টুকরো - ৫, টুকরো - ৪ , টুকরো - ৩, টুকরো - ২, টুকরো - ১
চোখ খুলে প্রথমেই দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকায় ছেলেটি। এগারোটা বাজে। পাশ থেকে মোবাইলটা নিয়ে চোখের সামনে ধরে। বাহাত্তরটা মিসকল। খারাপ না! ইনবক্স- এ গিয়ে দেখে চারটা মেসেজ। ভ্রূ কুঁচকায় সে - একটু কম হয়ে গেল না?
প্রথম মেসেজটা খোলে ছেলেটি। সকাল সাড়ে আটটার দিকে পাঠানো। ফোনেটিক মেসেজ, ইংলিশ অক্ষরে বাংলা শব্দমালা- 'কি হলো? ফোন রিসিভ করছো না কেন? লেকচারে এলে না যে? মেসেজ দেখা মাত্র ফোন দাও।'
হুঁহ - মুখ বাকিয়ে দ্বিতীয় মেসেজটা খোলে। এটা নয়টা পাঁচে পাঠানো। - ' তুমি নাকি হোস্টেলেই? তাহলে ফোন ধরছ না কেন? ওয়ার্ডে আসবে না?'
সে হোস্টেলে এটা কে জানালো, ভাবে ছেলেটি। নিশ্চয়ই তার রুমমেট। সকালে লেকচার ক্লাসে যাওয়ার জন্য রুমমেট বের হয়ে যাওয়ার সময় ছেলেটি রেডি হওয়ার ভান করছিল। কিন্তু ও বের হয়ে যাওয়ার পর মোবাইলটা অন করে 'সাইলেন্ট' মোডে দিয়ে ছেলেটি আবার ঘুমিয়ে পড়ে।
তৃতীয় মেসেজটা দশটায় পাঠানো - 'তুমি কি কালকের ঘটনায় আমার উপর রাগ করে ফোন ধরছো না? রাগ করার মতো এমন কিছু কি করেছি আমি? তেমন কিছু হলে এসে বলো। আমি ওয়ার্ডের পর চত্বরে তোমার জন্য ওয়েট করবো। আসো।'
ছেলেটা মুচকি হাসে - এতক্ষণে মেয়ের মাথা খুলছে তাহলে!
চতুর্থটা একটু আগে এসেছে - 'স্যরি। মাপ চাই। ফোন ধর লক্ষ্মী। আমি চত্বরে দাঁড়িয়ে আছি। তুমি আসো না তাড়াতাড়ি।'
উঁহু। ছেলেটি তো এখনই যাবে না। সে ধীরে সুস্থে দাঁত ব্রাশ করে, হাত-মুখ ধুয়ে গোসল সারে । রুমে ফিরে দেখে আরও কিছু মিসকলের সাথে আরেকটা মেসেজ - ' স্যরি, স্যরি, স্যরি, স্যরি, স্যরি, স্যরি, স্যরি, স্যরি, স্যরি, স্যরি, স্যরি, স্যরি, স্যরি। আমি ক্লাসে যাইনি। চত্বরে দাঁড়িয়ে। আসো না। স্যরি বললাম তো। আমাকে আর শাস্তি দিও না। তোমার পা ধরে মাপ চাই। আর কখনো এরকম হবে না।'
আব আ গায়া লাইন পে - ছেলেটির মুখের হাসি আরেকটু বিস্তৃত হয়। সে হোস্টেলের সামনের মুদী দোকানটায় যায় নাস্তা করতে। কিছুক্ষণ পর পর মোবাইলটা চেক করে। ১৫ মিনিট পরেই আসে পরের মেসেজ - 'তুমি এতো নিষ্ঠুর কেন? আমাকে এত কষ্ট দাও কেন? আমার খুব কান্না পাচ্ছে। প্লীজ, আসো না। আমি আর সহ্য করতে পারছি না।'
নাস্তা সেরে রুমে এসে আবার বিছানায় গড়ান দেয় ছেলেটা। ফোনে কল আসতেই থাকে। কিন্তু 'সাইলেন্ট' মোডে থাকায় কোন রিংটোন ছেলেটিকে ডিস্টার্ব করে না। কিছুক্ষণ পর পর মোবাইলটা নিয়ে সে মিসকলের সংখ্যা গোণে। তার খুবই খুশী খুশী লাগে।
পরের মেসেজটা আসে এরকম - ' ফোন ধরতে পারিস না তো ফোন খোলা রাখিস কেন? বন্ধ করে ঘুম দে হারামজাদা। তুই একটা শয়তান, খবিশ। তুই মানুষ না। মানুষ হলে কেউ অন্য মানুষকে এতটা কষ্ট দিতে পারে না।'
এবার একা রুমে নিজেই জোরে হেসে ওঠে ছেলেটি। এখন যাওয়া উচিত কি না ভাবে। নাকি আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবে?
পাঁচ মিনিট পরে আসে আরেকটি - 'নচ্ছার, বদমাশ, ইতর। তুই মরিস না কেন? দেখিস, তোকে একদিন এইরকম কষ্ট পেতে হবে। তোকে কেউ পছন্দ করবে না। সবাই তোকে ঘৃণা করবে। লোকে তোকে থুতু দিবে। আমি তোর হোস্টেলে আসতেছি।'
হু- এইবার সময় হয়েছে, ভাবে ছেলেটি। তার খুবই শান্তি শান্তি লাগে। গায়ে শার্ট চড়াতে চড়াতে মেয়েটার পরবর্তী কল রিসিভ করে সে। কিন্তু ধরেই কান থেকে একটু দূরে রাখে সেটটা। এখন মিনিট দুয়েক গালাগালি হবে। কি কি গালি দেবে মেয়েটি, তা ছেলেটির মুখস্ত। সুতরাং, তা শোনার দরকার নেই তার। মিনিট দুয়েক পর সে মেয়েটিকে আসতে বারণ করে কলেজ চত্বরের দিকে রওয়ানা দেবে।