করা শেষ, এটা আব্বু-আম্মু জানে।'
'আচ্ছা, তাহলে আমি আসি সাভার? সকালে বাসা থেকে রওনা দেব, রাতে চলে আসবো। তুমি স্মৃতিসৌধে বা জাবির সামনে আসতে পারবা না?'
'আরে নাহ! বাসা থেকে বের হবো কেমনে? কেউ দেখে ফেললে বিরাট ঝামেলা হবে।'
'আমি তোমার বাসার সামনে দাঁড়ায়ে থাকব। তুমি বারান্দায় আসতে পারবা না?'
মেয়েটি এবার হেসে ফেলে। - 'তোমার সিনেমা করা লাগবে না। মাত্র তো দশ দিন। আর ফোনে তো কথা হবেই প্রতিদিন।'
'ফোনে কথা বলা আর দেখা করা এক হইলো?' বলে মুখ ভার করে বসে থাকে ছেলেটা। মেয়েটারও মন খারাপ হয়। কিন্তু কি আর করা? ছুটির সময় এটুকু তো মেনে নিতে হবে দুজনকেই।

মতিঝিলে গিয়ে টিকিট কেটে বাসে ওঠে মেয়েটি। জানালার পাশের সীটে বসে। বাসের বাইরে জানালার ধারে দাঁড়ায় ছেলেটি। তার চোখের দিকে তাকালে যে কারও মনে হবে,তার চেয়ে অসহায় এ মুহূর্তে আর কেউ নেই। ছেলেটিকে দেখে মেয়েটিরও মুখ আঁধার হয়ে যায়। তবু প্রাণপণে গলা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে - ' এভাবে মুখ কালো করে বিদায় দিবা নাকি? দশ দিন ধরে তো এ চেহারাটাই মনে থাকবে আমার।'
ছেলেটি উত্তর দেয় না। মেয়েটি বলে, 'আরে তোমার তো এখন খুশী হওয়ার কথা। কোন ছেলের পাশে বসতে হয় নাই। পাশের সীট খালি পাইছি। তোমার তো দুশ্চিন্তা আরও কমলো।'
মেয়েটির দুষ্টুমি করার চেষ্টায় কোন ফল হয় না। ছেলেটির চেহারায় একই রকম বিষণ্ণতা রয়ে যায়। দেখে মনে হয়, যে কোন মুহূর্তে কেঁদে ফেলবে। হঠাৎ করে ঘুরে দাঁড়ায় ছেলেটি।
মেয়েটিও মুখ ঘুরিয়ে বাসের ভেতর তাকায়। ড্রাইভার স্টার্ট দিচ্ছে গাড়ি। মেয়েটি মুখ নিচু করে কান্না গোপন করার চেষ্টা করে।

বাস চলতে শুরু করেছে এ সময় মেয়েটি টের পায়, কেউ একজন পাশে এসে বসেছে।
মাথাটা একটু তুলে বুঝতে পারে, ছেলেটি। ছেলেটি মেয়েটির দিকে তাকায় না। সামনের দিকে তাকিয়ে নিচু গলায় বলে,'চলো, আমিও সাভার ঘুরে আসি। স্মৃতিসৌধ দেখা হয় না অনেক দিন, দেখে আসি। একটু দেরী করে বাসায় গেলে তোমার সমস্যা নাই তো? আমি বিকেলের বাসে চলে আসবো।'
মেয়েটি হেসে ফেলে। ডান হাতটা বাড়িয়ে ছেলেটির হাত ধরে। ছেলেটিও শক্ত মুঠোর ভেতর ধরে মেয়েটির হাত। কিন্তু কেউ কারো দিকে তাকায় না। মেয়েটি জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখায় যেন ব্যস্ত, ছেলেটির চোখ সামনের দিকে। এই মুহূর্তে কেউ কাউকে চোখের পানি দেখাতে রাজী না।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০০৮ বিকাল ৪:৩০
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×