মেয়েটি ছেলেটিকে প্রশ্ন করে - 'তুমি কি আমার জন্য আরো দু বছর অপেক্ষা করতে পারবা?'
ছেলেটি অবাক হয় না প্রশ্ন শুনে। মেয়েটি এখনও বাবা-মাকে বলতে পারেনি তার কথা। এখনি বলতে পারবে - তা-ও সম্ভব মনে হচ্ছে না। ছেলেটি তবু উল্টো প্রশ্ন করে, 'হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন?'
'আগে আমারটার উত্তর দাও।'
'আমার তো কোন সমস্যা নাই। সমস্যা তো হবে তোমার। কিছুদিনের মধ্যে আমরা পাশ করে বেরুবো, যদি কোন অঘটন না ঘটে। তারপর কি তোমার বাবা-মা তোমাকে দু'বছর অপেক্ষা করতে দেবে।'
'সেটা আমি সামলাতে পারবো। কিন্তু এখনই তাদেরকে বলা সম্ভব না তোমার কথা। আমার ইচ্ছে, ক্যারিয়ারটা কিছুটা গুছিয়ে যখন নিজের মতো করে দাঁড়াতে পারব, তখন বলব।'
'ওরে আল্লাহ, তাহলে তো দুবছরে হবে না। তোমার তো ইচ্ছে বাইরে যাওয়ার। ৫ বছরের মধ্যে তো তুমি তাহলে ফিরতে পারবে না।'
'হু। তা-ই যদি হয়.. যদি ৫ বছর লাগে.... তাহলে তুমি অপেক্ষা করতে পারবা না?'
এত ভারী আলোচনা ছেলেটির ভাল লাগছে না। তার একটু দুষ্টুমি করার ইচ্ছে হলো। বললো, 'হুঁ.. তুমি ৫ বছর বিদেশ থেকে রং-ঢং করে ফিরবা, ঐখানে কার সাথে কি না কি করবা, আর আমি তোমার জন্য বইসা থাকব। উহুঁ, ৫ বছর পারবো না। ২ বছর হলে ঠিক আছে।'
হঠাৎ করেই মেয়েটির মুখ আঁধার কালো হয়ে যায়। আষাঢ়ের ঘন কালো মেঘের মতো। ছেলেটি প্রমাদ গোণে। সাক্ষাৎ বৃষ্টির পূর্বাভাস। এখন চোখ গড়িয়ে সেই বৃষ্টি নামলে পুরো বিকেলটাই মাটি। থমথমে গলায় মেয়েটি বলে, 'তুমি আমার সম্পর্কে এই রকম ভাবলা?'
দুষ্টুমি করার জন্য এখন নিজের মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করে ছেলেটির। -'আমি এমনেই বলছি। আমি জানি তুমি এইরকম করবা না।'
'নাহ। তুমি নিশ্চয়ই এইরকম ভাবছ। নাইলে বলবা কেন? এই রিক্সা , ঘুরাও। যেখান থেকে আসছ , সেখানে ফিরা চল।'
'প্লীজ, আমি এমনি-ই বলছি। রিক্সা ঘুরাইও না। ৫ বছর না, আমি তোমার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করবো।'
'রাখ তোর ন্যাকামি। বুঝছি আমি তোর মতি। আমি এখন তোর সাথে ঘুরবো না। হোস্টেলে ফিরা যাব। ব্যস। রিক্সা ঘুরাও।'
রিক্সা ফিরতি পথ ধরে। মেয়েটির চোখ বেয়ে বর্ষার ঢল নামে। রিক্সার হুড উঠিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে ছেলেটি। মেয়েটি ঝটকা দিয়ে নামিয়ে দেয়।
মেয়েটির হাত ধরতে চেষ্টা করে ছেলেটি। ঝটকা দিয়ে হাত সরিয়ে নেয় মেয়েটি - 'আমাকে ছুঁবি তো রিক্সা থেকে নেমে যাব এখন।'
হাত সরিয়ে ছেলেটি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকে। কান্না-অবস্থায় মেয়েটিকে তার আরো সুন্দর লাগে। মেয়েটি ঝাঁঝিয়ে ওঠে - 'আমার দিকে তাকিয়ে থাকবি না। অন্য দিকে তাকা। অন্য রিক্সার মেয়ে দেখ।'
ছেলেটি জানে, এ 'আদেশ' পালন করতে গেলে বৃষ্টির সাথে ঝড়-তুফানও ছুটে যাবে আজ। কি আর করবে সে? নিজের বোকামীর জন্য নিজের দুগালে মনে মনে কষে দুটা চড় মারে। বিকালটা পুরাই মাটি। রিক্সা ছুটে চলে ফিরতি পথ ধরে।